কিশোরগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি :
সমাজ সন্ত্রাসের অভয়ারণ্যে পরিণত হয়েছে দাবি করে জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেন, পতিত হাসিনা সরকারের সংবিধান ও সরকার ব্যবস্থা পরিবর্তন করে নতুন সরকার ব্যবস্থা গঠন করতে হবে। গণ অভ্যুথ্থানের এক বছর পরও মানুষ তার অধিকার ফিরে পায়নি। রাষ্ট্রযন্ত্রে অনিয়ম-দুর্নীতি রয়ে গেছে।
শনিবার (২৬ জুলাই) রাতে কিশোরগঞ্জে পদযাত্রা শেষে শহরের পুরান থানা (স্বাধীনতা চত্বর) এলাকায় আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, গণ-অভ্যুত্থানের এক বছর পরেও মানুষের অধিকার আদায় হয়নি। দেশে চাঁদাবাজ ও সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য তৈরি হয়েছে। রাষ্ট্রযন্ত্র থেকে দুর্নীতি চিরতরে বিলুপ্ত করা যায়নি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, আমরা বলেছিলাম, গণ-অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে যে পুরনো ব্যবস্থা রয়েছে, শেখ হাসিনার যে সরকারব্যবস্থা ছিল সে সকল অনিয়ম পাল্টিয়ে নতুন রাষ্ট্র তৈরি করতে হবে। নতুন সরকার তৈরি করতে হবে। কিন্তু আফসোসের বিষয়, আমরা এখনও নতুন দেশ পাইনি।
এনসিপি আহ্বায়ক সাবেক রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদকে নিয়ে বলেন, কিশোরগঞ্জবাসী আপনাদের ফ্যাসিস্ট রাষ্ট্রপতি (সাবেক) আপনাদের বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার হাতে তুলে দিয়েছিল। মানুষের মানব অধিকার, মানুষের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। আপনারা এই কিশোরগঞ্জ থেকেই ফ্যাসিস্টের বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ তৈরি করেছিলেন।
তিনি আরো বলেন, কিশোরগঞ্জের হাওরাঞ্চল এমনকি সদর এলাকায়ও স্কুল আছে শিক্ষক নাই, হাসপাতাল আছে ডাক্তার নাই, যুবসমাজ আছে কর্মসংস্থান নাই। আমরা চাই, হাওর এলাকার একটা শিশু বিদ্যালয়ে যেতে পারবে, মানুষ স্বাস্থ্যসেবা পাবে, যুবসমাজ কর্মসংস্থান পাবে এবং যাতায়াতের সুযোগ-সুবিধা বাড়বে।
তিনি বলেন, তরুণেদের নেতৃত্বে বাংলাদেশ ফ্যাসিবাদমুক্ত হয়েছে। আপনারা তরুণদের ওপর আস্থা রেখে জাতীয় নাগরিক পার্টিতে যোগদান করুন। তরুণরা বাংলাদেশকে পরিবর্তন করে নতুন বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সংস্কার, বিচার ও নতুন সংবিধানের দাবিতে আমরা রাজপথে নেমেছি। ফ্যাসিস্টের দোসরেরা এখনো বিভিন্ন জায়গায় লুকিয়ে আছে। কিশোরগঞ্জে এখনো মামলার আসামি অনেককে গ্রেফতার করা হয়নি। আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীরা এখনো শহীদ পরিবারের লোকদের হুমকি দিচ্ছে, আহত ভাইদের হুমকি দিচ্ছে।
তিনি বলেন, আমরা দেখতে চাই আওয়ামী লীগের সন্ত্রাসীদের কারা সেল্টার দিচ্ছে। যারা সেল্টার দিচ্ছে তাদের বিরুদ্ধেও প্রতিরোধ গড়ে তুলতে হবে।
নাহিদ ইসলাম বলেন, সংগ্রামী কিশোরগঞ্জবাসী, আপনারা এই ফ্যাসিবাদী রাষ্ট্রপতি আপনাদের বাংলাদেশকে, আমাদের বাংলাদেশকে শেখ হাসিনার কাছে তুলে দিয়েছিল। মানুষের মানবাধিকার, বাংলাদেশের গণতন্ত্রকে হত্যা করেছিল। এই কিশোরগঞ্জ থেকেই আপনারা সেই ফ্যাসিবাদীর বিরুদ্ধে গণপ্রতিরোধ গড়ে তুলেছিলেন। কিশোরগঞ্জের হাওর এলাকায় এবং প্রত্যন্ত এলাকায়, এমনকি কিশোরগঞ্জ সদরেও স্কুল আছে শিক্ষক নাই, হাসপাতাল আছে ডাক্তার নাই। যুবসমাজ আছে কিন্তু কর্মসংস্থান নাই। প্রিয় সংগ্রামী কিশোরগঞ্জবাসী, অনেক বাজেট আছে কিন্তু রাস্তা নাই। রাষ্ট্রপতি আছে কিন্তু মানুষের উন্নয়ন নাই। আমরা এই কিশোরগঞ্জের চেহারা পাল্টে দিতে চাই।
তিনি বলেন, আমরা এমন কিশোরগঞ্জ চাই, যেখানে শিশুরা বিদ্যালয়ে যেতে পারবে, মানুষ স্বাস্থ্যের সুযোগ-সুবিধা পাবে ও যুবসমাজ কর্মসংস্থান পাবে। কিশোরগঞ্জের মানুষ যাতায়াতের সুব্যবস্থা পাবে।
এ সময় নাহিদ ইসলাম আরও বলেন, জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদেরকে নতুন বাংলাদেশ উপহার দেবে। বাংলাদেশের ৫৪ বছরের দুর্নীতিপরায়ণ রাষ্ট্রব্যবস্থা, মাফিয়াতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থা—সেই রাষ্ট্রের পরিবর্তন ঘটাবে। প্রিয় কিশোরগঞ্জবাসী, আমরা বলেছি, তরুণরা রাষ্ট্রের চালিকাশক্তি। এই তরুণদেরকে যদি গণঅভ্যুত্থানের পর আমরা কাজে লাগাতে না পারি, এই তারুণ্যের শক্তিকে যদি দেশ গঠনের কাজে আমরা না লাগাই, বাংলাদেশকে আর কখনোই গড়ে তোলা সম্ভব হবে না। আমরা তরুণ এবং এই তারুণ্যের শক্তিতে বিশ্বাসী। আমরা কিশোরগঞ্জের এই শক্তিতে বিশ্বাসী। আমরা বিশ্বাস করি কিশোরগঞ্জের মাটি এনসিপির শক্তিশালী ঘাঁটিতে পরিণত হবে।
এনসিপির আহ্বায়ক বলেন, গণঅভ্যুত্থানের যে অঙ্গীকার ছিল—শেখ হাসিনার ফ্যাসিবাদী সংবিধানসহ যে সরকার ব্যবস্থা ছিল, এই সকল নিয়ম পাল্টে নতুন সরকার তৈরি করতে হবে, কিন্তু আফসোসের বিষয় আমরা নতুন সরকার পেলেও নতুন দেশ এখনও পাইনি। জাতীয় নাগরিক পার্টি আপনাদের কাছে ওয়াদাবদ্ধ, গণঅভ্যুত্থানে শহীদদের কাছে ওয়াদাবদ্ধ—নতুন দেশ গড়ার আগ পর্যন্ত আমাদের এই লড়াই চলমান থাকবে।
পথসভায় আরো বক্তব্য রাখেন এনসিপির সদস্যসচিব আখতার হোসেন, দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্রাহ, সিনিয়র যুগ্ম সদস্যসচিব ডা. তাসনিম জারা, মুখ্য সংগঠক নাসিরউদ্দীন পাটোয়ারীসহ কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ।
এর আগে, মৌলভীবাজারে পথসভা শেষে সন্ধ্যায় এনসিপির নেতৃবৃন্দের গাড়িবহর কিশোরগঞ্জে পৌঁছায়। পরে প্রশাসনিক প্রটোকল শেষ করে শহরের পুরাতন স্টেডিয়ামের সামনের সড়ক থেকে পদযাত্রা শুরু হয়। পদযাত্রাটি স্টেশন রোড হয়ে সভাস্থল পুরানথানা এলাকায় পথসভায় যোগ দেয়।