নিজস্ব প্রতিবেদক :
গণফোরামের সভাপতি ড. কামাল হোসেন বলেন, আগামী জাতীয় নির্বাচন জাতির সামনে একটি উত্তরণের উপায় হিসেবে উপস্থাপিত হয়েছে বলে গণফোরাম বিশ্বাস করে। পথ ও মত হিসেবে গণতন্ত্রই আমাদের শেষ কথা, যেখানে সব ক্ষমতার মালিক হবে জনগণ।
মঙ্গলবার (২৯ আগস্ট) জাতীয় প্রেসক্লাবের অডিটোরিয়ামে ‘গণতন্ত্র, ন্যায়বিচার ও ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠায় আসুন ঐক্যবদ্ধ হই’ প্রতিপাদ্যে গণফোরামের ৩০তম প্রতিষ্ঠা বার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত আলোচনা সভায় এসব কথা বলেন তিনি।
গণফোরামের সভাপতি বলেন, দেশ ও দেশের জনগণকে রক্ষায় মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী গণতন্ত্রকামী দল ও শক্তির সমন্বয়ে জাতীয় ঐক্য গড়ে তুলতে হবে। নিরপেক্ষ সরকারের অধীনে অবাধ ও সুষ্ঠু অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের জন্য সরকারকেই সংলাপের জন্য পদক্ষেপ নিতে হবে।
কামাল হোসেন বলেন, একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে সকল রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করতে হবে। গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করতে হবে। ব্যক্তি, সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করতে হবে এবং তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকায় বাঁধা দেওয়া যাবে না।
কামাল হোসেন আরও বলেন, নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন সরকার বাধ্য থাকবে। বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে। নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
তিনি বলেন, আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও অংশগ্রহণমূলক করার স্বার্থে অবিলম্বে সকল রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে সংলাপে বসার জন্য আমি সরকারের প্রতি আহ্বান জানাচ্ছি। সংবিধানে বলা হয়েছে রাষ্ট্রের মালিক জনগণ। জনগণ শান্তিপূর্ণ পরিবেশে তার ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ায় সরকার গঠন করতে চায়। অথচ এই স্বাধীন রাষ্ট্রে জনগণের মৌলিক ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য আজ সংগ্রাম করতে হচ্ছে, যা খুবই দুঃখজনক।
জাতি ও রাষ্ট্র এখন একটি সন্ধিক্ষণ অতিক্রম করছে জানিয়ে কামাল হোসেন বলেন, গণতন্ত্র, আইনের শাসন, বিচারহীনতা, ধন-বৈষম্য, কালো টাকা, সন্ত্রাস, দুর্নীতি, সামাজিক নিরাপত্তা, বাক-ব্যক্তির স্বাধীনতা ইত্যাদি প্রশ্নে কোনো সমাধান আজও হয়নি। বরং গণতন্ত্রহীনতা, কর্তৃত্ববাদ, অবাধে দুর্নীতি ও অর্থ পাচার, অর্থনীতিতে সিন্ডিকেট, কালো আইন জারি ইত্যাদির ফলে সর্বত্র একটা ভয়ের সংস্কৃতি কাজ করছে।
গণফোরাম সন্ত্রাস, দুর্নীতি ও সাম্প্রদায়িকতামুক্ত বাংলাদেশ গড়তে চায় জানিয়ে গণফোরাম সভাপতি বলেন, আমরা এমন জাতীয় সংসদ চাই, যা জনগণের কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করবে, এমন নির্বাহী বিভাগ চাই যারা। জনগণের কল্যাণ নিশ্চিত করবে, এমন বিচার বিভাগ চাই যারা ন্যায়বিচার নিশ্চিত করবে। এ জন্য দরকার জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক একটি নির্বাচিত সরকার।
তিনি বলেন, জাতির জন্য আজকে সবচেয়ে বড় সংকট হয়ে দাঁড়িয়েছে গণতন্ত্রহীনতা। বাংলাদেশের জন্মের মূল কথা ছিল গণতন্ত্র। কিন্তু এক সাগর রক্তের বিনিময়ে অর্জিত গণতন্ত্র কায়েমি স্বার্থে তা আজ বিপন্ন। এজন্য সামরিক শাসকদের দ্বারা গণতন্ত্র ধ্বংসের কর্মযজ্ঞ কম দেয় নাই। তবে মানুষ আশা করেছিল দেশের সংবিধানিক শাসনব্যবস্থা ফিরে আসবে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক ভাবে জাতি লক্ষ্য করল দেশে গণতন্ত্র না বরং বল তন্ত্র কায়েম হয়েছে। ২০০৮ সালের নির্বাচনের পর মানুষ আশায় বুক বাঁধে। কিন্তু এবারও হতাশ হয়। প্রায় ১৫ বছরে দেশবাসী ক্রমহ্রাসমান গণতন্ত্র প্রত্যক্ষ করছে। ২০১৪ সালে ভোটার বিহীন একতরফা নির্বাচন হয়েছে। ২০১৮ সালে দিনের ভোট রাতে হয়েছে। এমতাবস্থায় আগামী জাতীয় নির্বাচন নিয়ে জাতি চরম উদ্বেগ ও উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছে।
এ সময় জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক একটি নির্বাচিত সরকার করার লক্ষ্য অর্জনের জন্য ৬ টি নীতি ও কর্মসূচি ঘোষণা করা হয় গণফোরামের পক্ষ থেকে।
১) একটি অবাধ, সুষ্ঠু, গ্রহণযোগ্য ও অংশগ্রহণমূলক নির্বাচনের লক্ষ্যে সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে নির্বাচনকালীন নির্দলীয় নিরপেক্ষ সরকার গঠন করা।
২) গ্রহণযোগ্য ব্যক্তিদের সমন্বয়ে নির্বাচন কমিশন পুনর্গঠন করা।
৩) নির্বাচনকে সামনে রেখে বাকস্বাধীনতা, ব্যক্তি, সংবাদপত্র, ইলেকট্রনিক মিডিয়া, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও সকল রাজনৈতিক দলের সভা-সমাবেশের স্বাধীনতা নিশ্চিত করা এবং তাদের নিরপেক্ষ ভূমিকা রাখতে বাধা না দেওয়া ।
৪) নির্বাচনে লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড নিশ্চিত করতে নির্বাচনকালীন সরকার বাধ্য থাকবে।
৫) বিরোধী দলগুলোর নেতা-কর্মীদের বিরুদ্ধে মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার করতে হবে।
৬) নির্বাচনে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করতে দেশি ও বিদেশি পর্যবেক্ষক নিয়োগের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।
আলোচনা সভায় বক্তারা বলেন, গণতন্ত্রকে রক্ষা করতে হলে সরকারের গণতন্ত্রবিরোধী সকল কর্মকাণ্ডের প্রতিবাদ করতে হবে। তারা বলেন, গণতন্ত্রের প্রতিটি দাবিতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ হতে হবে।
আয়োজনে আরো উপস্থিত ছিলেন গণফোরামের কেন্দ্রীয় কমিটির সহ সাধারণ সম্পাদক মো. মাহফুজুর রহমান, কোষাধ্যক্ষ শাহ মোহাম্মদ নুরুজ্জামান, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য আবদুর রহমান জাহাঙ্গীর, যুব ফোরামের নেতা সাইফুল ইসলাম সজল, প্রেসিডিয়াম সদস্য ডা. আবদুল্লাহ আল মাহমুদ, মোস্তাক আহমেদ, সভাপতি পরিষদের সদস্য মেজবাহ উদ্দিন আহমেদ, সভাপতি মণ্ডলীর সদস্য মোকাব্বির খান, সভাপতি পরিষদের সদস্য এড এসএম আলতাফ হোসেন, মফিজুল ইসলাম খান কামাল ও গণফোরামের সাধারণ সম্পাদক ড. মিজানুর রহমান।