নিজস্ব প্রতিবেদক :
মুন্সীগঞ্জের মাওয়া রেল স্টেশনে সুধী সমাবেশ শেষে বহুল কাঙ্ক্ষিত পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এরপর মুন্সীগঞ্জের মাওয়া রেল স্টেশন থেকে টিকিট কেটে ট্রেনে চড়েন প্রধানমন্ত্রী। এ সময় তার সঙ্গে ছিলেন ছোট বোন শেখ রেহানা ও তাদের তিন নাতি-নাতনি। প্রধানমন্ত্রী ১৪৯ টাকা করে পাঁচটি টিকিট কাটেন।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়া রেল স্টেশনে বুকিং সহকারী সীমা মিস্ত্রী ও নুর জাহানের কাছ থেকে টিকিট সংগ্রহ করেন। সরকার প্রধান ও তার পরিবারের কাছে টিকিট বিক্রি করতে পেরে খুশিতে আত্মহারা এ দুই বুকিং সহকারী।
মঙ্গলবার (১০ অক্টোবর) দুপুর একটার দিকে টিকিট কেটে প্রধানমন্ত্রী সফরসঙ্গীদের নিয়ে ট্রেনে ওঠেন।
প্রধানমন্ত্রীর কাছে টিকিট বিক্রির অভিজ্ঞতা জানাতে গিয়ে বুকিং সহকারী সীমা মিস্ত্রী বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে কাছে থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে। আমার সঙ্গে হ্যান্ডশেক করেছেন। আমার কাছে থেকে টিকিট নিয়েছেন। অল্প সময়ের এ আন্তরিকতা ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। প্রধানমন্ত্রীর আশীর্বাদ জীবনের সেরা উপহার।
সীমা বলেন, সরাসরি প্রধানমন্ত্রীকে কাছে দেখা, তার হাতে টিকিট দেওয়া, কোনোভাবেই ভাষায় প্রকাশ করার মতো না। আমাদের সঙ্গে তিনি যে আন্তরিকতা দেখিয়েছেন তা কল্পনাতীত।
এ বুকিং সহকারী বলেন, সামনাসামনি প্রধানমন্ত্রীকে দেখেছি। এ ছাড়া পদ্মা সেতুর (ট্রেনের) প্রথম টিকিট দিয়েছি (বিক্রি করেছি)। আমি নিজেও দক্ষিণ বঙ্গের মানুষ, আমাদের এ সেতু নিয়ে আনন্দ-অনুভূতির শেষ নেই। আমি গোপালগঞ্জের মেয়ে। আমাদের বহুদিনের আশা পূর্ণ হয়েছে। প্রধানমন্ত্রী আমাদের আশা পূর্ণ করেছেন।
একই অনুভূতি প্রকাশ করেছেন আরেক বুকিং সহকারী নুর জাহান। তিনি বলেন, প্রধানমন্ত্রীকে কাছ থেকে দেখেছি। আমাদের সাথে হ্যান্ডশেক করেছেন, যা ছিল ভীষণ আনন্দের বিষয়। আমার কাছে থেকে শেখ রেহানা (প্রধানমন্ত্রীর বোন) স্যার টিকিট নিয়েছেন। ওনার নানি-নাতনিরা টিকিট নিয়েছেন। প্রতিটি টিকিট (এসি) ১৪৯ টাকা।
রেল কর্মকর্তাদের সূত্রে জানা যায়, ১৪টি কোচে প্রায় চারশজন প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে পদ্মা সেতু অংশে ভ্রমণে অংশ নেন।
এর আগে মঙ্গলবার সাড়ে ১২টার দিকে পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের আংশিক উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী। পরে যাত্রী হিসেবে টিকিট কেটে ট্রেনে ওঠেন তিনি। এরপর নিজেই হুইসেল (বাঁশি) বাজান এবং সংকেত দেন ট্রেন ছাড়ার। মাওয়া থেকে ট্রেনে পদ্মা সেতু পার হয়ে ২টা ৪০ মিনিটে ভাঙ্গার জনসভায় যোগ দেন তিনি।
পরবর্তীতে ভাঙ্গা থেকে বিকেল ৪টায় গোপালগঞ্জের উদ্দেশে রওয়ানা হন সরকারপ্রধান। এরপর সাড়ে ৫টায় টুঙ্গিপাড়ায় পৌঁছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ ছাড়াও ফাতেহা পাঠ ও মোনাজাতে অংশ নেন বঙ্গবন্ধুকন্যা। রাতে টুঙ্গিপাড়ায় নিজ বাড়িতে থাকবেন সরকারপ্রধান।
পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের মাধ্যমে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত প্রায় ১৬৯ কিলোমিটার দীর্ঘ নতুন রেলপথ নির্মাণ করছে রেলওয়ে। এর মধ্যে ঢাকা থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত প্রায় ৮২ কিলোমিটার রেলপথ চালু হচ্ছে।
যশোর পর্যন্ত পুরো প্রকল্প উদ্বোধন হবে ২০২৪ সালের জুনে। এ লক্ষ্য ঠিক করে এগিয়ে যাচ্ছে রেল কর্তৃপক্ষ।
এ প্রকল্পের মাধ্যমে ট্রান্স এশিয়ান রেলওয়ের নেটওয়ার্কের সঙ্গে যুক্ত হবে ঢাকা-যশোর পর্যন্ত পদ্মা সেতু রেল লিংক রুটটি। এ রুট দিয়ে বাংলাদেশের রেলপথ ভারতের সঙ্গে যুক্ত হচ্ছে বেনাপোল-পেট্রাপোল সীমান্ত দিয়ে।