নিজস্ব প্রতিবেদক :
আগামী দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন নিয়ে জাতীয়-আন্তর্জাতিকভাবে অনেক চক্রান্ত হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বৃহস্পতিবার (২৮ ডিসেম্বর) বিকেলে রাজধানীর তেজগাঁওয়ে ঢাকা জেলা আওয়ামী লীগ ভবন থেকে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষ্যে ছয় জেলার জনসভায় ভার্চুয়ালি যোগ দিয়ে এসব কথা বলেন তিনি। ময়মনসিংহ বিভাগের জামালপুর ও শেরপুর জেলা; ঢাকা বিভাগের কিশোরগঞ্জ ও নরসিংদী জেলা এবং চট্টগ্রাম বিভাগের চাঁদপুর ও বান্দরবান জেলায় নির্বাচনী জনসভায় হয়।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, এবারের নির্বাচন নিয়ে জাতীয় ও আন্তর্জাতিকভাবে অনেক চক্রান্ত হচ্ছে। তাই নির্বাচনী পরিবেশটা যাতে সুন্দর থাকে, উৎসবমুখর ও প্রতিদ্বন্দিতাপূর্ণ হয়; সেই দিকে সবাই খেয়াল রাখবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি ছাড়া নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক নয় এমন কথায় বিশ্বাস করে না আওয়ামী লীগ। বিএনপি-জামায়াতের কাজই হলো মানুষ পোড়ানো আর নির্বাচন বানচাল করা। নির্বাচনে যাতে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে সেজন্য প্রার্থীদের নির্দেশ দিয়েছেন তিনি।
বিএনপিকে সন্ত্রাসী ও জামায়াত যুদ্ধাপরাধীর দল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, এরা নির্বাচনে না এলে নির্বাচনে অংশগ্রহণমূলক হবে না, এটা আমরা বিশ্বাস করি না। জনগণের সমাবেশ হলে, ভোটারদের আগমনে এবং ভোটারদের অংশগ্রহণে এখানে নির্বাচন হবে অংশগ্রহণমূলক আমরা সেটাই চাই। আর সন্ত্রাসী দল, ওরা নির্বাচনে বিশ্বাস করে না। ওদের দিয়ে দেশের কোনও কল্যাণ হবে না। দুর্নীতি করা ছাড়া কিছুই দিতে পারবে না।
তিনি বলেন, বিএনপি-জামায়াতের কাজই মানুষ পোড়ানো আর ধ্বংস করা। নির্বাচিত সরকার, গণতান্ত্রিক সরকার ধারাবাহিকভাবে ২০০৮ সাল থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত আছে বলেই দেশ উন্নত হয়েছে। আগে যারা ক্ষমতায় ছিল, তারা তো এক কদমও এগোতে পারেনি। তারা দেশকে পিছিয়ে দিয়েছিল।
দলের নেতাকর্মীদের উদ্দেশে তিনি বলেন, একটা অনুরোধ থাকবে, শান্তিপূর্ণ পরিবেশ আপনারা বজায় রাখবেন। যার যার ভোট সে চাইবেন। জনগণ যাকে খুশি তাকে ভোট দেবে।… জনগণ যাকে ভোট দেবে সেটাই মেনে নেবেন। সেইভাবেই এই নির্বাচন পরিচালিত হবে।
তিনি বলেন, ৭৫ এর পর অবৈধ ক্ষমতাকে বৈধ করার জন্য জনগণের অধিকার কেড়ে নেওয়ার সংস্কৃতি চালু করেছিলো জিয়াউর রহমান। তখন স্বাধীনতাবিরোধীদের সমন্বয়ে মুক্তিযুদ্ধের বিপরীত ধারায় চলতে থাকে দেশ।
তিনি আরো বলেন, ২০০১ সালে গ্যাস বিক্রির চক্রান্ত করে ক্ষমতায় এসে মানুষের ভাগ্য নিয়ে ছিনিমিনি খেলে বিএনপি। তারা এখনো নির্বাচনবিরোধী কাজ করে চলেছে। ট্রেনে আগুন দিয়ে মা-শিশুকে এমনভাবে পুড়িয়ে হত্যা সহ্য করা যায় না। এরা সবসময় নির্বাচন বানচালের তালে থাকে। কিন্তু নির্বাচিত সরকার ছাড়া দেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন করা সম্ভব হয় না, এটাই বাস্তবতা।
২০১৪ থেকে ২০১৮ সালে মানুষ ভোট দিয়ে আওয়ামী লীগকে সমর্থন করেছিল বলেই দেশের উন্নয়ন সম্ভব হচ্ছে বলে জানান শেখ হাসিনা।
শেখ হাসিনা বলেন, ভোটারদের অংশগ্রহণেই নির্বাচন অংশগ্রহণমূলক হয়ে যাবে। ওই সন্ত্রাসীদের দল ওরা তো নির্বাচনে বিশ্বাসই করে না। তাদের দ্বারা কোনো কল্যাণ হবে না দেশে। সেই জন্য উন্মুক্ত নির্বাচন করতে দিয়েছি। শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় রাখবেন। জনগণ যাকে চাইবে, তাকেই মেনে নিবেন সবাই।
এ সময় দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে আওয়ামী লীগের নির্বাচনী ইশতেহার সব প্রার্থীকে পড়ে নেওয়ার নির্দেশনা দেন দলের প্রধান। তিনি বলেন, নির্বাচনী ইশতেহার পড়ে নেবেন এবং সে অনুযায়ী ভোট চাইবেন।
দেশের বর্তমান অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, একমাত্র আওয়ামী লীগই ক্ষমতায় আসলে এই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে পারবে। নৌকা মার্কায় ভোট দেওয়ার জন্য আপনারা ঘরে ঘরে যাবেন, দুয়ারে দুয়ারে যাবেন, ভোট চাইবেন। নৌকা মার্কায় ভোট দিয়ে যেন আমাদের দেশ সেবা করার সুযোগ দেয়।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, সেটাকে ধরে রেখে দেশকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা বাস্তবায়ন করে সেই পথ ধরে উন্নত দেশ করব। এ কারণে দেশবাসীর কাছে আমার আহ্বান, নৌকা মার্কায় ভোট দিন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ২০০৮ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগ এককভাবে ২৩৩টি আসনে জয়লাভ করে। আর বিএনপি ও তার ২০ দলীয় জোট জামাতকে নিয়ে মাত্র ৩০টি সিট পায়। তারপর থেকে বিএনপির কাজ হলো নির্বাচনবিরোধী কার্যক্রম।
তিনি বলেন, ২০০১ সালের নির্বাচনে ক্ষমতায় আসার পর চারিদিকে বোমা হামলা, দুর্নীতি, লুটপাট, মানি লন্ডারিং এমন কোন কাজ নেই, যা তাড়া কনি। এ কারণে ২০০৮ সালের নির্বাচনে জনগণ তাদের প্রত্যাখ্যান করে। এরপর ২০১৩-২০১৪ সালে গিয়ে আবার অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করে। আবার সেই অগ্নিসন্ত্রাস শুরু করেছে, বোমাবাজি-ককটেল মারা শুরু করেছে। এরা নির্বাচন সবসময় বানচাল করার তালে থাকে। নির্বাচিত সরকার ছাড়া বাংলাদেশের মানুষের ভাগ্য পরিবর্তন হয়নি, এটা হলো বাস্তব কথা।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমরা যখন ২০২১ সালে বঙ্গবন্ধু জন্মশতবার্ষিকী ও স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী উদযাপন করি, তখনই বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পায়। উন্নয়নশীল দেশ হিসেবে ২০২৬ সাল থেকে আমাদের যাত্রা শুরু হবে। যাত্রা শুরু করতে গেলে আমাদের যে প্রস্তুতি দরকার, সেটা কিন্তু আমরা নিয়েছি, আওয়ামী লীগ সরকার নিয়েছে।
তিনি বলেন, আগামী নির্বাচন আমাদের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ গুরুত্বপূর্ণ এই কারণে যে, আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা পেয়েছি, সেটাকে ধরে রেখে দেশকে আমাদের এগিয়ে নিয়ে যেতে হবে, উন্নত সমৃদ্ধ বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। আমরা উন্নয়নশীল দেশের মর্যাদা বাস্তবায়ন করে সেই পথ ধরে উন্নত দেশ করব। এ কারণে দেশবাসীর কাছে আমার আহ্বান, নৌকা মার্কায় ভোট দিন।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এবার নির্বাচনে অনেক চক্রান্ত, ষড়যন্ত্র আছে। বিএনপি-জামায়াতের কাজই তো হচ্ছে মানুষ পোড়ানো আর নির্বাচন ধ্বংস করা। আজ দেশের অগ্রযাত্রা অব্যাহত রাখতে হবে, একমাত্র আওয়ামী লীগ পারবে ক্ষমতায় এলে সেই অগ্রযাত্রা ধরে রাখতে। তার জন্য নৌকা মার্কায় ভোটের জন্য আপনারা জনগণের ঘরে ঘরে যাবেন, ভোট চাইবেন।
শেখ হাসিনা বলেন, যার যার ভোট সে চাইবে, জনগণ যাকে খুশি, তাকে ভোট দেবে। এটা তো আমাদেরই স্লোগান, আমার ভোট আমি দেব, যাকে খুশি তাকে দেব- এই স্লোগান দিয়েই তো আমরা গণতন্ত্র ফিরিয়ে এনেছি, সংগ্রাম করেছি। কাজে সেই কথাটা মনে রেখে, যার যার ভোট সে চাক, জনগণ যাকে দেবে, সেটা মেনে নেবে, সেভাবেই এ নির্বাচন পরিচালিত হবে।