স্পোর্টস ডেস্ক :
রোমাঞ্চের চোরাবালিতে হাবুডুবু খেলেন প্রেমাদাসার দর্শকরা। বারবার বদলে গেলো ম্যাচের মোড়। কখনো কুশল মেন্ডিস সহজই করে ফেললেন ম্যাচটা, কখনো আশা জাগালেন আশালাঙ্কা। হুট করেই দুই বলে দুই উইকেট নিয়ে পাকিস্তানকে লড়াইয়ে আনলেন শাহিন শাহ আফ্রিদি। নানা নাটকীয়তার পর ম্যাচে জয়ী হয়ে থাকলো শ্রীলঙ্কা।
এশিয়া কাপের সুপার ফোরে পাকিস্তান-শ্রীলঙ্কার ম্যাচটা অলিখিত সেমিফাইনালে রূপ নিয়েছিল। তার ওপর ছিল বৃষ্টি হানার সম্ভাবনা। কয়েক দফা বৃষ্টি হানা দিয়েছিল ঠিকই। কিন্তু শেষ পর্যন্ত থাকা ম্যাচের উত্তাপে সেটি আর বাধা সৃষ্টি করতে পারেনি। জমজমাট লড়াইয়ে বৃষ্টি আইনে পাকিস্তানকে ২ উইকেটে হারিয়ে মহাদেশীয় শ্রেষ্ঠত্বের টুর্নামেন্টের ফাইনালে নাম লিখিয়েছে ডিফেন্ডিং চ্যাম্পিয়ন শ্রীলঙ্কা। রবিবার স্বাগতিকরা ভারতের মুখোমুখি হবে। গত আসরে লঙ্কান দল টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটে শিরোপা জিতেছিল।
টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নেমে নির্ধারিত ৪২ ওভারে ৭ উইকেট হারিয়ে ২৫২ রান সংগ্রহ করেছে পাকিস্তান। দলের হয়ে সর্বোচ্চ অপরাজিত ৮৬ রান করেছেন মোহাম্মদ রিজওয়ান।
১৩০ রান তুলতেই টপ অর্ডারের ৫ ব্যাটারকে হারিয়েছিল পাকিস্তান। এরপর সেখান থেকে দলকে টেনে তুলেন মোহাম্মদ রিজওয়ান ও ইফতিখার আহমেদ। ষষ্ঠ উইকেটে দুজনে গড়েন ১০৮ রানের জুটি।
৪০ বলে ২ ছক্কা ও ৪ চারে ৪৭ রানে সাজঘরে ফিরেন ইফতিখার। তবে রিজওয়ান খেলেন শেষ বল পর্যন্ত। ৭৩ বলে ৮৬ রানের হার না মানা ইনিংস খেলেন তিনি। তার ইনিংসে ছিল ২টি ছক্কা ও ৬টি চার।
এর আগে ওপেনিংয়ে নেমে ৬৯ বলে ৫২ রান করেন আব্দুল্লাহ শফিক। সেট হয়েও ইনিংস বড় করতে পারেননি অধিনায়ক বাবর। ৩৫ বলে ২৯ করেছেন তিনি।
শ্রীলঙ্কার হয়ে তিন উইকেট শিকার করেছেন মাথিশা পাথিরানা। তবে ৮ ওভারে ৬৫ রান খরচ করেছেন তিনি। প্রমোদ মাদুশানও ছিলেন খরুচে, ৭ ওভারে ৫৮ রান দিয়ে নিয়েছেন দুটি উইকেট।
৪২ ওভার শেষে পাকিস্তানের স্কোর দাঁড়ায় ৭ উইকেটে ২৫২। তবে বৃষ্টি আইনে শ্রীলঙ্কার লক্ষ্যও ২৫২।
জবাব দিতে নেমে শুরু থেকেই কিছুটা চালিয়ে খেলছিলেন দুই লঙ্কান ওপেনার কুশল পেরেরা এবং পাথুম নিসাঙ্কা। তবে দলের ২০ রানের মাথায় রানআউটের শিকার হয়ে সাজঘরে ফিরে যান পেরেরা। আউট হওয়ার আগে ৮ বলে ১৭ রান করেন তিনি।
এরপর তিনে নেমে এক প্রান্ত আগলে রেখে খেলতে থাকেন কুশল মেন্ডিস। কার্যকরী ব্যাটিংয়ে দলের রান বাড়াচ্ছিলেন তিনি। আরেক দিকে ভালো শুরু পরে খেই হারান নিসাঙ্কা। দলের ৭৭ রানের মাথায় আউট হন তিনি।
এরপর চারে নেমে ক্রিজে জমে যান ফর্মে থাকা সাদিরা সামারাবিক্রমা। দারুণ ব্যাটিংয়ে দলের রান বাড়াচ্ছিলেন তিনি। জমে যায় কুশল এবং সামারাবিক্রমার জুটি। পাক বোলারদের কোনোরকম সুযোগ না দিয়ে লঙ্কানদের জয়ের পথে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছিলেন দুজন।
এরই মধ্যে ফিফটি ছুঁয়ে ফেলেন কুশল। সামারাবিক্রমাও ছুটছিলেন সেদিকেই। তবে ফিফটি থেকে হাত ছোঁয়া দূরত্বে থামেন সামারাবিক্রমা। ইফতিখার আহমেদের বলে আউট হওয়ার আগে ৫১ বলে ৪৮ রানের ইনিংস খেলেন সামারাবিক্রমা। তৃতীয় উইকেট জুটিতে রান আসে ১০০।
এরপরেও লড়াই চালিয়ে যাচ্ছিলেন কুশল। সাবলীল ব্যাটিংয়ে একটু একটু করে দলকে জয়ের কাছাকাছি নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। নিজেও চলে গিয়েছিলেন সেঞ্চুরির অনেক কাছে।
কিন্তু না! নাটকের আরও বাকি ছিল তখনও। দলের ২১০ রানের মাথায় ইফতিখারের বলে মোহাম্মদ হারিসের দুর্দান্ত এক ক্যাচ হয়ে সাজঘরে ফিরে যান কুশল। আউট হওয়ার আগে ৮৭ বলে ৯১ রানের অনবদ্য এক ইনিংস খেলেন কুশল।
শেষ দিকে ক্রিজে টিকে ছিলেন চারিথ আসালাঙ্কা। ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটিংয়ে একটু একটু করে দলকে জয়ের বন্দরে নিয়ে যাচ্ছিলেন তিনি। পাক বোলাররাও নিজেদের সর্বস্ব দিয়ে চেষ্টা করে যাচ্ছিলেন ম্যাচ বাঁচানোর। তবে নাটকের বাকি ছিল আরও অনেক। শেষের আগের ওভারে বোলিংয়ে এসে ২ বলে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচকে আরও বেশি জমিয়ে তোলেন শাহীন শাহ আফ্রিদি।
একদম শেষ ওভার থেকে ৯ রান দরকার ছিল শ্রীলঙ্কার। জামান খান এসে কাঁপিয়ে দিয়েছিলেন লঙ্কাকে। শেষ ২ বলে দরকার ছিল ৬ রান। সেখানে একটি চার মারেন আসালাঙ্কা। শেষ বলে প্রয়োজন ছিল ২ রান। এবারও দলকে উদ্ধার করেছেন চারিথ আসালাঙ্কা। ২ উইকেটের নাটকীয় জয়ে ফাইনালে চলে যায় শ্রীলঙ্কা। ৪৭ বলে ৪৯ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস খেলেন আসালাঙ্কা।
পাকিস্তানের হয়ে বল হাতে দুর্দান্ত ছিলেন ইফতিখার। ৫০ রান খরচায় ৩ উইকেট শিকার করেন তিনি। ২ উইকেট শিকার করেন শাহীন। এছাড়া ১ উইকেট নেন শাদাব খান।
এই জয়ের ফলে ফাইনালে চলে গেল শ্রীলঙ্কা। আগামী ১৭ সেপ্টেম্বর ফাইনাল ম্যাচে মুখোমুখি হবে ভারত এবং শ্রীলঙ্কা। ম্যাচ শুরু হবে বাংলাদেশ সময় বেলা সাড়ে ৩টায়।