Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নিষেধাজ্ঞা শেষ, মধ্য রাত ইলিশ ধরতে প্রস্তুত জেলেরা

চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি : 

জাটকা রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে রোববার (৩০ এপ্রিল) রাত ১২টায়। মধ্য রাতেই নদীতে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়েছেন জেলেরা।

জেলার প্রায় ৪৪ হাজার নিবন্ধিত জেলে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত নৌ সীমানায় মাছ আহরণ করতে নামবেন। তবে জাটকা রক্ষায় সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা বাস্তবায়ন নিয়ে অভিযোগ করেছেন জেলেরা। জেলা টাস্কফোর্সের দাবি জাটকা রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল।

চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ মানুষই মাছ আহরণ ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। জেলেদের মধ্যে অধিকাংশ জেলে গুল্টিজাল ব্যবহার করে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ করে। কিন্তু এক শ্রেণির জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা আহরণ করে। আইন অমান্য করে জাটকা ধরায় ১ মার্চ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৭১ জেলে আটকের পর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

এদিকে দুই মাস বেকার অবস্থায় থাকার পর নৌকা ও জাল মেরামত করে পস্তুতি নিয়েছে জেলেরা। সরেজমিনে সদর পৌরসভার শহরের টিলাবাড়ি এলাকা, পুরান বাজার রনাগোয়াল, দোকানঘর, লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের সাখুয়া, বহরিয়া, হানারচর ইউনিয়নের হরিণা মাছঘাট, আখনের হাট, আনন্দ বাজার এলাকায় দেখা গেছে জাল ও নৌকা মেরামত কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। জাল মেরামত করার জন্য কিছু লোক ঠিক এ সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন এ সব এলাকায়।

বহরিয়া এলাকার জেলে মো. শাহজাহান খান বলেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার যে অভিযান দেয়, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কঠোর হওয়া দরকার। তাহলে কোনো জেলেই নদীতে নামতে পারে না। আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বসে থাকি। বাহিরের লোকজন এসে জাটকা ধরে নিয়ে যায়। এভাবে অভিযান দিয়ে কোনো লাভ হবে না।

জেলে মো. খোকন মাঝি জানান, তিনি ১৫ বছর ধরে জেলে পেশায় আছেন। দুই মাসের অভিযানে ৩০ হাজার টাকার মতো ঋণ করেছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে মাছ শিকার করে এ ঋণ পরিশোধ করবেন।

সাখুয়া এলাকার জেলে মফিজ মিয়া জানান, সরকার জাটকা না ধরার জন্য যে অভিযান চালায় আমরা তা মানি, কিন্তু কতিপয় জেলে এসে অধিকাংশ জাকটা ধরে নিয়ে যায়। যে কারণে অভিযান শেষ হলে আমরা তেমন মাছ পাই না। আমাদের ঋণ করে নতুন জাল ক্রয়, নৌকা মেরামত কাজে শ্রমিকদের টাকা দিতে হয়। এরপর নদীতে মাছ না পাওয়া গেলে আমাদের খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়

সাখুয়া এলাকার জেলে শাহজাহান রাঢ়ী বলেন, সরকার জাটকা না ধরার জন্য যে অভিযান দেয় আমরা তা মানি। কিন্তু মুন্সিগঞ্জ, মোহনপুর ও শরীয়তপুর এলাকার জেলেরা এসে অধিকাংশ জাটকা ধরে নিয়ে যায়। যে কারণে অভিযান শেষ হলে আমরা কোনো মাছ পাই না। ঋণ করে নতুন জাল কিনে নৌকা মেরামত ও এসব কাজে শ্রমিকদের টাকা দিতে হয়। এরপর নদীতে মাছ না পাওয়া গেলে আমাদের খুবই খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, জাটকা রক্ষার অভিযানের শুরু থেকে আমরা দিন ও রাতে এবং স্পেশাল অভিযান করেছি। এসব অভিযানে জাটকা ধরা অবস্থায় আমরা প্রায় ৪শ’ জেলেকে আটক করেছি। এসব ঘটনায় প্রায় ৩৯টি মামলা হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকার দুই মাসের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা বাস্তবায়নে আমাদের জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত ছিল। জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ সকলে মিলে আমরা এই অভিযান সফল করেছি। এরপরেও কিছু অসাধু জেলে মাছ আহরণ করেছে। যার ফলে অভিযানকালে ৩৪৭টি মামলা হয়েছে এবং জেল হয়েছে ৩৭১জন জেলের।

তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি এই অভিযানের ফলে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে। যা ইলিশের জাতীয় উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে। এর সুফল অভিযানের সময় মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা জেলেরা পাবে। তারা আরও বেশি ইলিশ পাবে। জেলেদের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য এ বছর অভিযানের আগে থেকেই ৪০ কেজি করে ৪ মাস খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

নিষেধাজ্ঞা শেষ, মধ্য রাত ইলিশ ধরতে প্রস্তুত জেলেরা

প্রকাশের সময় : ০২:৪৯:১৭ অপরাহ্ন, রবিবার, ৩০ এপ্রিল ২০২৩

চাঁদপুর জেলা প্রতিনিধি : 

জাটকা রক্ষায় মার্চ-এপ্রিল দুই মাস চাঁদপুরের পদ্মা-মেঘনা নদীর ৭০ কিলোমিটার অভয়াশ্রম এলাকায় মাছ ধরা নিষেধাজ্ঞা শেষ হচ্ছে রোববার (৩০ এপ্রিল) রাত ১২টায়। মধ্য রাতেই নদীতে মাছ ধরার প্রস্তুতি নিয়েছেন জেলেরা।

জেলার প্রায় ৪৪ হাজার নিবন্ধিত জেলে মতলব উত্তর উপজেলার ষাটনল থেকে হাইমচর উপজেলার চরভৈরবী পর্যন্ত নৌ সীমানায় মাছ আহরণ করতে নামবেন। তবে জাটকা রক্ষায় সরকার যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে তা বাস্তবায়ন নিয়ে অভিযোগ করেছেন জেলেরা। জেলা টাস্কফোর্সের দাবি জাটকা রক্ষায় সর্বোচ্চ প্রচেষ্টা অব্যাহত ছিল।

চাঁদপুর পদ্মা-মেঘনা উপকূলীয় এলাকার অধিকাংশ মানুষই মাছ আহরণ ও কৃষিকাজ করে জীবিকা নির্বাহ করে। জেলেদের মধ্যে অধিকাংশ জেলে গুল্টিজাল ব্যবহার করে ইলিশসহ অন্যান্য মাছ আহরণ করে। কিন্তু এক শ্রেণির জেলে নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে নিষিদ্ধ কারেন্ট জাল দিয়ে জাটকা আহরণ করে। আইন অমান্য করে জাটকা ধরায় ১ মার্চ থেকে ২৮ এপ্রিল পর্যন্ত ৩৭১ জেলে আটকের পর বিভিন্ন মেয়াদে কারাদণ্ড দেয়া হয়।

এদিকে দুই মাস বেকার অবস্থায় থাকার পর নৌকা ও জাল মেরামত করে পস্তুতি নিয়েছে জেলেরা। সরেজমিনে সদর পৌরসভার শহরের টিলাবাড়ি এলাকা, পুরান বাজার রনাগোয়াল, দোকানঘর, লক্ষ্মীপুর মডেল ইউনিয়নের সাখুয়া, বহরিয়া, হানারচর ইউনিয়নের হরিণা মাছঘাট, আখনের হাট, আনন্দ বাজার এলাকায় দেখা গেছে জাল ও নৌকা মেরামত কাজে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলেরা। জাল মেরামত করার জন্য কিছু লোক ঠিক এ সময়ে বিভিন্ন স্থান থেকে আসেন এ সব এলাকায়।

বহরিয়া এলাকার জেলে মো. শাহজাহান খান বলেন, ইলিশের উৎপাদন বাড়ানোর জন্য সরকার যে অভিযান দেয়, তা সঠিকভাবে বাস্তবায়ন হয় না। আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর আরও কঠোর হওয়া দরকার। তাহলে কোনো জেলেই নদীতে নামতে পারে না। আমরা লাখ লাখ টাকা বিনিয়োগ করে বসে থাকি। বাহিরের লোকজন এসে জাটকা ধরে নিয়ে যায়। এভাবে অভিযান দিয়ে কোনো লাভ হবে না।

জেলে মো. খোকন মাঝি জানান, তিনি ১৫ বছর ধরে জেলে পেশায় আছেন। দুই মাসের অভিযানে ৩০ হাজার টাকার মতো ঋণ করেছেন। নিষেধাজ্ঞা শেষে নদীতে মাছ শিকার করে এ ঋণ পরিশোধ করবেন।

সাখুয়া এলাকার জেলে মফিজ মিয়া জানান, সরকার জাটকা না ধরার জন্য যে অভিযান চালায় আমরা তা মানি, কিন্তু কতিপয় জেলে এসে অধিকাংশ জাকটা ধরে নিয়ে যায়। যে কারণে অভিযান শেষ হলে আমরা তেমন মাছ পাই না। আমাদের ঋণ করে নতুন জাল ক্রয়, নৌকা মেরামত কাজে শ্রমিকদের টাকা দিতে হয়। এরপর নদীতে মাছ না পাওয়া গেলে আমাদের খুবই খারাপ পরিস্থিতিতে পড়তে হয়

সাখুয়া এলাকার জেলে শাহজাহান রাঢ়ী বলেন, সরকার জাটকা না ধরার জন্য যে অভিযান দেয় আমরা তা মানি। কিন্তু মুন্সিগঞ্জ, মোহনপুর ও শরীয়তপুর এলাকার জেলেরা এসে অধিকাংশ জাটকা ধরে নিয়ে যায়। যে কারণে অভিযান শেষ হলে আমরা কোনো মাছ পাই না। ঋণ করে নতুন জাল কিনে নৌকা মেরামত ও এসব কাজে শ্রমিকদের টাকা দিতে হয়। এরপর নদীতে মাছ না পাওয়া গেলে আমাদের খুবই খারাপ পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়।

চাঁদপুর নৌ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. কামরুজ্জামান বলেন, জাটকা রক্ষার অভিযানের শুরু থেকে আমরা দিন ও রাতে এবং স্পেশাল অভিযান করেছি। এসব অভিযানে জাটকা ধরা অবস্থায় আমরা প্রায় ৪শ’ জেলেকে আটক করেছি। এসব ঘটনায় প্রায় ৩৯টি মামলা হয়েছে।

চাঁদপুর জেলা মৎস্য কর্মকর্তা মো. গোলাম মেহেদী হাসান বলেন, জাতীয় সম্পদ ইলিশ রক্ষায় সরকার দুই মাসের যে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে, তা বাস্তবায়নে আমাদের জেলা ও উপজেলা টাস্কফোর্স সর্বাত্মক চেষ্টা অব্যাহত ছিল। জেলা প্রশাসন, জনপ্রতিনিধি, মৎস্য বিভাগ, কোস্টগার্ড ও নৌপুলিশ সকলে মিলে আমরা এই অভিযান সফল করেছি। এরপরেও কিছু অসাধু জেলে মাছ আহরণ করেছে। যার ফলে অভিযানকালে ৩৪৭টি মামলা হয়েছে এবং জেল হয়েছে ৩৭১জন জেলের।

তিনি আরও বলেন, আমরা আশা করছি এই অভিযানের ফলে ইলিশের উৎপাদন আরও বাড়বে। যা ইলিশের জাতীয় উৎপাদনে ভূমিকা রাখবে। এর সুফল অভিযানের সময় মাছ ধরা থেকে বিরত থাকা জেলেরা পাবে। তারা আরও বেশি ইলিশ পাবে। জেলেদের যাতে কষ্ট না হয় সেজন্য এ বছর অভিযানের আগে থেকেই ৪০ কেজি করে ৪ মাস খাদ্য সহায়তা দেওয়া হয়েছে।