Dhaka শুক্রবার, ২৪ অক্টোবর ২০২৫, ৮ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পলাতক আসামিদের ভোটে অযোগ্য ও ‘না’ ভোটের বিধান রেখে আরপিও সংশোধন

  • নিজস্ব প্রতিবেদক
  • প্রকাশের সময় : ০৮:১৯:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫
  • ১৭৯ জন দেখেছেন

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পলাতক আসামিরা প্রার্থী হতে পারবেন না। অংশ নেয়া প্রার্থীদের আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া, কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকলে সেই আসনে ‘না’ ভোটের বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমীতে এ ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এ কথা বলেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনে ইভিএম বিলুপ্ত করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করার বিষয়গুলোও আরপিওতে যুক্ত হয়েছে। ভোট গণনা প্রক্রিয়া গণমাধ্যম সরাসরি নজরদারি করতে পারবে।

তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান জাদুঘর, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় আইনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। পাশাপাশি শ্রম আইন সংশোধন আদেশ ও আরপিও আইন পাশ হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন (অ্যামেন্ডমেন্ট) অধ্যাদেশ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-২০২৫ (আরপিও বা রিপ্রেজেন্টেশন অফ পিপলস অর্ডার অর্ডিন্যান্স) আইন পাসের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন (অ্যামেন্ডমেন্ট) অধ্যাদেশ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-২০২৫ (আরপিও বা রিপ্রেজেন্টেশন অফ পিপলস অর্ডার অর্ডিন্যান্স) আইন ছাড়াও আরও তিনটি আইনের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। আইন তিনটি হলো- সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় আইন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর আইন।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ক্ষেত্রে যে ইম্পোর্টেন্ট অ্যামেন্ডমেন্ট করা হয়েছে। ইভিএম সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতায় পলাতক ব্যক্তিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

পলাতক আসামি বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পলাতক হচ্ছে আদালত যখন পলাতক ঘোষণা করে। যেদিন আদালত আপনাকে আসতে বলছে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, আসছেন না—আদালত পলাতক ঘোষণা করে। বিচার চলাকালীন সময়ে পলাতক হয়।

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের নতুন বিধানের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রার্থীদের হলফনামায় এফিডেভিটের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি আয়ের উৎসের বিবরণ দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এসব কিছু মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয়ের উৎস, সম্পত্তি, বিবরণ নির্বাচন কমিশনে দিতে হবে। এটা ওয়েবসাইটে পাবলিশ করে দেন, সবাই জানবে কার কী সম্পত্তি। উনি নির্দেশ দিয়েছেন, এ সংক্রান্ত বিধান আইনে থাকবে।

এবার ভোটে প্রার্থীদের জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা এবং একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোটের বিধান করা হয়েছে বলে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, নো ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। একজন প্রার্থী থাকলে সেখানে না ভোট হবে। ২০১৪ সালের ভুয়া, সাজানো নির্বাচন যেন না হয়—সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন যে প্রার্থী—পছন্দ না, সেখানে না ভোট দিতে পারবে।

জোটভুক্ত হলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে সংশোধিত আরপিও-তে।

আগে ভোটের সময় জোটভুক্ত হয়ে জনপ্রিয় বা বড় দলের প্রতীকে ভোট করার সুযোগ ছিল। এবার সে সুযোগ থাকছে না বলে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনি জোট হলে, জোটের অংশ হলেও দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে; যাতে ভোটাররা ক্লিয়ার আইডিয়া পায় উনি কোন দলের। নির্বাচনি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিধান আরপিও যুক্ত করা হয়েছে। এবার আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভিাটিং চালু করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অনলাইনে নিবন্ধন সেরে ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। পাশাপাশি কারা হেফাজতে থাকা, সরকারি কর্মকর্তা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা এভাবে ভোট দিতে পারবেন।

ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার বিধানটিও যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।

রাজনৈতিক দলের অনুদানের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, যিনি অনুদান দেবেন, তার ট্যাক্স রিটার্নও দিতে হবে।

অনিয়ম বন্ধে ইসি প্রয়োজনে পুরো আসনের ভোট বাতিল করতে পারবে—এমন বিধান যুক্ত করার তথ্য দিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন, আগের আইনে বিধান ছিল—কোনো ভোটকেন্দ্রে গণ্ডগোল হলে কেন্দ্রের ফলাফল বাতিলের। এখন ইসি যদি মনে করে একটা নির্বাচনি এলাকাতেই এত অনিয়ম হয়েছে, পুরো এলাকার ভোট বাতিল করা উচিত; তাহলে সেটা করতে পারবে। সে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

আজকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে কিছু বিষয়ে উচ্চ আদালতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি উচ্চ আদালতের একটা বেঞ্চ একদিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় ৮০০ মামলায় প্রায় জামিন দিয়েছেন। জামিন উনি দিতেই পারেন কিন্তু চার-পাঁচ ঘণ্টায় ৮০০ মামলা কি শোনা সম্ভব? এটা কি আসলে বিচারিক বিবেচনা ছিল কিনা— এ রকম আরো কিছু কিছু প্রসঙ্গ উঠেছে। আমাদের মনে হয়, গোটা বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আইনটা চূড়ান্ত করার পদক্ষেপ নিতে পারব।

তিনি আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫, এটা নিয়ে বোধহয় আমরা ২৫-৩০ বছর যাবৎ কথা বলছি। এটা ২০০৬ সালের দিকে খুব ভালোভাবে একটা চেষ্টাও করা হয়েছে। চেষ্টাও হয়েছিল আইনটা করার। কোনোভাবেই করা যাচ্ছিল না কিন্তু আপনারা জানেন, আমাদের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আছে, বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন আছে, সংস্কারের রোডম্যাপ আছে, সব জায়গায় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। আমরা এই আইনটা নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছি।

আসিফ নজরুল বলেন, এই আইনটা যখন চূড়ান্ত অনুমোদন হয়ে যাবে, তখন আদালতের যারা বিচারক আছেন, তাদের বদলি-পদায়ন-পদোন্নতি, তাদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সব ব্যাপার, সবকিছু সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। আর সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব বাজেট ব্যবস্থাপনা থাকবে। তাদের সম্পত্তি, তাদের কী কী খাতে তারা উন্নয়ন করবে, কী কী পদ সৃজন করবে— এই সমস্ত ব্যাপারে তাদের একটা আর্থিক স্বাধীনতা থাকবে। এটা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে কিছু কিছু বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে যেহেতু এটার সাথে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে। অবশ্যই অর্থ উপদেষ্টার একটা মতামতের প্রয়োজন রয়েছে। আইনটা করার সময় সেই মতামতটা নেওয়া হয় নাই। জনপ্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছি সেটা হচ্ছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর অধ্যাদেশ। গণভবনের জায়গায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে আমাদের যেই তরুণরা প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের চিরস্থায়ী অঙ্গহানি হয়েছে, আমাদের যে অপূরণীয় আত্মত্যাগের ঘটনা আছে, আর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারকে পতনের একটা স্মারক হিসেবে স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য আমরা গণভবনে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর করছি। এটা আমরা একটা আলাদা জাদুঘর হিসেবে স্থাপন করতে চাই। সেখানে লোকবল লাগবে, আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আছে, সেজন্য আরও একটু আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এটাও আমরা খুব দ্রুত চেষ্টা করব। খুব দ্রুত এটা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করার জন্য মোটামুটি আইনগত ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, আরেকটা আইন যেটা নীতিগতভাবে অনুমোদন হয়েছে, সেটা হচ্ছে দুদক অধ্যাদেশ (দুদক অর্ডিনান্স)। সেখানে কিছু কিছু বিধান করা হয়েছে। বাংলাদেশে যারা থাকবে— বাংলাদেশি হোক বা বিদেশি হোক, বাংলাদেশের অবস্থানকালে অন্যদেশে যদি কোনো দুর্নীতি করে, সেটার বিচারও দুদকের মাধ্যমে, সেটার তদন্তও দুদকের মাধ্যমে করা যাবে। আর ওখানে জ্ঞাত আয়ের সংজ্ঞাতে বলা হচ্ছে, জ্ঞাত আয় মানে বৈধ আয়। জ্ঞাত আয় মানে অবৈধ আয় নয়। এগুলো স্পষ্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশের যে জায়গায় দুদকের অফিস থাকবে, সেখানেই দুদকের স্পেশাল কোর্ট গঠন করার বিধান করা হয়েছে। দুদকের যারা চেয়ারম্যান থাকবেন বা দুদকের যিনি প্রধান থাকবেন, তাদের বাছাই করার জন্য সাত সদস্যের বাছাই কমিটি করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে তা হবে। এবং তারা গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করবে। তাছাড়া তারা নিজেরাও প্রার্থী বাছাই করবে। কমিশনের যে কার্যাবলি দুদকের, সেটার কার্যাবলি বাড়ানো হয়েছে। ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এজাহার দায়ের, তদন্ত, অনুসন্ধানের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দুদকের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা প্রয়োজন রয়েছে। দুদকের কাজ দুর্নীতি দমন করা। কিন্তু দুদকের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এইটা আমরা খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি এবং বলেছি যে, আজকে আমরা এটা নীতিগতভাবে অনুমোদন করলাম। আইনটা চূড়ান্ত করার আগে দুদকের যে অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতার পদ্ধতি, সেটাকে আরও অনেক শক্তিশালী করতে হবে। এগুলোর বাইরে আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

পলাতক আসামিদের ভোটে অযোগ্য ও ‘না’ ভোটের বিধান রেখে আরপিও সংশোধন

প্রকাশের সময় : ০৮:১৯:০০ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ২৩ অক্টোবর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আসন্ন জাতীয় নির্বাচনে পলাতক আসামিরা প্রার্থী হতে পারবেন না। অংশ নেয়া প্রার্থীদের আয়-ব্যয়ের হিসাব দাখিল ও ওয়েবসাইটে প্রকাশ করতে হবে। এছাড়া, কোনো আসনে একজন প্রার্থী থাকলে সেই আসনে ‘না’ ভোটের বিধান রেখে গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ (আরপিও) সংশোধন করেছে অন্তর্বর্তী সরকার।

বৃহস্পতিবার (২৩ অক্টোবর) উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠক শেষে রাজধানীর ফরেন সার্ভিস একাডেমীতে এ ব্রিফিংয়ে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল এ কথা বলেন।

আইন উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনে ইভিএম বিলুপ্ত করা, আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে সশস্ত্র বাহিনীকে যুক্ত করার বিষয়গুলোও আরপিওতে যুক্ত হয়েছে। ভোট গণনা প্রক্রিয়া গণমাধ্যম সরাসরি নজরদারি করতে পারবে।

তিনি বলেন, জুলাই অভ্যুত্থান জাদুঘর, দুর্নীতি দমন কমিশন ও সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় আইনের নীতিগত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ। পাশাপাশি শ্রম আইন সংশোধন আদেশ ও আরপিও আইন পাশ হয়েছে।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন (অ্যামেন্ডমেন্ট) অধ্যাদেশ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-২০২৫ (আরপিও বা রিপ্রেজেন্টেশন অফ পিপলস অর্ডার অর্ডিন্যান্স) আইন পাসের চূড়ান্ত অনুমোদন দিয়েছে উপদেষ্টা পরিষদ।

তিনি বলেন, বাংলাদেশ শ্রম আইন সংশোধন (অ্যামেন্ডমেন্ট) অধ্যাদেশ ও গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ-২০২৫ (আরপিও বা রিপ্রেজেন্টেশন অফ পিপলস অর্ডার অর্ডিন্যান্স) আইন ছাড়াও আরও তিনটি আইনের নীতিগত অনুমোদন দেয়া হয়। আইন তিনটি হলো- সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় আইন, দুর্নীতি দমন কমিশন আইন ও জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর আইন।

আইন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল বলেন, গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের (আরপিও) ক্ষেত্রে যে ইম্পোর্টেন্ট অ্যামেন্ডমেন্ট করা হয়েছে। ইভিএম সংক্রান্ত বিধান বিলুপ্ত করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংজ্ঞায় সেনাবাহিনী, নৌবাহিনী, বিমানবাহিনী তথা প্রতিরক্ষা কর্মবিভাগ অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রার্থীর যোগ্যতা-অযোগ্যতায় পলাতক ব্যক্তিদের নির্বাচনে অযোগ্য ঘোষণার বিধান যুক্ত করা হয়েছে।

পলাতক আসামি বলতে কাকে বোঝানো হয়েছে, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, পলাতক হচ্ছে আদালত যখন পলাতক ঘোষণা করে। যেদিন আদালত আপনাকে আসতে বলছে, পত্রিকায় বিজ্ঞাপন দেওয়া হয়েছে, আসছেন না—আদালত পলাতক ঘোষণা করে। বিচার চলাকালীন সময়ে পলাতক হয়।

সংশোধিত গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশের নতুন বিধানের বিষয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, প্রার্থীদের হলফনামায় এফিডেভিটের মাধ্যমে দেশি-বিদেশি আয়ের উৎসের বিবরণ দেওয়ার বিধান যুক্ত করা হয়েছে। এসব কিছু মাননীয় প্রধান উপদেষ্টা নির্দেশ দিয়েছেন প্রার্থীদের দেশি-বিদেশি আয়ের উৎস, সম্পত্তি, বিবরণ নির্বাচন কমিশনে দিতে হবে। এটা ওয়েবসাইটে পাবলিশ করে দেন, সবাই জানবে কার কী সম্পত্তি। উনি নির্দেশ দিয়েছেন, এ সংক্রান্ত বিধান আইনে থাকবে।

এবার ভোটে প্রার্থীদের জামানত ২০ হাজার টাকা থেকে বাড়িয়ে ৫০ হাজার টাকা এবং একক প্রার্থীর আসনে ‘না’ ভোটের বিধান করা হয়েছে বলে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, নো ভোটের বিধান যুক্ত করা হয়েছে। একজন প্রার্থী থাকলে সেখানে না ভোট হবে। ২০১৪ সালের ভুয়া, সাজানো নির্বাচন যেন না হয়—সে ব্যবস্থা করা হয়েছে। এখন যে প্রার্থী—পছন্দ না, সেখানে না ভোট দিতে পারবে।

জোটভুক্ত হলেও প্রার্থীকে নিজ দলের প্রতীকে ভোট করার বিধান যুক্ত করা হয়েছে সংশোধিত আরপিও-তে।

আগে ভোটের সময় জোটভুক্ত হয়ে জনপ্রিয় বা বড় দলের প্রতীকে ভোট করার সুযোগ ছিল। এবার সে সুযোগ থাকছে না বলে জানিয়ে আইন উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনি জোট হলে, জোটের অংশ হলেও দলের প্রতীকে ভোট করতে হবে; যাতে ভোটাররা ক্লিয়ার আইডিয়া পায় উনি কোন দলের। নির্বাচনি কাজে নিয়োজিত ব্যক্তি, প্রবাসী বাংলাদেশিদের জন্য পোস্টাল ব্যালটে ভোটের বিধান আরপিও যুক্ত করা হয়েছে। এবার আইটি সাপোর্টেড পোস্টাল ভিাটিং চালু করা হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অনলাইনে নিবন্ধন সেরে ডাকযোগে ভোট দিতে পারবেন প্রবাসী বাংলাদেশিরা। পাশাপাশি কারা হেফাজতে থাকা, সরকারি কর্মকর্তা, ভোটগ্রহণ কর্মকর্তারা এভাবে ভোট দিতে পারবেন।

ভোট গণনার সময় সাংবাদিকদের উপস্থিত থাকার বিধানটিও যুক্ত করা হয়েছে বলে জানান আইন উপদেষ্টা।

রাজনৈতিক দলের অনুদানের ক্ষেত্রে ৫০ হাজার টাকার বেশি হলে ব্যাংকিং চ্যানেলের মাধ্যমে দেওয়ার বিধান করা হয়েছে জানিয়ে আসিফ নজরুল বলেন, যিনি অনুদান দেবেন, তার ট্যাক্স রিটার্নও দিতে হবে।

অনিয়ম বন্ধে ইসি প্রয়োজনে পুরো আসনের ভোট বাতিল করতে পারবে—এমন বিধান যুক্ত করার তথ্য দিয়েছেন উপদেষ্টা আসিফ নজরুল।

তিনি বলেন, আগের আইনে বিধান ছিল—কোনো ভোটকেন্দ্রে গণ্ডগোল হলে কেন্দ্রের ফলাফল বাতিলের। এখন ইসি যদি মনে করে একটা নির্বাচনি এলাকাতেই এত অনিয়ম হয়েছে, পুরো এলাকার ভোট বাতিল করা উচিত; তাহলে সেটা করতে পারবে। সে ক্ষমতা দেওয়া হয়েছে।

আজকে উপদেষ্টা পরিষদের বৈঠকে কিছু বিষয়ে উচ্চ আদালতের ভূমিকা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, সম্প্রতি উচ্চ আদালতের একটা বেঞ্চ একদিনে চার থেকে পাঁচ ঘণ্টায় ৮০০ মামলায় প্রায় জামিন দিয়েছেন। জামিন উনি দিতেই পারেন কিন্তু চার-পাঁচ ঘণ্টায় ৮০০ মামলা কি শোনা সম্ভব? এটা কি আসলে বিচারিক বিবেচনা ছিল কিনা— এ রকম আরো কিছু কিছু প্রসঙ্গ উঠেছে। আমাদের মনে হয়, গোটা বিষয়গুলো বিবেচনা করে আমরা কয়েক সপ্তাহের মধ্যেই আইনটা চূড়ান্ত করার পদক্ষেপ নিতে পারব।

তিনি আরো বলেন, সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় অধ্যাদেশ, ২০২৫, এটা নিয়ে বোধহয় আমরা ২৫-৩০ বছর যাবৎ কথা বলছি। এটা ২০০৬ সালের দিকে খুব ভালোভাবে একটা চেষ্টাও করা হয়েছে। চেষ্টাও হয়েছিল আইনটা করার। কোনোভাবেই করা যাচ্ছিল না কিন্তু আপনারা জানেন, আমাদের জাতীয় ঐকমত্য কমিশন আছে, বিচার বিভাগীয় সংস্কার কমিশন আছে, সংস্কারের রোডম্যাপ আছে, সব জায়গায় সুপ্রিম কোর্ট সচিবালয় প্রতিষ্ঠার কথা বলা হয়েছে। আমরা এই আইনটা নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছি।

আসিফ নজরুল বলেন, এই আইনটা যখন চূড়ান্ত অনুমোদন হয়ে যাবে, তখন আদালতের যারা বিচারক আছেন, তাদের বদলি-পদায়ন-পদোন্নতি, তাদের শৃঙ্খলা সংক্রান্ত সব ব্যাপার, সবকিছু সুপ্রিম কোর্টের নিয়ন্ত্রণে চলে যাবে। আর সুপ্রিম কোর্টের নিজস্ব বাজেট ব্যবস্থাপনা থাকবে। তাদের সম্পত্তি, তাদের কী কী খাতে তারা উন্নয়ন করবে, কী কী পদ সৃজন করবে— এই সমস্ত ব্যাপারে তাদের একটা আর্থিক স্বাধীনতা থাকবে। এটা নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। আমাদের মনে হয়েছে কিছু কিছু বিষয়ে আরও আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। বিশেষ করে যেহেতু এটার সাথে আর্থিক সংশ্লেষ রয়েছে। অবশ্যই অর্থ উপদেষ্টার একটা মতামতের প্রয়োজন রয়েছে। আইনটা করার সময় সেই মতামতটা নেওয়া হয় নাই। জনপ্রশাসনের সঙ্গে আলোচনা করার প্রয়োজন রয়েছে।

আইন উপদেষ্টা বলেন, আমরা নীতিগতভাবে অনুমোদন করেছি সেটা হচ্ছে, জুলাই গণঅভ্যুত্থান স্মৃতি জাদুঘর অধ্যাদেশ। গণভবনের জায়গায় জুলাই গণঅভ্যুত্থানকালে আমাদের যেই তরুণরা প্রাণ হারিয়েছেন, যাদের চিরস্থায়ী অঙ্গহানি হয়েছে, আমাদের যে অপূরণীয় আত্মত্যাগের ঘটনা আছে, আর ফ্যাসিস্ট শেখ হাসিনা সরকারকে পতনের একটা স্মারক হিসেবে স্মৃতিকে ধরে রাখার জন্য, জুলাই গণঅভ্যুত্থানকে বাস্তবে রূপ দেওয়ার জন্য আমরা গণভবনে জুলাই স্মৃতি জাদুঘর করছি। এটা আমরা একটা আলাদা জাদুঘর হিসেবে স্থাপন করতে চাই। সেখানে লোকবল লাগবে, আর্থিক সংশ্লিষ্টতা আছে, সেজন্য আরও একটু আলাপ-আলোচনার প্রয়োজন রয়েছে। এটাও আমরা খুব দ্রুত চেষ্টা করব। খুব দ্রুত এটা চূড়ান্তভাবে অনুমোদন করার জন্য মোটামুটি আইনগত ব্যাপারে আলোচনা হয়েছে।

তিনি বলেন, আরেকটা আইন যেটা নীতিগতভাবে অনুমোদন হয়েছে, সেটা হচ্ছে দুদক অধ্যাদেশ (দুদক অর্ডিনান্স)। সেখানে কিছু কিছু বিধান করা হয়েছে। বাংলাদেশে যারা থাকবে— বাংলাদেশি হোক বা বিদেশি হোক, বাংলাদেশের অবস্থানকালে অন্যদেশে যদি কোনো দুর্নীতি করে, সেটার বিচারও দুদকের মাধ্যমে, সেটার তদন্তও দুদকের মাধ্যমে করা যাবে। আর ওখানে জ্ঞাত আয়ের সংজ্ঞাতে বলা হচ্ছে, জ্ঞাত আয় মানে বৈধ আয়। জ্ঞাত আয় মানে অবৈধ আয় নয়। এগুলো স্পষ্ট করা হয়েছে। বাংলাদেশের যে জায়গায় দুদকের অফিস থাকবে, সেখানেই দুদকের স্পেশাল কোর্ট গঠন করার বিধান করা হয়েছে। দুদকের যারা চেয়ারম্যান থাকবেন বা দুদকের যিনি প্রধান থাকবেন, তাদের বাছাই করার জন্য সাত সদস্যের বাছাই কমিটি করা হয়েছে। সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগের একজন বিচারকের নেতৃত্বে তা হবে। এবং তারা গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে প্রার্থী বাছাই করবে। তাছাড়া তারা নিজেরাও প্রার্থী বাছাই করবে। কমিশনের যে কার্যাবলি দুদকের, সেটার কার্যাবলি বাড়ানো হয়েছে। ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে। এজাহার দায়ের, তদন্ত, অনুসন্ধানের ক্ষমতা বাড়ানো হয়েছে।

তিনি আরও বলেন, দুদকের অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতা প্রয়োজন রয়েছে। দুদকের কাজ দুর্নীতি দমন করা। কিন্তু দুদকের অনেকের বিরুদ্ধে দুর্নীতির অভিযোগ রয়েছে। এইটা আমরা খুব গুরুত্ব সহকারে নিয়েছি এবং বলেছি যে, আজকে আমরা এটা নীতিগতভাবে অনুমোদন করলাম। আইনটা চূড়ান্ত করার আগে দুদকের যে অভ্যন্তরীণ জবাবদিহিতার পদ্ধতি, সেটাকে আরও অনেক শক্তিশালী করতে হবে। এগুলোর বাইরে আরও কিছু বিষয়ে আলোচনা হয়েছে।