নিজস্ব প্রতিবেদক :
ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র ও ঢাকা-৮ আসনের সম্ভাব্য স্বতন্ত্র প্রার্থী শরিফ ওসমান হাদির মৃত্যুর পর দেশের সার্বিক পরিস্থিতি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছে বিএনপি। এ সময় দলটির মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নৈরাজ্য প্রতিরোধ করতে রাজনৈতিক দলগুলোর ঐক্যবদ্ধ হওয়ার বিকল্প নাই।
শুক্রবার (১৯ ডিসেম্বর) রাতে রাজধানীর গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে দলের স্থায়ী কমিটির জরুরি বৈঠক শেষে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
মির্জা ফখরুল বলেন, বৃহস্পতিবার (১৯ ডিসেম্বর) সন্ধ্যায় ইনকিলাব মঞ্চের মুখপাত্র শরিফ ওসমান হাদি সিঙ্গাপুরে চিকিৎসাধীন অবস্থায় শাহাদাত বরণ করেছেন। এই হত্যাকাণ্ডের তীব্র ঘৃণা ও নিন্দা জানাই। হত্যাকারী শাস্তি ও বিচারের আবারও দাবি জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, এই অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যুকে কেন্দ্র করে গতকাল গভীর রাতে দৈনিক প্রথম আলো, ইংরেজি দৈনিক ডেইলি স্টারসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে একদল উচ্ছৃঙ্খল ব্যক্তি অগ্নিসংযোগ করে। এতে কর্মরত সাংবাদিকদের জীবন মারাত্মক ঝুঁকির মধ্যে পড়ে। ফ্যাসিবাদবিরোধী জুলাই আন্দোলনসহ দেশের সব গণতান্ত্রিক আন্দোলনের অন্যতম সাহসী ব্যক্তিত্ব, দেশবরেণ্য সাংবাদিক নিউ এজ সম্পাদক নূরুল কবীরের ওপর হামলা চালানো হয়েছে। ছায়ানটসহ আরও কয়েকটি সাংস্কৃতিক প্রতিষ্ঠানে হামলা হয়েছে। আজ উদীচীতেও হামলা ও অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। আমরা এই ঘটনাবলীর প্রতি তীব্র নিন্দা জানাচ্ছি ও ঘৃণা প্রকাশ করছি। এ ঘটনা প্রমাণ করে একটি পুরনো চিহ্নিত মহল দেশকে পরিকল্পিতভাবে নৈরাজ্যের পথে ধাবিত করতে চায়। অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের ভোটাধিকার তথা গণতান্ত্রিক অধিকার তারা নস্যাৎ করে দিয়ে দেশে ফ্যাসিবাদের একটি নতুন সংস্করণ তৈরি করতে চাচ্ছে।
ফখরুল বলেন, সরকারের নাগের ডগাতেই তারা এ তৎপরতা চালিয়ে যাচ্ছে। জনগণও মনে করছে সরকারের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। ফলে দেশ-বিদেশে সরকার তথা দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হয়ে চলেছে। এ ধরনের ঘটনাকে আমরা জাতীয় সংসদ নির্বাচন তথা গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার ষড়যন্ত্র বলেই আমরা মনে করছি।
তিনি বলেন, এই ঘৃণ্য ষড়যন্ত্রকারীদের আমরা হুঁশিয়ারি দিতে চাই, এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের দেশকে ধ্বংস করতে দিতে পারি না। এই অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে। এই ষড়যন্ত্র প্রতিহত করতে নৈরাজ্যবিরোধী সকল রাজনৈতিক-সামাজিক শক্তির ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কোনো বিকল্প নাই। আমরা যেভাবে স্বৈরাচারের পতন ও নির্বাচন আদায় করে নিয়েছি তারই ধারাবাহিকতাতে সকল দেশপ্রেমিক শক্তিকে আবারও ঐক্যবদ্ধ হওয়ার আহ্বান জানাচ্ছি।
বিএনপির মহাসচিব বলেন, গতকাল খুলনায় ভারতীয় সহকারী হাইকমিশনের ভবনে হামলা চালানো হয়েছে। ধানমন্ডির ৩২ নম্বরে আবার অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। ইন্দিরা গান্ধী কালচারাল সেন্টারে ভাঙচুর ও আগুন দেওয়া হয়েছে। উত্তরা এলাকায় ৩২টি দোকান ভাঙচুর করা হয়েছে এবং এক আওয়ামী লীগ নেতার বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘সবচেয়ে ভয়াবহ ঘটনা হলো ধর্ম অবমাননার অভিযোগ এনে এক হিন্দু যুবককে গাছে ঝুলিয়ে পিটিয়ে হত্যা করা এবং আগুন দেওয়া। চট্টগ্রামে মহিউদ্দিন চৌধুরীর বাসায় অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। রাজশাহীতেও প্রথম আলো ও ডেইলি স্টারের কার্যালয়ে ভাঙচুর চালানো হয়েছে।’
এই ঘটনাগুলোকে ‘ঘৃণ্য ও ন্যক্কারজনক’ উল্লেখ করে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘এসব ঘটনা প্রমাণ করে, পুরোনো একটি চিহ্নিত মহল পরিকল্পিতভাবে দেশকে অস্থিতিশীল করার চেষ্টা করছে। তারা অনেক রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের ভোটাধিকার ও গণতান্ত্রিক অধিকার নস্যাৎ করে দেশে ফ্যাসিবাদের একটি নতুন সংস্করণ প্রতিষ্ঠা করতে চায়।’
এ সময় সরকারের ভূমিকা নিয়েও সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন তোলেন মির্জা ফখরুল। তিনি বলেন, ‘সরকারের নাকের ডগাতেই এসব ঘটনা ঘটছে। জনগণ মনে করছে, সরকারের ভূমিকা সন্তোষজনক নয়। এর ফলে দেশ-বিদেশে সরকারের পাশাপাশি দেশের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ন হচ্ছে।’
মির্জা ফখরুল বলেন, ‘এই হত্যাকাণ্ডের প্রতিবাদে ইতিমধ্যে দেশের সব রাজনৈতিক দল প্রতিবাদ জানিয়েছে এবং দোষীদের গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি তুলেছে। এরপরও এ ধরনের সহিংস হামলা জাতীয় সংসদ নির্বাচন এবং গণতান্ত্রিক উত্তরণের প্রক্রিয়াকে অনিশ্চিত করার গভীর ষড়যন্ত্র বলেই আমরা মনে করছি।’
দেশবাসীর প্রতি আহ্বান জানিয়ে বিএনপির মহাসচিব বলেন, ‘শান্তিকামী ও গণতান্ত্রিক দেশবাসীর পক্ষ থেকে আমরা এই ষড়যন্ত্রকারীদের হুঁশিয়ার করে দিতে চাই—এত রক্তের বিনিময়ে অর্জিত এই দেশকে ধ্বংস করতে দেওয়া যায় না। এই অপশক্তিকে ঐক্যবদ্ধভাবে রুখে দিতে হবে।’
গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে রাতে জাতীয় স্থায়ী কমিটির এই বৈঠক হয়। লন্ডন থেকে ভার্চুয়ালি বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান।
বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, ড. আব্দুল মঈন খান, নজরুল ইসলাম খান, সালাহউদ্দিন আহমেদ, বেগম সেলিমা রহমান এবং অবসরপ্রাপ্ত মেজর হাফিজ উদ্দিন আহমেদ।
ভার্চুয়ালি যুক্ত হন আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকু এবং অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন।
নিজস্ব প্রতিবেদক 






















