Dhaka মঙ্গলবার, ১২ অগাস্ট ২০২৫, ২৮ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পুলিশ দেশমাতৃকার টানে পালিয়ে যায় না: ডিএমপি কমিশনার

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে পুলিশ দেশের জনগণের পাশে ছিল, থাকবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার সময় সিদ্দিকুর রহমান পালিয়ে না গিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন। ২০১৩ সালে আগুনসন্ত্রাস, করোনা মহামারিসহ নানা ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ দেশমাতৃকার টানে পালিয়ে যায়নি, পালিয়ে যায় না।

মঙ্গলবার (২ মে) সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে শহীদ এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তনে নিউমার্কেট অগ্নি দুর্ঘটনার সময় পুলিশ সদস্যদের ভালো ও মানবিককাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার দেওয়ার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে পুলিশ দেশের জনগণের পাশে ছিল, থাকবে। স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য অকাতরে জীবন দিয়েছে পুলিশ। দেশের যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সবসময় প্রস্তুত পুলিশ।

পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ণ না করতে সতর্ক করলেন ডিএমপি কমিশনার

তিনি বলেন, ২০১২/১৩ সালে আগুন সন্ত্রাসের সময় পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা নির্যাতন চালানো হয়েছে, পুড়িয়ে মারা হয়েছে। রাজশাহীতে হেলমেট দিয়ে থেঁতলে পুলিশ সদস্যদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সে সময়ও পুলিশ পিছু হটেনি। দেশমাতৃকা রক্ষা করেছে। ২০১৫-১৬ সালের দিকে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। হলি আর্টিসান হামলায়, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ছিল টার্গেট। তখনও পুলিশ পিছপা হয়নি। বিশ্বব্যাপী পুলিশ যে কাজটা করতে পারেনি, বাংলাদেশ পুলিশ কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

করোনাকালে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, বাবা ছেলের লাশ ফেলে পালিয়ে যাচ্ছিল, দাফন করার মানুষ মিলছিল না, তখন পুলিশই দাফন কাফনের কাজ করেছে। মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সিনিয়র অফিসার, আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে। আমার পুলিশ, আমার সহকর্মীদের উৎসাহিত করা, অনুপ্রেরণা, সাহস দেওয়া আমাদের পবিত্র দায়িত্ব-কর্তব্য। কারণ তারা দেশমাতৃকা রক্ষা সদা জাগ্রত। মুখে বাঁশি বাজানো, মাথায় বিশাল কাপড়ের বস্তা নিয়ে বের হওয়ার ছবি সারা দেশে ভাইরাল হয়েছে। এটা বাংলাদেশ তথা ডিএমপির মর্যাদা অনেক দূর নিয়ে গেছে। ডিএমপির সদস্যরা যা করেছেন তা পুরস্কার দিয়ে পূরণ সম্ভব নয়। তবে ভালো কাজের স্বীকৃতি এটি। এটি ম্যাসেজ। বাকি সদস্যরা যেন এটা বোঝেন, উৎসাহিত হোন। পুলিশ সদস্যরা ভবিষ্যতে যারাই ভাল কাজ করবেন তাদের পুরস্কৃত করা হবে।

কমিশনার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশের অবদান অনেক সম্মানিত নাগরিক অনুধাবন করতে পারেন না। আমরা কষ্ট পাই, দুঃখ পাই। কারণ চামড়াপোড়া গরমে পুলিশ সদস্যরা সারাদিন ডিউটি করেন। কিন্তু কোনো ট্রাফিক পুলিশ ট্রাক ড্রাইভারের কাছ থেকে কয় টাকা নেন তার নিউজ করেন, ছবি প্রকাশ করেন। সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ করব, পুলিশ অনেক ভাল কাজ করেন, সেটি প্রচার করুন। পুলিশের কষ্টের কথাগুলো তুলে ধরেন। জনগণ যেন বুঝতে পারে।

কমিশনার বলেন, ঢাকা শহরে ১০ হাজার পুলিশ রাত জেগে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের এ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই আপনি রাতে নিরাপদে ঘুমাতে পারেন। আমাদের পুলিশ সদস্যরা রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের শরীর পুড়ে যায়। সেসব কষ্টের কথা লেখা হয় না। কে কোন দিন একটু অন্যায় করেছে সেগুলো তুলে ধরে প্রতিবেদন করা হয়। কয়েকজনের দায় ঢাকা মহানগরীর ৩২ হাজার পুলিশ সদস্য মেনে নেবে না।

খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের শরীরের চামড়া পুড়ছে… অথচ কোন ট্রাক ড্রাইভারের কাছ থেকে কোথায় কোন পুলিশ সদস্য কত টাকা চাঁদা নিলো; তা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়।’ পুলিশের কষ্টের বিষয়গুলো-ও গণমাধ্যমকে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি। অবশ্য সম্প্রতি অনেক সাংবাদিক পুলিশের বিভিন্ন কষ্টের বিষয় তুলে ধরছেন বলেও উল্লেখ করেন ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, আগামীতে কঠিন চ্যালেঞ্জ আসবে। প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে আমরা জীবন দিয়ে হলেও সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকবে।মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রতিটি সময় আমরা এর প্রমাণ দিয়েছি।

দুয়েকজন পুলিশ সদস্য ভুল করলে, অপরাধ করলে তাদের দায় দায়িত্ব পুলিশ নেবে না বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার। এসময় তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা প্রতিনিয়ত ভালো কাজ করে যাচ্ছেন। দুয়েকজন সদস্যের জন্য আপনাদের সম্মান মাটিতে মিশে যাবে, এটা যেন না হয়। সম্মান নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। কেউ কোনও ধরনের অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকবেন না, যার জন্য ডিএমপির ৩২ হাজার পুলিশ সদস্যদের গায়ে দাগ পড়ে।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেউ যদি অন্যায় করে, পুলিশ বাহিনীর সম্মান মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়? এটা কি কেউ মেনে নেবেন? সমস্বরে উপস্থিত সদস্যরা বলেন, না কখনো মেনে নেব না।

পুলিশের অবদান অনুধাবন করায় নাগরিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, অনেক সম্মানিত নাগরিক পুলিশের অবদান স্বীকার করেন না, পুলিশের অবদান মানতে চান না। এটা আমাদের জন্য অনেকটা কষ্টদায়ক, দুঃখজনক। পুলিশ পাহারা দেয় বলেই আপনারা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন।’ নাগরিকদের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, নিউমার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য পরাণসহ রমনা বিভাগের ডিসির যে মানবিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, তা নতুন কিছু নয়। এটা আমাদের অতীতের ধারাবাহিকতার অংশ। ৭১ থেকে ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে দেশ মাতৃকা রক্ষায়। দেশের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেয়। আমরা ম্যানেজমেন্ট লেভেলে যারা বসে আছি তাদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। দেশ মাতৃকার কল্যাণে কাজ করা পুলিশ সদস্যদের পাশে থাকা, তাদের সাহস দেওয়া, তাদের অনুপ্রেরণা দেওয়া— তা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। আমি সেই কাজটি করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

নিউ মার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের দিনের বর্ণনা করে তিনি বলেন, সেখানে যেদিন আগুন লাগে, সেদিন আমাদের সদস্যরা এক হাতে বাঁশি এবং কাঁধে জিনিসপত্র নিয়ে ভবন থেকে নিচে নেমে আসা ডিএমপি পুলিশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। যারা সেদিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাদের সামান্য কিছু পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে। এটা দিয়ে তাদের নতুন ঘর-বাড়ি উঠবে না, এক সেট ভালো পোশাকও কিনতে পারবেন না; এটা হলো তাদের কাজের উৎসাহ দেওয়া। বাকি সদস্য যারা আছেন, তারা যাতে মনে করেন— ভালো কাজ করলে সবাই এ ধরনের উৎসাহ পাবেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামান, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

পুলিশ দেশমাতৃকার টানে পালিয়ে যায় না: ডিএমপি কমিশনার

প্রকাশের সময় : ০৩:৫৯:২৭ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২ মে ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে পুলিশ দেশের জনগণের পাশে ছিল, থাকবে। ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে হত্যার সময় সিদ্দিকুর রহমান পালিয়ে না গিয়ে আত্মাহুতি দিয়েছেন। ২০১৩ সালে আগুনসন্ত্রাস, করোনা মহামারিসহ নানা ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশ দেশমাতৃকার টানে পালিয়ে যায়নি, পালিয়ে যায় না।

মঙ্গলবার (২ মে) সকালে রাজারবাগ পুলিশ লাইনে শহীদ এসআই শিরু মিয়া মিলনায়তনে নিউমার্কেট অগ্নি দুর্ঘটনার সময় পুলিশ সদস্যদের ভালো ও মানবিককাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কার দেওয়ার অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এ কথা বলেন।

খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ১৯৭১ সাল থেকে পুলিশ দেশের জনগণের পাশে ছিল, থাকবে। স্বাধীনতা ও বাংলাদেশের সার্বভৌমত্বের জন্য অকাতরে জীবন দিয়েছে পুলিশ। দেশের যেকোনো দুর্যোগ মোকাবিলায় সবসময় প্রস্তুত পুলিশ।

পুলিশের সুনাম ক্ষুণ্ণ না করতে সতর্ক করলেন ডিএমপি কমিশনার

তিনি বলেন, ২০১২/১৩ সালে আগুন সন্ত্রাসের সময় পুলিশ সদস্যদের ওপর হামলা নির্যাতন চালানো হয়েছে, পুড়িয়ে মারা হয়েছে। রাজশাহীতে হেলমেট দিয়ে থেঁতলে পুলিশ সদস্যদের হত্যার চেষ্টা করা হয়েছে। সে সময়ও পুলিশ পিছু হটেনি। দেশমাতৃকা রক্ষা করেছে। ২০১৫-১৬ সালের দিকে জঙ্গিবাদ মাথাচাড়া দিয়ে উঠে। হলি আর্টিসান হামলায়, সিলেটসহ বিভিন্ন স্থানে পুলিশ ছিল টার্গেট। তখনও পুলিশ পিছপা হয়নি। বিশ্বব্যাপী পুলিশ যে কাজটা করতে পারেনি, বাংলাদেশ পুলিশ কিন্তু দ্রুত সময়ের মধ্যে জঙ্গিবাদকে নিয়ন্ত্রণে এনেছে।

করোনাকালে বাংলাদেশ পুলিশের ভূমিকার কথা উল্লেখ করে কমিশনার বলেন, বাবা ছেলের লাশ ফেলে পালিয়ে যাচ্ছিল, দাফন করার মানুষ মিলছিল না, তখন পুলিশই দাফন কাফনের কাজ করেছে। মানুষের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দিয়েছে।

তিনি বলেন, আমরা সিনিয়র অফিসার, আমাদের কিছু দায়িত্ব আছে। আমার পুলিশ, আমার সহকর্মীদের উৎসাহিত করা, অনুপ্রেরণা, সাহস দেওয়া আমাদের পবিত্র দায়িত্ব-কর্তব্য। কারণ তারা দেশমাতৃকা রক্ষা সদা জাগ্রত। মুখে বাঁশি বাজানো, মাথায় বিশাল কাপড়ের বস্তা নিয়ে বের হওয়ার ছবি সারা দেশে ভাইরাল হয়েছে। এটা বাংলাদেশ তথা ডিএমপির মর্যাদা অনেক দূর নিয়ে গেছে। ডিএমপির সদস্যরা যা করেছেন তা পুরস্কার দিয়ে পূরণ সম্ভব নয়। তবে ভালো কাজের স্বীকৃতি এটি। এটি ম্যাসেজ। বাকি সদস্যরা যেন এটা বোঝেন, উৎসাহিত হোন। পুলিশ সদস্যরা ভবিষ্যতে যারাই ভাল কাজ করবেন তাদের পুরস্কৃত করা হবে।

কমিশনার দুঃখ প্রকাশ করে বলেন, পুলিশের অবদান অনেক সম্মানিত নাগরিক অনুধাবন করতে পারেন না। আমরা কষ্ট পাই, দুঃখ পাই। কারণ চামড়াপোড়া গরমে পুলিশ সদস্যরা সারাদিন ডিউটি করেন। কিন্তু কোনো ট্রাফিক পুলিশ ট্রাক ড্রাইভারের কাছ থেকে কয় টাকা নেন তার নিউজ করেন, ছবি প্রকাশ করেন। সাংবাদিক ভাইদের অনুরোধ করব, পুলিশ অনেক ভাল কাজ করেন, সেটি প্রচার করুন। পুলিশের কষ্টের কথাগুলো তুলে ধরেন। জনগণ যেন বুঝতে পারে।

কমিশনার বলেন, ঢাকা শহরে ১০ হাজার পুলিশ রাত জেগে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের এ দায়িত্ব পালনের মাধ্যমেই আপনি রাতে নিরাপদে ঘুমাতে পারেন। আমাদের পুলিশ সদস্যরা রোদের মধ্যে রাস্তায় দাঁড়িয়ে দায়িত্ব পালন করেন। তাদের শরীর পুড়ে যায়। সেসব কষ্টের কথা লেখা হয় না। কে কোন দিন একটু অন্যায় করেছে সেগুলো তুলে ধরে প্রতিবেদন করা হয়। কয়েকজনের দায় ঢাকা মহানগরীর ৩২ হাজার পুলিশ সদস্য মেনে নেবে না।

খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, রোদ-বৃষ্টি উপেক্ষা করে পুলিশ সদস্যরা দায়িত্ব পালন করছেন, তাদের শরীরের চামড়া পুড়ছে… অথচ কোন ট্রাক ড্রাইভারের কাছ থেকে কোথায় কোন পুলিশ সদস্য কত টাকা চাঁদা নিলো; তা গণমাধ্যমে ফলাও করে প্রচার হয়।’ পুলিশের কষ্টের বিষয়গুলো-ও গণমাধ্যমকে তুলে ধরার আহ্বান জানান তিনি। অবশ্য সম্প্রতি অনেক সাংবাদিক পুলিশের বিভিন্ন কষ্টের বিষয় তুলে ধরছেন বলেও উল্লেখ করেন ডিএমপি কমিশনার।

তিনি বলেন, আগামীতে কঠিন চ্যালেঞ্জ আসবে। প্রতিটি চ্যালেঞ্জকে আমরা জীবন দিয়ে হলেও সাহসের সঙ্গে মোকাবিলা করতে প্রস্তুত থাকবে।মুক্তিযুদ্ধ থেকে শুরু করে প্রতিটি সময় আমরা এর প্রমাণ দিয়েছি।

দুয়েকজন পুলিশ সদস্য ভুল করলে, অপরাধ করলে তাদের দায় দায়িত্ব পুলিশ নেবে না বলেও জানান ডিএমপি কমিশনার। এসময় তিনি পুলিশ সদস্যদের উদ্দেশ করে বলেন, আপনারা প্রতিনিয়ত ভালো কাজ করে যাচ্ছেন। দুয়েকজন সদস্যের জন্য আপনাদের সম্মান মাটিতে মিশে যাবে, এটা যেন না হয়। সম্মান নিয়ে যেন কেউ ছিনিমিনি খেলতে না পারে। কেউ কোনও ধরনের অপরাধমূলক কাজের সঙ্গে জড়িত থাকবেন না, যার জন্য ডিএমপির ৩২ হাজার পুলিশ সদস্যদের গায়ে দাগ পড়ে।

তিনি হুঁশিয়ারি দিয়ে বলেন, কেউ যদি অন্যায় করে, পুলিশ বাহিনীর সম্মান মাটির সঙ্গে মিশিয়ে দেয়? এটা কি কেউ মেনে নেবেন? সমস্বরে উপস্থিত সদস্যরা বলেন, না কখনো মেনে নেব না।

পুলিশের অবদান অনুধাবন করায় নাগরিকদের ধন্যবাদ জানিয়ে খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, অনেক সম্মানিত নাগরিক পুলিশের অবদান স্বীকার করেন না, পুলিশের অবদান মানতে চান না। এটা আমাদের জন্য অনেকটা কষ্টদায়ক, দুঃখজনক। পুলিশ পাহারা দেয় বলেই আপনারা নিশ্চিন্তে ঘুমাতে পারেন।’ নাগরিকদের নিচ্ছিদ্র নিরাপত্তা দেওয়ার বিষয়টিও উল্লেখ করেন তিনি।

ডিএমপি কমিশনার বলেন, নিউমার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বাংলাদেশ পুলিশের সদস্য পরাণসহ রমনা বিভাগের ডিসির যে মানবিকতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে, তা নতুন কিছু নয়। এটা আমাদের অতীতের ধারাবাহিকতার অংশ। ৭১ থেকে ধারাবাহিকতা শুরু হয়েছে দেশ মাতৃকা রক্ষায়। দেশের জন্য বাংলাদেশ পুলিশের সদস্যরা অকাতরে জীবন বিলিয়ে দেয়। আমরা ম্যানেজমেন্ট লেভেলে যারা বসে আছি তাদেরও কিছু দায়িত্ব রয়েছে। দেশ মাতৃকার কল্যাণে কাজ করা পুলিশ সদস্যদের পাশে থাকা, তাদের সাহস দেওয়া, তাদের অনুপ্রেরণা দেওয়া— তা আমাদের দায়িত্ব এবং কর্তব্য। আমি সেই কাজটি করার চেষ্টা করে যাচ্ছি।

নিউ মার্কেট এলাকার নিউ সুপার মার্কেটে অগ্নিকাণ্ডের দিনের বর্ণনা করে তিনি বলেন, সেখানে যেদিন আগুন লাগে, সেদিন আমাদের সদস্যরা এক হাতে বাঁশি এবং কাঁধে জিনিসপত্র নিয়ে ভবন থেকে নিচে নেমে আসা ডিএমপি পুলিশকে অনন্য উচ্চতায় নিয়ে গেছে। যারা সেদিন দায়িত্ব পালন করেছিলেন তাদের সামান্য কিছু পুরস্কার তুলে দেওয়া হয়েছে। এটা দিয়ে তাদের নতুন ঘর-বাড়ি উঠবে না, এক সেট ভালো পোশাকও কিনতে পারবেন না; এটা হলো তাদের কাজের উৎসাহ দেওয়া। বাকি সদস্য যারা আছেন, তারা যাতে মনে করেন— ভালো কাজ করলে সবাই এ ধরনের উৎসাহ পাবেন।

অনুষ্ঠানে আরও বক্তব্য দেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ডিবি) এ কে এম হাফিজ আক্তার, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ক্রাইম অ্যান্ড অপারেশন) ড. মহিদ উদ্দিন, অতিরিক্ত পুলিশ কমিশনার (ট্রাফিক) মো. মুনিবুর রহমান, কাউন্টার টেরোরিজম অ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিটের প্রধান আসাদুজ্জামান, দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন প্রমুখ।