স্পোর্টস ডেস্ক :
এশিয়া কাপের সুপার ফোর পর্বের প্রথম ম্যাচে লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে পাকিস্তানের বিপক্ষে মাঠে নামে বাংলাদেশ। টসে জিতে আগে ব্যাট করতে নেমেই শুরু হয় টপ অর্ডারের আশা যাওয়ার মিছিল। পরে সাকিব আল হাসান-মুশফিকুর রহিমের জুটিতে ঘুরে দাঁড়ালেও লোয়ার অর্ডারের ব্যর্থতায় শেষ পর্যন্ত ১৯৩ রানেই গুটিয়ে যায় বাংলাদেশ। ছোট লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে সতর্কভাবেই শুরু করেন দুই পাকিস্তানি ওপেনার। কিন্তু শরিফুল-তাসকিনের আঘাতে দলীয় ৭৪ রানে স্বাগতিকরা দুই উইকেট হারালেও ম্যাচের হাল ধরেছেন ইমাম উল হক ও মোহাম্মদ রিজওয়ান।
বুধবার (৬ সেপ্টেম্বর) লাহোরের গাদ্দাফি স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে ৩৮ ওভার ৪ বলে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৯৩ রান সংগ্রহ করে বাংলাদেশ। যেখানে সর্বোচ্চ ৬৪ রান এসেছে মুশফিক ব্যাট থেকে। তাছাড়া হাফ সেঞ্চুরি পেয়েছেন সাকিবও। জবাবে ৩৯ ওভার ৩ বলে ৩ উইকেট হারিয়ে জয়ের বন্দরে পৌঁছে যায় গেছে পাকিস্তান।
১৯৪ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে ইনিংসের শুরুতে শরিফুলের বলে পাওয়ার প্লের শেষ ওভারে লেগ বিফোর উইকেটের ফাঁদে পড়ে ফিরেছেন ফখর জামান। এরপর মাঠে নেমেছিলেন অধিনায়ক বাবর আজম, ইমামের সঙ্গে বড় জুটির দিকেও এগোচ্ছিলেন তিনি। তবে তাসকিন আহমেদের দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে বোল্ড হয়ে ফিরেছেন তিনি।
বাংলাদেশের দেয়া ১৯৪ রানের লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে শুরুটা ভালোই করেছিলেন দুই পাকিস্তানি ওপেনার ফখর জামান এবং ইমাম উল হক। টাইগার পেসারদের সামলিয়েছেন বেশ সতর্কতার সাথেই। ফলে এ দুজনের জুটিও বড় হচ্ছিল ধীরে ধীরে। তবে দশম ওভারে শরিফুলের আঘাতেই ভেঙেছে এ ওপেনিং জুটি।
দশম ওভারে শরিফুলের করা প্রথম বলেই বল গিয়ে আঘাত করে ফখরের পায়ে। টাইগারদের জোরালো আবেদনের প্রেক্ষিতে এরপর আম্পায়ারও আঙুল তুলতে দ্বিধা করেননি। ফলে ৩১ বলে ২০ রান করেই ফিরতে হয় ফখরকে।
এরপর মাঠে নামেন বাবর। দেখেশুনে খেলে ইমাম এর সঙ্গে জুটি বড় করার দিকেই এগোচ্ছিলেন তিনি। দুজন মিলে স্কোরবোর্ডে যোগ করেছেন ৩৯ রান। তবে ষোলোতম ওভারে তাসকিনের করা তৃতীয় বলেই স্টাম্প উপড়ে যায় বাবরের। ফলে ২২ বলে ১৭ রানেই ফিরতে হয় বাবরকে।
তৃতীয় উইকেট জুটিতে স্বাগতিকদের হাল ধরেন ইমাম উল হক ও মোহাম্মদ রিজওয়ান। দুই টপ অর্ডারের ৮৫ রানের জুটিতে সুপার ফোরের প্রথম জয় নিয়ে মাঠ ছাড়ে পাকিস্তান। এবারের এশিয়া কাপে নিজের প্রথম অর্ধশতক তুলে নেন ইমাম। সর্বোচ্চ ৭৮ রানের করেন এই ওপেনার। বাংলাদেশের হয়ে ২৪ রানে ১ উইকেট শিকার করে সেরা বোলার শরিফুল।
এর আগে টস জিতে ব্যাট করতে নেমে বাংলাদেশের হতাশার শুরু হয় ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারেই। আগের ম্যাচে মেক শিফট ওপেনার হয়ে খেলতে নামা মেহেদী হাসান মিরাজ হাঁকিয়েছিলেন সেঞ্চুরি। তাকে এ ম্যাচেও নামানো হয়েছিল উদ্বোধনী ব্যাটার হিসেবে। কিন্তু নাঈম শেখ প্রথম ওভার মেডেন দেওয়ার পর দ্বিতীয়টিতে এসে মুখোমুখি হওয়া প্রথম বলেই আউট হয়ে যান মিরাজ। প্যাডে আসা বল স্কয়ার লেগে অপ্রত্যাশিতভাবে ক্যাচ দেন তিনি।
জ্বরের কারণে আগের দুই ম্যাচে না থাকা লিটন দাস একাদশে ফেরেন হ্যামস্ট্রিংয়ের চোটে থাকা নাজমুল হোসেন শান্তর জায়গায়। উইকেটে এসে দারুণ কিছু শটও খেলেন তিনি। কিন্তু পা দেন শাহিন শাহ আফ্রিদির ফাঁদে। কয়েকটি বল ব্যাটে খেলিয়ে, স্লোয়ার দিয়ে, হুট করেই জোরের ওপর বাউন্সার করেন তিনি। সেটি বুঝতে না পারা লিটনের ব্যাটের কানায় বল লেগে চলে যায় উইকেটরক্ষক মোহাম্মদ রিজওয়ানের গ্লাভসে। আউট হয়ে সাজঘরে ফিরতে ৪ চারে ১৩ বলে ১৬ রান করে।
নাঈম শেখও কিছু শটে আত্মবিশ্বাসের ছাপ রাখছিলেন। কিন্তু এই ব্যাটারও বড় করতে পারেননি ইনিংস। ৪ চারে ২৫ বলে ২০ রান করে হারিস রউফের বলে পুল করতে যান তিনি। টাইমিং ঠিকঠাক মতো হয়নি, নিজেই সহজ ক্যাচ নেন রউফ। এরপর হারিস রউফের গতিতে পরাস্ত হন তাওহীদ হৃদয়ও। ৯ বলে ২ রান করে তিনি হয়ে যান বোল্ড।
পাওয়ার প্লের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা দলকে ধীরে ধীরে টেনে তোলেন দুই অভিজ্ঞ ব্যাটার মুশফিকুর রহিম ও সাকিব আল হাসান। দুজনই দারুণভাবে এগিয়ে নিচ্ছিলেন দলকে। আশাও বাড়ছিল বড় রানের। এর মধ্যে জুটির একশর সঙ্গে সাকিবের হাফ সেঞ্চুরি পূর্ণ হয়। কিন্তু এরপরই যেন বিভ্রান্ত হয়ে যান সাকিব। তার পেটের কাছে থাকা বলে পুল করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড স্কয়ার লেগে ক্যাচ দেন তিনি। ফাহিম আশরাফের বলে আউট হওয়ার আগে ৫৭ বলে ৫৩ রান করেন সাকিব।
দলের বিপদ এরপর কেবল বেড়েছেই। শামীম পাটোয়ারীকে সাত নম্বরে পাঠানো হয়। তিনি একটি দৃষ্টিনন্দন ছক্কাও হাঁকান। কিন্তু ইফতেখার আহমেদের বলে ২৩ বলে ১৬ রান করে আউট হয়ে যান তিনি। মুশফিকুর রহিমও তিলে তিলে তৈরি করা ইনিংসের শেষটা করতে পারেননি ঠিকভাবে।
৫ চারে ৮৭ বলে ৬৪ রান করে মুশফিক রউফের বলে মারতে গিয়ে রিজওয়ানের হাতে ক্যাচ দেন। আট ব্যাটার নিয়ে খেলতে নামা বাংলাদেশের শেষ স্বীকৃত ব্যাটার ছিলেন আফিফ হোসেন। কিন্তু তিনি নাসিম শাহের শট বলে ক্যাচ দেওয়ার আগে ১১ বলে ১২ রান করেন। বাংলাদেশের টেল গুটাতে এরপর আর সময় নেয়নি। হারিস রউফ চার, নাসিম শাহ তিন ও শাহিন শাহ আফ্রিদি নেন এক উইকেট।