গাজীপুর জেলা প্রতিনিধি :
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, আপনাদের বলি অনেকে সুড়ঙ্গ তৈরির চেষ্টা করছে, মাটি কেটে যেমন সুরঙ্গ তৈরি হয় সেই সুড়ঙ্গের চেষ্টা করা হচ্ছে। যিনি পালিয়ে গেছেন পাশের দেশে, তাকে যেন ফিরিয়ে আনা যায়। রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে গভীর চক্রান্ত চলছে, গভীর ষড়যন্ত্র চলছে।
শনিবার (১১ অক্টোবর) দুপুরে গাজীপুরের রাজবাড়ি মাঠে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য সংগ্রহ ও ফরম বিতরণ কর্মসূচি অনুষ্ঠানে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনা তাঁর পথের কাঁটা নিশ্চিহ্ন করতে বিচারবহির্ভূত হত্যা, গুম, খুন ও মিথ্যা মামলা দায়ের করে ১৭ বছর বিএনপি নেতা-কর্মীদের নির্যাতন করেছেন। এ সময় সন্ত্রাস দমন এবং বিশেষ ক্ষমতা আইনসহ সমস্ত কালাকানুন বাতিল করতে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে দাবি জানান রিজভী।
রুহুল কবির রিজভী আহমেদ বলেন, যারা এখন নানা ধরনের বিতর্ক তৈরি করছেন, বিভাজন করছেন, কারো জন্য মঙ্গল বয়ে আনবে না। আলাপ-আলোচনা হবে, বিতর্ক হবে কিন্তু ঐক্য ঠিক রাখতে হবে। ৫ আগস্টের যে অর্জন, সেটি ব্যর্থ করে দিতে চাচ্ছে তারা।
নতুন সদস্য ভর্তি প্রসঙ্গে বিএনপি নেতা বলেন, সদস্য সংগ্রহ আরও আগেই শুরু হয়েছে। কোনো চিহ্নিত আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মী, অথবা তাদের দোসর, কোনো চিহ্নিত সন্ত্রাসী, চাঁদাবাজ, মানুষের মাঝে ভীতি সঞ্চারকারী এবং কোনো অপরাধী বিএনপিতে নতুন সদস্য হতে পারবে না।
তিনি বলেন, শহীদ প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমান গণমাধ্যমের স্বাধীনতা দিয়েছিলেন। ১৯৮১ সালে জিয়াউর রহমানকে হত্যা করে বাংলাদেশের উন্নয়ন-গণতন্ত্র ধ্বংস করে দেওয়া হয়েছিল। দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার দীর্ঘ সংগ্রামের পর দেশ যখন নতুন করে এগিয়ে যাচ্ছিল ২০০৯ সালে আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্রের মাধ্যমে মইনুদ্দিন ফখরুদ্দিন বেগম খালেদা জিয়ার উন্নয়ন অগ্রযাত্রাকে থামিয়ে দিয়ে বাংলাদেশকে ফ্যাসিস্টের হাতে তুলে দিয়েছিল।
রিজভী আহমেদ বলেন, গত ১৬ বছর শেখ হাসিনা গণমাধ্যমের টুটি চেপে ধরেছিলেন। ইচ্ছে করলে গণমাধ্যম সত্য প্রকাশ করতে পারত না। অনেক সাংবাদিক সাংবাদিকতা ছেড়ে দিয়ে বাইতুল মোকাররম মসজিদের সামনে টুপি বিক্রি করেছিলেন শেখ হাসিনার অত্যাচারে। শেখ হাসিনা ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিচারের নামে বিএনপি নেতাকর্মীদের ওপর দমন-পীড়ন চালিয়েছিল। তিনবারের প্রধানমন্ত্রী আপোষহীন নেত্রী বেগম খালেদা জিয়ার ওপর বিগত সরকার জুলুম অত্যাচার চালিয়েছিল। তবুও আপোষহীন নেত্রী সরকারের কাছে মাথা নত করেননি।
তিনি বলেন, চব্বিশের গণঅভ্যুত্থানে শেখ হাসিনা পালিয়ে যাওয়ার পর দেশের মানুষ নতুন করেস্বাধীনতার সুফল পেতে শুরু করেছে। বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঘোষিত ৩১ দফা বাস্তবায়নের লক্ষে কাজ করতে নেতাকর্মীদের নির্দেশনা দেন। আগামী নির্বাচনে ধানের শীষের পক্ষে কাজ করে যাওয়ার জন্য উপস্থিত সবাইকে আহ্বান জানান তিনি।
জাতীয় নাগরিক পার্টির শাপলা প্রতীক দাবির সমালোচনা করে বিএনপির যুগ্ম মহাসচিব বলেন, ৪৭ বছর ধরে বিএনপির দলীয় প্রতীক ধানের শীষ। তারা (এনসিপি) বলছে শাপলা না থাকলে ধানের শীষ থাকবে না। কিন্তু ধানের শীষ আপনাদের জন্মের আগে বিএনপির প্রতীক। সেই প্রতীক আপনারা কাউন্টার করছেন। আপনাদের শাপলা না দিলে ধানের শীষ দেওয়া হবে না। একটা অযাচিত বিতর্ক তৈরি করে কেন আপনারা সময় এবং ঐক্যবদ্ধ থাকার যে স্পিড গণতন্ত্রের তা নষ্ট করছেন। আর এই সুযোগ নেবে পরাজিত শক্তি, এর সুযোগ নেবে গণতন্ত্র হত্যাকারী লুটেরা।
অনুষ্ঠানে নগরীর বিভিন্ন থানা এবং ওয়ার্ড থেকে ব্যানার,ফেস্টুনসহ খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে রাজবাড়ী মাঠে আসেন নেতা-কর্মীরা। অনুষ্ঠানে বিভিন্ন থানার সভাপতি-সাধারণ সম্পাদকের হাতে বিএনপির প্রাথমিক সদস্য ফরম তুলে দেন রিজভী।
অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন গাজীপুর মহানগর বিএনপির সভাপতি শওকত হোসেন সরকার এবং সঞ্চালনা করেন সাধারণ সম্পাদক এম মঞ্জুরুল করিম রনি। প্রধান বক্তা হিসেবে বক্তব্য দেন বিএনপির সাংগঠনিক সম্পাদক (ঢাকা বিভাগ) কাজী ছাইয়েদুল আলম বাবুল। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির কেন্দ্রীয় নেতা মাহবুবুল ইসলাম, ড. মাজহারুল আলম, কেন্দ্রীয় যুবদলের সাবেক সহসভাপতি জাকির হোসেন নান্নু, ছাত্রদলের কেন্দ্রীয় সহসভাপতি তৌহিদুর রহমান আউয়ালসহ মহানগর বিএনপির অসংখ্য নেতা-কর্মী।