রাজশাহী জেলা প্রতিনিধি :
রাজশাহীর সারদা পুলিশ একাডেমিতে প্রশিক্ষণরত ৫৯ জন উপ-পরিদর্শক (এসআই) ‘ক্লাসে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি’ করার অভিযোগে শোকজ (কারণ দর্শানোর নোটিশ) পেয়েছেন। একাডেমিতে ২৫২ জন এসআইকে অব্যাহতি দেওয়ার পর নতুন করে এই ৫৯ জনের বিরুদ্ধে নোটিশ দেয়া হয়।
পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষের পক্ষে পুলিশ সুপার (অ্যাডমিন অ্যান্ড লজিস্টিক) তারেক বিন রশিদ স্বাক্ষরিত পৃথক চিঠিতে সোমবার (২১ অক্টোবর) ১০ জন এবং বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) ৪৯ জনকে নোটিশ দেওয়া হয়। নোটিশ পাওয়ার পর তাদের মধ্যে নতুন করে অব্যাহতির আশঙ্কা দেখা দিয়েছে।
প্রশিক্ষণ মাঠে নাশতা নিয়ে হইচই করার কারণে সম্প্রতি ওই ব্যাচের ৭০৪ প্রশিক্ষণার্থীর মধ্যে ২৫২ জনকে শোকজ করা হয়েছিল। জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় চাকরি থেকে তাদের অব্যাহতি দেওয়া হয়। এবার প্রশিক্ষণ হলে শৃঙ্খলার সঙ্গে না বসার কারণে অন্তত ৫৯ এসআইকে শোকজ করা হয়েছে বলে পুলিশ একাডেমি সূত্র নিশ্চিত করেছে।
বৃহস্পতিবার (২৪ অক্টোবর) প্রশিক্ষণরত এক এসআইকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশে বলা হয়েছে, গত ২১ আগস্ট সন্ধ্যা ৭টা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত চেমনি মেমোরিয়াল হলে আইনের বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ধারার ওপর প্রশিক্ষণরত ক্যাডেট এসআইদের ক্লাস ছিল। প্রশিক্ষণ চলাকালে পরিদর্শক পদমর্যাদার চারজন প্রশিক্ষক দেখতে পান, সিটে বসার সময় ওই এসআই শৃঙ্খলার সঙ্গে না বসে এলোমেলোভাবে বসে হইচই করে বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি করেছেন। একজন প্রশিক্ষক বারবার শৃঙ্খলার সঙ্গে বসতে বললেও তিনি নির্দেশ অমান্য ও কর্ণপাত না করে বসা নিয়ে হইচই করতে থাকেন।
এর আগে ২১ অক্টোবর ১০ এসআইকে দেওয়া কারণ দর্শানোর নোটিশের একটি কপি পাওয়া গেছে। তাতে দেখা গেছে, যেসব অভিযোগে ২৪ অক্টোবর এসআইদের নোটিশ দেওয়া হয়েছে, একই অভিযোগ ২১ অক্টোবরের চিঠিতেও।
চিঠিতে বলা হয়, ১৬ অক্টোবর ওই একই সময়ে জিমনেসিয়ামে ‘এক্সপেরিয়েন্স শেয়ারিং ইন অর্ডার টু ফেইস পলিটিক্যাল এইমড’ বিষয়ে ক্লাস ছিল। সেদিন বিশেষ অতিথি বক্তা হিসেবে ছিলেন পুলিশ একাডেমির সাবেক অধ্যক্ষ মো. নজিবুর রহমান। সেদিন এই এসআই শৃঙ্খলার সঙ্গে না বসে এলোমেলোভাবে বসেন এবং হইচই করেন। তাকেও তিন দিনের মধ্যে নোটিশের জবাব দিতে বলা হয়।
শোকজ পাওয়া কয়েকজন এসআই জানান, তারা এক বছর ধরে নিষ্ঠা ও দায়িত্বশীলতার সঙ্গে প্রশিক্ষণ নিচ্ছেন এবং তাদের বিরুদ্ধে অভিযোগ মিথ্যা। তারা আশঙ্কা করছেন, এই ঘটনা পর্যায়ক্রমে তাদের সকলের অব্যাহতি ঘটাবে।
একজন প্রশিক্ষণরত এসআই বলেন, “ক্লাসে কোনো বিশৃঙ্খলা হয়নি। এটা একটা নতুন নাটক সাজানো হয়েছে।” আরেকজন বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে ঢালাওভাবে অভিযোগ করা হচ্ছে, যা ঠিক নয়।” তারা সরকারের পতনের পর এ ধরনের অভিযোগের ফলে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পুলিশ একাডেমির অধ্যক্ষ ও পুলিশের অতিরিক্ত আইজিপি মো. মাসুদুর রহমান ভূঞা কথা বলতে রাজি হননি। তিনি জানান, এ বিষয়ে পুলিশের সদর দফতরের জনসংযোগ শাখার সঙ্গে যোগাযোগ করতে।
পুলিশ সদর দফতরের এআইজি (মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন) এনামুল হক সাগর জানান, এ বিষয়ে এখনও বিস্তারিত কোনো তথ্য তার কাছে পৌঁছেনি। তিনি আরও বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে যথাযথ তথ্য পাওয়ার পর তিনি গণমাধ্যমকে জানাবেন।