Dhaka শুক্রবার, ১৫ অগাস্ট ২০২৫, ৩১ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পরকীয়ার জেরে স্ত্রীসহ ৩ জনকে হত্যায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড

কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি : 

পরকীয়ার জেরে স্ত্রী ও সন্তানসহ তিনজনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার অপরাধে পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (বরখাস্ত) সৌমেন রায়কে (৩৪) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন কুষ্টিয়ার একটি আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কুষ্টিয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমীন এ রায় ঘোষণা করেন।

আসামি সৌমেন রায় মাগুরা সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের আসবা গ্রামের সুনীল রায়ের ছেলে। তিনি সর্বশেষ খুলনার ফুলতলা থানায় এএসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী জানান, আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারক রায় ঘোষণা করেন। সৌমেন রায় প্রায় এক বছর তিনমাস আগে হাইকোর্ট থেকে জামিন পাবার পর লাপাত্তা হয়ে যান। সরকারি কোনো সংস্থা তাঁর খোঁজ জানে না।পরপর বেশ কয়েকবার হাজিরা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তবে তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৩ জুন বেলা সোয়া ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড় এলাকার নাজ ম্যানশন মার্কেটের সামনে পরকীয়ার জেরে স্ত্রী আসমা খাতুন (২৫), আসমার ছেলে রবিন (৫) এবং আসমার পরকীয়া প্রেমিক শাকিলকে (২৮) গুলি করে হত্যা করেন সৌমেন রায়। এ ঘটনায় পুলিশ তাকে ঘটনাস্থল থেকে সার্ভিস রিভলভার, গুলি ও ম্যাগাজিনসহ আটক করে।

সেদিন বিকেলে তাকে বরখাস্ত করা হয়। একইদিন রাতে এএসআই সৌমেন রায়কে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করেন নিহত আসমা খাতুনের মা হাসিনা বেগম। পরদিন ১৪ জুন বিকেলে কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনামুল হকের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সৌমেন। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি পরকীয়ার জেরে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছেন বলে শিকার করেন। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিশিকান্ত সরকার তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

২০২২ সালের ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন সৌমেন রায়। এরপর কুষ্টিয়া আদালতে বারবার আত্মসমর্পণের দিন ধার্য থাকলেও তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সাত মাস পেরিয়ে গেলেও লাপাত্তা সৌমেন রায়। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন।

মামলার বাদী হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে, তার ছেলে রবিন ও শাকিল নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে সৌমেন। সে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ভারতে পালিয়েছে। এতো দিনেও তাকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে শুনেছি সে ভারতে পালিয়েছে। এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের একমাত্র আসামিকে জামিন দেওয়ায় আমি কাকে দোষ দিব? প্রকাশ্যে তিনজনকে হত্যা মামলার একমাত্র আসামির জামিন হলো কীভাবে। সৌমেনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় আমি খুশি।দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করে তাঁর মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর করা হোক।’

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

শেখ মুজিব জাতির জনক নন : নাহিদ ইসলাম

পরকীয়ার জেরে স্ত্রীসহ ৩ জনকে হত্যায় সাবেক পুলিশ কর্মকর্তার মৃত্যুদণ্ড

প্রকাশের সময় : ০৯:৫৩:০১ অপরাহ্ন, রবিবার, ১১ ফেব্রুয়ারী ২০২৪

কুষ্টিয়া জেলা প্রতিনিধি : 

পরকীয়ার জেরে স্ত্রী ও সন্তানসহ তিনজনকে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যার অপরাধে পুলিশের সাবেক সহকারী উপপরিদর্শক (বরখাস্ত) সৌমেন রায়কে (৩৪) মৃত্যুদণ্ড দিয়েছেন কুষ্টিয়ার একটি আদালত। একই সঙ্গে তাকে ১ লাখ টাকা জরিমানা করা হয়েছে।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে কুষ্টিয়ার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের বিচারক মো. রুহুল আমীন এ রায় ঘোষণা করেন।

আসামি সৌমেন রায় মাগুরা সদর উপজেলার কুচিয়ামোড়া ইউনিয়নের তিন নম্বর ওয়ার্ডের আসবা গ্রামের সুনীল রায়ের ছেলে। তিনি সর্বশেষ খুলনার ফুলতলা থানায় এএসআই হিসেবে কর্মরত ছিলেন।

আদালতের সরকারি কৌঁসুলি (পিপি) অনুপ কুমার নন্দী জানান, আসামির অনুপস্থিতিতে বিচারক রায় ঘোষণা করেন। সৌমেন রায় প্রায় এক বছর তিনমাস আগে হাইকোর্ট থেকে জামিন পাবার পর লাপাত্তা হয়ে যান। সরকারি কোনো সংস্থা তাঁর খোঁজ জানে না।পরপর বেশ কয়েকবার হাজিরা না দেওয়ায় তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। তবে তাকে গ্রেপ্তার করা যায়নি।

মামলার বিবরণ থেকে জানা গেছে, ২০২১ সালের ১৩ জুন বেলা সোয়া ১১টার দিকে কুষ্টিয়া শহরের কাস্টমস মোড় এলাকার নাজ ম্যানশন মার্কেটের সামনে পরকীয়ার জেরে স্ত্রী আসমা খাতুন (২৫), আসমার ছেলে রবিন (৫) এবং আসমার পরকীয়া প্রেমিক শাকিলকে (২৮) গুলি করে হত্যা করেন সৌমেন রায়। এ ঘটনায় পুলিশ তাকে ঘটনাস্থল থেকে সার্ভিস রিভলভার, গুলি ও ম্যাগাজিনসহ আটক করে।

সেদিন বিকেলে তাকে বরখাস্ত করা হয়। একইদিন রাতে এএসআই সৌমেন রায়কে একমাত্র আসামি করে হত্যা মামলা করেন নিহত আসমা খাতুনের মা হাসিনা বেগম। পরদিন ১৪ জুন বিকেলে কুষ্টিয়া সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. এনামুল হকের আদালতে হত্যার দায় স্বীকার করে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন সৌমেন। ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দিতে তিনি পরকীয়ার জেরে তিনজনকে গুলি করে হত্যা করেছেন বলে শিকার করেন। এরপর মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা নিশিকান্ত সরকার তার বিরুদ্ধে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন।

২০২২ সালের ৬ নভেম্বর হাইকোর্ট থেকে জামিন নেন সৌমেন রায়। এরপর কুষ্টিয়া আদালতে বারবার আত্মসমর্পণের দিন ধার্য থাকলেও তিনি আত্মসমর্পণ করেননি। আদালতে আত্মসমর্পণ না করায় ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি তার বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করেন আদালত। গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারির সাত মাস পেরিয়ে গেলেও লাপাত্তা সৌমেন রায়। বর্তমানে তিনি পলাতক রয়েছেন।

মামলার বাদী হাসিনা বেগম বলেন, ‘আমার মেয়ে, তার ছেলে রবিন ও শাকিল নামে এক যুবককে প্রকাশ্যে গুলি করে হত্যা করেছে সৌমেন। সে হাইকোর্ট থেকে জামিন নিয়ে ভারতে পালিয়েছে। এতো দিনেও তাকে আইনের আওতায় আনা হয়নি। বিভিন্ন জায়গায় খোঁজ নিয়ে শুনেছি সে ভারতে পালিয়েছে। এমন নির্মম হত্যাকাণ্ডের একমাত্র আসামিকে জামিন দেওয়ায় আমি কাকে দোষ দিব? প্রকাশ্যে তিনজনকে হত্যা মামলার একমাত্র আসামির জামিন হলো কীভাবে। সৌমেনকে মৃত্যুদণ্ড দেয়ায় আমি খুশি।দ্রুত তাকে গ্রেপ্তার করে তাঁর মৃত্যুদণ্ড দ্রুত কার্যকর করা হোক।’