নিজস্ব প্রতিবেদক :
পল্লী বিদ্যুত সমিতির কর্মীরা কাজে যোগ না দিলে বিকল্প জনবল নিয়োগের হুঁশিয়ারি দিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের বিদ্যুৎ ও জ্বালানি উপদেষ্টা মুহাম্মদ ফাওজুল কবির খান বলেন, পল্লী বিদ্যুৎ সমিতিসহ কারো কোনো নাশকতা বরদাশত করা হবে না।
রোববার (২০ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর একটি হোটেলে আয়োজিত জ্বালানি বিষয়ক সেমিনারে তিনি এ কথা বলেন।
সম্প্রতি কয়েক কর্মকর্তাকে চাকরি থেকে বরখাস্ত ও আরও কিছু কর্মকর্তার বিরুদ্ধে মামলার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার দেশের কয়েক জেলায় ‘কমপ্লিট শাটডাউন’ কর্মসূচি পালন করেন পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির (পবিস) নেতা কর্মীরা। এ অবস্থায় ভোগান্তিতে পড়েন পল্লী বিদ্যুতের আওতাধীন গ্রাহকেরা। এই ঘটনার পর পবিসের কয়েক নেতাকে রাষ্ট্রদ্রোহ মামলায় গ্রেপ্তার করে রিমান্ডে নিয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। এরপরও বিভিন্ন জায়গায় সমিতির কর্মীরা কাজ না করে আন্দোলনের ডাক দেয়। এসব প্রেক্ষাপটে এই কথা বলেন উপদেষ্টা।
ফাওজুল কবির খান বলেন, ‘পল্লী বিদ্যুৎ সমিতি ও আরইবি একীভূত করা, অস্থায়ী কর্মীদের স্থায়ী করার দাবি উঠেছে। কিন্তু সরকারের সব জায়গায় আউটসোর্স করা কর্মী আছে। এসব দাবি রাতারাতি মেনে নেওয়ার মত নয়। অর্থনৈতিক বিষয় আছে।’
বহু মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এই সরকার ক্ষমতায় এসেছে উল্লেখ করে উপদেষ্টা বলেন, ‘কেউ এভাবে বিদ্যুৎ বন্ধ করতে পারে না আইনত। অনেকেই সরকারকে দুর্বল ভাবছে। তাই যখন-তখন দাবি তুলছে। আসলে তা নয়। বহু মানুষের প্রাণের বিনিময়ে এ সরকার এসেছে, তাই মানুষের সমর্থন আছে।’
সাবস্টেশন বা বিদ্যুতের লাইন কারও ব্যক্তিগত সম্পত্তি নয় বলে উল্লেখ করেন উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘বিদ্যুৎ জনগণের সাংবিধানিক অধিকার। পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির কর্মীরা কাজ না করলে বিকল্প জনবল দিয়ে সরবরাহ অব্যাহত রাখা হবে। সেনাবাহিনী, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কাজ করছে। বিদ্যুৎ বন্ধ করা বেআইনি ও অন্যায়। আশা করব, তারা এসব কাজ থেকে সরে আসবে।’
সরকার নয়, এখন থেকে গণশুনানির মাধ্যমে বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশন (বিইআরসি) বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম নির্ধারণ করবে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, বিইআরসির মাধ্যমেই এই সিদ্ধান্ত আসবে।
বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতের দুর্নীতির চক্র ভেঙে দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ফাওজুল কবির বলেন, জ্বালানি নিয়ে বিগত সরকার জনগণের সঙ্গে প্রতারণা করেছে। গ্যাস অনুসন্ধানে বিগত সরকারের তেমন আগ্রহ ছিল না। বরং তারা জরুরি কারণ ও বাড়তি চাহিদা দেখিয়ে বিদ্যুৎকেন্দ্র তৈরি করেছে।
জ্বালানি উপদেষ্টা বলেন, নবায়নযোগ্য বিদ্যুৎ উৎপাদনের উদ্যোগ নিতে চাইলে আপত্তি নেই। তবে সরকারের কাছে বিদ্যুৎ বিক্রি করতে চাইলে অবশ্যই দরপত্রের মাধ্যমে আসতে হবে। সরকার ক্ষমতা নেয়, কিন্তু আমরা অন্তর্র্বতী সরকার দায়িত্ব নিয়েছি। মন্ত্রণালয়ে এখন আর কোনো নির্ধারিত বিডার নেই।
অনেকের নানা দাবি নিয়ে আন্দোলন করার সমালোচনা করে ফাওজুল কবির বলেন, ধান কাটার মৌসুমের মতো এখন দাবি-দাওয়ার মৌসুম চলছে। কিন্তু সবার সব দাবি মেনে নেওয়ার সুযোগ নেই। এই সরকারকে দুর্বল ভাবলে ভুল করবে।
এ সময় তিনি বলেন, ব্যক্তিগতভাবে আমার কোনো ঋণ নেই। কিন্তু সরকারের এই দফতরের দায়িত্ব নেয়ার পর থেকেই আমার কাছে অনেকেই টাকা পায়। সীমান্ত দিয়ে যারা আমাদের বিদ্যুৎ দিচ্ছেন তারা ডলার পান।