নিজস্ব প্রতিবেদক :
চব্বিশের জুলাই আন্দোলনের মর্মবাণী ছিল ফ্যাসিবাদের বিলোপ ঘটিয়ে নতুন বাংলাদেশ গঠন। সেই লক্ষ্য সামনে নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকার কাজ করছে বলে জানিয়েছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। পালিয়ে যাওয়া স্বৈরাচার যেন আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে ব্যাপারে সবাইকে সতর্ক থাকার আহ্বান জানিয়েছেন তিনি।
মঙ্গলবার (১ জুলাই) জুলাই বিপ্লবের বর্ষপূর্তি এবং অভ্যুত্থান স্মরণে মাসব্যাপী কর্মসূচি উদ্বোধন অনুষ্ঠানে তিনি এ কথা বলেন।
শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে মুক্তির স্বাদ দিয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জুলাইয়ে এ দেশের সব শ্রেণির মানুষের মধ্যে যে ঐক্য হয়েছিল, তা যেন অটুট থাকে।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, জুলাইয়ের লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা নতুন শপথ নেবো, যাতে স্বৈরাচার আর মাথাচাড়া দিয়ে উঠতে না পারে।
ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করে আমাদের মুক্তির স্বাদ দিয়েছে। জুলাই গণতান্ত্রিক আন্দোলনের এক অমোঘ ডাক, যার উদ্দেশ্য ছিল ফ্যাসিবাদের বিলুপ্ত করে জনগণের হাতে রাষ্ট্র ফিরিয়ে দেয়া।
তিনি বলেন, ১৬ বছর পর আমরা অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে বিদ্রোহ ঘোষণা করেছিলাম। এর তাৎক্ষণিক আমরা আমাদের টার্গেট পূরণ করতে পেরেছি। কিন্তু তার প্রথমেই ছিলো নতুনভাবে রাষ্ট্রব্যবস্থা বিনির্মাণের একটা বিরাট স্বপ্ন। আমরা প্রতি বছর এইসময়টা উদযাপন করবো। যাতে পরবর্তীতে এই দিন উদযাপনের জন্য আরও ১৬ বছর অপেক্ষা না করতে হয়। স্বৈরাচারের কোনও চিহ্ন দেখা গেলে তাতক্ষণিকভাবে যাতে বিনাশ করতে পারি– এই হোক জুলাইয়ের শিক্ষা। আমাদের সামনের পথ অনেক কঠিন হলেও সম্ভাবনা আছে। সেই বিশ্বাস নিয়েই যেন জুলাইয়ে গণজাগরণের মাসে পরিণত করি।
এ সময় জুলাই আন্দোলনের সবার প্রতি শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, যে কর্মসুচি ঘোষণা করছি সেটা শুধু সূচনা নয় বরং একটি নতুন শপথ। গতবছরের জুলাইয়ে দেশের সকল শ্রেণি পেশার মানুষের যে ঐক্য ছিলো আমরা চাই সেই ঐক্য এই জুলাইয়ে আবারও সুসংহত হোক। কর্মসূচির মুল লক্ষ্য জনগণকে গণতান্ত্রিক অধিকার নিয়ে সচেতন করা, রাজনীতির প্রতি তাদের দায়বদ্ধতা জানানো এবং রক্তের ত্যাগ না ভোলা।
আমাদের সামনের পথ অনেক কঠিন কিন্তু মস্তবড় সম্ভাবনাও আছে। ইতিহাস সাক্ষ্য দেয় জনগণ যখন জেগে উঠে কোনও শক্তিই তাকে রুখে দিতে পারে না। এ সময় এই জুলাইকে সবার গণজাগরণ ও ঐক্যের মাসে পরিণত করতে আহ্বান জানান প্রধান উপদেষ্টা।
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, এ অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে জুলাই-আগস্ট মাসজুড়ে আমরা গত বছরের একটি প্রতিকী দিনকে আবার পুনরুজ্জীবিত করব। এছাড়া, যে লক্ষ্যে আমাদের তরুণ ছাত্ররা, জনতা, রিকশাচালক, শ্রমিক ও কিশোররা শহীদ হয়েছিল, আহত হয়েছিল, সে লক্ষ্য বাস্তবায়নে আমরা নতুন করে শপথ নেবো। কোনো স্বৈরাচার যেন কোথাও মাথাচাড়া না দিতে পারে সেজন্য অনুষ্ঠানটি আমরা প্রতি বছর করব।
তিনি বলেন, জুলাই-আগস্টের পুনরুত্থান কর্মসূচি সফল হোক। এ অনুষ্ঠানমালার মাধ্যমে আমাদের স্বপ্ন আবার নতুন করে জেগে উঠুক, আমাদের ঐক্য আবার সর্বমুখী হোক, অটুট হোক।