কুমিল্লা জেলা প্রতিনিধি :
গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে এক হাজতিকে নির্যাতনের অভিযোগে যুব মহিলা লীগের বহিষ্কৃত নেত্রী শামীমা নুর পাপিয়াকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে স্থানান্তর করা হয়েছে।
সোমবার (৩ জুলাই) বিকেল সাড়ে ৫টার দিকে তাকে একটি প্রিজন ভ্যানে কুমিল্লা পাঠানো হয় বলে নিশ্চিত করেছেন কারাগারের জেল সুপার মো. ওবায়দুর রহমান।
কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় মহিলা কারাগারে ৪০ মাস ধরে বন্দী আছেন পাপিয়া। ২৭ বছরের সাজাপ্রাপ্ত কয়েদি হিসেবে জেলবিধি অনুযায়ী পাপিয়াকে ‘রাইটার’ হিসেবে নিযুক্ত করা হয়।
জেল কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, কারাগারের ভেতর রুনা লায়রা নামে এক হাজতিকে (বর্তমানে তিনি জামিনে) মারধর করায় এ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। তা ছাড়া ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে জেলার, ডেপুটি জেলার ও মেট্রোনকে (৩ জন) শো-কজ করা হয়েছে।
সম্প্রতি তিনি রুনা লায়লা নামের এক হাজতিকে নির্যাতন করেন, তার কাছ থেকে টাকা-পয়সা লুট করে নেন এমন অভিযোগে রুনার ছোট ভাই জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিত অভিযোগও করেন। পরে গঠন করা হয় দুটি তদন্ত কমিটি। এর মধ্যে, সোমবার বিকেলে পাপিয়াকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়েছে।
কাশিমপুর মহিলা কেন্দ্রীয় কারাগারের (ভারপ্রাপ্ত) জেল সুপার মো. ওবায়দুর রহমান বলেন, ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে তাকে স্থানান্তর করা হয়েছে। ভুক্তভোগী বর্তমানে জামিনে আছেন।
উল্লেখ্য, নথি চুরির একটি মামলায় শিক্ষানবিশ আইনজীবী রুনা লায়লাকে গত ১৬ জুন কাশিমপুর মহিলা কারাগারে আনা হয়। কারাগারের সাধারণ ওয়ার্ডে নেওয়ার পর রুনার দেহ তল্লাশি করে কর্তব্যরত মেট্রন তার কাছে ৭ হাজার ৪০০ টাকা পান। ওই টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পাপিয়া ও তার সহযোগী কয়েদিরা গত ১৯ জুন রুনার ওপর অমানবিক নির্যাতন করেন বলে অভিযোগ তার পরিবারের। একপর্যায়ে পিটিয়ে রক্তাক্ত অবস্থায় রুনাকে মেঝেতে ফেলে রাখা হয়। এ নিয়ে কারাগারের ভেতরে কেস টেবিল বা সালিস বসে। সেখানে ত্রিমুখী সংঘর্ষে জড়িয়ে পড়েন বন্দী, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ও কর্মচারীরা। তবে পাপিয়ার ভয়ে সাধারণ কয়েদিরা রুনা লায়লার ওপর অমানুষিক নির্যাতনের প্রতিবাদও করতে পারেননি। গত ২৭ জুন জামিনে মুক্তি পেয়ে বর্তমানে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন আছেন।
হাসপাতালে ভর্তি নির্যাতিত রুনা লায়লা বলেন, কারাগারের ভেতরে রাতে তারা লাঠি ও কম্বল চাপা দিয়ে আমাকে মারতে চেয়েছিল। পরে তারা জেলহাজতের আসামিদের দিয়ে গণপিটুনি দেয়। একপর্যায়ে পানি খেতে চাইলে আমাকে নর্দমার পানি খেতে দেয়। আমাকে মহিলা পুলিশও মারধর করে। মহিলা পুলিশের মুখে মুখোশ ছিল।
কুমিল্লা কারাগারের সিনিয়র জেল সুপার মোহাম্মদ আবদুল্লাহ আল-মামুন বলেন, তাকে রাতে আনা হয়েছে। জেলবিধি অনুযায়ী তাকে দায়িত্ব দেওয়া হবে। তবে গতকাল মাত্র এসেছে। আমরা অন্য কয়েদিদের সঙ্গেই তাকে রেখেছি। তাকে বিশেষ নজরে রাখা হবে।