Dhaka রবিবার, ১৩ জুলাই ২০২৫, ২৮ আষাঢ় ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্যাতনে মৃত্যু : কবর থেকে তোলা হলো রায়হানের লাশ

  • সিলেট প্রতিনিধি
  • প্রকাশের সময় : ০৮:০২:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২০
  • ১৯৪ জন দেখেছেন

কবর থেকে তোলা হলো রায়হানের লাশ

তদন্তের জন্য আদালতের আদেশে কবর থেকে তোলা হলো পুলিশের নির্যাতনে নিহত রায়হানের লাশ। দুই ঘণ্টা পর লাশটি উত্তোলন করে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিসবাহ উদ্দিন ও সজিব আহমদের নেতৃত্বে আখালিয়া এলাকার নবাবী মসজিদের পঞ্চায়েত গোরস্থান থেকে লাশটি তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেন।

এ সময় পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ উজ জামান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মুহিদুল ইসলাম ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য রায়হানের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের আবেদন করেছিলেন মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল বাতেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতেই রায়হান আহমদের মরদেহ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেয়া হয়।

পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করেছে পিবিআই। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতেই এই মামলার নথি পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর পিবিআই কর্মকর্তারা বুধবার দুপুরে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যান এবং আলামত সংগ্রহ করেন।

এর আগে গত শনিবার (১০ অক্টোবর) মধ্যরাতে রায়হানকে তুলে নিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করে পরিবার। সকালে তিনি মারা যান। নির্যাতনের সময় এক পুলিশ সদস্যের মুঠোফোন থেকে রায়হানের পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে টাকা চাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা সকালে ফাঁড়ি থেকে হাসপাতালে গিয়ে রায়হানের মরদেহ শনাক্ত করেন।

আরও পড়ুন : ময়নাতদন্তের জন্য রায়হানের লাশ তোলা হবে

ঘটনার শুরুতে ওই ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা ছিনতাইকারী সন্দেহে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হয়েছেন বলে প্রচার করেন। কিন্তু গণপিটুনির স্থান হিসেবে যে কাষ্টঘর এলাকার কথা বলেছিল পুলিশ, সেখানে সিটি কর্পোরেশনের বসানো সিসিটিভি ক্যামেরায় ওই সময়ে এমন কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি।

রোববার (১১ অক্টোবর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে পুলিশ সদস্যরা নির্যাতন করে তার স্বামীকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ এনে মামলা করেন।

বিষয়টি তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় সিলেট মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে- রোববার ভোররাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে রায়হানকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আনা হয়। সেখানে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহী। সেখানে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে মারা যান রায়হান।

নিহত রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারীপাড়া এলাকার তৎকালীন বিডিআরের নায়েক মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরের রিকাবীবাজার এলাকার একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে চাকরি করতেন। নিহারিপাড়ায় স্ত্রী, ছয় মাস বয়সী মেয়ে, মা ও চাচাকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

মিটফোর্ড হত্যাকাণ্ড : আসামি টিটন গাজী ৫ দিনের রিমান্ডে

নির্যাতনে মৃত্যু : কবর থেকে তোলা হলো রায়হানের লাশ

প্রকাশের সময় : ০৮:০২:২৩ পূর্বাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৫ অক্টোবর ২০২০

তদন্তের জন্য আদালতের আদেশে কবর থেকে তোলা হলো পুলিশের নির্যাতনে নিহত রায়হানের লাশ। দুই ঘণ্টা পর লাশটি উত্তোলন করে পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য সিলেট এমএজি ওসমানী মেডিকেল কলেজের ফরেনসিক মেডিসিন বিভাগের মর্গে নিয়ে যাওয়া হয়।

বুধবার (১৫ অক্টোবর) সকাল ৯টার দিকে পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) একটি দল জেলা প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মিসবাহ উদ্দিন ও সজিব আহমদের নেতৃত্বে আখালিয়া এলাকার নবাবী মসজিদের পঞ্চায়েত গোরস্থান থেকে লাশটি তোলার প্রক্রিয়া শুরু করেন।

এ সময় পিবিআই সিলেটের পুলিশ সুপার মুহাম্মদ খালেদ উজ জামান, মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআইয়ের পরিদর্শক মুহিদুল ইসলাম ও সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ৯ নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মখলিছুর রহমান কামরান উপস্থিত ছিলেন।

জানা গেছে, পুনরায় ময়নাতদন্তের জন্য রায়হানের মরদেহ কবর থেকে উত্তোলনের আবেদন করেছিলেন মামলার প্রথম তদন্ত কর্মকর্তা কোতোয়ালি মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আব্দুল বাতেন। তার আবেদনের প্রেক্ষিতেই রায়হান আহমদের মরদেহ কবর থেকে তোলার অনুমতি দেয়া হয়।

পুলিশ সদর দফতরের নির্দেশে বর্তমানে মামলাটি তদন্ত করেছে পিবিআই। মঙ্গলবার (১৪ অক্টোবর) রাতেই এই মামলার নথি পিবিআইয়ের কাছে হস্তান্তর করা হয়। এরপর পিবিআই কর্মকর্তারা বুধবার দুপুরে বন্দরবাজার পুলিশ ফাঁড়িতে যান এবং আলামত সংগ্রহ করেন।

এর আগে গত শনিবার (১০ অক্টোবর) মধ্যরাতে রায়হানকে তুলে নিয়ে সিলেট মহানগর পুলিশের কোতোয়ালি থানার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আটকে রেখে নির্যাতন করা হয় বলে অভিযোগ করে পরিবার। সকালে তিনি মারা যান। নির্যাতনের সময় এক পুলিশ সদস্যের মুঠোফোন থেকে রায়হানের পরিবারের কাছে ফোন দিয়ে টাকা চাওয়া হয়। পরিবারের সদস্যরা সকালে ফাঁড়ি থেকে হাসপাতালে গিয়ে রায়হানের মরদেহ শনাক্ত করেন।

আরও পড়ুন : ময়নাতদন্তের জন্য রায়হানের লাশ তোলা হবে

ঘটনার শুরুতে ওই ফাঁড়ির পুলিশ সদস্যরা ছিনতাইকারী সন্দেহে নগরের কাষ্টঘর এলাকায় গণপিটুনিতে রায়হান নিহত হয়েছেন বলে প্রচার করেন। কিন্তু গণপিটুনির স্থান হিসেবে যে কাষ্টঘর এলাকার কথা বলেছিল পুলিশ, সেখানে সিটি কর্পোরেশনের বসানো সিসিটিভি ক্যামেরায় ওই সময়ে এমন কোনো দৃশ্য দেখা যায়নি।

রোববার (১১ অক্টোবর) দিবাগত রাত আড়াইটার দিকে রায়হানের স্ত্রী তাহমিনা আক্তার বন্দরবাজার ফাঁড়িতে তুলে নিয়ে পুলিশ সদস্যরা নির্যাতন করে তার স্বামীকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগ এনে মামলা করেন।

বিষয়টি তদন্তে নেমে পুলিশ হেফাজতে রায়হান উদ্দিনের মৃত্যু ও নির্যাতনের প্রাথমিক সত্যতাও পায় সিলেট মহানগর পুলিশের তদন্ত কমিটি। তদন্ত কমিটি জানতে পারে- রোববার ভোররাতে সিএনজিচালিত অটোরিকশায় করে রায়হানকে বন্দরবাজার ফাঁড়িতে আনা হয়। সেখানে ফাঁড়ির ইনচার্জ এসআই আকবর হোসেন ভূঁইয়ার নেতৃত্বেই তার ওপর নির্যাতন চালানো হয়। নির্যাতনে গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়লে সকাল ৬টা ৪০ মিনিটে রায়হানকে ওসমানী হাসপাতালে ভর্তি করেছিলেন বন্দরবাজার ফাঁড়ির এএসআই আশেকে এলাহী। সেখানে সকাল ৭টা ৫০ মিনিটে মারা যান রায়হান।

নিহত রায়হান নগরের আখালিয়ার নেহারীপাড়া এলাকার তৎকালীন বিডিআরের নায়েক মৃত রফিকুল ইসলামের ছেলে। তিনি নগরের রিকাবীবাজার এলাকার একটি রোগনির্ণয় কেন্দ্রে চাকরি করতেন। নিহারিপাড়ায় স্ত্রী, ছয় মাস বয়সী মেয়ে, মা ও চাচাকে নিয়ে বসবাস করতেন তিনি।