Dhaka বৃহস্পতিবার, ১১ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৬ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা, সেলিম ও তাপস জড়িত

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

১৫ বছর আগে বিডিআর বিদ্রোহে পিলখানার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ সেলিম, ফজলে নূর তাপসসহ আরও অনেকে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেছেন নিহতদের স্বজনরা। একইসঙ্গে তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় বিডিআর হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনা ও সিভিলিয়ানদের পরিবার তিন দফা দাবি জানান।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার ৫০ দিনের মধ্যেই ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরদের একটি গ্রুপ দ্বারা বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।

তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের পুত্র রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া অভিযোগ করে বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ ফজলে নূর তাপস ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম সরাসরি জড়িত। আমি নাটক সাজানোর নামে রহস্যশালা আর চাই না।

তিনি বলেন, শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে মহাখালী রাওয়া ক্লাবের স্কাইলাইন রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও ট্রায়াল কমিশন গঠনের দাবি জানান।

জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের কথা বলতে গেলে অনেক কথাই গুছিয়ে বলা কঠিন হয়ে যায়। আমার বাবা সবসময় বলতেন, মানুষের স্বার্থ আগে দেখতে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর দেশ প্রেমিক অনেক সেনা অফিসার বিচার চাইতে গিয়ে চাকরি হারিয়েছেন। কেউ কেউ জেলে গেছেন। দরবারের শত শত অফিসারের জীবন ধ্বংস করা হয়েছে।

এক আওয়ামী লীগ নেতা ফোন করে আমাকে বলেছিলেন, ওনার নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমার বাবা-মাকে জবাই দিয়েছেন। যদি বেশি বাড়াবাড়ি করি তাহলে বাবা-মার মতো আমাকেও জবাই দিয়ে দেবে। আমরা দাবি করছি, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। আমরা সেসব দেশ প্রেমিক অফিসারদের অবদান ভুলব না। ক্ষতিগ্রস্ত সেনা অফিসারদের পরিবারকে যেন যথাযথ সম্মান ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। আমরা শহিদ পরিবার মনে করি, যেসব নির্দোষ, দেশপ্রেমিক বিডিআর সৈনিক জেল খাটছেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যেন তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।

শাকিল আহমেদের ছেলে বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নেই; যেখানে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) অন্য একটা বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে রাজধানীতে ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করে। ওই দিনটিকে আমরা শহিদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি করছি।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারের ট্রায়াল বা তদন্তকে আমরা মানি না। কারণ, প্রধান যে হত্যাকারী, নির্দেশদাতা তিনি তখন ক্ষমতায় ছিলেন। খুনি কি তার নিজের বিচার করবে? মুখ বন্ধ করে দেখতে হয়েছে, কেমন করে তদন্ত, ট্রায়াল প্রভাবিত করল। ডাল ভাতের কথা বলল। নীরবে সহ্য করতে হয়েছে।

সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের প্রয়োজনে সেনাবাহিনী এগিয়ে যায়। তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই এই জন্য যে, ছাত্র-জনতার ওপর গুলি না করে এগিয়ে এসেছেন। জনগণকে অনুরোধ করব, সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করুন।

তিনি আরও বলেন, বাহিনীর পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের সাবেক মহাপরিচালক লেফট্যানেন্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর। যিনি বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আমরা চাইব, অন্তত তার তদন্ত কমিটির রিপোর্টটা পাব। উচ্চ আদালত যে তদন্ত কমিশনের কথা বলেছেন, সেগুলো যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে পর্দার আড়ালে যারা ষড়যন্ত্রকারী তারা বেড়িয়ে আসবে।

রাকিন আহমেদ বলেন, ‘সাংবাদিকরাও কম নির্যাতনের শিকার হননি। অনেক কিছুই প্রকাশ করতে পারতেন না।’

পরে কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর হাতে থাকা ট্র্যাজেডির সমস্ত তদন্ত রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ, তদন্ত কমিশন গঠন, ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহিদ সেনা দিবস ঘোষণাসহ পিলখানায় শহিদ ৫৭ অফিসার ও ১৭ সাধারণ নাগরিকের পরিবারের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিডিআর বিদ্রোহে নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।

এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট সাকিব বলেন, ‘দুটো তদন্ত কমিটি হয়েছিল। বাহিনীর পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের সাবেক মহাপরিচালক লেফট্যানেন্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর। যিনি বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আমরা খুব করে চাইব, অন্তত তার তদন্ত কমিটির রিপোর্টটা প্রকাশ করুক। কারণ, আমরা খুব কাটছাঁট অংশ গণমাধ্যমে জেনেছি। আমরা পুরোটাই দেখতে চাই। তাতে আমরা অনেক কিছু জানতে পারব। আর উচ্চ আদালত যে তদন্ত কমিশনের কথা বলেছেন, সেগুলো যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে পর্দার আড়ালে যারা ষড়যন্ত্রকারী তারা বেড়িয়ে আসবে। তাদের আইনের আওতায় আনতে আমরা চার্জ করতে পারব।’

গত ১৫ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তাদের দায় করছেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একজন আইনজীবী হিসেবে আমি তো সরাসরি দায়ী করতে পারি না। আমরা তো অনেক নাম শুনি। আপনারাও শোনেন। কিন্তু সেই নামগুলো আমরা তখনই বলতে পারব যদি তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। এমনি এমনি নাম বলে দেওয়া যায় না।’

পিলখানা সত্য উদঘাটন তো হয়নি। সত্য উদঘাটনের পর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করবে কারা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই এটার দায়িত্ব সরকারের। এই মুহূর্তে হয়তো পর্দার আড়ালে ষড়যন্ত্রকারীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারব না। কিন্তু আপাতত ঘটনাটা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। যখন ষড়যন্ত্রকারীদের নাম বের হবে তখন তা যুক্ত করা হবে।’

কর্নেল কুদরত ইলাহীর স্ত্রী লবী রহমান বলেন, ‘হয়তো বলবেন, এতদিন পর কেন আমরা এখানে। অনেক কিছুই তো পেয়েছি। কিন্তু গত ১৫ বছরে আমরা কিন্তু শুধু বিচারই চেয়েছি। প্রথমেই আমাদের প্রশ্ন করা হয়, কী কী পেয়েছি। ইচ্ছে হয় সব ফেরত দেই, আমার স্বামী শহিদ কর্নেল কুদরত ইলাহীকে ফিরিয়ে দেন। এটা সিনেমা বা নাটকের প্রমোশন না, এটা খুবই সেনসিটিভ।’

শহীদ মেজর মোসাদ্দেকের মেয়ে নাজিয়া বলেন, আমাদের কষ্টের কথা যদি বলি একই পরিস্থিতিতে এখনো যাচ্ছি। কষ্ট কিন্তু দূরে হয়ে যায়নি। এর পেছনে অনেক ঘটনা ছিল। আমরাতো আমাদের স্বজনদের হারিয়ে ফেলেছি। মানুষ আসলে জানুক এ হত্যাকাণ্ড কারা করেছে। কেনও এত বছর পরও আমাদের মুভমেন্টে বাধা হয়।

লে. কর্নেল এনায়েতুল হকের মেয়ে নাবিলা বলেন, এটা একটি আন্তর্জাতিক চক্রের কাজ। আন্তর্জাতিক শক্তি দ্বারাই এ কাজটি করেছে। আপনার বের করবেন আসলে কারণটা কি। এটা বিদ্রোহী নাকি হত্যাকাণ্ড।

তিনি বলেন, আমার বাবা মারা যাননি। হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। কিছু অপপ্রচারের জন্য আমরা হেনস্তা হয়েছি। আজকে আমরা নির্ভয়ে কথা বলছি।

শহীদের স্বজনরা আরও বলেন, ১৫ বছর ধরে একটাই আমাদের দাবি ‘বিচার চাই।’ এ বিষয়ে আর লুকোচুরি চাই না। চাপ দিয়ে মুখ বন্ধ করা ছিল। বাধার মধ্যে ১৬ বছর পার করেছি।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ পরিবারের দাবিগুলো হলো

১) সত্য উদঘাটনের ক্ষেত্রে আমরা শহীদ পরিবার মনে করি আগের যেসব তদন্ত হয়েছে, এর প্রতিবেদন পাবলিক করতে হবে।

২) ন্যায়বিচারের আলোকে হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় মোতাবেক তিনজন জজ যে ইনকোয়ারি কমিশনের কথা বলেছে, অবিলম্বে সেই ইনকোয়ারি কমিশন গঠন করতে হবে। এতে আমরা মনে করি যে পর্দার আড়ালে রয়ে যাওয়া ষড়যন্ত্রকারীদের নাম বেরিয়ে আসবে।

৩) অফিসিয়াল গ্যাজেট করে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং গ্যাজেটে শাহাদাতবরণকারী শহীদের মর্যাদা দিতে হবে।

৪) ২৫ ফেব্রুয়ারি শোক দিবসকে ঘিরে গোটা দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনিমিত রাখতে হবে।

৫) এ হত্যাকাণ্ড স্কুলের পাঠ্য বইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে কি ছিল শহীদদের ত্যাগ।

৬) যেসব সেনা কর্মকর্তা এ ঘটনাকে ঘিরে চাকরিচ্যুত হয়েছিল, তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে অথবা যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৭) নির্দোষ কোনো বিডিআর জোয়ানকে যেন সাজা না দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত সেনা অফিসারের স্বজনরা বক্তব্য দেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নেপালে আটকে পড়া বাংলাদেশিরা নিরাপদে আছেন : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শেখ হাসিনা, সেলিম ও তাপস জড়িত

প্রকাশের সময় : ০৮:৩৬:১১ অপরাহ্ন, শনিবার, ১৭ অগাস্ট ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

১৫ বছর আগে বিডিআর বিদ্রোহে পিলখানার মর্মান্তিক হত্যাকাণ্ডে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, শেখ সেলিম, ফজলে নূর তাপসসহ আরও অনেকে সরাসরি জড়িত ছিলেন বলে দাবি করেছেন নিহতদের স্বজনরা। একইসঙ্গে তাদের গ্রেপ্তার করে বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা।

শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মহাখালীর রাওয়া ক্লাবে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ দাবি জানানো হয়। এ সময় বিডিআর হত্যাকাণ্ডে নিহত সেনা ও সিভিলিয়ানদের পরিবার তিন দফা দাবি জানান।

শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আওয়ামী লীগ সরকার গঠন করার ৫০ দিনের মধ্যেই ২০০৯ সালের ২৫ ও ২৬ ফেব্রুয়ারি ঢাকার পিলখানায় তৎকালীন বিডিআরদের একটি গ্রুপ দ্বারা বিদ্রোহ সংঘটিত হয়।

তৎকালীন মহাপরিচালক মেজর জেনারেল শাকিল আহমেদের পুত্র রাকিন আহমেদ ভূঁইয়া অভিযোগ করে বলেন, পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে শেখ হাসিনা, তার মেয়ে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল, শেখ ফজলে নূর তাপস ও শেখ ফজলুল করিম সেলিম সরাসরি জড়িত। আমি নাটক সাজানোর নামে রহস্যশালা আর চাই না।

তিনি বলেন, শনিবার (১৭ আগস্ট) দুপুরে মহাখালী রাওয়া ক্লাবের স্কাইলাইন রেস্টুরেন্টে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন। এ সময় তিনি পিলখানা হত্যাকাণ্ডের সুষ্ঠু তদন্ত ও ট্রায়াল কমিশন গঠনের দাবি জানান।

জেনারেল শাকিল আহমেদের ছেলে বলেন, বিডিআর বিদ্রোহের কথা বলতে গেলে অনেক কথাই গুছিয়ে বলা কঠিন হয়ে যায়। আমার বাবা সবসময় বলতেন, মানুষের স্বার্থ আগে দেখতে। পিলখানা হত্যাকাণ্ডের পর দেশ প্রেমিক অনেক সেনা অফিসার বিচার চাইতে গিয়ে চাকরি হারিয়েছেন। কেউ কেউ জেলে গেছেন। দরবারের শত শত অফিসারের জীবন ধ্বংস করা হয়েছে।

এক আওয়ামী লীগ নেতা ফোন করে আমাকে বলেছিলেন, ওনার নেত্রী (শেখ হাসিনা) আমার বাবা-মাকে জবাই দিয়েছেন। যদি বেশি বাড়াবাড়ি করি তাহলে বাবা-মার মতো আমাকেও জবাই দিয়ে দেবে। আমরা দাবি করছি, পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তদন্ত কমিশন গঠন করা হোক। আমরা সেসব দেশ প্রেমিক অফিসারদের অবদান ভুলব না। ক্ষতিগ্রস্ত সেনা অফিসারদের পরিবারকে যেন যথাযথ সম্মান ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়। আমরা শহিদ পরিবার মনে করি, যেসব নির্দোষ, দেশপ্রেমিক বিডিআর সৈনিক জেল খাটছেন, সুষ্ঠু তদন্তের মাধ্যমে যেন তাদের মুক্তি দেওয়া হয়।

শাকিল আহমেদের ছেলে বলেন, পৃথিবীর ইতিহাসে এমন কোনো ঘটনা ঘটেছে বলে জানা নেই; যেখানে রাষ্ট্রের প্রধানমন্ত্রী (শেখ হাসিনা) অন্য একটা বিদেশি রাষ্ট্রের সঙ্গে ষড়যন্ত্র করে রাজধানীতে ৫৭ সেনা অফিসারকে হত্যা করে। ওই দিনটিকে আমরা শহিদ সেনা দিবস হিসেবে ঘোষণার দাবি করছি।

তিনি বলেন, গত ১৫ বছরে পিলখানা হত্যাকাণ্ডের বিচারের ট্রায়াল বা তদন্তকে আমরা মানি না। কারণ, প্রধান যে হত্যাকারী, নির্দেশদাতা তিনি তখন ক্ষমতায় ছিলেন। খুনি কি তার নিজের বিচার করবে? মুখ বন্ধ করে দেখতে হয়েছে, কেমন করে তদন্ত, ট্রায়াল প্রভাবিত করল। ডাল ভাতের কথা বলল। নীরবে সহ্য করতে হয়েছে।

সেনাবাহিনীকে ধন্যবাদ জানিয়ে তিনি বলেন, দেশের প্রয়োজনে সেনাবাহিনী এগিয়ে যায়। তাদের ধন্যবাদ জানাতে চাই এই জন্য যে, ছাত্র-জনতার ওপর গুলি না করে এগিয়ে এসেছেন। জনগণকে অনুরোধ করব, সেনাবাহিনীকে সহযোগিতা করুন।

তিনি আরও বলেন, বাহিনীর পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের সাবেক মহাপরিচালক লেফট্যানেন্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর। যিনি বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আমরা চাইব, অন্তত তার তদন্ত কমিটির রিপোর্টটা পাব। উচ্চ আদালত যে তদন্ত কমিশনের কথা বলেছেন, সেগুলো যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে পর্দার আড়ালে যারা ষড়যন্ত্রকারী তারা বেড়িয়ে আসবে।

রাকিন আহমেদ বলেন, ‘সাংবাদিকরাও কম নির্যাতনের শিকার হননি। অনেক কিছুই প্রকাশ করতে পারতেন না।’

পরে কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় ও সেনাবাহিনীর হাতে থাকা ট্র্যাজেডির সমস্ত তদন্ত রিপোর্ট জনসম্মুখে প্রকাশ, তদন্ত কমিশন গঠন, ২৫ ফেব্রুয়ারিকে শহিদ সেনা দিবস ঘোষণাসহ পিলখানায় শহিদ ৫৭ অফিসার ও ১৭ সাধারণ নাগরিকের পরিবারের পক্ষ থেকে ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে বিডিআর বিদ্রোহে নিহত কর্নেল কুদরত ইলাহী রহমান শফিকের ছেলে অ্যাডভোকেট সাকিব রহমান ৭ দফা দাবি তুলে ধরেন।

এ সময় এক প্রশ্নের জবাবে অ্যাডভোকেট সাকিব বলেন, ‘দুটো তদন্ত কমিটি হয়েছিল। বাহিনীর পক্ষ থেকে গঠিত তদন্ত কমিটির প্রধান ছিলেন বাংলাদেশ রাইফেলসের সাবেক মহাপরিচালক লেফট্যানেন্ট জেনারেল জাহাঙ্গীর। যিনি বর্তমান অন্তর্র্বতী সরকারের স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা। আমরা খুব করে চাইব, অন্তত তার তদন্ত কমিটির রিপোর্টটা প্রকাশ করুক। কারণ, আমরা খুব কাটছাঁট অংশ গণমাধ্যমে জেনেছি। আমরা পুরোটাই দেখতে চাই। তাতে আমরা অনেক কিছু জানতে পারব। আর উচ্চ আদালত যে তদন্ত কমিশনের কথা বলেছেন, সেগুলো যদি আমরা বাস্তবায়ন করতে পারি তাহলে পর্দার আড়ালে যারা ষড়যন্ত্রকারী তারা বেড়িয়ে আসবে। তাদের আইনের আওতায় আনতে আমরা চার্জ করতে পারব।’

গত ১৫ বছর যারা ক্ষমতায় ছিল পিলখানা হত্যাকাণ্ডে তাদের দায় করছেন কি না? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘একজন আইনজীবী হিসেবে আমি তো সরাসরি দায়ী করতে পারি না। আমরা তো অনেক নাম শুনি। আপনারাও শোনেন। কিন্তু সেই নামগুলো আমরা তখনই বলতে পারব যদি তদন্তের মাধ্যমে বেরিয়ে আসে। এমনি এমনি নাম বলে দেওয়া যায় না।’

পিলখানা সত্য উদঘাটন তো হয়নি। সত্য উদঘাটনের পর পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করবে কারা? জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘স্বাভাবিকভাবেই এটার দায়িত্ব সরকারের। এই মুহূর্তে হয়তো পর্দার আড়ালে ষড়যন্ত্রকারীদের নাম অন্তর্ভুক্ত করতে পারব না। কিন্তু আপাতত ঘটনাটা পাঠ্যপুস্তকে অন্তর্ভুক্ত করা হোক। যখন ষড়যন্ত্রকারীদের নাম বের হবে তখন তা যুক্ত করা হবে।’

কর্নেল কুদরত ইলাহীর স্ত্রী লবী রহমান বলেন, ‘হয়তো বলবেন, এতদিন পর কেন আমরা এখানে। অনেক কিছুই তো পেয়েছি। কিন্তু গত ১৫ বছরে আমরা কিন্তু শুধু বিচারই চেয়েছি। প্রথমেই আমাদের প্রশ্ন করা হয়, কী কী পেয়েছি। ইচ্ছে হয় সব ফেরত দেই, আমার স্বামী শহিদ কর্নেল কুদরত ইলাহীকে ফিরিয়ে দেন। এটা সিনেমা বা নাটকের প্রমোশন না, এটা খুবই সেনসিটিভ।’

শহীদ মেজর মোসাদ্দেকের মেয়ে নাজিয়া বলেন, আমাদের কষ্টের কথা যদি বলি একই পরিস্থিতিতে এখনো যাচ্ছি। কষ্ট কিন্তু দূরে হয়ে যায়নি। এর পেছনে অনেক ঘটনা ছিল। আমরাতো আমাদের স্বজনদের হারিয়ে ফেলেছি। মানুষ আসলে জানুক এ হত্যাকাণ্ড কারা করেছে। কেনও এত বছর পরও আমাদের মুভমেন্টে বাধা হয়।

লে. কর্নেল এনায়েতুল হকের মেয়ে নাবিলা বলেন, এটা একটি আন্তর্জাতিক চক্রের কাজ। আন্তর্জাতিক শক্তি দ্বারাই এ কাজটি করেছে। আপনার বের করবেন আসলে কারণটা কি। এটা বিদ্রোহী নাকি হত্যাকাণ্ড।

তিনি বলেন, আমার বাবা মারা যাননি। হত্যাকাণ্ডের শিকার হয়েছেন। কিছু অপপ্রচারের জন্য আমরা হেনস্তা হয়েছি। আজকে আমরা নির্ভয়ে কথা বলছি।

শহীদের স্বজনরা আরও বলেন, ১৫ বছর ধরে একটাই আমাদের দাবি ‘বিচার চাই।’ এ বিষয়ে আর লুকোচুরি চাই না। চাপ দিয়ে মুখ বন্ধ করা ছিল। বাধার মধ্যে ১৬ বছর পার করেছি।

পিলখানা হত্যাকাণ্ডে শহীদ পরিবারের দাবিগুলো হলো

১) সত্য উদঘাটনের ক্ষেত্রে আমরা শহীদ পরিবার মনে করি আগের যেসব তদন্ত হয়েছে, এর প্রতিবেদন পাবলিক করতে হবে।

২) ন্যায়বিচারের আলোকে হাইকোর্ট ডিভিশনের রায় মোতাবেক তিনজন জজ যে ইনকোয়ারি কমিশনের কথা বলেছে, অবিলম্বে সেই ইনকোয়ারি কমিশন গঠন করতে হবে। এতে আমরা মনে করি যে পর্দার আড়ালে রয়ে যাওয়া ষড়যন্ত্রকারীদের নাম বেরিয়ে আসবে।

৩) অফিসিয়াল গ্যাজেট করে ২৫ ফেব্রুয়ারিকে ‘শহীদ সেনা দিবস’ হিসেবে ঘোষণা করতে হবে এবং গ্যাজেটে শাহাদাতবরণকারী শহীদের মর্যাদা দিতে হবে।

৪) ২৫ ফেব্রুয়ারি শোক দিবসকে ঘিরে গোটা দেশজুড়ে জাতীয় পতাকা অর্ধনিমিত রাখতে হবে।

৫) এ হত্যাকাণ্ড স্কুলের পাঠ্য বইয়ের সিলেবাসে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে। এতে আগামী প্রজন্ম জানতে পারবে কি ছিল শহীদদের ত্যাগ।

৬) যেসব সেনা কর্মকর্তা এ ঘটনাকে ঘিরে চাকরিচ্যুত হয়েছিল, তাদের চাকরি ফিরিয়ে দিতে হবে অথবা যথাযথ ক্ষতিপূরণ দিতে হবে।

৭) নির্দোষ কোনো বিডিআর জোয়ানকে যেন সাজা না দেওয়া হয়।

সংবাদ সম্মেলনে নিহত সেনা অফিসারের স্বজনরা বক্তব্য দেন।