আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি জড়িয়ে পড়তে পারে এমন আশঙ্কার মধ্যেই পূর্ব ইংল্যান্ডের মার্কিন ঘাঁটি থেকে বেরিয়েছি চারটি যুদ্ধবিমান।
বুধবার (১৮ জুন) ভোরে রয়্যাল এয়ারফোর্স লেকেনহিথ থেকে অন্তত চারটি এফ ৩৫ বিমান ঘাঁটি ছেড়েছে বলে বিবিসির খবরে বলা হয়েছে। এই বিমানগুলোর সঙ্গে ছিল একটি জ্বালানির ট্যাংকার বিমানও।
এছাড়া, ইরানের মাটির গভীরে তৈরি স্থাপনায় হামলা করতে পারে যে বি টু স্পিরিট বোম্বার বিমান, সেগুলোও ভারত মহাসাগরে ইরান থেকে চার হাজার কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যে একটি ঘাঁটিতে রাখা হয়েছে বলে জানা যাচ্ছে।
গত তিন দিনে যুক্তরাষ্ট্রের অন্তত ৩০টি মিলিটারি বিমান যুক্তরাষ্ট্র থেকে স্পেইন, স্কটল্যান্ড ও ইংল্যান্ডের বিভিন্ন ঘাঁটিতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।
এসব বিমান ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের কারণে ইউরোপে নেওয়া হয়েছে কিনা, তা এখনো নিশ্চিতভাবে জানা যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, বিবিসির মার্কিন সহযোগী সিবিএস নিউজের সূত্র বলছে, ইরানের পরমাণু কার্যক্রমের কেন্দ্রগুলোতে হামলায় ইসরায়েলের সঙ্গে যোগ দিতে পারে যুক্তরাষ্ট্র।
এমন পরিস্থিতিতে বুধবার ভোরে ইরানের শীর্ষ নেতা আলী খামেনি বলেছেন, ইরান জায়নিস্টদের সঙ্গে সমঝোতা করবে না।
মঙ্গলবার রাতে ‘এক্স’ বার্তায় খামেনি লিখেছেন, “আমাদের সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দিতে হবে। আমরা ইহুদিবাদীদের কোনো দয়া দেখাব না।”
এর আগে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বিষয়ে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে দেন। সেখানে তিনি বলেন, “আমরা ঠিক জানি তথাকথিত ‘সর্বোচ্চ নেতা’ কোথায় লুকিয়ে আছেন।”
এর আগে দেওয়া আরেক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “ইরানের আকাশসীমা আমাদের নিয়ন্ত্রণে। এই পোস্ট দুটির পরপরই তৃতীয় আরেকটি পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উল্লেখ করেন, তিনি ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চান।
ট্রাম্পের এসব মন্তব্যের পরপরই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ’ শুরুর ঘোষণা দিয়েছেন খামেনি।
তেহরানে বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন স্থাপনায় ইসরায়েলের হামলা
ইরান-ইসরায়েলের মধ্যে টানা ষষ্ঠ দিনের মধ্যে হামলা ও পাল্টা হামলা চলছে। স্থানীয় সময় বুধবার ভোর ৫টার দিকে ইরানের রাজধানী তেহরানে একাধিক বড় বিস্ফোরণের শব্দ শোনা গেছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনীর (আইডএফ) বরাত দিয়ে টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইসরায়েলি বিমান বাহিনী তেহরানে ক্ষেপণাস্ত্র কারখানা ও ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সঙ্গে সম্পর্কিত ইমাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়কে লক্ষ্যবস্তু করেছে।
ইরানি কর্তৃপক্ষ এ বিষয়ে এখনো কোনো মন্তব্য করেনি।
ইসরায়েলি বাহিনী আগেই সতর্ক করে বলেছিল যে, তারা মেহরাবাদ আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের দক্ষিণে একটি এলাকায় হামলা চালাতে পারে, যার মধ্যে আবাসিক এলাকা, সামরিক স্থাপনা, ওষুধ কোম্পানি এবং শিল্প প্রতিষ্ঠান রয়েছে।
ইরানি সংবাদমাধ্যমগুলো তেহরানের ইমাম হোসেন বিশ্ববিদ্যালয়কে লক্ষ্য করে ইসরায়েলি হামলার তথ্য নিশ্চিত করেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টি ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোরের (আইআরজিসি) সঙ্গে যুক্ত।
এদিকে মঙ্গলবার রাতে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে যুদ্ধ শুরুর ঘোষণা দেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। এরপরপই ইসরায়েলজুড়ে ব্যাপক ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে ইরান।
ইরানের ইসলামিক বিপ্লবী গার্ড কোরের মুখপাত্র কর্নেল ইমান তাজিক বলেছেন, “আজ রাতের ক্ষেপণাস্ত্র হামলা দেখিয়েছে যে আমরা ইসরায়েলের অধিকৃত অঞ্চলের আকাশের উপর সম্পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ অর্জন করেছি এবং এর বাসিন্দারা ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিরুদ্ধে সম্পূর্ণ অরক্ষিত হয়ে পড়েছে।”
টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, ইসরায়েল তার ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থার মাধ্যমে অনেক ইরানি ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন ভূপাতিত করেছে, তবে কিছু ক্ষেপণাস্ত্র আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা ভেদ করে দেশটিতে আঘাত হেনেছে।
খামেনির ‘যুদ্ধ’ ঘোষণার পর ইসরায়েলে ব্যাপক হামলা ইরানের
ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনি মঙ্গলবার রাতে ‘যুদ্ধ শুরু’ ঘোষণার পাশাপাশি ইসরায়েলের প্রতি ‘কোনো দয়া না দেখানোর’ আহ্বান জানানোর পর, ইরান ইসরায়েলে দুই দফা ব্যালেস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালিয়েছে।
ইসরায়েলি সংবাদমাধ্যম টাইমস অব ইসরায়েল জানিয়েছে, মঙ্গলবার রাত ১টার দিকে ইসরায়েলের বিশাল অংশ জুড়ে প্রথম হামলায় সাইরেন বাজতে শুরু করে এবং হামলায় প্রায় ১৫টি প্রজেক্টাইলও অন্তর্ভুক্ত ছিল। প্রায় ৪০ মিনিট পরে প্রায় ১০টি রকেটের পরবর্তী হামলা শুরু হয়।
হামলার কয়েক মিনিট আগে, ইসরায়েল প্রতিরক্ষা বাহিনী ক্ষেপণাস্ত্র হামলার বিষয়ে বাসিন্দাদের সতর্ক করে এবং আশ্রয় নেওয়ার নির্দেশ দেয়।
ইরানের পরপর হামলায় কোনো আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়নি। তবে মধ্য ইসরায়েলের একটি পার্কিং লটে বিস্ফোরণে অসংখ্য গাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এই বিস্ফোরণ সরাসরি ক্ষেপণাস্ত্রের আঘাত কারণে নাকি ইসরায়েলি বাধার ফলে ধ্বংসাবশেষের কারণে লেগেছে তা তাৎক্ষণিকভাবে স্পষ্ট নয়।
ইরানের ইসলামিক রেভোলিউশনারি গার্ড কোর (আইআরজিসি) পরবর্তীতে ইসরায়েলে হাইপারসনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করার দাবি করেছে।
ইসরায়েল-ইরান সংঘাত: জাতিসংঘকে জরুরি পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান
ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চলমান সংঘাত থামাতে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদকে জরুরি ও কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে সংযুক্ত আরব আমিরাত।
বুধবার সংযুক্ত আরব আমিরাতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী শেখ আবদুল্লাহ বিন জায়েদ আল নাহিয়ান বলেছেন, “দুই দেশের মধ্যে যুদ্ধবিরতি আনতে ‘জরুরি ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা’ গ্রহণ করা এখন সময়ের দাবি।”
তিনি বলেন, “সংঘাতটি যেন নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে না যায় এবং তা আরো ভয়াবহ পরিণতির দিকে না গড়ায়, সেজন্য কূটনৈতিক প্রচেষ্টা অপরিহার্য।”
‘বেপরোয়া ও ভুল কোনো পদক্ষেপ’ এই সংঘাতকে ইসরায়েল ও ইরানের সীমা ছাড়িয়ে পুরো অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়ার ঝুঁকি তৈরি করেছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, “সময় থাকতে শান্তিপূর্ণ সমাধানে পৌঁছানো জরুরি।”
এর আগে, সৌদি আরব, কাতার, জর্ডানও সংঘাত বন্ধের আহ্বান জানিয়েছে।
যুদ্ধের ঘোষণা দিলেন খামেনি
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের হুমকির পর মুখ খুলেছেন ইরানের সর্বোচ্চ ধর্মীয় নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনি। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে তিনি লিখেছেন, “যুদ্ধ শুরু হলো।” কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল জাজিরার প্রতিবেদনে এ তথ্য জানানো হয়।
খামেনির এই ঘোষণাটি এসেছে এমন এক সময়, যখন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের শীর্ষ নেতাকে নিয়ে একাধিকবার মন্তব্য করেছেন।
মঙ্গলবার রাতে ‘এক্স’ বার্তায় খামেনি লিখেছেন, “আমাদের সন্ত্রাসী ইহুদিবাদী শাসনব্যবস্থার বিরুদ্ধে কঠোর জবাব দিতে হবে। আমরা ইহুদিবাদীদের কোনো দয়া দেখাব না।”
এর আগে, ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলি খামেনির বিষয়ে ইঙ্গিত করে ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এক পোস্টে দেন। সেখানে তিনি বলেন, “আমরা ঠিক জানি তথাকথিত ‘সর্বোচ্চ নেতা’ কোথায় লুকিয়ে আছেন।”
এর আগে দেওয়া আরেক পোস্টে ট্রাম্প বলেন, “ইরানের আকাশসীমা আমাদের নিয়ন্ত্রণে। এই পোস্ট দুটির পরপরই তৃতীয় আরেকটি পোস্টে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প উল্লেখ করেন, তিনি ইরানের নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ চান।
মূলত ট্রাম্পের এসব মন্তব্যের পরপরই ইসরায়েলের বিরুদ্ধে ‘যুদ্ধ শুরুর’ ঘোষণা দিলেন খামেনি।