নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাজারে পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিক। এক্ষেত্রে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পেঁয়াজ আমদানি হবে কী না, সেটা আগামী দু-একদিনের মধ্যে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলে জানিয়েছেন কৃষিমন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক।
রোববার (২১ মে) সচিবালয়ে তার অফিসকক্ষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন তিনি।
পেঁয়াজের দাম মণপ্রতি ৩০০ থেকে ৪০০ টাকা দাম কমেছে জানিয়ে কৃষিমন্ত্রী বলেন, স্থানীয়ভাবে পেঁয়াজের দাম নিয়ন্ত্রণ করা না গেলে দ্রুত ভারত থেকে আমদানি করার সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে। ৪৫ টাকার বেশি পেঁয়াজের দাম হওয়া উচিত না। পেঁয়াজ আমদানি করা হলে ৪৫ টাকার নিচে চলে আসবে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, সবকিছুর একটা ধারাবাহিকতা থাকে, কিন্তু গত এক সপ্তাহে পেঁয়াজের দামে সে ধারাবাহিকতা রাখা যায়নি। সাধারণত বাজার সাপ্লাই এবং ডিমান্ডের ওপর নির্ভর করে। গত বছর পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকা সত্ত্বেও কিছু অসাধু আড়ৎদারের কারণে গুদামে অনেক পেঁয়াজ পঁচে গেছে।
তিনি বলেন, আমাদের মোট ভূখণ্ডের মোট ৬০ ভাগ জমি আবাদ করা হয়। আবার একই জমিতে একাধিক ফসল হচ্ছে। আমাদের দেশের মোট জনসংখ্যার সঙ্গে প্রতিবছর প্রায় ২০ থেকে ২৪ লাখ মানুষ নতুন করে যোগ হচ্ছে।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজের দাম ২৫ থেকে ৩০ টাকা হওয়াও কোনভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা বিষয়টা মনিটরিং করছি। আমাদের অফিসারদের মাঠ পর্যায়ে পাঠিয়েছি। তারা পর্যবেক্ষণ করে দেখেছে, কৃষকদের ঘরে পেঁয়াজ থাকলেও দাম বাড়াবে- এমন আশায় তারা অনেকেই মজুদ করে রেখে দিচ্ছেন। এতে দাম বৃদ্ধি পাচ্ছে।
মন্ত্রী বলেন, পেঁয়াজ খুবই পচনশীল ফসল। এটি রাখা কঠিন। ধান কিংবা সরিষা নিয়ে কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু পেঁয়াজ রাখা যায় না, শুকিয়ে যায়। শুকিয়ে গেলে ওজন কমে যায়, তখন দাম অনেক কমে যায়।’
আবদুর রাজ্জাক বলেন, পেঁয়াজের শেলফ লাইফ কম। আলুর মতো না। তবে আমরা কিছু প্রযুক্তি নিয়ে এসেছি, কীভাবে গুদামে রাখা যায়। যদি শেলফ লাইফ বাড়ান যেত, তাহলে আমাদের যে উৎপাদন হচ্ছে, তাতে পেঁয়াজ দিয়ে বাজার ভাসিয়ে দেওয়া যেত।
কৃষিমন্ত্রী বলেন, দ্রব্যমূল্য নিয়ে বাজারে অস্থিরতা রয়েছে। পেঁয়াজের দাম অস্বাভাবিকভাবে ওঠানামা করছে। ৮০ টাকা কেজি কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য না।
তিনি বলেন, গত বছর পর্যাপ্ত পেঁয়াজ থাকা সত্ত্বেও কিছু অসাধু আড়ৎদারের কারণে গুদামে অনেক পেঁয়াজ পঁচে গেছে। শিগগিরই বাজার নিয়ন্ত্রণে না এলে পেঁয়াজ আমদানি করতে বাধ্য হবে সরকার। পেঁয়াজের বাজার যারা সিন্ডিকেট করছে, তাদের নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা হচ্ছে। সেটা সিরিয়াসলি দেখা হচ্ছে। আলু নিয়ে সমস্যা হবে না।
আব্দুর রাজ্জাক বলেন, আমি একজন আশাবাদী মানুষ। পত্রিকায় যে রিপোর্টই আসুক। আমেরিকা আরও স্যাংশন দেবে বলে আমি মনে করি না। স্যাংশন যদি দেয় একটা স্বাধীন দেশ হিসেবে আমাদের এর মধ্য দিয়েই চলতে হবে।
প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, যারা স্যাংশন দেবে তাদের কাছ থেকে আমরা কিছু কিনব না। এর তিনদিনের মধ্যে আমরা যুক্তরাষ্ট্র থেকে ডাল ও চিনি কিনছি- এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে কৃষিমন্ত্রী বলেন, আরও যদি স্যাংশন দেয় সেটা বলছি। চায়নার বিরুদ্ধে কত কিছু বলছে। চায়নার জিনিসে তো আমেরিকার বাজার সয়লাব হয়ে আছে। ওইভাবে বন্ধ হয় না। যদি একেবারে নিষিদ্ধ করে দেয় যে বাংলাদেশের গার্মেন্টস নেবে না বা অমুক পণ্য নেবে না। আমার মনে হয় না আমেরিকা এ ধরনের স্যাংশন বাংলাদেশে দেবে।
ব্রিফিংকালে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের ব্যাপারে কৃষিমন্ত্রী বলেন, বাস্তবতা বুঝে যুক্তরাষ্ট্র কোনো নিষেধাজ্ঞা দেবে না। তারা নির্বাচনে সহায়তা করবে। তারা যদি কোনো নিষেধাজ্ঞা দেয় তাহলে সার্বভৌম দেশ হিসেবে নিজেদের মতো করে চলবে বাংলাদেশ। স্বাধীন দেশ হিসেবে অভ্যন্তরীণ বিষয়ে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ কামনা করে না সরকার। সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে সরকার কিছু ক্ষেত্রে ব্যবস্থা নিয়েছে। এর জন্য নিষেধাজ্ঞা দেওয়া ঠিক হয়নি।
কৃষিমন্ত্রী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাংলাদেশের এতগুলো সংবাদমাধ্যম। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও আমার বিরুদ্ধে যার যা খুশি লিখে যাচ্ছে। আমরা তো কাউকে গ্রেপ্তার করি না, বাধাও দেই না। মানুষ পূর্ণ বাকস্বাধীনতা ভোগ করছে। আমি বুঝি না নিষেধাজ্ঞা কেন দেবে? আমার ধারণা, তারা নিষেধাজ্ঞা দেবে না, বাস্তবতা বুঝবে। একটি সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক নির্বাচনে সহায়তা করবে। আমি আশাবাদী, আমেরিকা নিষেধাজ্ঞা দেবে না।
‘আরও মার্কিন নিষেধাজ্ঞা আসছে, প্রস্তুত সরকার’ শিরোনামে খবর ছেপেছে একটি দৈনিক। এ বিষয়ে জানতে চাইলে আব্দুর রাজ্জাক বলেন, লিখতে পারে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঠিকই বলেছেন। স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ হিসেবে বিদেশিদের হস্তক্ষেপ আমরা কোনো দিনই কামনা করি না বা সহজভাবে নিতে পারি না। আমার দৃষ্টিতে বাংলাদেশ একটি মুসলিম অধ্যুষিত দেশ। এখানে আশি শতাংশের বেশি মুসলমান। যেভাবে জঙ্গি তৎপরতা বেড়েছিল, সেই পরিপ্রেক্ষিতে র্যাব ও অন্যান্য আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী জঙ্গিদের দমন করেছে। এমন প্রেক্ষাপটে কিছু কিছু ক্ষেত্রে আমাদের বাস্তববাদী হতে হয়েছে। দেশ ও জাতির স্বার্থে আমাদের সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। আর এ কারণে যদি নিষেধাজ্ঞা দেয়, তাহলে তা কতটা যুক্তিসঙ্গত বলে প্রশ্ন রাখেন তিনি।
মন্ত্রী বলেন, বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো আমাদের বিরুদ্ধে প্রতিদিন অভিযোগ আনছে। সেসব অভিযোগের ভিত্তিতে আমাদের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়। আমি বলি যে, মিশরে কী গণতন্ত্র আছে। নির্বাচিত হয়ে তো একজন প্রেসিডেন্ট হয়েছিল। কিন্তু বর্তমান ক্ষমতাসীনরা তাকেও মেরে ফেলেছে। সেখানে নির্বাচিত প্রেসিডেন্টকে জেলে দেওয়ার ছয়মাসের মধ্যে ৮০০ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়া হয়েছে। আমাদের কয় মিলিয়ন ডলার দিয়েছে তারা? আমরা তো গণতান্ত্রিক দেশ। মিশরের চেয়ে আমাদের সম্পদও কম।
তিনি বলেন, বর্তমানে নির্বাচিত সরকার ক্ষমতায় আছে, ছয়মাস পরে আরও একটি নির্বাচন হবে। পৃথিবীর কোনো দেশে তত্ত্বাবধায়ক সরকার নেই। কাজেই বাংলাদেশে এমন কোনো সরকারের অধীন নির্বাচন হবে না। সংবিধানের বহির্ভূত কিছু হবে না। তবে সুষ্ঠু, সুন্দর ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন হওয়া দরকার। আর এ দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। সরকার কমিশনকে সহায়তা করবে।