Dhaka রবিবার, ২৭ জুলাই ২০২৫, ১২ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে বাধ্য করতে চাই না : জামায়াত আমির

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচনের প্রতি জামায়াতের আস্থা রয়েছে বলে জানিয়ে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচন বিষয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বাধ্য করতে চাই না। তিনি আমাদের প্রতিপক্ষ নন, তিনি সরকারের অভিভাবক। আমাদের সবার দায়িত্ব তাকে সহযোগিতা করা।

শনিবার (২৪ মে) সকালে মগবাজারস্থ আল-ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

জামায়াত আমির বলেন, পূর্বে নির্বাচনের নামে তামাশা করা হয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মানুষকে ভোটবিমুখ করা হয়েছে। তাই এমন একটি নির্বাচন করতে হবে, যেখানে জনমতের প্রতিফলন ঘটবে। নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য।

তিনি বলেন, এ মাসের মধ্যে সংস্কার শেষ হলে আগামী মাসেই নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া হোক। আর সংস্কারের নির্বাচনের রোডম্যাপ জনগণের সামনে তুলে ধরা হোক।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সরকার পরিবর্তনের ৯ মাস পার হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে দিতে চান। আমরা তার কথায় বিশ্বাস রাখতে চাই।

তিনি বলেন, আমরাই তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি তো জোর করে এই দায়িত্ব নেননি। আমাদের দায়িত্ব তাকে সহযোগিতা করা। সংঘাত-কাদা ছোড়াছুড়ির মধ্য দিয়ে জাতিকে আর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া সমীচীন হবে না। এর জন্য প্রয়োজন অর্থবহ ডায়ালগ। এটার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা যতটুকু সম্ভব তাকে সহযোহিতা করেছি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই সরকার যেহেতু আমাদের সবার সরকার। আসুন আমরা এই সরকারকে সহযোগিতা করি। সরকার যদি এই সহযোগিতা গ্রহণ করে তাহলে সমস্যা সমাধান সুন্দরভাবে হবে।

জামায়াত আমির বলেন, বর্তমানে দেশে চলমান পরিস্থিতির কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আমরা মনে করি অর্থবহ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই বর্তমান সমস্যার সন্তোষজনক সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব। আমরা এখন জাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে অবস্থান করছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা দেশবাসীকে বিচলিত করেছে। আমরা বিচলিত না হলেও সতর্ক দৃষ্টি রাখছি।

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলাম কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাই সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বানের জন্য। জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আশা করি সেই বৈঠকে ভালো কিছু বের হয়ে আসবে।

আওয়ামী লীগের নানা ধরনের অন্যায়ের উদাহরণ টানার পর তিনি বলেন, ৭১ থেকে এই পর্যন্ত অনেক কিছু অর্জন করার ছিল। হয়ত অনেক প্রত্যাশা পূরণও হয়েছে। কিন্তু স্বাধীন দেশে জনগণের মূল জায়গায়গুলো ফাঁকা থেকে গেছে। দেশে অনেক কিছুই হয়নি। ২৪ এ নির্মম কায়দায় যা করা হয়েছে তার সাক্ষী বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা টানা ১৫ বছর দুঃশাসন উপহার দিয়েছেন।

একটি ভালো নির্বচানের প্রত্যাশা রেখে তিনি বলেন, আমরা দুটা রোডম্যাপ চেয়েছিলাম। একটা সংস্কারের ও আরেকটি নির্বাচনের। কিন্তু কোনো রোডম্যাপ আসেনি। আমরা দাবি জানাই, রোডম্যাপ প্রকাশ করা হোক। তাহলে জনগণের আস্থা ফিরে আসবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দুটি রোডম্যাপ জরুরি।

আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিচারের কোনো প্রক্রিয়া দেখছি না। বিচার না হলে অপরাধ বৃদ্ধি পাবে। বিচারের নামে অবিচার আমরা চাই না। মানবিক করিডোরের বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা বলেছি এর সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ জড়িত। এটা তাড়াহুড়ো করে করা যাবে না। এখন দেশে পার্লামেন্ট নেই। সব পক্ষের সঙ্গে না বসে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। রাজনৈতিক দল, সিকিউরিটি এক্সপার্টের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। সব থেকে ভালো হয় নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া।

চট্টগ্রাম পোর্টের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের লাইফলাইন এই বন্দর। দেশের বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

সেনাবাহিনীর নানা কাজের প্রশংসা করে জামায়াত আমির বলেন, কোনো কার্যক্রমের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হোক তা চাই না। সেনাবাহিনীকে নিয়ে যেকোনো ধরনের মন্তব্য করা থেকেও বিরত থাকা উচিত।

মানবিক করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দরকে স্পর্শকাতর বিষয় বলে উল্লেখ করেন জামায়াত আমির। মানবিক করিডরের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে বলেন তিনি। অথবা বিষয়টি পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া উত্তম হবে বলে জানান।

চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে তিনি বলেন, এই বন্দরের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের অনেক কিছু। প্রধান বৈদেশিক বাণিজ্যের ৭০ ভাগ এ বন্দরের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং বন্দর ব্যবস্থাপনার কোনো বিষয়ে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমীচীন হবে না। বিষয়গুলো ভেবে চিন্তে অংশীজনের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে, এ বিষয়ে কী করা যায়, সেই বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসা উচিত।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সিনিয়র নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।

 

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

আড়াই বছরেও শেষ হয়নি সেতু নির্মাণ কাজ, দুর্ভোগে এলাকাবাসী

নির্বাচন বিষয়ে প্রধান উপদেষ্টাকে বাধ্য করতে চাই না : জামায়াত আমির

প্রকাশের সময় : ১২:৫২:৫৯ অপরাহ্ন, শনিবার, ২৪ মে ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

চলতি বছরের ডিসেম্বর থেকে আগামী বছরের জুন মাসের মধ্যে নির্বাচনের প্রতি জামায়াতের আস্থা রয়েছে বলে জানিয়ে দলটির আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেন, নির্বাচন বিষয়ে আমরা প্রধান উপদেষ্টাকে বাধ্য করতে চাই না। তিনি আমাদের প্রতিপক্ষ নন, তিনি সরকারের অভিভাবক। আমাদের সবার দায়িত্ব তাকে সহযোগিতা করা।

শনিবার (২৪ মে) সকালে মগবাজারস্থ আল-ফালাহ মিলনায়তনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় মজলিসে শূরার অধিবেশনে যোগ দিয়ে তিনি এ কথা বলেন।

জামায়াত আমির বলেন, পূর্বে নির্বাচনের নামে তামাশা করা হয়েছে। মানুষের ভোটের অধিকার কেড়ে নেওয়া হয়েছে। মানুষকে ভোটবিমুখ করা হয়েছে। তাই এমন একটি নির্বাচন করতে হবে, যেখানে জনমতের প্রতিফলন ঘটবে। নির্বাচন হতে হবে সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ ও গ্রহণযোগ্য।

তিনি বলেন, এ মাসের মধ্যে সংস্কার শেষ হলে আগামী মাসেই নির্বাচনের রোডম্যাপ দেওয়া হোক। আর সংস্কারের নির্বাচনের রোডম্যাপ জনগণের সামনে তুলে ধরা হোক।

ডা. শফিকুর রহমান বলেন, সরকার পরিবর্তনের ৯ মাস পার হয়েছে। প্রধান উপদেষ্টা বলেছেন, জাতীয় নির্বাচন ডিসেম্বর থেকে জুনের মধ্যে দিতে চান। আমরা তার কথায় বিশ্বাস রাখতে চাই।

তিনি বলেন, আমরাই তাকে এই দায়িত্ব দিয়েছি। তিনি তো জোর করে এই দায়িত্ব নেননি। আমাদের দায়িত্ব তাকে সহযোগিতা করা। সংঘাত-কাদা ছোড়াছুড়ির মধ্য দিয়ে জাতিকে আর অনিশ্চয়তার দিকে ঠেলে দেওয়া সমীচীন হবে না। এর জন্য প্রয়োজন অর্থবহ ডায়ালগ। এটার দায়িত্ব সরকারকেই নিতে হবে।

তিনি বলেন, আমরা যতটুকু সম্ভব তাকে সহযোহিতা করেছি। অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, এই সরকার যেহেতু আমাদের সবার সরকার। আসুন আমরা এই সরকারকে সহযোগিতা করি। সরকার যদি এই সহযোগিতা গ্রহণ করে তাহলে সমস্যা সমাধান সুন্দরভাবে হবে।

জামায়াত আমির বলেন, বর্তমানে দেশে চলমান পরিস্থিতির কিছু ইতিবাচক পরিবর্তন এসেছে। আমরা মনে করি অর্থবহ আলাপ-আলোচনার মাধ্যমেই বর্তমান সমস্যার সন্তোষজনক সমাধানে পৌঁছানো সম্ভব। আমরা এখন জাতির একটি গুরুত্বপূর্ণ বাঁকে অবস্থান করছি উল্লেখ করে তিনি বলেন, সাম্প্রতিক সময়ের ঘটনা দেশবাসীকে বিচলিত করেছে। আমরা বিচলিত না হলেও সতর্ক দৃষ্টি রাখছি।

তিনি বলেন, জামায়াতে ইসলাম কয়েকটি সিদ্ধান্ত নিয়েছে। আমরা অন্তর্বর্তী সরকারকে আহ্বান জানাই সর্বদলীয় বৈঠক আহ্বানের জন্য। জাতীয় স্বার্থকে প্রাধান্য দিয়ে আশা করি সেই বৈঠকে ভালো কিছু বের হয়ে আসবে।

আওয়ামী লীগের নানা ধরনের অন্যায়ের উদাহরণ টানার পর তিনি বলেন, ৭১ থেকে এই পর্যন্ত অনেক কিছু অর্জন করার ছিল। হয়ত অনেক প্রত্যাশা পূরণও হয়েছে। কিন্তু স্বাধীন দেশে জনগণের মূল জায়গায়গুলো ফাঁকা থেকে গেছে। দেশে অনেক কিছুই হয়নি। ২৪ এ নির্মম কায়দায় যা করা হয়েছে তার সাক্ষী বাংলাদেশসহ গোটা বিশ্ব। আগে যারা ক্ষমতায় ছিলেন তারা টানা ১৫ বছর দুঃশাসন উপহার দিয়েছেন।

একটি ভালো নির্বচানের প্রত্যাশা রেখে তিনি বলেন, আমরা দুটা রোডম্যাপ চেয়েছিলাম। একটা সংস্কারের ও আরেকটি নির্বাচনের। কিন্তু কোনো রোডম্যাপ আসেনি। আমরা দাবি জানাই, রোডম্যাপ প্রকাশ করা হোক। তাহলে জনগণের আস্থা ফিরে আসবে। সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য দুটি রোডম্যাপ জরুরি।

আওয়ামী লীগের বিচার প্রক্রিয়া স্বচ্ছ করার আহ্বান জানিয়ে বলেন, বিচারের কোনো প্রক্রিয়া দেখছি না। বিচার না হলে অপরাধ বৃদ্ধি পাবে। বিচারের নামে অবিচার আমরা চাই না। মানবিক করিডোরের বিষয়ে ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমরা বলেছি এর সঙ্গে জাতীয় স্বার্থ জড়িত। এটা তাড়াহুড়ো করে করা যাবে না। এখন দেশে পার্লামেন্ট নেই। সব পক্ষের সঙ্গে না বসে এই ধরনের সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। রাজনৈতিক দল, সিকিউরিটি এক্সপার্টের সঙ্গে আলোচনা করা উচিত। সব থেকে ভালো হয় নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া।

চট্টগ্রাম পোর্টের বিষয়ে তিনি বলেন, আমাদের দেশের লাইফলাইন এই বন্দর। দেশের বাণিজ্যের প্রাণকেন্দ্র। হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত নেওয়া ঠিক হবে না। সবার সঙ্গে আলোচনা করেই সিদ্ধান্ত নেওয়া উচিত।

সেনাবাহিনীর নানা কাজের প্রশংসা করে জামায়াত আমির বলেন, কোনো কার্যক্রমের মাধ্যমে এই প্রতিষ্ঠানের মর্যাদা ক্ষুণ্ন হোক তা চাই না। সেনাবাহিনীকে নিয়ে যেকোনো ধরনের মন্তব্য করা থেকেও বিরত থাকা উচিত।

মানবিক করিডর ও চট্টগ্রাম বন্দরকে স্পর্শকাতর বিষয় বলে উল্লেখ করেন জামায়াত আমির। মানবিক করিডরের বিষয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে বসে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত নেওয়া যেতে পারে বলেন তিনি। অথবা বিষয়টি পরবর্তী নির্বাচিত সরকারের ওপর ছেড়ে দেওয়া উত্তম হবে বলে জানান।

চট্টগ্রাম বন্দরের বিষয়ে তিনি বলেন, এই বন্দরের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের অনেক কিছু। প্রধান বৈদেশিক বাণিজ্যের ৭০ ভাগ এ বন্দরের ওপর নির্ভরশীল। সুতরাং বন্দর ব্যবস্থাপনার কোনো বিষয়ে হঠাৎ করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার সমীচীন হবে না। বিষয়গুলো ভেবে চিন্তে অংশীজনের সঙ্গে আলাপ–আলোচনা করে, এ বিষয়ে কী করা যায়, সেই বিষয়গুলো সামনে নিয়ে আসা উচিত।

বৈঠকে উপস্থিত ছিলেন- জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় সিনিয়র নায়েবে আমির মুজিবুর রহমান, নায়েবে আমির সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান প্রমুখ।