আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ভারত ৩৬ ঘণ্টার মধ্যে হামলা চালাতে পারে এমন আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার। এ বিষয়ে বুধবার (৩০ এপ্রিল) সকালে তিনি বলেন, বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা প্রতিবেদনে ইঙ্গিত পাওয়া গেছে যে, ভারত আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়ার পরিকল্পনা করছে।
গত সপ্তাহে ভারতশাসিত কাশ্মীরের পহেলগামে হামলার পর দুই দেশের মধ্যে উত্তেজনার মধ্যেই এমন তথ্য সামনে এলো। গত ২২ এপ্রিল পহেলগামের বৈসরন উপত্যকায় ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলার ঘটনায় ২৬ জন পর্যটকের মৃত্যু হয়।
ওই হামলার জন্য নয়াদিল্লি শুরু থেকেই ইসলামাবাদকে দোষারোপ করে আসছে, যদিও এ বিষয়ে তারা কোনো প্রমাণ দেখাতে পারেনি। পহেলগামে হামলার পর থেকেই একে অপরের ওপর পালটাপালটি দোষারোপের কারণে দুপক্ষের মধ্যে সাম্প্রতিক সময়ে উত্তেজনা আরও বেড়ে গেছে।
কাশ্মীরে ওই ভয়াবহ হামলার প্রতিশোধ নিতে একদিন আগেই প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী সামরিক বাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দিয়েছেন। মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) চলমান পরিস্থিতি নিয়ে দিল্লিতে প্রধানমন্ত্রী মোদী উচ্চ পর্যায়ের একটি বৈঠক করেন। সেখানে তিনি পহেলগাম হামলার জবাবের ধরন, লক্ষ্যবস্তু ও সময় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ব্যাপারে সেনাবাহিনীকে পূর্ণ স্বাধীনতা দেন।
মোদী বলেন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবিলা করা আমাদের জাতীয় সংকল্প এবং ভারতীয় সেনাবাহিনীর ওপর তার পূর্ণ আস্থা ও বিশ্বাস রয়েছে। ওই বৈঠকে প্রতিরক্ষামন্ত্রী রাজনাথ সিংয়ের পাশাপাশি জাতীয় নিরাপত্তা উপদেষ্টা অজিত ডোভাল ও চিফ অব স্টাফ জেনারেল অনিল চৌহানও অংশ নেন।
এদিকে পাকিস্তানের তথ্যমন্ত্রী আতাউল্লাহ তারার বলেন, পাকিস্তানের কাছে বিশ্বাসযোগ্য গোয়েন্দা তথ্য রয়েছে যে ভারত পহেলগাম ঘটনায় জড়িত থাকার ভিত্তিহীন এবং বানোয়াট অভিযোগের অজুহাতে আগামী ২৪ থেকে ৩৬ ঘন্টার মধ্যে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সামরিক পদক্ষেপ নিতে চাচ্ছে।
সংবাদ সম্মেলনে আতাউল্লাহ’র অভিযোগ অভিযোগ করেন, দক্ষিণ এশিয়া অঞ্চলের বিভিন্ন ইস্যুতে প্রায়েই ‘স্বঘোষিত’ এবং ‘এককভাবে’ বিচারক, জুরি ও জল্লাদের ভূমিকা নেয় ভারত যা পুরোপুরি বেপরোয়া এবং পাকিস্তান ভারতের এই ভূমিকা তীব্রভাবে প্রত্যাখ্যান করে।
আতাউল্লাহ বলেন, “পাকিস্তান নিজেই সন্ত্রাসাবাদের শিকার এবং এই অভিশাপের যন্ত্রণা মর্মে মর্মে উপলব্ধি করতে সক্ষম। আমারা বিশ্বের যে কোনো স্থানে যে কোনো ধরনের সন্ত্রাসী হামলার বিরুদ্ধে এবং সব সময়ই এ ধরনের ঘটনার নিন্দা জানাই।”
পেহেলগামে সন্ত্রাসী হামলার তদন্তের জন্য যদি একটি নিরপেক্ষ কমিশন গঠিত হয়, সেক্ষেত্রে একটি দায়িত্বশীল রাষ্ট্র হিসেবে সেই কমিশনকে খোলা মনে সব ধরনের সহযোগিতা করতে পাকিস্তান প্রস্তুত রয়েছে— দাবি করে আতাউল্লাহ তারার বলেন, “কিন্তু দুর্ভাগ্যজনকভাবে ভারত এমন এক পথে চলার সিদ্ধান্ত নিয়েছে, যা অযৌক্তিকতা ও সংঘর্ষে পরিপূর্ণ; এবং এই পথ শেষ পর্যন্ত এই উপমহাদেশ সংলগ্ন অংঞ্চলগুলোর চূড়ান্ত সর্বনাশ ঘটাবে।”
“ভারত নিরপেক্ষ ও নির্ভরযোগ্য তদন্ত এড়িয়ে যেতে চায়। দেশটির সত্যিকারের উদ্দেশ্য কী— তা বোঝার জন্য এটি এটি গুরুত্বপূর্ণ প্রমাণ।”
“রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য ভারত সচেতনভাবে তার জনগণের আবেগ-অনুভূতিকে নিয়ে খেলছে। কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণেও তার প্রভাব আমরা দেখছি। এটা দুর্ভাগ্যজনক এবং দুঃখজনক।”
ভারত যদি সামরিক পদক্ষেপ গ্রহণ করে, সেক্ষেত্রে পাকিস্তান তার ‘সমুচিত’ জবাব দেবে বলে হুঁশিয়ারি দিয়েছেন আতাউল্লাহ। পাশাপাশি আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে সজাগ থাকার আহ্বান জানিয়ে সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, “আমরা প্রত্যাশা করছি যে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এই ইস্যুতে সজাগ থাকবে এবং যে কোনো উত্তেজনা বা হঠকারিতা এবং এর ফলে সৃষ্ট পরিণতির দায় ভারতের ওপর বর্তাবে।”
গত ২২ এপ্রিল মঙ্গলবার বিকেলে ভারতের জম্মু ও কাশ্মির রাজ্যের পেহেলগাঁও জেলার বৈসরণ তৃণভূমিতে পর্যটকদের ওপর হামলা চালায় কাশ্মিরভিত্তিক জঙ্গিগোষ্ঠী লস্কর-ই তৈয়বার উপশাখা দ্য রেজিস্ট্যান্স ফ্রন্ট।
স্বয়ংক্রিয় রাইফেল নিয়ে হামলাকারীরা অন্তত ২৬ পর্যটককে গুলি করে হত্যা করে, আহত হন আরও বেশ কয়েকজন। নিহতরা সবাই পুরুষ। বস্তুত, ২২ এপ্রিলের হামলা ছিল ২০১৯ সালের পুলোয়ামা হামলার পর জম্মু ও কাশ্মিরে সবচেয়ে বড় প্রাণঘাতী হামলা।
ভয়াবহ এই হামলার জন্য পাকিস্তানকে দায়ী করে ভারত এবং তাৎক্ষণিকভাবে দেশটির সিন্ধু নদের পানিবন্টন চুক্তি স্থগিতসহ বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়। পাল্টা জবাব হিসেবে ভারতের জন্য নিজেদের স্থল ও আকাশসীমা বন্ধসহ একাধিক পদক্ষেপ নেয় পাকিস্তানও।
হত্যাকারীদের ধরতে জম্মু ও কাশ্মিরে সর্বাত্মক অভিযান শুরু করেছে ভারতের সেনা ও নিরাপত্তা বাহিনী। এছাড়া ২২ এপ্রিলের পর থেকে কাশ্মির সীমান্তে ভারত ও পাকিস্তানের সেনাবাহিনীর মধ্যে গুলি বিনিময় শুরু হয়েছে। এতে বেশ কয়েকজনের নিহত হওয়ার সংবাদও পাওয়া গেছে।