পিরোজপুর জেলা প্রতিনিধি :
দেশের শত বছরের পুরোনো পৌরসভা পিরোজপুর। প্রথম শ্রেণির পৌরসভা হওয়া সত্ত্বেও এখানে মিলছে না তেমন কোনো নাগরিক সুবিধা। গত মৌসুমে বর্ষার পর পৌর শহরের অধিকাংশ রাস্তাই এখন চলাচলের অনুপযোগী। পানির লাইন থাকলেও তাতে নেই সুপেয় পানি। শহরের ড্রেনেজব্যবস্থা খুবই নাজুক। পৌরসভার সড়কগুলো দেখে মনে হবে গ্রামের কোনো কাদা-মাটির রাস্তা দিয়ে হাঁটছি। খানাখন্দে বৃষ্টির পানি জমে অধিকাংশ রাস্তাই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। রিকশা-অটোরিকশায় চলতে গিয়ে প্রায়ই ঘটছে দুর্ঘটনা। দুর্নীতি, লুটপাট আর অনিয়মের কারণে বিগত কয়েক বছরে দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি পিরোজপুর পৌরসভার।
পিরোজপুর পৌরসভার ৪নং ওয়ার্ডের পশ্চিম শিকারপুর সড়কটি দেখে গ্রামের কোনো কাদা-মাটির সড়ক মনে হলেও এটি পৌরসভার মূল শহরের একটি সড়ক। যে সড়কটি দিয়ে প্রতিদিন শত শত যানবাহনে হাজার হাজার মানুষ চলাচল করছে।
পশ্চিম শিকারপুরের বাসিন্দা গাজী নুরুজ্জামান বলেন, আমার বাড়ির সামনের সড়কটি মেরামতের নামে তিন থেকে চার বছর ধরে খুঁড়ে ফেলে রাখা হয়েছে। ধুলাবালিতে বসবাস করা দায়। বৃষ্টিতে কাদা-পানিতে ধান খেতের মতো অবস্থা হয়। ঘরের সামনের খালে এমনভাবে ময়লা ফেলা হয় যে, মশা-মাছির কারণে ঘরে থাকা রীতিমতো কষ্টসাধ্য ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছে।
তিনি আক্ষেপ করে বলেন, এখনতো পৌরসভার কোনো উন্নয়ন কার্যক্রমই নেই। কবে যে কাজ হবে আল্লাহই জানেন।
৪নং ওয়ার্ডের বাসিন্দা নির্মল কর্মকার বলেন, ৮ থেকে ১০ বছর ধরে পৌর এলাকায় দৃশ্যমান কোনো উন্নয়ন হয়নি। রাস্তাগুলো দীর্ঘদিন মেরামত না করায় অধিকাংশ রাস্তাই চলাচলের অনুপযোগী হয়ে গেছে। মানুষের দুর্ভোগ এখন চরমে। ঘর থেকে বের হলেই কোনো না কোনো দুর্ঘটনায় পড়তে হয় সাধারণ মানুষকে।
জানা গেছে, ১৮৮৫ সালে পিরোজপুর সদর ইউনিয়ন থেকে পৌরসভা হয়। ৯টি ওয়ার্ড এবং ৩০টি মহল্লায় বিভক্ত ২৯.৪৯ বর্গকিলোমিটার আয়তনের পৌরসভায় লোক সংখ্যা প্রায় ৭৫ হাজার। ১৯৯০ সালে এসে এটি প্রথম শ্রেণির পৌরসভায় উন্নীত হয়। কিন্তু এত দীর্ঘসময়েও ঘটেনি এর বাহ্যিক কোনো পরিবর্তন। পিরোজপুর পৌরসভায় রয়েছে প্রায় ৩৫০ কিলোমিটার রাস্তা, যার ৯০ শতাংশই সংস্কারের অভাবে বড় বড় গর্ত হয়ে চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। পৌরসভার ভেতরে ১২০ কিলোমিটারের বেশি খাল থাকলেও দীর্ঘদিন সংস্কারের অভাবে এবং অবৈধ দখলদারদের কারণে এখন তা ড্রেনে পরিণত হয়েছে। মূল শহরসহ পৌরসভার অধিকাংশ রাস্তাই ভাঙা এবং চলাচলের অনুপযোগী। কখনো কিছু খোয়া-বালি দিয়ে জোড়াতালি দেওয়া হলেও নিম্নমানের কারণে দুই মাস যেতে না যেতেই তা আবার আগের অবস্থায় ফিরে আসে।
পানি সরবরাহ থাকলেও প্রায়ই পানিতে পাওয়া যায় পোকামাকড় আর কেঁচো। গ্রীষ্মকালে সেই পানিও অনেকটা উধাও হয়ে যায়। শহরের মধ্য দিয়ে প্রবাহিত প্রধান দুটি খাল সংস্কারের নামে আরও ভরাট করায় জোয়ার-ভাটার অঞ্চল পিরোজপুর পরিণত হয়েছে জলাবদ্ধ শহরে। যথাযথ ড্রেনেজব্যবস্থা না থাকায় বর্ষাকালে বৃষ্টি হলেই সৃষ্টি হয় জলাবদ্ধতা। খোদ শহরের মাঝে ড্রেনেজব্যবস্থা এতটাই নাজুক যে, হোটেল রেস্টুরেন্ট ও বাসা-বাড়ির বর্জের গন্ধে নাক চেপে চলতে হয় পথচারীদের। সামান্য বৃষ্টিতে শহরের প্রধান সড়ক পানিতে তলিয়ে যায়। সীমাহীন দুর্ভোগ আর ভোগান্তি নিত্যদিনের সঙ্গী পৌর এলাকায় বসবাসকারী মানুষের। এ জন্য কর্তৃপক্ষের চরম উদাসীনতাকেই দায়ী করেছেন সংশ্লিষ্টরা।
তবে পৌরসভার নির্বাহী প্রকৌশলী ধ্রুব লাল দত্ত বণিক বলেন, বরাদ্দ না থাকায় সড়ক সংস্কার করা সম্ভব হচ্ছে না। পৌরসভায় ৮০ কিলোমিটার কার্পেটিং রাস্তা, প্রায় ৪৮ কিলোমিটার পাকা, দেড় শতাধিক কিলোমিটার হেরিংবন্ড ও প্রায় ৬৫ কিলোমিটার কাঁচা রাস্তা রয়েছে। রয়েছে ২০টি ব্রিজ ও ১৮৫টি কালভার্ট। আর ড্রেন রয়েছে দেড় শতাধিক কিলোমিটার। আয়ের উৎস সমৃদ্ধ না থাকায় নাগরিক সুবিধা কিছুটা ব্যাহত হচ্ছে। বরাদ্দ পেলে সড়ক মেরামত করে পৌরবাসীর দুর্ভোগ লাগব করা হবে।