নওগাঁ জেলা প্রতিনিধি :
খাদ্যমন্ত্রী সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, চালের পুষ্টিমান ঠিক রাখতে পলিশ করা চকচকে চাল বাজারজাত বন্ধে আইন করা হয়েছে। খুব শিঘ্রই এর বাস্তবায়ন করা হবে। পলিশ করা চকচকে চাল আর বাজারে থাকবে না।
সোমবার (৮ জুলাই) দুপুরে নওগাঁর পোরশা উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠী শিক্ষার্থীদের মাঝে শিক্ষা বৃত্তির চেক বিতরণ ও বিভিন্ন দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত মাঝে ঢেউটিন বিতরণ অনুষ্ঠানে এসব কথা বলেন খাদ্যমন্ত্রী।
তিনি বলেন, নতুন আইন অনুযায়ী ধান থেকে চাল করার সময় সর্বোচ্চ দুই ছাঁটাই দেয়া যাবে। চাল বেশি পরিমাণে ছাঁটাই করলে পুষ্টিগুন নষ্ট হয়ে যায়। চাল ছাঁটাই কম করা হলে প্রায় ১৬-১৮ মেট্রিক টন চাল নষ্ট হবে না।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, দেশ এখন খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ। ২০২৩-২৪ অর্থবছরে আমরা এক কেজি চালও আমদানি করিনি। বরং বিদেশে বেশ কিছু পরিমাণ সুগন্ধি চাল রপ্তানি করা হয়েছে। এখন আমরা পুষ্টির ওপর জোর দিচ্ছি। পলিশ করা চকচকে চাল বাজারে বেসরকারি উদ্যোগে আমদানি হয়েছে। বাজারে আমরা পলিশ করা যে চকচকে চাল পাই, সেটাতে কোনো পুষ্টিগুণ নেই।
তিনি বলেন, ‘নতুন আইন অনুযায়ী ধান থেকে চাল করার সময় সর্বোচ্চ দুই ছাঁটাই দেওয়া যাবে। চাল বেশি পরিমাণে ছাঁটাই করলে পুষ্টিগুণ নষ্ট হয়ে যায়। ছাঁটাই কম করা হলে প্রায় ১৭-১৮ মেট্রিক টন চাল শেভ হবে। এ ছাড়া অতিরিক্ত ছাঁটাইয়ের ফলে উৎপাদন খরচ বেড়ে চালের দামও বেশি হয়।’
সাধন চন্দ্র মজুমদার বলেন, ‘আগে হাল দিয়ে জমি চাষ হতো, এরপর এলো পাওয়ার টিলার। এখন ধান কাটা–মাড়াই মেশিনসহ আরও আধুনিক প্রযুক্তি এসেছে। সরকার কৃষি প্রণোদনা দিয়ে কৃষিকে সম্পূর্ণভাবে যান্ত্রিকীকরণ করার প্রয়াস চালাচ্ছে। বাংলাদেশ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। বন্যা, খরা লেগেই থাকে। প্রাকৃতিক দুর্যোগে ফসলের ক্ষয়ক্ষতি হয়ে থাকে। এ জন্যই কৃষির যান্ত্রিকীকরণ আরও বেশি প্রয়োজন।’
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, ট্রানজিট এক দেশের সঙ্গে অন্য দেশের যোগাযোগ বাড়ায়। বিশ্বায়নের যুগে একা থাকলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে না। ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের চুক্তি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, দেশের উন্নয়নে শেখ হাসিনা কাজ করেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা গোলামি চুক্তি করেননি। বিএনপি মিথ্যা বলে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে।
খাদ্যমন্ত্রী বলেন, শেখ হাসিনার বাংলাদেশে ক্ষুধা নিরুদ্দেশ হবে। এই ক্ষুধাকে জয় করতে কৃষিতে প্রযুক্তির ব্যবহার বাড়াতে হবে। ধান রোপন ও ধান কাটায় প্রযুক্তির ব্যবহার করতে হবে।
তিনি বলেন, আমাদের দেশে ধান কাটার সময় শ্রমিক সংকট হয়। হাজার বারোশো টাকা দিলেও শ্রমিক মিলে না। মেশিনের মাধ্যমে সহজেই অল্প সময়ে অধিক জমির ফসল তোলা সম্ভব। কৃষক ধীরে ধীরে প্রযুক্তিগত সুবিধা নিতে শুরু করেছে।প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কৃষকের কাছে প্রযুক্তি পৌঁছে দিচ্ছে কোনটা বিনামূল্যে, কোনটা ভর্তুকি মূল্যে।
তিনি আরও বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন দেশের কোথাও যেন এক ইঞ্চি জমিও পতিত না থাকে। সে কারণে চাষাবাদ বাড়াতে হবে। ঘরের পাশের জমিতেও মরিচ-পেঁয়াজের চাষ করলে পরিবারের খরচ কমবে। দেশের সামগ্রিক উৎপাদনে এটার গুরুত্ব আছে।
শিক্ষার্থীদের উদ্দেশ্য খাদ্যমন্ত্রী বলেন, বঙ্গবন্ধু কন্যা প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শিক্ষা উপবৃত্তি দিয়ে ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠীর ছেলে মেয়েদের পড়ালেখায় উৎসাহিত করছেন। তিনি পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে একই প্লাটফর্মে নিয়ে আসতে চান। উন্নয়ন করতে চান সকলের। উন্নয়ন থেকে কেউ যেন বঞ্চিত না হয় সেটা নিশ্চিত করতে পদক্ষেপ নিয়েছেন তিনি।
বর্তমান সরকার কৃষকবান্ধব উল্লেখ করে সাধন মজুমদার বলেন, চলমান বোরো সংগ্রহে সরকার চালের দাম এক টাকা বাড়িয়েছে কিন্তু ধানের দাম দুই টাকা বাড়িয়েছে। ভোক্তা ও কৃষকের স্বার্থ বিবেচনায় নিয়েই সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে থাকে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
পোরশা উপজেলা নির্বাহী অফিসার আরিফ আদনানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আতিয়ার রহমান ,উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাহমুদুল হাসান খোকন,উপজেলা কৃষি অফিসার মামুনুর রশিদ এবং উপজেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা হুমায়ুন কবির।