Dhaka বুধবার, ১৬ জুলাই ২০২৫, ১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন না : পরিকল্পনা উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করছেন না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

শনিবার (২৪ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যাচ্ছেন না। তিনি চলে যাবেন বলেননি। তিনি অবশ্যই থাকছেন। আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব বড় দায়িত্ব, এই দায়িত্ব ছেড়ে আমরা যেতে পারবো না। আমরা যে কাজ করছি এবং এসব কাজ করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা সবাই প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছি। এখন সেগুলো সমাধান করে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবো।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, দায়িত্ব পালনে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো আসছে, সেই প্রতিবন্ধকতাগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা প্রত্যেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে কী প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, কার কী প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সংস্কার কাজ আমরা এগিয়ে নিতে গেলে কী হচ্ছে, সেগুলো আমরা দেখছি।

আগামী নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি তিনি। বলেন, এ ক্ষেত্রেও যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আগামী নির্বাচন ও সুশাসিত গণতন্ত্রিক অবস্থায় উত্তরণে যে ধরনের ক্ষেত্র তৈরি করা দরকার- সেই কাজেও, এটা তো আমাদের প্রধান কাজ; সেই কাজেও কোথা থেকে কী প্রতিবন্ধকতা আসছে- সেগুলো আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।

নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা কি চিহ্নিত করা হয়েছে, এ প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।

‘অনির্ধারিত বৈঠক’ চলার মধ্যে দুপুর ২টা পাঁচ মিনিটে ‘জরুরি কাজের’ কথা বলে বেরিয়ে যান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সে সময় বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন, সংস্কার এবং জুলাই ঘোষণা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। জুলাই আন্দোলনের ঐক্য মাস কয়েক বজায় থাকলেও প্রথমে ছাত্রদের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়। তারপর রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনের দূরত্ব তৈরি হয়।

এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্র আন্দোলন ও তাদের জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন দল এনসিপির আত্মপ্রকাশের পর সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে মিত্র দলগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট হতে শুরু করে।

রাজপথ দখলে নিয়ে টানা বিক্ষোভ দেখিয়ে এনসিপি যে কৌশলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি আদায় করে নিয়েছে, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন সেই একই কৌশলে মেয়র পদে বসার চেষ্টা করলে এনসিপি সঙ্গে বিরোধ বাড়তে শুরু করে।

ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে এক সপ্তাহ আগে নগর ভবনের সামনে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। পরে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের কাছে কাকরাইলে সড়ক অবরোধ করেও বিক্ষোভ দেখান।

সে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে ইশরাক স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেন।

অন্যদিকে ইশরাককে মেয়র ঘোষণার গেজেট প্রকাশ করায় নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এনসিপি। কমিশন পুনর্গঠন দাবি করে তারা নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভও করে।

সেখানে দলটির নেতা নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী পরিকল্পনা উপদেষ্ট ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে ‘বিএনপির মুখপাত্রা’ আখ্যায়িত করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন।

এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে সেনানিবাসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন বলে খবরে এসেছে।

বৃহস্পতিবার বিএনপি জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় সরকার, তথ্য ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি দেয়।

এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার ‘পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশের’ গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।

আবহাওয়া

বদলির চিঠি প্রকাশ্যে ছিঁড়ে ফেলায় ৮ কর কর্মকর্তা বরখাস্ত

প্রধান উপদেষ্টা পদত্যাগ করছেন না : পরিকল্পনা উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ০৩:১৯:৪৮ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস পদত্যাগ করছেন না বলে জানিয়েছেন পরিকল্পনা উপদেষ্টা ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ।

শনিবার (২৪ মে) রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির (একনেক) সভা শেষে তিনি এ কথা বলেন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সভাপতিত্বে বৈঠকে অন্তর্বর্তী সরকারের উপদেষ্টারা উপস্থিত ছিলেন।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, প্রধান উপদেষ্টা যাচ্ছেন না। তিনি চলে যাবেন বলেননি। তিনি অবশ্যই থাকছেন। আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব বড় দায়িত্ব, এই দায়িত্ব ছেড়ে আমরা যেতে পারবো না। আমরা যে কাজ করছি এবং এসব কাজ করতে গিয়ে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি হচ্ছে। আমরা সবাই প্রতিবন্ধকতা চিহ্নিত করেছি। এখন সেগুলো সমাধান করে আমাদের উপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করবো।

উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক প্রসঙ্গে ওয়াহিদউদ্দিন বলেন, দায়িত্ব পালনে যে প্রতিবন্ধকতাগুলো আসছে, সেই প্রতিবন্ধকতাগুলো নিয়ে আমরা আলোচনা করেছি। আমরা প্রত্যেকে বিভিন্ন জায়গা থেকে কী প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, কার কী প্রতিবন্ধকতা হচ্ছে, বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ে সংস্কার কাজ আমরা এগিয়ে নিতে গেলে কী হচ্ছে, সেগুলো আমরা দেখছি।

আগামী নির্বাচনের সময়সূচি নিয়ে কোনো কথা হয়েছে কি না, এ প্রশ্নের কোনো জবাব দেননি তিনি। বলেন, এ ক্ষেত্রেও যেসব প্রতিবন্ধকতা রয়েছে তা চিহ্নিত করার চেষ্টা চলছে।

পরিকল্পনা উপদেষ্টা বলেন, আগামী নির্বাচন ও সুশাসিত গণতন্ত্রিক অবস্থায় উত্তরণে যে ধরনের ক্ষেত্র তৈরি করা দরকার- সেই কাজেও, এটা তো আমাদের প্রধান কাজ; সেই কাজেও কোথা থেকে কী প্রতিবন্ধকতা আসছে- সেগুলো আমরা চিহ্নিত করার চেষ্টা করেছি।

নির্বাচনের প্রতিবন্ধকতা কি চিহ্নিত করা হয়েছে, এ প্রশ্ন করা হলে তিনি এড়িয়ে যান।

‘অনির্ধারিত বৈঠক’ চলার মধ্যে দুপুর ২টা পাঁচ মিনিটে ‘জরুরি কাজের’ কথা বলে বেরিয়ে যান পরিবেশ উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান।

সে সময় বৈঠকের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, নির্বাচন, সংস্কার এবং জুলাই ঘোষণা নিয়ে আলোচনা হচ্ছে।

গণঅভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর সাবেক প্রধানমন্ত্রী ও তার সরকারের মন্ত্রী-এমপি, আওয়ামী লীগের নেতাদের অনেকেই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যান। জুলাই আন্দোলনের ঐক্য মাস কয়েক বজায় থাকলেও প্রথমে ছাত্রদের মধ্যে ফাটল দেখা দেয়। তারপর রাষ্ট্রপতিকে অপসারণ ও ‘জুলাই ঘোষণাপত্র’ নিয়ে বিএনপির সঙ্গে আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলেনের দূরত্ব তৈরি হয়।

এরপর ফেব্রুয়ারি মাসে ছাত্র আন্দোলন ও তাদের জাতীয় নাগরিক কমিটির উদ্যোগে নতুন দল এনসিপির আত্মপ্রকাশের পর সংস্কার ও নির্বাচন বিষয়ে মিত্র দলগুলোর মধ্যে বিভেদ স্পষ্ট হতে শুরু করে।

রাজপথ দখলে নিয়ে টানা বিক্ষোভ দেখিয়ে এনসিপি যে কৌশলে আওয়ামী লীগ নিষিদ্ধের দাবি আদায় করে নিয়েছে, বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেন সেই একই কৌশলে মেয়র পদে বসার চেষ্টা করলে এনসিপি সঙ্গে বিরোধ বাড়তে শুরু করে।

ইশরাককে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র পদে শপথ পড়ানোর দাবিতে এক সপ্তাহ আগে নগর ভবনের সামনে লাগাতার আন্দোলন শুরু করেন তার সমর্থকরা। পরে তারা প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের কাছে কাকরাইলে সড়ক অবরোধ করেও বিক্ষোভ দেখান।

সে বিক্ষোভ কর্মসূচি থেকে ইশরাক স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা আসিফ মাহমুদ সজীব ভূঁইয়া ও তথ্য উপদেষ্টা মাহফুজ আলমের পদত্যাগ দাবি করেন।

অন্যদিকে ইশরাককে মেয়র ঘোষণার গেজেট প্রকাশ করায় নির্বাচন কমিশনের নিরপেক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন তোলে এনসিপি। কমিশন পুনর্গঠন দাবি করে তারা নির্বাচন ভবনের সামনে বিক্ষোভও করে।

সেখানে দলটির নেতা নাসীরুদ্দীন পাটোয়ারী পরিকল্পনা উপদেষ্ট ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ, অর্থ উপদেষ্টা সালেহউদ্দিন আহমেদ ও আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুলকে ‘বিএনপির মুখপাত্রা’ আখ্যায়িত করে তাদের পদত্যাগ দাবি করেন।

এ নিয়ে রাজনৈতিক অঙ্গনে আলোচনার মধ্যে সেনানিবাসে সেনাপ্রধান ওয়াকার-উজ-জামান ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন দেওয়ার বিষয়ে কথা বলেছেন বলে খবরে এসেছে।

বৃহস্পতিবার বিএনপি জরুরি সংবাদ সম্মেলন করে স্থানীয় সরকার, তথ্য ও জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টার পদত্যাগ দাবি করে। ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন না হলে সরকারের ওপর থেকে সমর্থন প্রত্যাহারের হুমকি দেয়।

এমন পরিস্থিতিতে প্রধান উপদেষ্টার ‘পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশের’ গুঞ্জন ছড়িয়ে পড়ে।