নিজস্ব প্রতিবেদক :
পবিত্র ঈদুল আজহা উপলক্ষ্যে জাতীয় ঈদগাহের পুরো ময়দান জুড়ে বাঁশ, সামিয়ান আর ত্রিপল দিয়ে ঘিরে ফেলার কাজ আরও বেশ কিছুদিন আগেই শেষ হয়েছে। এখন ভিতরের পুরো এলাকাজুড়ে চলছে সাজসজ্জার কাজ। সব কার্যক্রম ঠিকমতো হয়েছে কিনা তা দেখার পাশাপাশি চলছে শেষ সময়ের প্রস্তুতি। ধারাবাহিকতায় এবারও সমসংখ্যক মুসল্লিদের জন্য এর প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
শুক্রবার (২৩ জুন) জাতীয় ঈদগাহ ঘুরে দেখা গেছে, শ্রমিকরা কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন। তারা ময়দানে প্যান্ডেল তৈরি করছেন। নিরাপত্তায় নিয়োজিত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর উপস্থিতিও দেখা গেছে সেখানে। এছাড়া মূল গেটসহ আশপাশের সাজসজ্জায় ব্যবহৃত কাঠামোগুলোতে রঙ করা হচ্ছে। শত শত শ্রমিক এখানে প্যান্ডেল, ত্রিপল লাগানোর কাজ শেষ করেছে আরও কিছুদিন আগে। সিলিং ফ্যানগুলো লাগানো হয়ে গেলে, কাতারের সামনে স্ট্যান্ড ফ্যান বসানোর জন্য আনা হবে। নামাজের কাতারের জন্য বসানো হবে বিশেষ কাপড়। এছাড়া বৃষ্টি এলে যেন মুসল্লিদের কোনো সমস্যা না হয়, সেজন্য প্যান্ডেলে ত্রিপল লাগানো হয়েছে আগেই। সব মিলিয়ে জামাত আয়োজনের প্রায় সব প্রস্তুতি ইতোমধ্যে এগিয়ে গেছে।
যেহেতু বর্ষাকাল এজন্য বৃষ্টি থেকে রক্ষায় উপরে ত্রিপলের সামিয়ানা টানানো হচ্ছে। এছাড়া ভেতরে বৃষ্টির পানি নিষ্কাশনের ব্যবস্থা তৈরি করা হয়েছে। সাদা কাপড় দিয়ে সাজানো হয়েছে মাঠের ভেতর। মাঠের কোথাও কোথাও বালু দিয়ে সমতল করা হয়েছে। এছাড়া ঈদগাহে প্রবেশের প্রধান গেটের কাজও চলছে পুরোদমে।
সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণের জাতীয় ঈদগাহ ময়দানে ভেতরে ৩৫ হাজার মানুষ একসঙ্গে নামাজ আদায় করতে পারেন। সাড়ে পাঁচ হাজার নারীর জামাতে নামাজ পড়ার ব্যবস্থা থাকছে।
জাতীয় ঈদগাহে সাধারণত রাষ্ট্রপতি, মন্ত্রী, মেয়র, সচিবসহ রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা ঈদ জামাতে অংশ নিয়ে থাকেন। তবে এবার রাষ্ট্রপতি হজ পালনের উদ্দেশে সৌদি আরবে যাওয়ায় এখানে জামাতে শরিক হতে পারছেন না। তবে অন্যান্য ভিভিআইপিরা থাকবেন।
মাঠের প্রস্তুতির কাজ তদারকি করা আসিফ ঢাকা মেইলকে জানান, বেশ কয়েক দিন আগে থেকেই মাঠ সাজানোর কার্যক্রম শুরু হয়েছে। প্রায় ৭০ শতাংশ কাজ ইতোমধ্যে শেষ হয়েছে।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি) সূত্রে জানা যায়, জাতীয় ইদগাহ ময়দানে ঈদুল আজহার জামাতের সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠু ও সুন্দরভাবে সম্পাদন করতে গত ২১ জুন সিটি করপোরেশনের সভা হয়েছে। সভার সিদ্ধান্ত অনুযায়ী পবিত্র ঈদুল আজহায় জাতীয় ঈদগাহ মাঠ ব্যবস্থাপনা ছাড়াও কোরবানির পশুর বর্জ্য অপসারণ কার্যক্রম গতিশীল করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তা-কর্মচারীদের ছুটি বাতিল করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন (ডিএসসিসি)। আগামী ২৯ জুন থেকে পয়লা জুলাই পর্যন্ত তাদের কেউ ছুটি নিতে পারবেন না।
প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ না হলে সাধারণত জাতীয় ঈদগাহে ঈদের প্রধান জামাত অনুষ্ঠিত হয়ে থাকে। তবে প্রাকৃতিক কোনো দুর্যোগ হলে প্রধান জামাত হবে জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমে। আগামী ২৯ জুন দেশে পালিত হবে পবিত্র ঈদুল আজহা। এদিন জাতীয় ঈদগাহে প্রধান জামাতের পাশাপাশি বায়তুল মোকাররমে অনুষ্ঠিত হবে পাঁচটি জামাত।
জানা গেছে, জাতীয় ঈদগাহে প্রায় ২৫০ জন অতি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তি, গুরুত্বপূর্ণ নারীসহ সাধারণ পুরুষ প্রায় ৩১ হাজার এবং নারী সাড়ে ৩ হাজার জন মিলিয়ে প্রায় ৩৫ হাজার মানুষ নামাজে অংশ নিতে পারবেন। এছাড়া ১৫০ জন মুসল্লি যেন একসঙ্গে ওযু করতে পারেন তার ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। ঈদগাহ ময়দানে প্রায় ৬৫ থেকে ৭০টি বড় কাতার করা হতে পারে পুরুষদের জন্য। এছাড়া নারীদের জন্য আরও ৫০টি ছোট কাতার করা হতে পারে। পুরো ঈদগাহ ময়দান জুড়ে সামিয়ানার নিচে সিলিং ফ্যান থাকবে ৫৫০ থেকে ৬০০টি, স্ট্যান্ড ফ্যান ১৫০টি, মেটাল লাইট ৪০টি ও টিউব লাইট ৭০০টি। পাশাপাশি খাবার পানির ব্যবস্থা, ভ্রাম্যমাণ টয়লেটের ব্যবস্থা ও প্রাথমিক চিকিৎসা সেবার ব্যবস্থা করা হবে জাতীয় ঈদগাহ মাঠে।
জাতীয় ঈদগাহ মাঠে সাজসজ্জার কাজে নিয়োজিত শ্রমিকদের সুপারভাইজার সাদিকুর রহমান বলেন, শত শত শ্রমিক মিলিয়ে বেশ কিছুদিনে পুরো প্যান্ডেলের কাজ শেষ করেছে। ঈদের বাকি আর মাত্র ৫ দিন। ইতোমধ্যে আমাদের প্রায় সব কাজই শেষ। এখন সাজসজ্জার কাজ শুরু হয়েছে ঈদগাহ মাঠের পশ্চিম দিক থেকে। শ্রমিকরা আজ ফ্যান লাগানোর কাজ শুরু করেছেন। এখন মূল গেটের সামনে সাজসজ্জার কাজ চলবে। ঈদের ২/৩ দিন আগেই স্ট্যান্ড ফ্যান ও লাইটের কাজ শেষ হবে। শ্রমিকদের দিক থেকে করা সব কাজই ঈদের ২ দিন আগেই শেষ হয়ে যাবে। সার্বিকভাবে বলা যায়, জাতীয় ঈদগাহের সব প্রস্তুতিই শেষের দিকে।
নিজস্ব প্রতিবেদক 























