Dhaka বুধবার, ২৩ জুলাই ২০২৫, ৭ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ১০:২৪:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫
  • ২০২ জন দেখেছেন

স্পোর্টস ডেস্ক : 

বাজে শুরুর পর দলের হাল ধরলেন জাকের আলি অনিক ও মাহেদি হাসান। তাদের দারুণ জুটির পর দলকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন জাকের। দলকে এনে দেন লড়াকু সংগ্রহ। এই রান তাড়ায় নেমে পাকিস্তানের শুরুটাও হয় একইভাবে। শেষদিকে ফাহিম আশরাফ চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হন। দারুণ জয়ে সিরিজ নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ।

তিন ম্যাচে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আজ পাকিস্তানকে ৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে টাইগাররা। সঙ্গে গড়েছে ইতিহাসও; প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে এই সংস্করণে সিরিজ জিতেছে স্বাগতিক এই দল।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে জাকের আলির লড়িয়ে ফিফটিতে ২০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ১৩৩ রান। সেই রান তাড়ায় ৪৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে পাকিস্তান। কিন্তু ফাহিম আশরাফের বীরোচিত ব্যাটিংয়ে অভাবনীয় এক জয়ের সম্ভাবনা জাগায় তারা। তবে শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারের ফয়সালায় সমর্থকদের হতাশ করেনি লিটনের দল।

উইকেট আগের ম্যাচের মতোই ছিল অনেকটা মন্থর। বল থমকে এসেছে কিছুটা, বাউন্স ছিল অসমান। তার পরও ১৩৪ রানের লক্ষ্য নাগালের বাইরে ছিল না। কিন্তু সেই লক্ষ্যই ভীষণ দুরূহ হয়ে ওঠে বাংলাদেশের দুর্দান্ত বোলিংয়ে।

প্রথম উইকেটটি ছিল উপহার। প্রথম ওভারেই রান আউট সাইম আইয়ুব। এরপর যেন বয়ে যায় উইকেট-প্রপাত। তাসকিন আহমেদের বিশ্রামে একাদশে ফেরা শরিফুল ইসলামের শিকার মোহাম্মাদ হারিস ও ফাখার জামান। তানজিম হাসানের দুর্দান্ত দুটি ডেলিভারিতে পরপর দুই বলে শূন্যতে শেষ হাসান নাওয়াজ ও মোহাম্মাদ নাওয়াজ।

পঞ্চম ওভারেই ১৫ রানে তখন ৫ উইকেট নেই পাকিস্তানের!

এই সংস্করণে এত কম রানে ৫ উইকেট হারানোর নজির তাদের আর নেই। বাংলাদেশেরও এত কম রানে ৫ উইকেট অর্জনের কীর্তি এটি প্রথম।

এরপর উইকেটের মিছিলে কিছুটা বিরতি। তবে স্বস্তি ফেরেনি পাকিস্তানের। অধিনায়ক সালমান আলি আগার (২৩ বলে ৯) রানের যন্ত্রণাময় উপস্থিতি শেষ করেন মেহেদি।

পাকিস্তানের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত রান ১৮! একটু পর মেহেদি ফিরিয়ে দেন খুশদিল শাহকেও (১৩)।

পাকিস্তানের রান তখন ৭ উইকেটে ৪৭। তাদের সর্বনিম্ন দলীয় রান কত, বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন দলের স্কোর সবচেয়ে কম, নানা পরিসংখ্যানের খোঁজাখুঁজি তখন চলছে।

কিন্তু সেই ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়েও জয়ের ছবি আঁকছিলেন ফাহিম আশরাফ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলকে জেতাতে পারেননি তিনি।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওভারে হারায় মোহাম্মদ নাঈম শেখকে (৭ বলে ৩)। তানজিদ হাসানের বদলে একাদশে জায়গা পাওয়া ব্যাটসম্যান উইকেট হারান কিপারের ওপর দিয়ে বল পাঠানোর চেষ্টায়।

ফাহিম আশরাফের টানা দুই বলে পারভেজ হোসেন ইমনের ছক্কা ও চারে ছিল পাল্টা আক্রমণের ইঙ্গিত। কিন্তু সেই হাওয়া পাল্টে যায় দ্রুতই। ৬ রানে জীবন পাওয়া লিটন কুমার দাস ৮ রানেই বিদায় নেন পুল খেলে। ওই ওভারেই তাওহিদ হৃদয়ের (০) রান আউট ছিল যেন আত্মহত্যা।

পরের ওভারে পারভেজও (১৪ বলে ১৩) যখন ফিরলেন আলতো ক্যাচ দিয়ে, ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ভেঙে পড়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশের ইনিংস। নড়বড়ে দেয়ালকে পতন থেকে রক্ষা করেন জাকের আলি ও শেখ মেহেদি হাসান।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটিং যেন প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন মেহেদি। সবশেষ পাঁচ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে তার মোট রান ছিল ১৭। অবশেষে এ দিন বুঝি তার মনে হলো, ‘আমি তো অলরাউন্ডার!’ দুটি করে চার-ছক্কায় ২৫ বলে ৩৩ রান করেন তিনি। তার ৬০ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস এটি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে রান আসে ৫৩।

এরপর শামীম হোসেন (১) ও তানজিম হাসানের (৭) দ্রুত বিদায়ে আবার পথচ্যুত হয় ইনিংস। সেখান থেকে দলকে ১৩০ পার করানোর কৃতিত্ব বলতে গেলে জাকেরের একার। বেশ কিছু ডেলিভারিতে তিনি রান নিতে পারেননি, কয়েকটি ডেলিভারিতে রান নেননি স্ট্রাইক ধরে রাখতে। সব পুষিয়ে দেন তিনি পাঁচটি ছক্কায়। ৩২ রানে জীবন পাওয়াটাও কাজে লাগান তিনি।

শেষ ওভারে আব্বাস আফ্রিদিকে দুটি ছক্কায় স্পর্শ করেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার তৃতীয় ফিফটি। আগের ম্যাচে ভালো বোলিং করা সালমান মির্জা এই ম্যাচেও দারুণ বোলিংয়ে নেন দুটি উইকেট, অভিষিক্ত পেসার আহমেদ দানিয়েলের প্রাপ্তিও দুটি।

তখনও পর্যন্ত পাকিস্তানের সম্ভাবনা জিইয়ে ছিল ভালোভাবেই। একটু পরই তা পরিণত হয় ধ্বংস্তুপে। এই মাঠেই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ নামবে হোয়াইটওয়াশ সাফল্যের আশায়।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

পাকিস্তানকে হারিয়ে ইতিহাস গড়ল বাংলাদেশ

প্রকাশের সময় : ১০:২৪:৪২ অপরাহ্ন, মঙ্গলবার, ২২ জুলাই ২০২৫

স্পোর্টস ডেস্ক : 

বাজে শুরুর পর দলের হাল ধরলেন জাকের আলি অনিক ও মাহেদি হাসান। তাদের দারুণ জুটির পর দলকে শেষ পর্যন্ত টেনে নিয়ে ফিফটি পূর্ণ করেন জাকের। দলকে এনে দেন লড়াকু সংগ্রহ। এই রান তাড়ায় নেমে পাকিস্তানের শুরুটাও হয় একইভাবে। শেষদিকে ফাহিম আশরাফ চেষ্টা চালালেও ব্যর্থ হন। দারুণ জয়ে সিরিজ নিজেদের করে নেয় বাংলাদেশ।

তিন ম্যাচে সিরিজের দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আজ পাকিস্তানকে ৮ রানে হারিয়েছে বাংলাদেশ। এই জয়ে ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জিতে নিয়েছে টাইগাররা। সঙ্গে গড়েছে ইতিহাসও; প্রথমবারের মতো পাকিস্তানের বিপক্ষে এই সংস্করণে সিরিজ জিতেছে স্বাগতিক এই দল।

মঙ্গলবার (২২ জুলাই) মিরপুর শের-ই-বাংলা স্টেডিয়ামে জাকের আলির লড়িয়ে ফিফটিতে ২০ ওভারে বাংলাদেশ তোলে ১৩৩ রান। সেই রান তাড়ায় ৪৭ রানে ৭ উইকেট হারিয়ে ধুঁকতে থাকে পাকিস্তান। কিন্তু ফাহিম আশরাফের বীরোচিত ব্যাটিংয়ে অভাবনীয় এক জয়ের সম্ভাবনা জাগায় তারা। তবে শেষ পর্যন্ত শেষ ওভারের ফয়সালায় সমর্থকদের হতাশ করেনি লিটনের দল।

উইকেট আগের ম্যাচের মতোই ছিল অনেকটা মন্থর। বল থমকে এসেছে কিছুটা, বাউন্স ছিল অসমান। তার পরও ১৩৪ রানের লক্ষ্য নাগালের বাইরে ছিল না। কিন্তু সেই লক্ষ্যই ভীষণ দুরূহ হয়ে ওঠে বাংলাদেশের দুর্দান্ত বোলিংয়ে।

প্রথম উইকেটটি ছিল উপহার। প্রথম ওভারেই রান আউট সাইম আইয়ুব। এরপর যেন বয়ে যায় উইকেট-প্রপাত। তাসকিন আহমেদের বিশ্রামে একাদশে ফেরা শরিফুল ইসলামের শিকার মোহাম্মাদ হারিস ও ফাখার জামান। তানজিম হাসানের দুর্দান্ত দুটি ডেলিভারিতে পরপর দুই বলে শূন্যতে শেষ হাসান নাওয়াজ ও মোহাম্মাদ নাওয়াজ।

পঞ্চম ওভারেই ১৫ রানে তখন ৫ উইকেট নেই পাকিস্তানের!

এই সংস্করণে এত কম রানে ৫ উইকেট হারানোর নজির তাদের আর নেই। বাংলাদেশেরও এত কম রানে ৫ উইকেট অর্জনের কীর্তি এটি প্রথম।

এরপর উইকেটের মিছিলে কিছুটা বিরতি। তবে স্বস্তি ফেরেনি পাকিস্তানের। অধিনায়ক সালমান আলি আগার (২৩ বলে ৯) রানের যন্ত্রণাময় উপস্থিতি শেষ করেন মেহেদি।

পাকিস্তানের প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের সম্মিলিত রান ১৮! একটু পর মেহেদি ফিরিয়ে দেন খুশদিল শাহকেও (১৩)।

পাকিস্তানের রান তখন ৭ উইকেটে ৪৭। তাদের সর্বনিম্ন দলীয় রান কত, বাংলাদেশের বিপক্ষে কোন দলের স্কোর সবচেয়ে কম, নানা পরিসংখ্যানের খোঁজাখুঁজি তখন চলছে।

কিন্তু সেই ধ্বংসস্তুপে দাঁড়িয়েও জয়ের ছবি আঁকছিলেন ফাহিম আশরাফ। কিন্তু শেষ পর্যন্ত দলকে জেতাতে পারেননি তিনি।

টস হেরে ব্যাটিংয়ে নামা বাংলাদেশ দ্বিতীয় ওভারে হারায় মোহাম্মদ নাঈম শেখকে (৭ বলে ৩)। তানজিদ হাসানের বদলে একাদশে জায়গা পাওয়া ব্যাটসম্যান উইকেট হারান কিপারের ওপর দিয়ে বল পাঠানোর চেষ্টায়।

ফাহিম আশরাফের টানা দুই বলে পারভেজ হোসেন ইমনের ছক্কা ও চারে ছিল পাল্টা আক্রমণের ইঙ্গিত। কিন্তু সেই হাওয়া পাল্টে যায় দ্রুতই। ৬ রানে জীবন পাওয়া লিটন কুমার দাস ৮ রানেই বিদায় নেন পুল খেলে। ওই ওভারেই তাওহিদ হৃদয়ের (০) রান আউট ছিল যেন আত্মহত্যা।

পরের ওভারে পারভেজও (১৪ বলে ১৩) যখন ফিরলেন আলতো ক্যাচ দিয়ে, ২৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে তখন ভেঙে পড়ার অপেক্ষায় বাংলাদেশের ইনিংস। নড়বড়ে দেয়ালকে পতন থেকে রক্ষা করেন জাকের আলি ও শেখ মেহেদি হাসান।

সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাটিং যেন প্রায় ভুলেই গিয়েছিলেন মেহেদি। সবশেষ পাঁচ টি-টোয়েন্টি ইনিংসে তার মোট রান ছিল ১৭। অবশেষে এ দিন বুঝি তার মনে হলো, ‘আমি তো অলরাউন্ডার!’ দুটি করে চার-ছক্কায় ২৫ বলে ৩৩ রান করেন তিনি। তার ৬০ ম্যাচের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের সেরা ইনিংস এটি। পঞ্চম উইকেট জুটিতে রান আসে ৫৩।

এরপর শামীম হোসেন (১) ও তানজিম হাসানের (৭) দ্রুত বিদায়ে আবার পথচ্যুত হয় ইনিংস। সেখান থেকে দলকে ১৩০ পার করানোর কৃতিত্ব বলতে গেলে জাকেরের একার। বেশ কিছু ডেলিভারিতে তিনি রান নিতে পারেননি, কয়েকটি ডেলিভারিতে রান নেননি স্ট্রাইক ধরে রাখতে। সব পুষিয়ে দেন তিনি পাঁচটি ছক্কায়। ৩২ রানে জীবন পাওয়াটাও কাজে লাগান তিনি।

শেষ ওভারে আব্বাস আফ্রিদিকে দুটি ছক্কায় স্পর্শ করেন টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে তার তৃতীয় ফিফটি। আগের ম্যাচে ভালো বোলিং করা সালমান মির্জা এই ম্যাচেও দারুণ বোলিংয়ে নেন দুটি উইকেট, অভিষিক্ত পেসার আহমেদ দানিয়েলের প্রাপ্তিও দুটি।

তখনও পর্যন্ত পাকিস্তানের সম্ভাবনা জিইয়ে ছিল ভালোভাবেই। একটু পরই তা পরিণত হয় ধ্বংস্তুপে। এই মাঠেই বৃহস্পতিবার বাংলাদেশ নামবে হোয়াইটওয়াশ সাফল্যের আশায়।