Dhaka বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫, ৩ পৌষ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচন নিয়ে ভারতের নসিহত অগ্রহণযোগ্য : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারত নসিহত করছে বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতের এই অযাচিত নসিহত অগ্রহণযোগ্য। আমরা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এর জন্য প্রতিবেশীদের থেকে কোনো নসিহত গ্রহণের প্রয়োজন নেই।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে বসে আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তব্য দিতেন। এখন তিনি সংবাদমাধ্যমেও বক্তব্য দিচ্ছেন। তার বক্তব্যে যথেষ্ট উসকানি আছে। আদালতের মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে তিনি পাশের দেশে বসে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করবেন এটাতে তো আমরা আপত্তি জানাবই। আমরা তো তাকে ফেরত চাইবই। কিন্তু ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাচ্ছে না। তার বক্তব্য বন্ধ করছে না। উল্টো সর্বশেষ তারা কিছু নসিহত করেছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই সরকার ডে ওয়ান থেকে স্পষ্টভাবে বলে আসছে, মানুষ যেন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে। যে পরিবেশ গত ১৫ বছর ছিল না। এখন ভারত আমাদেরকে এটা নিয়ে উপদেশ দিচ্ছে। এটা আমি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য মনে করি— এই কারণে যে, তারা জানে এর আগে গত ১৫ বছর ধরে যে সরকার ছিল, যে সরকারের সঙ্গে তাদের অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক ছিল, তখন কিন্তু এই যে নির্বাচনগুলো প্রহসণমূলক হয়েছে, তখন তারা একটু শব্দ উচ্চারণ করেনি। এখন সামনে একটা ভালো নির্বাচনের দিকে আমরা যাচ্ছি। এই মুহূর্তে আমাদেরকে নসিহত করার তো কোনও প্রয়োজন নেই।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যের জবাবে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারত সব সময় মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের ভূমিকাকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, আমরা জানি, আমরা কী করবো। আমরা একটা ভালো নির্বাচন করবো, যেটাতে মানুষ ভোট দিতে পারবে এবং যারা যাদেরকে ভোট দেবে তারাই নির্বাচিত হবে। যেটা এর আগে গত ১৫ বছরে ঘটেনি। তো এই জিনিসটা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আর বাকিটুকু তো কিছু থাকে যে, আমরা একটা কিছু বলি তারা আমাদের সঙ্গে একমত নাও হতে পারে। সেটা আমি কিছু মনে করি না।’’

ভারতকে নিয়ে হাসনাত আবুদল্লাহ’র বক্তব্যে ভারতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘প্রথমেই তো প্রশ্ন হচ্ছে যে, হাসনাত কি সরকারের অংশ? সে তো সরকারের অংশ না, কাজেই সরকারের বক্তব্য যদি হতো, সেটা হয় আমি বলতাম। আর নয়তো সরকারের যে সর্বোচ্চ অফিস সেখান থেকে বলতো। কাজেই এটা অনেকটাই অবান্তর।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ইস্যু নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা তাদের হাইকমিশনারকে ডেকেছি। এটার ব্যাপারে তাদেরকে আমরা যা কিছু বলেছি, সেটা তারা গ্রহণ করেনি বা তাদের কিছু দ্বিমত আছে। এ বিষয়ে একইভাবে আমাদের হাইকমিশনারকেও তারা ডেকেছে। এটা খুব অপ্রত্যাশিত না, সাধারণত এটা ঘটে একজনকে ডাকলে আরেকজনকে ডাকা হয়। এখানে বিষয়টা হচ্ছে— অন্য একটা ফেইজে প্রবেশ করলাম কিনা, এটা বলা খুব কঠিন। কারণ আমাদের তো বাস্তবতাকে মেনে নেওয়াই ভালো যে, আসলেতো এই সরকারের শুরু থেকে আজকে পর্যন্ত টানাপড়েন আছে। ভারতের সঙ্গে টানাপড়েন ছিল, এটা মেনে নিয়েই আমরা সবসময় বলে আসছি— আমরা একটা গুড ওয়ার্কিং রিলেশন চাই। তো আমরা চাইলে সেটা যে হবেই, এমন তো কোনও কথা নেই। তো এখন সম্পর্ক দুই পক্ষ থেকেই তো সেটাকে আগানোর চেষ্টা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমার মনে হয়, আমরা দুই পক্ষ মিলিয়ে হয়তো অতটা এগোতে পারিনি। যে কারণে টানাপড়েনটা রয়েই গেছে। ইদানিং কিছু কিছু বিষয়ে আমাদেরও আপত্তি আছে। তাদেরও নিজস্ব অবস্থান আছে। আমরা জানি, শেখ হাসিনা ভারতে বসে এর আগে একটা বিষয় ছিল যে, তিনি বক্তব্য দিতেন শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতে। কিন্তু আমরা পরবর্তীকালে দেখলাম যে, মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতেও তো তার বক্তব্য এসেছে এবং সেই বক্তব্যের মধ্যে প্রচুর প্রভোকেশন আছে। এটা আপনারাও দেখেছেন আমরাও দেখেছি। যিনি এখানে একটা কোর্ট থেকে শাস্তি প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি আমাদের পাশের দেশে বসে এখানে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এটা আমরা আপত্তি করবো, বা তাদের সহায়তা চাইবো যে, তাকে ফেরত পাঠান। এটা খুব অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু তারা সেদিকে যাননি।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

নির্বাচন নিয়ে ভারতের নসিহত অগ্রহণযোগ্য : পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

প্রকাশের সময় : ০৬:৩৪:৪৩ অপরাহ্ন, বুধবার, ১৭ ডিসেম্বর ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক : 

আসন্ন জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ভারত নসিহত করছে বলে মন্তব্য করে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারতের এই অযাচিত নসিহত অগ্রহণযোগ্য। আমরা বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু নির্বাচনের দিকে এগিয়ে যাচ্ছি। এর জন্য প্রতিবেশীদের থেকে কোনো নসিহত গ্রহণের প্রয়োজন নেই।

বুধবার (১৭ ডিসেম্বর) বিকেলে সচিবালয়ে নিজ কার্যালয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনা ভারতে বসে আগে সোশ্যাল মিডিয়ায় বক্তব্য দিতেন। এখন তিনি সংবাদমাধ্যমেও বক্তব্য দিচ্ছেন। তার বক্তব্যে যথেষ্ট উসকানি আছে। আদালতের মাধ্যমে দণ্ডপ্রাপ্ত হয়ে তিনি পাশের দেশে বসে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করবেন এটাতে তো আমরা আপত্তি জানাবই। আমরা তো তাকে ফেরত চাইবই। কিন্তু ভারত শেখ হাসিনাকে ফেরত পাঠাচ্ছে না। তার বক্তব্য বন্ধ করছে না। উল্টো সর্বশেষ তারা কিছু নসিহত করেছে।

পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, এই সরকার ডে ওয়ান থেকে স্পষ্টভাবে বলে আসছে, মানুষ যেন কেন্দ্রে গিয়ে ভোট দিতে পারে, সেই পরিবেশ সৃষ্টি করতে। যে পরিবেশ গত ১৫ বছর ছিল না। এখন ভারত আমাদেরকে এটা নিয়ে উপদেশ দিচ্ছে। এটা আমি সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য মনে করি— এই কারণে যে, তারা জানে এর আগে গত ১৫ বছর ধরে যে সরকার ছিল, যে সরকারের সঙ্গে তাদের অত্যন্ত মধুর সম্পর্ক ছিল, তখন কিন্তু এই যে নির্বাচনগুলো প্রহসণমূলক হয়েছে, তখন তারা একটু শব্দ উচ্চারণ করেনি। এখন সামনে একটা ভালো নির্বাচনের দিকে আমরা যাচ্ছি। এই মুহূর্তে আমাদেরকে নসিহত করার তো কোনও প্রয়োজন নেই।

মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে নরেন্দ্র মোদির মন্তব্যের জবাবে মো. তৌহিদ হোসেন বলেন, ভারত সব সময় মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের ভূমিকাকে খাটো করে দেখানোর চেষ্টা করে। এটা গ্রহণযোগ্য নয়।

তিনি বলেন, আমরা জানি, আমরা কী করবো। আমরা একটা ভালো নির্বাচন করবো, যেটাতে মানুষ ভোট দিতে পারবে এবং যারা যাদেরকে ভোট দেবে তারাই নির্বাচিত হবে। যেটা এর আগে গত ১৫ বছরে ঘটেনি। তো এই জিনিসটা আমাদের কাছে সম্পূর্ণ অগ্রহণযোগ্য। আর বাকিটুকু তো কিছু থাকে যে, আমরা একটা কিছু বলি তারা আমাদের সঙ্গে একমত নাও হতে পারে। সেটা আমি কিছু মনে করি না।’’

ভারতকে নিয়ে হাসনাত আবুদল্লাহ’র বক্তব্যে ভারতের প্রতিক্রিয়া নিয়ে পররাষ্ট্র উপদেষ্টা বলেন, ‘‘প্রথমেই তো প্রশ্ন হচ্ছে যে, হাসনাত কি সরকারের অংশ? সে তো সরকারের অংশ না, কাজেই সরকারের বক্তব্য যদি হতো, সেটা হয় আমি বলতাম। আর নয়তো সরকারের যে সর্বোচ্চ অফিস সেখান থেকে বলতো। কাজেই এটা অনেকটাই অবান্তর।

তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ইস্যু নিয়ে কথাবার্তা হচ্ছে। আমরা তাদের হাইকমিশনারকে ডেকেছি। এটার ব্যাপারে তাদেরকে আমরা যা কিছু বলেছি, সেটা তারা গ্রহণ করেনি বা তাদের কিছু দ্বিমত আছে। এ বিষয়ে একইভাবে আমাদের হাইকমিশনারকেও তারা ডেকেছে। এটা খুব অপ্রত্যাশিত না, সাধারণত এটা ঘটে একজনকে ডাকলে আরেকজনকে ডাকা হয়। এখানে বিষয়টা হচ্ছে— অন্য একটা ফেইজে প্রবেশ করলাম কিনা, এটা বলা খুব কঠিন। কারণ আমাদের তো বাস্তবতাকে মেনে নেওয়াই ভালো যে, আসলেতো এই সরকারের শুরু থেকে আজকে পর্যন্ত টানাপড়েন আছে। ভারতের সঙ্গে টানাপড়েন ছিল, এটা মেনে নিয়েই আমরা সবসময় বলে আসছি— আমরা একটা গুড ওয়ার্কিং রিলেশন চাই। তো আমরা চাইলে সেটা যে হবেই, এমন তো কোনও কথা নেই। তো এখন সম্পর্ক দুই পক্ষ থেকেই তো সেটাকে আগানোর চেষ্টা করতে হবে।

তিনি বলেন, আমার মনে হয়, আমরা দুই পক্ষ মিলিয়ে হয়তো অতটা এগোতে পারিনি। যে কারণে টানাপড়েনটা রয়েই গেছে। ইদানিং কিছু কিছু বিষয়ে আমাদেরও আপত্তি আছে। তাদেরও নিজস্ব অবস্থান আছে। আমরা জানি, শেখ হাসিনা ভারতে বসে এর আগে একটা বিষয় ছিল যে, তিনি বক্তব্য দিতেন শুধু সোশ্যাল মিডিয়াতে। কিন্তু আমরা পরবর্তীকালে দেখলাম যে, মেইনস্ট্রিম মিডিয়াতেও তো তার বক্তব্য এসেছে এবং সেই বক্তব্যের মধ্যে প্রচুর প্রভোকেশন আছে। এটা আপনারাও দেখেছেন আমরাও দেখেছি। যিনি এখানে একটা কোর্ট থেকে শাস্তি প্রাপ্ত হয়েছেন, তিনি আমাদের পাশের দেশে বসে এখানে অস্থিরতা সৃষ্টির চেষ্টা করছেন। এটা আমরা আপত্তি করবো, বা তাদের সহায়তা চাইবো যে, তাকে ফেরত পাঠান। এটা খুব অস্বাভাবিক কিছু না। কিন্তু তারা সেদিকে যাননি।