নিজস্ব প্রতিবেদক :
দেশের প্রথম বিদ্যুৎ চালিত ও দ্রুতগতির গণপরিবহন ব্যবস্থা মেট্রোরেলের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) স্টেশন বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) চালু হয়েছে। সকাল সাড়ে ৭টায় মতিঝিল থেকে শুরু হয়ে প্রথমবারের মতো ঢাবির টিএসসি স্টেশনে থামে মেট্রোরেল। স্টেশনটি সকাল সাড়ে ৬টায় খুলে দেওয়া হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন চালু হওয়ায় ব্যাপক উচ্ছ্বসিত ঢাবি ও আশপাশের শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা।
বুধবার (১৩ ডিসেম্বর) সকালে সেটিও চালু হয়েছে।
এদিন মতিঝিল থেকে ছেড়ে আসা মেট্রোরেল সকাল ৭টা ৩৫ মিনিটে টিএসসি স্টেশনে প্রথম পৌঁছে। তবে উচ্ছ্বসিত শিক্ষার্থীরা সকাল ৭টা থেকেই টিএসসি স্টেশনে অপেক্ষা করতে থাকেন। এ সময় প্রথমবারের মতো মেট্রোরেলে চড়া নিয়ে উচ্ছ্বাস প্রকাশ করেন তারা এবং এই উন্নয়ন প্রকল্পের জন্য ধন্যবাদ জানান প্রধানমন্ত্রীকে।
যাত্রীরা বলছেন, যানজটের দুর্ভোগ কমিয়ে স্বল্প সময় এবং নির্ঝঞ্জাট যাত্রার জন্য মেট্রোরেল এখন ঢাকাবাসীর জন্য আশীর্বাদ। আজ থেকে আগারগাঁও-মতিঝিল অংশে আরো দুটি স্টেশন চালু হওয়ার ফলে যোগাযোগ ক্ষেত্রে এক নতুন সম্ভাবনার দ্বার উন্মোচিত হয়েছে। স্বল্প সময়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে উত্তরা পর্যন্ত যাওয়া আসার ক্ষেত্রে কষ্ট লাঘব হয়েছে বহুগুণ।
উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আরেক শিক্ষার্থী বিপ্র মিত্র বলেন, ভালো লাগছে। তবে শিক্ষার্থীদের পক্ষে এ ভাড়া বহন করে নিয়মিত যাতায়াত অসম্ভব। উত্তরা থেকে আসলে একজন শিক্ষার্থীর আসা যাওয়ায় ১৮০ টাকা খরচ হবে। এই টাকায় নিয়মিত যাতায়াত শিক্ষার্থীদের জন্য কঠিন। ফলে শিক্ষার্থীদের হাফ পাশের ব্যবস্থা করা উচিত।
মেট্রোরেলে চড়ছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তারাও। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল টিমের সদস্য ওমর বলেন, চড়ে দেখলাম মেট্রোরেল কেমন। ভালো লাগছে। চমৎকার।
ঢাকা মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থী অনি হাসান বলেন, মেট্রোতে চড়ে অনেক ভালো লাগছে। আমি মিরপুর-১২ থেকে এত দ্রুত কখনো পৌঁছাইনি। তাছাড়া পরিবেশও ভালো।
ঢাবি শিক্ষার্থী তানিয়া তাবাসসুম বলেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় আমাদের কাছে আবেগের জায়গায়। সেখানে আরেক আবেগ বাংলাদেশের যোগাযোগব্যবস্থায় উন্নয়নের মেগা প্রজেক্ট মেট্রোরেল যুক্ত হলো। সেই স্বপ্নের মেট্রোরেলে প্রথমবারের মতো চড়বো, তাই সকালেই প্রথম ট্রেন ধরার জন্য চলে এসেছি। এ এক অন্য রকম ভালো লাগা লাজ করছে। এই উন্নয়ন অগ্রযাত্রার জন্য সরকারকে ধন্যবাদ।
সকালে টিএসসি স্টেশনে কথা হয় ঢাবি ছাত্রলীগ সাধারণ সম্পাদক তানবীর হাসান সৈকতের সঙ্গে। তিনি বলেন, মেট্রোরেল আরও আগে থেকে শুরু হলেও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সেবাটি পাননি। আজ থেকে আমরা সেই সেবা পাচ্ছি। ইতোমধ্যে শিক্ষার্থীরা আগ্রহ-উচ্ছ্বাস নিয়ে এসে পৌঁছেছে স্বপ্নের মেট্রোরেলে চড়তে। মেট্রোরেল আমার কাছে খুবই ভালো লেগেছে, এ জন্য প্রধানমন্ত্রীকে ধন্যবাদ জানাই। মেট্রোরেল তারুণ্যের ড্রিম প্রজেক্ট ছিল, সেটি বাস্তবায়ন করেছেন বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা।
শুধু শিক্ষার্থীরা নয়, চাকরিজীবীরাও বললেন স্বস্তির কথা। সেলিনা পারভীন নামের এক চাকরিজীবী বলেন, নিঃসন্দেহে এটি আমাদের জন্য একটি সুন্দর উপহার। ঢাকার ভয়াবহ যানজটের মধ্যে মেট্রোরেল আমাদের জন্য বড় একটি স্বস্তি। ট্রেন চলাচলের সময় যদি বাড়ানো হয় তবে সাধারণ মানুষ আরও বেশি উপকৃত হতে পারবে। একইসঙ্গে মেট্রো ট্রেন ব্যবহারে সাধারণ মানুষকেও যত্নশীল হতে হবে বলে মন্তব্য করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ৪ নভেম্বর মেট্রোরেলের আগারগাঁও থেকে মতিঝিল অংশের উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরদিনই উত্তরা হতে মতিঝিল পর্যন্ত মেট্রোরেলের চলাচল শুরু হয়। তবে মতিঝিল পর্যন্ত সকাল সাড়ে ১১টা পর্যন্ত চলাচল করছে। আর উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত আগের সময় রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চলছে মেট্রোরেল। বর্তমানে উত্তরা থেকে আগারগাঁও পর্যন্ত সব স্টেশনই চালু রয়েছে। আগারগাঁও থেকে মতিঝিলের ৭টি স্টেশনের শাহবাগ ও কারওয়ান বাজার ছাড়া সব স্টেশনই চালু হল। আগামী জানুয়ারি মাসের মাঝামাঝি চালু হতে পারে এ দুটি মেট্রো স্টেশন।
জানা গেছে, সব স্টেশন চালু হওয়ার পর দিন-রাত চলাচল করবে মেট্রোরেল। বর্তমানে সকাল সাড়ে ৭টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত মতিঝিল থেকে উত্তরা রুটে মেট্রোরেল চলাচল করছে। আর আগারগাঁও থেকে উত্তরা রুটে চলাচল করছে সকাল সাড়ে ৮টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত। এর বাইরে এমআরটি কার্ডধারীদের জন্য রয়েছে দুটি আলাদা ট্রেন।
আগে থেকে চালু থাকা ১২টি মেট্রো স্টেশন হচ্ছে— উত্তরা উত্তর, উত্তরা সেন্টার, উত্তরা দক্ষিণ, পল্লবী, মিরপুর-১১, মিরপুর-১০, কাজীপাড়া, শেওড়াপাড়া, আগারগাঁও, ফার্মগেট, বাংলাদেশ সচিবালয় এবং মতিঝিল। আজ থেকে এ তালিকায় যুক্ত হলো বিজয় সরণি ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় স্টেশন।