আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
পাকিস্তানে একটি গাড়িবোমা হামলার ঘটনায় তিন শিশুসহ কমপক্ষে ১২ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে। এছাড়া আহত হয়েছে আরও বেশ কয়েকজন।
স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (৪ মার্চ) দেশটির উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলে একটি সামরিক কম্পাউন্ডে দুটি বিস্ফোরক-বোঝাই গাড়িতে বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটেছে।
নিহতদের মধ্যে হামলাকারী ৬ জন, বাকিরা বেসামরিক এবং হামলার শিকার। এই বেসামরিকদের মধ্যে ৪ জন শিশু ও ২ জন নারী রয়েছেন। যে ছয় হামলাকারী নিহত হয়েছেন, তাদেরকেও শনাক্ত করা হয়েছে। নিহত এই ৬ জন পাকিস্তানের নিষিদ্ধ রাজনৈতিক দল তেহরিক ই তালিবান পাকিস্তানের (টিটিপি) সদস্য ছিলেন।
স্থানীয় কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, একটি জঙ্গি গোষ্ঠী ওই হামলার দায় স্বীকার করেছে। পবিত্র রমজান মাসের ইফতারের সময়ই ওই হামলার ঘটনা ঘটেছে। মঙ্গলবার সন্ধ্যায় লোকজন যখন ইফতার করছিল এমন সময় বিস্ফোরণ ঘটে এবং এরপরই গোলাগুলির শব্দ শোনা যায়।
পবিত্র রমজান মাসে নিরীহ বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করে এই কাপুরুষোচিত হামলার নিন্দা জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেহবাজ শরীফ। তিনি বলেছেন, এ ধরনের হামলা ক্ষমার অযোগ্য।
পাকিস্তানের অশান্ত খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশের বান্নু জেলায় এই হামলার ঘটনা ঘটেছে। নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক নিরাপত্তা কর্মকর্তা গভীর রাতে এএফপিকে বলেন, নিহতের সংখ্যা বেড়ে ১২ জনে দাঁড়িয়েছে। এর মধ্যে তিন শিশু এবং দুই নারী রয়েছে। এছাড়া আরও ৩২ জন আহত হয়েছে।
একজন গোয়েন্দা কর্মকর্তা এর আগে এএফপিকে বলেছিলেন যে, আত্মঘাতী বোমা হামলার পর ১২ জন জঙ্গি ওই কম্পাউন্ডে হামলা চালানোর চেষ্টা করেছিল এবং ছয়জন হামলাকারীকে গুলি করে হত্যা করা হয়েছে।
বিস্ফোরণের ফলে দুটি চার ফুট লম্বা গর্ত তৈরি হয়েছে এবং এর তীব্রতার কারণে এলাকার কমপক্ষে আটটি বাড়ি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে বলে এক পুলিশ কর্মকর্তা নিশ্চিত করেছেন।
এই হামলার দায় স্বীকার করেছে হাফিজ গুল বাহাদুর সশস্ত্র গোষ্ঠীর একটি অংশ। ওই গোষ্ঠী ২০০১ সাল থেকে মার্কিন নেতৃত্বাধীন ন্যাটো জোটের বিরুদ্ধে যুদ্ধে আফগান তালেবানদের সক্রিয়ভাবে সমর্থন করে আসছে।
যুক্তরাষ্ট্র সেনা প্রত্যাহার করে নেওয়ার পর ২০২১ সালের আগস্টে আফগানিস্তানে ফের ক্ষমতায় আসে তালেবান গোষ্ঠী। তারপর থেকে সন্ত্রাসী হামলার উল্লম্ফন ঘটেছে পাকিস্তানে। গত বছর, অর্থাৎ ২০২৪ সালের চিত্র ছিল সবচেয়ে ভয়াবহ। সরকারি তথ্য অনুসারে, গত বছর জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর পর্যন্ত ঘটে যাওয়া বিভিন্ন হামলায় নিহত হয়েছেন ১ হাজার ৬ শতাধিক মানুষ। এদের মধ্যে পুলিশ ও সেনা সদস্য রয়েছেন ৬৮৫ জন।
হামলার ঘটনা সবচেয়ে বেশি ঘটেছে খাইবার পাখতুনখোয়া প্রদেশে। পাকিস্তানের তালেবানপন্থি গোষ্ঠী টিটিপি ও তার সহযোগী বিভিন্ন গোষ্ঠী এসব হামলার জন্য দায়ী। টিটিপি আফগান তালেবান গোষ্ঠীর মদতপুষ্ট।
গত বছর জুলাই মাসে টিটিপির অন্যতম সহযোগী হাফিজ গুল বাহাদুর গ্রুপ পাকিস্তান-আফগানিস্তানের সীমান্ত এলাকায় একটি সেনা ছাউনিকে লক্ষ্য করে আত্মঘাতী গাড়িবোমা হামলা চালিয়েছিল। এতে নিহত হয়েছিলেন ৮ জন সেনা সদস্য ও ১০ জন সন্ত্রাসী।