নিজস্ব প্রতিবেদক :
অকেজো ও পুরোনো অস্ত্র দিয়ে বিএনপি নেতাদের গ্রেফতারের অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ পুলিশের মহাপরিদর্শক (আইজিপি) চৌধুরী আবদুল্লাহ আল-মামুন।
মঙ্গলবার (২২ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর শেরেবাংলা নগর এলাকায় জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে চিকিৎসাধীন হবিগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) অজয় চন্দ্র দেবের চিকিৎসা সংক্রান্ত খোঁজ-খবর নেওয়া শেষে সাংবাদিকদের একথা বলেন।
সম্প্রতি কিছু অস্ত্র উদ্ধার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি)। অস্ত্র উদ্ধারকে বিএনপির নেতারা অভিযোগ করছেন, পুলিশ পুরোনো ও অকেজো অস্ত্র দিয়ে বিএনপির নেতাকর্মীদের গ্রেফতার করছে। এমন প্রশ্নের জবাবে পুলিশ প্রধান বলেন, এমন অভিযোগ সঠিক নয়। আমরা অভিযানে তাদের কাছে যে অস্ত্র পেয়েছি সেগুলো দিয়েই আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছি। এ অভিযোগ ভিত্তিহীন ও অমূলক।
আগামী নির্বাচন সামনে রেখে আইনশৃঙ্খলা রক্ষা বাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বিভিন্ন রাজনৈতিক বক্তব্য দিচ্ছেন। আর এই বক্তব্যকে ঘিরে বিএনপি নেতারা বিভিন্ন অভিযোগ করছেন। এমন বক্তব্য সমীচীন কি না জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, আইনশৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনীর যে সব সদস্য আছেন আমার দৃষ্টিতে কারও রাজনৈতিক বক্তব্য পরিলক্ষিত হয়নি। আমি আইন ও বিধি অনুযায়ী, দায়িত্ব পালন করি। আইন অনুযায়ী, আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় যে দায়িত্ব ও চ্যালেঞ্জ আসবে সেটি মোকাবিলা করতে হবে যেটা আমার আইনি দায়িত্ব।
আইজিপি বলেন, এ দায়িত্ব অর্পিত করা হয়েছে। এই দায়িত্ব পালনে আমি বাধ্য। আইন প্রয়োগ করতে আমাকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, আইন পড়ানো হয়েছে এবং আইন প্রয়োগে প্রয়োজনীয় লজিস্টিক সাপোর্ট দেওয়া হয়। জনগণের জানমাল রক্ষায় যা যা করা দরকার সেটাই করা হবে।
মানবতাবিরোধী অপরাধে আমৃত্যু কারাদণ্ডপ্রাপ্ত জামায়াত নেতা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মৃত্যুকে কেন্দ্র করে এক প্রবাসীর দেওয়া ফেসবুক স্ট্যাটাসকে কেন্দ্র করে খুলনায় তার মাকে গ্রেফতার করা হয়েছে- এমন অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে আইজিপি বলেন, বিষয়টি আমি পরিষ্কার করতে চাই। খুলনায় জামায়াতের এক নায়েবে আমিরের বাসায় নাশকতা এবং আইনশৃঙ্খলা অবনতির ঘটানোর ষড়যন্ত্র চলছিল। সেখানে গোপণ বৈঠকে অনেকে জড়ো হয়েছিলেন। সে তথ্য পেয়ে আমরা সেখানে যাই এবং অভিযান পরিচালনা করি।
আমাদের উপস্থিতি টের পেয়ে অনেকে পালিয়ে যান। পরে আমরা সেখান থেকে তিনজনকে গ্রেফতার করেছি। আমাদের জানা ছিল না এ তিনজন কে বা কারা। আমরা যাদের গ্রেফতার করেছি তাদের মধ্যে একজন নারী ও দুইজন পুরুষ।
ওই নারীকে গ্রেফতারের পর আমরা জানতে পারি তার প্রবাসী ছেলে ফেসবুকে স্ট্যাটাস দিয়েছিলেন। তাই ওই নারীকে গ্রেফতারের সঙ্গে তার ছেলের দেওয়া স্ট্যাটাসের সম্পর্ক নেই। ওই নারীকে গ্রেফতারের সময় সেখান থেকে আমরা কিছু ডিজিটাল ডিভাইস পেয়েছি, নাশকতার পরিকল্পনার আলামত পেয়েছি। তাদের বিরুদ্ধে দায়ের করা মামলায় এ সংক্রান্ত তথ্য উঠে এসেছে।
চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল-মামুন বলেছেন, কর্মসূচির নামে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির চেষ্টা যদি কেউ করেন, তাহলে দেশের প্রচলিত আইন অনুযায়ী যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া হবে। দায়িত্ব পালনকালে আহত পুলিশ সদস্যদের চিকিৎসায় সব ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচিকে কেন্দ্র করে গত শনিবার (১৯ আগস্ট) বিকেলে হবিগঞ্জে বিএনপি ও পুলিশের মধ্যে সংঘর্ষে সদর মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) অজয় চন্দ্র দেব চোখে আঘাত পান। এরপর উন্নত চিকিৎসার জন্য তাকে রাজধানীর শেরে বাংলা নগর জাতীয় চক্ষু বিজ্ঞান ইনস্টিটিউটে ভর্তি করা হয়।
আইজিপি বলেন, গত ১৯ আগস্ট বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি চলাকালে হবিগঞ্জে জনগণের স্বাভাবিক চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হলে হবিগঞ্জ থানা পুলিশ বিনীতভাবে তাদেরকে অনুরোধ করে রাস্তা খোলা রাখার জন্য। কিন্তু সে অনুরোধ রাখা হয়নি, বরং দায়িত্বরত পুলিশ সদস্যদের ওপরে ইট-পাটকেল নিক্ষেপ করা হয়েছে। সে সময় নিক্ষিপ্ত ঢিলে আক্রান্ত হয়েছেন হবিগঞ্জ মডেল থানার ওসি অজয়। তিনি মারাত্মকভাবে বাম চোখে আক্রান্ত হয়েছেন, তার অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন। তিনি এখন এখানে চিকিৎসাধীন, আমি এখানকার কর্তব্যরত চিকিৎসকদের প্রতি কৃতজ্ঞ ওসি অজয়ের চিকিৎসায় সব ধরনের ব্যবস্থা করছেন।
আইজিপি চিকিৎসকদের বরাতে বলেন, তার (ওসি অজয়) অবস্থা এখনো সংকটাপন্ন, এজন্য তার চিকিৎসা নিশ্চিতে চিকিৎসকদের বোর্ড গঠন করা হয়েছে। যাতে করে দ্রুত সময়ের মধ্যে তার আরোগ্য নিশ্চিত করা যায়।
আইজিপি বলেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার ক্ষেত্রে বাহিনীর কোনো সদস্য যদি আক্রান্ত হন, আহত হন তাদের সুচিকিৎসা নিশ্চিত করার জন্য আমরা সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করছি।