Dhaka শনিবার, ১২ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

পদ্মায় বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের চরম টানাপড়েনের মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠকে ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা সোয়া ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তাদের মধ্যে এ বৈঠক শুরু হয়। এর আগে বেলা ১১টার দিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের গাড়িবহর পদ্মায় প্রবেশ করে।

ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) তে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন।

এর আগে দু’দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের এফওসি বৈঠকে অংশ নিতে সকাল সোয়া ৮টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজ আয়োজন করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বিক্রম মিশ্রি। পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি।

এফওসি সাধারণত বছরে একবার হয়। কোনো বছর ঢাকায় হলে, পরের বছর হয় নয়াদিল্লিতে। তবে গত বছর দু’বার হয়েছে। প্রথমে ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় হয়। পরে একই বছরের ২৪ নভেম্বর এফওসি হয় নয়াদিল্লিতে। মূলত ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ নির্বাচনের কথা বিবেচনায় নিয়ে দু’বার হয়।

এফওসি বৈঠক একটি নিয়মিত ও স্বাভাবিক কূটনৈতিক কার্যক্রম হলেও বিভিন্ন কারণে এবারের বৈঠকটি অতিরিক্ত আগ্রহ তৈরি করেছে।

এই এফওসিতে বেশ কয়েকটি বিষয় আলোচনায় থাকছে। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ভারতীয় গণমাধ্যম এখন বাংলাদেশবিরোধী যে অপপ্রচার চালাচ্ছে, সে বিষয়টি ঢাকার পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হতে পারে। এছাড়া ভারতে বাংলাদেশ মিশনের নিরাপত্তা, সীমান্ত হত্যা, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, নিত্যপণ্য আমদানি, ভিসা ইস্যু ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল দুদেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে সনাতন ধর্মীয় একজন নেতার গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ভারত, সঙ্গে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের অভিযোগও তুলেছে। আবার কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনা নিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে।

ঢাকা ও দিল্লির উভয় পক্ষের আশা, এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে চলমান উত্তেজনা কমানোর পথ সহজ হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকে বাণিজ্য, সীমান্ত, কানেক্টিভিটি, পানিবণ্টনের মতো বিষয়ের পাশাপাশি সাম্প্রতিক বিষয়াবলিও আলোচনায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ঢাকার পক্ষ থেকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে এগিয়ে নেওয়ার বার্তা থাকবে। ভারতের কাছ থেকেও একই ধরনের বার্তা প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।

বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম জানিয়েছেন, এফওসিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে যত উপাদান আছে সবই রাখার চেষ্টা করা হয়। আলোচ্যসূচি ঠিক করার ক্ষেত্রে দুই পক্ষের সম্মতিও লাগে। তবে সাধারণভাবে যেটা বলা যায়, বাণিজ্য আছে, কানেক্টিভিটি আছে, সীমান্ত আছে, পানি আছে।

রাজনৈতিক পরিবর্তনে অন্তর্র্বতী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম ভারতের কোনো শীর্ষ কূটনীতিক ঢাকায় এলেন। যদিও ৫ আগস্টের পর গত চার মাসে দুদেশের তিনটি টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক হয়েছে। তবে এমন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক এখনো হয়নি।

এই বৈঠকের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন অনেকটা প্রশমিত হতে পারে বলে ইতোমধ্যেই ঈঙ্গিত দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা (ঢাকা-দিল্লি) স্বাভাবিক সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আর এফওসি সেদিকে এগোনোর প্রথম পদক্ষেপ। এফওসির মধ্যে দিয়ে ঢাকা ও নয়াদিল্লি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে বাস্তবসম্মতভাবেই এগিয়ে যেতে পারে। ’

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

সংযোগ সড়ক না থাকায় ব্রিজের সুফল পাচ্ছে না সাত গ্রামের মানুষ

পদ্মায় বাংলাদেশ-ভারত পররাষ্ট্র সচিব পর্যায়ের বৈঠক

প্রকাশের সময় : ০২:৫০:৫৬ অপরাহ্ন, সোমবার, ৯ ডিসেম্বর ২০২৪

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

শেখ হাসিনা সরকারের ক্ষমতাচ্যুতির পর ঢাকা-দিল্লির সম্পর্কের চরম টানাপড়েনের মধ্যে বাংলাদেশ ও ভারতের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের বৈঠক শুরু হয়েছে। বৈঠকে ভারতের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন দেশটির পররাষ্ট্র সচিব বিক্রম মিশ্রি। বাংলাদেশের পক্ষে রয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মো. জসীম উদ্দিন।

সোমবার (৯ ডিসেম্বর) বেলা সোয়া ১১টায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় তাদের মধ্যে এ বৈঠক শুরু হয়। এর আগে বেলা ১১টার দিকে ভারতের পররাষ্ট্র সচিবের গাড়িবহর পদ্মায় প্রবেশ করে।

ফরেন অফিস কনসালটেশন (এফওসি) তে বাংলাদেশের পক্ষে নেতৃত্ব দিচ্ছেন পররাষ্ট্রসচিব জসীম উদ্দিন।

এর আগে দু’দেশের পররাষ্ট্রসচিব পর্যায়ের এফওসি বৈঠকে অংশ নিতে সকাল সোয়া ৮টার দিকে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছান ভারতের পররাষ্ট্রসচিব বিক্রম মিশ্রি।

ভারতের পররাষ্ট্রসচিবের সম্মানে মধ্যাহ্নভোজ আয়োজন করেছে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এরপর বিকেল সাড়ে ৩টার দিকে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেনের সঙ্গে বৈঠক করবেন বিক্রম মিশ্রি। পরে প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ শেষে ঢাকা ত্যাগ করবেন তিনি।

এফওসি সাধারণত বছরে একবার হয়। কোনো বছর ঢাকায় হলে, পরের বছর হয় নয়াদিল্লিতে। তবে গত বছর দু’বার হয়েছে। প্রথমে ১৫ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় হয়। পরে একই বছরের ২৪ নভেম্বর এফওসি হয় নয়াদিল্লিতে। মূলত ২০২৪ সালে বাংলাদেশ ও ভারতের সাধারণ নির্বাচনের কথা বিবেচনায় নিয়ে দু’বার হয়।

এফওসি বৈঠক একটি নিয়মিত ও স্বাভাবিক কূটনৈতিক কার্যক্রম হলেও বিভিন্ন কারণে এবারের বৈঠকটি অতিরিক্ত আগ্রহ তৈরি করেছে।

এই এফওসিতে বেশ কয়েকটি বিষয় আলোচনায় থাকছে। বিশেষ করে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার সরকারের পতনের পর সৃষ্ট পরিস্থিতিতে ভারতীয় গণমাধ্যম এখন বাংলাদেশবিরোধী যে অপপ্রচার চালাচ্ছে, সে বিষয়টি ঢাকার পক্ষ থেকে উত্থাপন করা হতে পারে। এছাড়া ভারতে বাংলাদেশ মিশনের নিরাপত্তা, সীমান্ত হত্যা, অভিন্ন নদীর পানিবণ্টন, নিত্যপণ্য আমদানি, ভিসা ইস্যু ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা হবে বলে আভাস পাওয়া গেছে।

বৈঠকটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে, যখন বাংলাদেশে ক্ষমতার পালাবদল দুদেশের সম্পর্কে প্রভাব ফেলছে। পাশাপাশি বাংলাদেশে সনাতন ধর্মীয় একজন নেতার গ্রেপ্তারের প্রতিক্রিয়া দেখিয়েছে ভারত, সঙ্গে বাংলাদেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর নিপীড়নের অভিযোগও তুলেছে। আবার কলকাতা ও আগরতলায় বাংলাদেশ হাইকমিশনে হামলার ঘটনা নিয়ে প্রতিবেশী দুই দেশের সম্পর্কে টানাপড়েন চলছে।

ঢাকা ও দিল্লির উভয় পক্ষের আশা, এ বৈঠকের মধ্য দিয়ে চলমান উত্তেজনা কমানোর পথ সহজ হতে পারে।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বৈঠকে বাণিজ্য, সীমান্ত, কানেক্টিভিটি, পানিবণ্টনের মতো বিষয়ের পাশাপাশি সাম্প্রতিক বিষয়াবলিও আলোচনায় থাকার সম্ভাবনা রয়েছে। এছাড়া, আঞ্চলিক ও উপ-আঞ্চলিক এবং বৈশ্বিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে। ঢাকার পক্ষ থেকে সম্পর্ক স্বাভাবিক করে এগিয়ে নেওয়ার বার্তা থাকবে। ভারতের কাছ থেকেও একই ধরনের বার্তা প্রত্যাশা করছে বাংলাদেশ।

বৈঠকের আলোচনার বিষয়বস্তু জানতে চাইলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র রফিকুল আলম জানিয়েছেন, এফওসিতে দ্বিপাক্ষিক সম্পর্কের মধ্যে যত উপাদান আছে সবই রাখার চেষ্টা করা হয়। আলোচ্যসূচি ঠিক করার ক্ষেত্রে দুই পক্ষের সম্মতিও লাগে। তবে সাধারণভাবে যেটা বলা যায়, বাণিজ্য আছে, কানেক্টিভিটি আছে, সীমান্ত আছে, পানি আছে।

রাজনৈতিক পরিবর্তনে অন্তর্র্বতী সরকার ক্ষমতায় আসার পর এই প্রথম ভারতের কোনো শীর্ষ কূটনীতিক ঢাকায় এলেন। যদিও ৫ আগস্টের পর গত চার মাসে দুদেশের তিনটি টেকনিক্যাল কমিটির বৈঠক হয়েছে। তবে এমন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠক এখনো হয়নি।

এই বৈঠকের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের মধ্যে টানাপোড়েন অনেকটা প্রশমিত হতে পারে বলে ইতোমধ্যেই ঈঙ্গিত দিয়েছেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন। তিনি বলেন, ‘আমি বিশ্বাস করি, আমরা (ঢাকা-দিল্লি) স্বাভাবিক সম্পর্কের দিকে অগ্রসর হচ্ছি। আর এফওসি সেদিকে এগোনোর প্রথম পদক্ষেপ। এফওসির মধ্যে দিয়ে ঢাকা ও নয়াদিল্লি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক সম্পর্ক পুনরুদ্ধারে বাস্তবসম্মতভাবেই এগিয়ে যেতে পারে। ’