নিজস্ব প্রতিবেদক :
নির্বাচন ভারতের এজেন্ডা, এমনটা প্রচার করা বিপজ্জনক বলে মন্তব্য করে গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী জোনায়েদ সাকি বলেন, নিজেদের প্রয়োজনে আমাদের বিচার, সংস্কার ও নির্বাচন দরকার।
রোববার (১ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে গণসংহতি আন্দোলনের প্রথম নির্বাহী সমন্বয়কারী অ্যাডভোকেট আব্দুস সালামের অষ্টম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত স্মরণসভায় এসব কথা বলেন তিনি।
গণসংহতি আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়কারী বলেন, ভারতের কোনো মিডিয়া কিংবা কোনো রাজনৈতিক ব্যক্তি বাংলাদেশে নির্বাচন চাইলেন, আর এখানে নির্বাচনের দাবি করা ভারতের ইচ্ছা অনুযায়ী হচ্ছে বলে মনে করা, এ ধরনের প্রচার অত্যন্ত বিপজ্জনক।
জোনায়েদ সাকি বলেন, ভারতীয় পৃষ্ঠপোষকতায় শেখ হাসিনা সরকার যে ফ্যাসিস্ট রোলার চালিয়েছিল, তার বিরুদ্ধে দেশে ঐক্য গড়ে উঠেছে। সেখানে নির্বাচন ভারতের এজেন্ডা, এমন কথা বলে জনগণের ঐক্যে ফাটল ধরিয়ে ভারতের পারপাস সার্ভ করা হচ্ছে। এমন প্রচার ফ্যাসিস্টদের পুনর্বাসন করতে সাহায্য করবে।
তিনি বলেন, ডিসেম্বর থেকে জুন এই সময়ের মধ্যে নির্বাচন আয়োজনের কথা প্রথম বলেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা প্রফেসর ড. মুহাম্মদ ইউনুস। সুতরাং রাজনৈতিক দলগুলো যদি ডিসেম্বরে নির্বাচন চায়, তাতে কোনো অপরাধ নেই। বরং এটাই স্বাভাবিক।
তিনি আরো বলেন, যদি ডিসেম্বরে নির্বাচন আয়োজন করা না যায়, তাহলে কেন সম্ভব হচ্ছে না, তার ব্যাখ্যা সরকারকেই দিতে হবে। সরকারের কাজ অনাস্থা বাড়ানো নয়, বরং সেই অনাস্থা দূর করা।
গণতান্ত্রিক উত্তরণের পথে সাফল্য বা বিপর্যয় দুটি সম্ভাবনার দিকেই ইঙ্গিত করে তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক উত্তরণ আমরা সবচেয়ে ভালোভাবে সম্পন্ন করতে পারি, আবার আমাদের ভুলের কারণেও বিপর্যয় নেমে আসতে পারে। এটি নির্ভর করছে আমাদের পদক্ষেপের ওপর। অন্তর্বর্তী সরকারের এখানে বড় দায়িত্ব রয়েছে। রাজনৈতিক দল, রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান সবাইকে নিজ নিজ জায়গা থেকে দায়িত্ব নিতে হবে।
প্রফেসর ইউনুসের নেতৃত্বের প্রশংসা করে তিনি বলেন, আমরা বিশ্বাস করি, প্রধান উপদেষ্টা তার অভিজ্ঞতা, ধৈর্য ও নেতৃত্ব দিয়ে এই প্রক্রিয়াকে একটি গণতান্ত্রিক ও সফল পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারবেন। তিনি সব পক্ষকে আস্থায় আনতে সক্ষম হবেন। আমরা তাকে সর্বদা সহযোগিতা করতে প্রস্তুত।
বিপ্লবী ওয়ার্কার্স পার্টির সাধারণ সম্পাদক সাইফুল হক বলেন, যারা শেখ হাসিনাকে ফ্যাসিবাদী হিসেবে তৈরি করেছে, তারা এখনও বহাল তবিয়তে আছেন। গত ৯ মাসে ১৫/১৬টি কমিশন হয়েছে, কিন্তু রাজনৈতিক দুর্বৃত্তায়ন বন্ধে কোনো কমিশন হয়নি।
তিনি আরও বলেন, যারা অতীতে অভ্যুত্থানে নেতৃত্ব দিয়েছেন, তারা এতো দ্রুত নিন্দিত হননি। এখন আমরা দেখতে পাচ্ছি, অভ্যুত্থানের নায়কদের স্বজনরা দুর্নীতিতে জড়িয়ে পড়ছেন।
ভাসানী জনশক্তি পার্টির চেয়ারম্যান রফিকুল ইসলাম বাবলু বলেন, “জামায়াত একটি রাজনৈতিক দল। তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছিল গত ফ্যাসিস্ট খুনি সরকার। যদিও জামায়াতের বিরুদ্ধে মুক্তিযুদ্ধবিরোধিতার অভিযোগ আছে, তবুও আজকের রায়ে প্রমাণিত হয়েছে, রাজনৈতিক স্বার্থে আওয়ামী লীগ তাদের নিবন্ধন বাতিল করেছিল।
তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি প্রধান উপদেষ্টা জাপান সফরে গিয়ে বলেছেন, একটি দল ছাড়া কেউ ডিসেম্বরে নির্বাচন চায় না। একজন বিজ্ঞ ব্যক্তি হিসেবে তার এ মন্তব্য করা উচিত হয়নি।
স্মরণসভায় আরও বক্তব্য রাখেন আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) চেয়ারম্যান মুজিবুর রহমান মঞ্জু, গণঅধিকার পরিষদের সাধারণ সম্পাদক রাশেদ খান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের প্রধান সমন্বয়ক হাসনাত কাইয়ুম এবং জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দল-জেএসডির সাধারণ সম্পাদক শহীদ উদ্দিন মাহমুদ স্বপন।