সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের খুকনি বাজার-কাইজ্যা বিশ্বনাথপুর সড়কের নতুন ঘাটাবাড়ি গ্রামের মাঝে প্রবাহমান কোনাই নদীর উপরে পৌনে ৪ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে কংক্রিট সেতুতে উঠতে লাগে কাঠ-বাঁশের সাঁকো। কংক্রিট সেতুটির দুইপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ না থাকায় স্থানীয়রা সেচ্ছাশ্রমে নিজ অর্থায়নে সেতুর দুইপাশে কাঠ ও বাঁশ দিয়ে সাঁকো তৈরি করে পারাপার হচ্ছে। ফলে খুকনি, জালালপুর ও কৈজুরি এ ৩টি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতে চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
স্থানীয়রা জানায়, ২০২১-২০২২ অর্থবছরে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) অর্থায়নে ‘সিরাজগঞ্জ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্প’ এর আওতায় সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুর উপজেলার খুকনি ইউনিয়নের খুকনি বাজার-কাইজ্যা বিশ্বনাথপুর সড়কের নতুন ঘাটাবাড়ি গ্রামের মাঝে প্রবাহমান কোনাই নদীর উপরে ৩ কোটি ৭৪ লাখ ৮৫ হাজার ৩৭ টাকা ব্যয়ে ৬০ মিটার দৈর্ঘ্যরে কংক্রিট সেতুটির নির্মাণ কাজ শুরু হয়। দীর্ঘ ৪ বছর নানা জটিলতা কাটিয়ে গত ৮ মাস আগে সেতুটির নির্মাণ কাজ শেষ হয়। কিন্তু ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মের্সাস ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেড সেতুটির নির্মাণের পর এর দুইপাশে সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করেই পালিয়ে যান।
ফলে বিকল্প সড়ক না থাকায় খুকনি, জালালপুর ও কৈজুরি এ ৩টি ইউনিয়নের ১৪টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষের যাতায়াতে চরম ভোগান্তি শুরু হয়। তারা নিরুপায় হয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কাছে বার বার আবেদন করে। কিন্তু সংযোগ সড়ক নির্মাণ না হওয়ায় তারা নিজেরাই উদ্যোগ নিয়ে নিজ অর্থায়নে ও সেচ্ছাশ্রমে সেতুটির দুইপাশে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে ১৫/২০ ফুট দৈর্ঘ্যরে সাঁকো তৈরি করে ঝুঁকি নিয়ে এ কংক্রিট সেতুটি পারাপার হচ্ছে। মানুষজন পায়ে হেটে পাড় হতে পারলেও ভ্যান-রিকশা ও ভারি যানবাহণ পারাপার হতে পাড়ছে না। ফলে ভারি পণ্য মাথায় করে পারাপার করতে হচ্ছে। এতে পরিবহণ খরচ বৃদ্ধিও পাশাপাশি অধিক শ্রম ব্যয় হচ্ছে।
অপরদিকে একটু বৃষ্টি হলেই কাঠ-বাশেঁর সংযোগ সাঁকোটি পিচ্ছিল হয়ে যায়। ফলে প্রায়ই পণ্য বহনকারী ব্যক্তি ও স্কুলগামী কমলমতি শিশুরা শ্লীপকেটে খাদে পড়ে দুর্ঘটনার শিকার হয়। আবার পণ্যবাহী ভ্যান-রিকশা, মোটরসাইকেল যাতায়াতেও ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ভ্যান চালক মোজা সরকার জানায়, খুকনি বা এনায়েতপুর থেকে মালামাল এনে মাথায় করে সেতু পাড় করতে হয়। এরপর ভ্যান পাড় করতে হয়। এরজন্য ২/৩ জন সহযোগী লাগে। এতে অতিরিক্ত খরচ ও শ্রম ব্যয় হয়। যা খুবই কষ্টদায়ক।
এ বিষয়ে আশরাফ আলী, হযরত আলী সোহেল রানা, আব্দুস সালাম, ফটিক মিয়া, আব্দুল জব্বার, নাঈম ইসলাম, মান্নান মোল্লা, মনিরুল ইসলাম ও ফজলুল করিম জানান, অনেক ভোগান্তির পর সেতুটির নির্মাণ কাজ ৮ মাস আগে শেষ হয়েছে। এরপর ঠিকাদার সংযোগ সড়ক নির্মাণ না করেই পালিয়ে গেছে। ফলে খুকনি ইউনিয়নের পোড়াকম, বিশ্বনাথপুর, ক্যাইজা, নতুন ঘাটাবাড়ি, সড়াতৈল, রূপসী, জালালপুর ইউনিয়নের সৈয়দপুর, চ্যাংটাপাড়া, কৈজুরি ইউনিয়নের পাচিল, জয়পুরা ও গোপালপুর সহ ১৪টি গ্রামের প্রায় ২০ হাজার মানুষ সেতুটি পাড় হতে চরম দুর্ভোগ পোহাচ্ছে। এ এলাকায় উৎপাদিত ধান-চাল, শবজি ও কৃষিপণ্য বাজারে নিতে ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে। অসুস্থ ও গর্ভবতী নারী, শিশুসহ রোগীদের হাসপাতাল বা ক্লিনিকে নিতে হচ্ছে বাশের চাঙ্গারি বা ঘাড়ে করে। এতে রোগীদেরও চরম দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে।
এ বিষয়ে ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান মের্সাস ইউনুস এন্ড ব্রাদার্স প্রাইভেট লিমিটেডের কেউ কথা বলতে রাজি হয়নি।
শাহজাদপুর উপজেলা এলজিইডির প্রকৌশলী এ, এইচ, এম, কামরুল হাসান রনি বলেন, ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দ্রুত সময়ের মধ্যে সেতুটির দুইপাশের সংযোগ সড়ক নির্মাণের নির্দেশ দিয়ে চিঠি প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া ঠিকাদারের শেষ কিস্তির বিলের টাকাও আটকে দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, খবর পেয়েছি ঠিকাদার সংযোগস্থলে মাটি ভরাটের কাজ শুরু করেছে। সময়মত কাজ শেষ না হলে ঠিকাদারের বিল বাতিল করে নতুন দরপত্র আহ্বান করা হবে।
সিরাজগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি 
























