Dhaka বৃহস্পতিবার, ১৭ জুলাই ২০২৫, ২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলেছে রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানের পরিমাণ সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এবার সেখানে পাওয়া গেছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে রাত পৌনে ২টা, দীর্ঘ পৌনে ১৮ ঘণ্টায় গণনা সম্পন্ন হয়েছে।

এবারের মতো এত বিপুল পরিমাণ টাকা দানবাক্সে কখনো পাওয়া যায়নি। সাধারণত তিন মাস পর পাগলা মসজিদের সিন্দুক খোলার রীতি রয়েছে। তবে এবার চার মাস ১০ দিন পর খোলা হয়েছে। এ কারণে টাকার পরিমাণ বেশি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত হোসেন বলেন, এই টাকার বাইরে দানবাক্সে মিলেছে বিদেশি মুদ্রা ও সোনার গহনা, যার অর্থমূল্য এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

সব টাকা রূপালী ব্যাংকে মসজিদের হিসাবে জমা করা হয়েছে। পুরো গণনা প্রক্রিয়া তদারকির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর ৯টি দানবাক্সে পাওয়া গিয়েছিল সর্বোচ্চ ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এবার চার মাস ১০দিন পর দানবাক্স খোলা হয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার মিলেছে এক কোটি ৪৬ লাখ ১৬ হাজার ১১৪ টাকা বেশি। তবে সবগুলো দানবাক্স আগেই ভরে যাওয়ায় দানবাক্স একটি বাড়ানো হয়েছিল।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এবং কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়।

পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মোমতাজসহ ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে ৭০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, পাগলা মসজিদ ও মাদ্রাসার ৩৪ জন শিক্ষক এবং ১০২ জন ছাত্র টাকা গোনা শুরু করেন। টাকা গুনে শেষ করতে সময় লাগে টানা ১৪ ঘণ্টা।

সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট তিনতলা পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা। জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে হারুয়া এলাকায় প্রায় চার একর জায়গাজুড়ে এ মসজিদ।

দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স’ নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়। এ মসজিদে দান করলে মনের বাসনা পূরণ হয়। মুশকিল আসানসহ মিলে রোগব্যাধি থেকে মুক্তি। এই বিশ্বাসে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ পাগলা মসজিদে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন। তাদের বিপুল দানে মাত্র তিন মাসেই পূর্ণ হয়ে যায়।

অন্যদিকে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, ফল-ফলাদি, কুরআন শরিফ ইত্যাদি নিলামঘরে জমা দিতে হয়। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দানসিন্দুকে নগদ টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার দান করা ছাড়াও মসজিদের নিলামঘরে নানা ধরনের জিনিসপত্র দান করেন।

মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এ ছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে।

কিশোরগঞ্জ যুব উন্নয়ন পরিষদের আমিনুল হক সাদী বলেন, সওয়াবের নিয়তে মসজিদে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে দান-খয়রাত করে থাকেন। সঠিক নিয়তে দান করলে মানুষের ইচ্ছা, মনের আশা ও মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। সেই বিশ্বাস থেকে মানুষ এখানে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার, গবাদিপশুসহ বিভিন্ন জিনিস দান করেন।

পাগলা মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক পৌরসভার মেয়র মো. পারভেজ মিয়া জানান, পাগলা মসজিদের দানের টাকায় আন্তর্জাতিক মানের একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। কমপ্লেক্সটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম স্থাপত্য হিসেবে বানানো হবে। এ জন্য আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ কোটি টাকা। সেখানে একসঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। ২০০ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীর নামাজের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।

মসজিদ কমিটি ও কমপ্লেক্সের সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স ও মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়নে প্রাথমিক কর্মকাণ্ড চলমান। শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। যার নাম হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

চলতি বর্ষা যশোরের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়ক চলাচলের অযোগ্য, দুর্ভোগে পথচারীরা

পাগলা মসজিদের দানবাক্সে মিলেছে রেকর্ড ৭ কোটি ৭৮ লাখ টাকা

প্রকাশের সময় : ১২:৪০:১৬ অপরাহ্ন, রবিবার, ২১ এপ্রিল ২০২৪

কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

কিশোরগঞ্জের পাগলা মসজিদের দানের পরিমাণ সব রেকর্ড ছাড়িয়ে গেছে। এবার সেখানে পাওয়া গেছে ৭ কোটি ৭৮ লাখ ৬৭ হাজার ৫৩৭ টাকা।

শনিবার (২০ এপ্রিল) সকাল ৮টা থেকে রাত পৌনে ২টা, দীর্ঘ পৌনে ১৮ ঘণ্টায় গণনা সম্পন্ন হয়েছে।

এবারের মতো এত বিপুল পরিমাণ টাকা দানবাক্সে কখনো পাওয়া যায়নি। সাধারণত তিন মাস পর পাগলা মসজিদের সিন্দুক খোলার রীতি রয়েছে। তবে এবার চার মাস ১০ দিন পর খোলা হয়েছে। এ কারণে টাকার পরিমাণ বেশি হয়েছে বলে সংশ্লিষ্টরা মনে করছেন।

পাগলা মসজিদের প্রশাসনিক কর্মকর্তা শওকত হোসেন বলেন, এই টাকার বাইরে দানবাক্সে মিলেছে বিদেশি মুদ্রা ও সোনার গহনা, যার অর্থমূল্য এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।

সব টাকা রূপালী ব্যাংকে মসজিদের হিসাবে জমা করা হয়েছে। পুরো গণনা প্রক্রিয়া তদারকির দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মমতাজ এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

এর আগে গত ৯ ডিসেম্বর ৯টি দানবাক্সে পাওয়া গিয়েছিল সর্বোচ্চ ৬ কোটি ৩২ লাখ ৫১ হাজার ৪২৩ টাকা। এবার চার মাস ১০দিন পর দানবাক্স খোলা হয়েছে। গতবারের চেয়ে এবার মিলেছে এক কোটি ৪৬ লাখ ১৬ হাজার ১১৪ টাকা বেশি। তবে সবগুলো দানবাক্স আগেই ভরে যাওয়ায় দানবাক্স একটি বাড়ানো হয়েছিল।

কিশোরগঞ্জের জেলা প্রশাসক ও পাগলা মসজিদ কমিটির সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ এবং কিশোরগঞ্জের পুলিশ সুপার মোহাম্মদ রাসেল শেখের উপস্থিতিতে শনিবার সকাল সাড়ে ৭টায় মসজিদের ৯টি দানবাক্স খোলা হয়।

পরে অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট কাজী মহুয়া মোমতাজসহ ছয়জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের তত্ত্বাবধানে ৭০ জন ব্যাংক কর্মকর্তা-কর্মচারী, পাগলা মসজিদ ও মাদ্রাসার ৩৪ জন শিক্ষক এবং ১০২ জন ছাত্র টাকা গোনা শুরু করেন। টাকা গুনে শেষ করতে সময় লাগে টানা ১৪ ঘণ্টা।

সুউচ্চ মিনার ও তিন গম্বুজবিশিষ্ট তিনতলা পাগলা মসজিদ কিশোরগঞ্জের অন্যতম ঐতিহাসিক ধর্মীয় স্থাপনা। জেলা শহরের পশ্চিম প্রান্তে নরসুন্দা নদীর তীরে হারুয়া এলাকায় প্রায় চার একর জায়গাজুড়ে এ মসজিদ।

দেশের অন্যতম আয়কারী ধর্মীয় প্রতিষ্ঠান হিসেবে স্বীকৃত মসজিদটিকে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামী কমপ্লেক্স’ নামকরণ করা হয়েছে। এ মসজিদের আয় দিয়ে কমপ্লেক্সের বিশাল ভবন নির্মাণ করা হয়েছে। এ ছাড়া মসজিদের আয় থেকে বিভিন্ন সেবামূলক খাতে অর্থ সাহায্য করা হয়। এ মসজিদে দান করলে মনের বাসনা পূরণ হয়। মুশকিল আসানসহ মিলে রোগব্যাধি থেকে মুক্তি। এই বিশ্বাসে প্রতিদিনই অসংখ্য মানুষ পাগলা মসজিদে নগদ টাকা-পয়সা ছাড়াও স্বর্ণালঙ্কার, গবাদিপশু, হাঁস-মুরগিসহ বিভিন্ন ধরনের জিনিসপত্র দান করেন। দূর-দূরান্ত থেকে আসা অসংখ্য মানুষ এখানে দান করে থাকেন। তাদের বিপুল দানে মাত্র তিন মাসেই পূর্ণ হয়ে যায়।

অন্যদিকে গরু-ছাগল, হাঁস-মুরগি, ফল-ফলাদি, কুরআন শরিফ ইত্যাদি নিলামঘরে জমা দিতে হয়। প্রতিদিন অসংখ্য মানুষ দানসিন্দুকে নগদ টাকা-পয়সা ও স্বর্ণালঙ্কার দান করা ছাড়াও মসজিদের নিলামঘরে নানা ধরনের জিনিসপত্র দান করেন।

মসজিদের দান থেকে পাওয়া এসব অর্থ সংশ্লিষ্ট মসজিদসহ জেলার বিভিন্ন মসজিদ, মাদ্রাসা ও এতিমখানার পাশাপাশি বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজে ব্যয় হয়। এ ছাড়া করোনাকালে রোগীদের সেবায় নিয়োজিত শহীদ সৈয়দ নজরুল ইসলাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের ৮০ জন স্বেচ্ছাসেবককেও অনুদান দেওয়া হয়েছিল এ দানের টাকা থেকে।

কিশোরগঞ্জ যুব উন্নয়ন পরিষদের আমিনুল হক সাদী বলেন, সওয়াবের নিয়তে মসজিদে অনেক দূর-দূরান্ত থেকে মানুষ এসে দান-খয়রাত করে থাকেন। সঠিক নিয়তে দান করলে মানুষের ইচ্ছা, মনের আশা ও মনোবাঞ্ছা পূরণ হয়। সেই বিশ্বাস থেকে মানুষ এখানে টাকা-পয়সা, স্বর্ণালঙ্কার, গবাদিপশুসহ বিভিন্ন জিনিস দান করেন।

পাগলা মসজিদ কমিটির সাধারণ সম্পাদক পৌরসভার মেয়র মো. পারভেজ মিয়া জানান, পাগলা মসজিদের দানের টাকায় আন্তর্জাতিক মানের একটি ইসলামি কমপ্লেক্স নির্মাণ করা হবে। কমপ্লেক্সটি এশিয়া মহাদেশের মধ্যে অন্যতম স্থাপত্য হিসেবে বানানো হবে। এ জন্য আনুমানিক ব্যয় ধরা হয়েছে ১১৫ থেকে ১২০ কোটি টাকা। সেখানে একসঙ্গে প্রায় ৩৫ হাজার মুসল্লি নামাজ আদায় করতে পারবেন। ২০০ গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা থাকবে। এ ছাড়া একসঙ্গে পাঁচ হাজার নারীর নামাজের জন্য আলাদা ব্যবস্থা থাকবে।

মসজিদ কমিটি ও কমপ্লেক্সের সভাপতি মোহাম্মদ আবুল কালাম আজাদ জানান, ১২০ কোটি টাকা ব্যয়ে আন্তর্জাতিক মানের দৃষ্টিনন্দন ইসলামিক কমপ্লেক্স ও মসজিদ নির্মাণের প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। যা বাস্তবায়নে প্রাথমিক কর্মকাণ্ড চলমান। শিগগির আনুষ্ঠানিকভাবে কাজ শুরু হবে। যার নাম হবে ‘পাগলা মসজিদ ইসলামিক কমপ্লেক্স’।