নিজস্ব প্রতিবেদক :
এবার দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের মানুষের আরেকটি স্বপ্ন পূরণ হতে চলেছে। পদ্মার বুকে দেশের সর্ববৃহৎ রেল সেতু দিয়ে পরীক্ষামূলক চলাচল শুরু হচ্ছে মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল)।
পদ্মা সেতুতে পাথরবিহীন রেললাইনটি এখন চলাচলের জন্য পুরোপুরি প্রস্তুত। বাকি থাকা সাত মিটার পথ ঢালাইয়ের কাজ শেষ হয়েছে গত ২৯ মার্চ। এরপর বাকি ছিল শুধু ঢালাই টেস্ট। ট্রেন চলাচলের মানদণ্ড পরীক্ষায় সেটিও সফলভাবে উত্তীর্ণ হয়েছে।
মঙ্গলবার (৪ এপ্রিল) সেতুর দক্ষিণ প্রান্তের ভাঙ্গা রেলওয়ে স্টেশন থেকে রেল ট্র্যাক কারে করে উত্তরে মাওয়া স্টেশন পর্যন্ত ৪১ দশমিক ৫ কিলোমিটার রেলপথ পরিদর্শন করবেন রেলপথমন্ত্রী নূরুল ইসলাম সুজন। পদ্মা সেতু রেল সংযোগ প্রকল্পের ব্যবস্থাপক-১ ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ এসব তথ্য জানিয়েছেন।
তিনি বলেন, পদ্মা সেতুর রেলপথ ট্রেন চলাচলের জন্য প্রস্তুত। মঙ্গলবার দুপুর ১২টার দিকে ভাঙ্গা স্টেশন থেকে রেলপথমন্ত্রী ও প্রকল্প পরিচালকসহ অন্যরা সেতুতে পরীক্ষামূলক ট্রেন চলাচল পরিদর্শন করবেন।
ব্রিগেডিয়ার সাঈদ আহমেদ বলেন, এর আগে সেতুর ২৫ নং পিলার বরাবর নিচতলায় সাত মিটার দৈর্ঘ্যের স্লিপারে চীন থেকে আনা জিকে ৩০০০ কিউরিং কম্পাউন্ডের কংক্রিটের ঢালাই কাজ সম্পন্ন হয়। ৪৮ ঘণ্টা পর প্রথম দফায় ঢালাইয়ের কিউব কেটে ল্যাবে পরীক্ষা করা হয়। এরপর আরও ২৪ ঘণ্টা অর্থাৎ মোট ৭২ ঘণ্টা পর চূড়ান্ত পরীক্ষায় কোনো সমস্যা না পাওয়ায় রেল চলাচলের জন্য প্রস্তুত ঘোষণা করে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর কন্সট্রাকশন সুপারভিশন কনসালট্যান্ট (সিএসসি)।
এর আগে প্রকল্পটির পরিচালক আফজাল হোসেন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, আমরা আশা করছি আগামী সপ্তাহে পদ্মা বহুমুখী সেতু হয়ে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত বিশেষ ট্রেন পরীক্ষামূলকভাবে চালাব।
তিনি বলেন, এর আগে ফরিদপুরের ভাঙ্গা থেকে শরীয়তপুরের পদ্মা সেতু সংযোগ রেলপথে একটি ট্রেন পরীক্ষামূলকভাবে চালানো হয়েছিল। প্রকল্পটি ২০২৪ সালের জুনের মধ্যে বাস্তবায়িত হবে। আমরা এরই মধ্যে মাওয়া থেকে ভাঙ্গা পর্যন্ত ৯৯ শতাংশ কাজ শেষ করেছি। রেল সংযোগ নির্মাণের কাজ দ্রুত এগিয়ে চলছে।
ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্পের আওতায় বাংলাদেশ রেলওয়ে ৩৯ হাজার ২৪৬ কোটি ৭৯ লাখ টাকায় ১৬৯ কিলোমিটার রেললাইন দিয়ে যশোরের সঙ্গে রাজধানীর সংযোগ স্থাপনের প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে। প্রকল্পের বিবরণ অনুযায়ী, চীনের এক্সিম ব্যাংক ২১ হাজার ৩৬ কোটি ৭০ লাখ টাকা ঋণ দেবে। চীন সরকার মনোনীত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান চায়না রেলওয়ে গ্রুপ লিমিটেড চায়না জিটুজি সিস্টেমের আওতায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করছে।
প্রকল্পটি সম্পন্ন করার পর, রেল যোগাযোগব্যবস্থায় দেশের মধ্য ও দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের সঙ্গে রাজধানী ঢাকা এবং পদ্মা সেতুর মাধ্যমে মুন্সীগঞ্জ, শরীয়তপুর, মাদারীপুর ও নড়াইল জেলার নতুন এলাকাজুড়ে যোগাযোগব্যবস্থা উন্নত হবে। প্রকল্পটির মাধ্যমে ঢাকা-যশোর-খুলনার মধ্যে ২১২.০৫ কিলোমিটার সংক্ষিপ্ত রুট এবং উন্নত পরিচালন সুবিধার বিকল্প রেলপথ সংযোগ স্থাপিত হবে।
এটি বাংলাদেশে ট্রান্স-এশিয়ান রেলওয়ে নেটওয়ার্কের আরেকটি সাব-রুট স্থাপন এবং জাতীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক মালবাহী এবং বিজি কনটেইনার ট্রেন পরিষেবা চালু করবে। এই রুটটি কনটেইনার পরিবহনের ক্ষেত্রে গতি এবং লোড সীমাবদ্ধতা থেকে মুক্ত হবে। সরকার ২০১৬ সালের মার্চ মাসে ঢাকা থেকে যশোর পর্যন্ত ১৬৯ কিলোমিটার রেলপথ নির্মাণের অনুমোদন দেয় এবং এটি একটি ফাস্ট ট্র্যাক প্রকল্প হিসেবে তালিকাভুক্ত হয়।