নিজস্ব প্রতিবেদক :
বেসরকারি শিক্ষক নিবন্ধন ও প্রত্যয়ন কর্তৃপক্ষের (এনটিআরসিএ) মাধ্যমে বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের প্রধান শিক্ষক ও অধ্যক্ষ নিয়োগ দেওয়ার উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়ে শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, এর উদ্দেশ্য মানসম্মত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও মানবিক শিক্ষা নিশ্চিত করা।
রোববার (৫ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর ওসমানী মিলনায়তনে বিশ্ব শিক্ষক দিবসের অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন। বিশ্ব শিক্ষক দিবস উপলক্ষে এই অনুষ্ঠানের আয়োজন করে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগ। এবারের দিবসের প্রতিপাদ্য ‘শিক্ষকতা পেশা: মিলিত প্রচেষ্টার দীপ্তি’।
চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের পর মন্ত্রণালয় শিক্ষাব্যবস্থাকে পুনরুজ্জীবিত করতে নিরলসভাবে কাজ করে চলেছে। আমাদের লক্ষ্য—মানসম্মত, অন্তর্ভুক্তিমূলক, বিজ্ঞানভিত্তিক ও মানবিক শিক্ষা নিশ্চিত করা। আধুনিক বিজ্ঞান ও কারিগরি শিক্ষার প্রসারের মাধ্যমে আমরা তরুণ প্রজন্মকে দক্ষ, উদ্ভাবনী ও বৈশ্বিক প্রতিযোগিতার উপযোগী নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে চাই।
শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, নৈতিকতা চর্চার পাশাপাশি শিক্ষার্থীদের আমরা পরিবেশ সচেতনতা ও পরমত সহিষ্ণুতা গড়ে তুলতে কাজ করছি। কারণ, শিক্ষিত মানুষ মানে শুধু বইপড়া মানুষ নয়; শিক্ষিত মানে সহনশীল, দায়িত্বশীল ও মানবিক মানুষ বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে আমরা লাইফ স্কিল, ভাষা শিক্ষা এবং পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছি। শিক্ষার্থীদেরকে শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, জীবনের জন্য প্রস্তুত করাই আমাদের উদ্দেশ্য।
চৌধুরী রফিকুল আবরার বলেন, এতদিন বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রবেশ পর্যায়ের শিক্ষক ও প্রভাষক পদে প্রার্থীদের নিয়োগ সুপারিশ করার দায়িত্ব এনটিআরসিএর হাতে থাকলেও প্রতিষ্ঠান প্রধান, সহকারী প্রধান ও কর্মচারী পদে নিয়োগের ক্ষমতা ছিল পরিচালনা পর্ষদের হাতে। পরিচালনা পর্ষদ বেসরকারি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের কর্মচারী নিয়োগের ক্ষমতা হারানোর পর এবার প্রধান ও অধ্যক্ষ নিয়োগের ক্ষমতাও হারাচ্ছে।
শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষায় পাসের জন্য নয়, জীবনের জন্য প্রস্তুত করতে হবে বলে মন্তব্য করে শিক্ষা উপদেষ্টা বলেন, ‘শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে শিক্ষার্থীদের নৈতিকতা চর্চার পাশাপাশি আমরা পরিবেশ সচেতনতা ও পরমতসহিষ্ণুতা গড়ে তুলতে কাজ করছি। মনে রাখতে হবে, শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, জীবনের জন্য প্রস্তুত করাই আমাদের মূল উদ্দেশ্য।’
তিনি বলেন, বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে এগিয়ে যেতে আমরা লাইফ স্কিল, ভাষা শিক্ষা এবং পেশাগত দক্ষতা উন্নয়নের ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছি। শিক্ষার্থীদের শুধু পরীক্ষার জন্য নয়, জীবনের জন্য প্রস্তুত করাই আমাদের মূল লক্ষ্য।
তিনি আরো বলেন, নির্ভুল ও মানসম্মত পাঠ্যপুস্তক প্রণয়ন কার্যক্রম শুরু হয়েছে এবং এনসিটিবির বিধিমালা প্রণয়নের কাজ চলমান। ইউজিসির কার্যক্রমকে আন্তর্জাতিক মানে উন্নীত করতে অংশীজনের সঙ্গে পরামর্শ ও স্বচ্ছ নিয়োগ প্রক্রিয়া চালু করা হয়েছে।
বিভিন্ন শিক্ষা কমিশনের সুপারিশ, শ্বেতপত্র ও টাস্কফোর্স রিপোর্ট পর্যালোচনা করে কার্যকর বাস্তবায়নের পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। অতিরঞ্জিত ফল প্রকাশ না করার নীতি গ্রহণের পাশাপাশি বৃত্তি পরীক্ষার মাধ্যমে প্রকৃত মেধা যাচাইয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে।
শিক্ষা উপদেষ্টা আরো বলেন, ‘শিক্ষাব্যবস্থার প্রতিটি স্তরে ডিজিটাইজেশন প্রক্রিয়া চলমান। অনলাইন বদলি, ই-ফাইলিং, শিক্ষক প্রশিক্ষণ ও এডুটেকের মাধ্যমে শিক্ষার মানোন্নয়ন অব্যাহত রয়েছে। উচ্চশিক্ষায় অপপবংং ঃড় এষড়নধষ কহড়ষিবফমব কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা আন্তর্জাতিক মানের শিক্ষা ও গবেষণার পরিবেশ তৈরিতে কাজ করছি।’
শিক্ষা উপদেষ্টা তার বক্তব্যে বলেন, ‘নতুন প্রতিষ্ঠানগুলোকে এমপিওভুক্ত করার প্রক্রিয়া চলছে। ব্যানবেজ প্ল্যাটফরমের মাধ্যমে উচ্চতর গবেষণার পথ উন্মুক্ত করা হয়েছে। এনটিআরসির মাধ্যমে প্রধান শিক্ষক ও প্রিন্সিপাল নিয়োগের উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে যাতে যোগ্যতার ভিত্তিতে নেতৃত্ব প্রতিষ্ঠিত হয়।
তিনি শিক্ষকদের পদোন্নতি, মর্যাদা বৃদ্ধি, এমপিওভুক্ত শিক্ষকদের বাড়িভাড়া বৃদ্ধি এবং আর্থিক প্রণোদনার উদ্যোগের কথা উল্লেখ করেন।
দুর্নীতি, অপ্রয়োজনীয় প্রতিষ্ঠান নির্মাণ ও অনিয়ম দমনে সরকারের কঠোর অবস্থানের কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিক্ষা মন্ত্রণালয় এসব অনিয়মের শ্বেতপত্র প্রকাশের উদ্যোগ নিয়েছে, যা বর্তমানে কারিগরি সচিবের নেতৃত্বে চলমান।’
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা বিভাগের সচিব রেহানা পারভীনের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন প্রাথমিক ও গণশিক্ষা উপদেষ্টা বিধান রঞ্জন রায় পোদ্দার, বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) চেয়ারম্যান এস এম এ ফায়েজ, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের কারিগরি মাদ্রাসা শিক্ষা বিভাগের সচিব মুহাম্মাদ রফিকুল ইসলাম, বাংলাদেশে ইউনেস্কোর প্রতিনিধি সুজান ভাইজ, ইসলামিক ওয়ার্ল্ড এডুকেশনাল, সায়েন্টিফিক অ্যান্ড কালচারাল অর্গানাইজেশনের (আইসিইএসসিও) মহাপরিচালক সালিম এম আল-মালিক। অনুষ্ঠানে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের অবসরপ্রাপ্ত অধ্যাপক গোলাম মুস্তফা প্রমুখ।
নিজস্ব প্রতিবেদক 




















