নিজস্ব প্রতিবেদক :
জয়পুরহাটের পাঁচবিবি উপজেলার বাগজানা এলাকায় ছোট যমুনা নদীর ওপর তৈরি করা হচ্ছে গার্ডার সেতু। এতে চলাচলের সুবিধা পাবেন নদী তীরবর্তী মানুষ। কিন্তু গার্ডার সেতুসংলগ্ন স্থান থেকে বালু তুলছেন কুটাহারা-বাগজানা এলাকায় বালুমহাল ইজারাদার পাঁচবিবি উপজেলা যুবলীগের দপ্তর সম্পাদক আবু সাঈদ রনি। এতে সেতুটি হুমকির মুখে পড়ার শঙ্কা করছে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ।
সেতুর পাশ থেকে বালু উত্তোলনের ব্যাপারে উপজেলা প্রকৌশল বিভাগ অভিযোগ দিয়েছিল ইউএনওকে। কিন্তু এরপর কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি বলে জানিয়েছেন পাঁচবিবি উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুম।
নির্ধারিত সময় অতিবাহিত হলেও নির্মাণাধীন ৯৬ মিটার গার্ডার সেতুর কাজ এখনো শেষ হয়নি। এ অবস্থায় মানুষ ও যানবাহন চলাচলে পোহাতে হচ্ছে দুর্ভোগ। নির্মাণাধীন সেতুর নিচে মাটির রাস্তা রয়েছে। সেই রাস্তা দিয়ে নদী পার হওয়া মানুষ ও যানবাহনের টোল আদায় করা হচ্ছে।
উপজেলা প্রকৌশলীর কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, কুটাহারা-বাগজানা এলাকায় যমুনা নদীর ওপর এ সেতু নির্মিত হচ্ছে। সেতুর প্রাক্কলিত ব্যয় ধরা হয়েছে ৯ কোটি ৭৬ লাখ টাকা। মেসার্স বিএইচবি লিমিটেড ও মেসার্স লিটন ট্রেডার্স নামের দুটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান কাজটি পেয়েছে। ২০২১ সালের ২২ এপ্রিল কার্যাদেশ দেয়া হয়। সেতুর নির্মাণকাজ শেষ করার নির্ধারিত সময় বেঁধে দেয়া হয় ২০২২ সালের ১১ অক্টোবর। তবে ঠিকাদার নির্ধারিত সময়ের মধ্যে কাজ শেষ করতে পারেননি। এরপর আরও দুই দফায় মেয়াদ বাড়ানো হয়। এখনো প্রায় ৩০ শতাংশ কাজ বাকি আছে।
সম্প্রতি সরেজমিনে দেখা গেছে, সেতুর উত্তর দিকে প্রায় ৪০০ গজ দূরে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। পশ্চিম অংশে রতনপুর গ্রামের বাসিন্দা আজাদ হোসেন বাঁশের মাচা পেতে বসে আছেন। তিনি সেতুর নিচ দিয়ে বিকল্প রাস্তায় নদী পারাপার হওয়া মানুষ ও যানবাহন থেকে টোল আদায় করেন।
চকশিমুলিয়া গ্রামের ফিরোজ হোসেন বলেন, গার্ডার সেতুর পাশেই বালুর ঘাট ইজারা দেয়া আছে। সেখান থেকে প্রতিনিয়ত বালু তোলা হচ্ছে। এভাবে বালু তুলতে থাকলে সেতুটি হুমকির মুখে পড়বে।
সেতু নির্মাণের আগে নৌকায় যাত্রী পারাপারের জন্য খেয়াঘাটটি লিজ নিতেন রতনপুর গ্রামের আজাদ হোসেন। এবারও ৬০ হাজার টাকা দিয়ে বাগজানা ইউনিয়ন থেকে ঘাট ডেকে নিয়েছেন তিনি। সেতুর নিচের রাস্তা পারাপারের টোল আদায়কারী আজাদ হোসেন বলেন, সেতু নির্মাণের সময় ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান বিকল্প রাস্তা করে দেয়নি। এই রাস্তা বালুমহালের ইজারাদার করে দিয়েছেন। বাগজানা ইউনিয়ন পরিষদ থেকে প্রায় ৬০ হাজার টাকায় ঘাট ইজারা নিয়েছেন। ঘাটের রাস্তা দিয়ে পারাপারে জনপ্রতি পাঁচ টাকা আর মোটরসাইকেলসহ অন্য ছোট্ট যানবাহনে ১০ টাকা করে টোল আদায় করা হয়।
কুটাহারা-বাগজানা এলাকায় বালুমহাল ইজারা নেয়া যুবলীগ নেতা আবু সাঈদ রনি বলেন, এই বালুমহালটি ১২ লাখ ২০ হাজার টাকায় ইজারা নেয়া হয়েছে। ভ্যাট-ট্যাক্স দিয়ে ১৬ লাখ ২৫ হাজার টাকা পড়েছে। বালুমহাল থেকে বালু তুলতে গেলে অনেক নির্দেশনা থাকে। এসব মেনে চললে বালু পাওয়া যাবে না। নদীখননের ফলে নদীতে তেমন বালু নেই। তাই পাশের জমিগুলো থেকে বালু তুলে বিক্রি করা হচ্ছে।
আবু সাঈদ আরও বলেন, সেতুর নিচে বিকল্প রাস্তাটি তিনি নিজে করে দিয়েছেন। এতে প্রায় দুই লাখ টাকা খরচ হয়েছে। সেতুর ঠিকাদার রাস্তা করেছে কি না তা জানেন না।
সেতু নির্মাণের ঠিকাদার মো. লিটন বলেন, সেতুর নিচে বিকল্প সড়ক নির্মাণ করা হয়েছিল। সেটি ভেঙে যাওয়ার পর নতুন করে অন্যরা বিকল্প সড়ক নির্মাণ করেছে।
পাঁচবিবি উপজেলা প্রকৌশলী আব্দুল কাইয়ুম বলেন, সেতুর খুব কাছেই নদীর পাশ থেকে বালু উত্তোলন করা হচ্ছে। এতে জায়গাটিতে পুকুরের মতো অনেক বড় গর্ত হয়েছে। নদীতে পানি বাড়লে নদীর স্রোত বৃদ্ধি পাবে। তখন বালু উত্তোলনের ওই স্থানে বড় ধরনের ঘূর্ণির সৃষ্টি হলে পানি বের হওয়ার সময় সেতুর পাশের রাস্তা ভেঙেও যেতে পারে। ফলে পানির ধাক্কা সেতুতে পড়বে। বিষয়টি ইউএনওকে জানানো হয়েছিল। কিন্তু এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়া হয়নি।
পাঁচবিবির ইউএনও বরমান হোসেন বলেন, যেখানে বালুমহাল ইজারা দেয়া হয়েছে, সেটা নির্মাণাধীন সেতু থেকে দূরে। তবে অবৈধভাবে বালু উত্তোলন করা হলে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।