নিজস্ব প্রতিবেদক :
ব্রিটিশ বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে বৈঠক করার জানিয়েছেন। তিনি দাবি করেছেন, ভারতের ওই কূটনীতিক তাকে বৈঠকটি গোপন রাখতে বলেছেন। এজন্য এটি গোপন রাখা হয়েছে। এছাড়া জামায়াতে ইসলামী আগামী নির্বাচনে ঐক্য সরকার গঠনের কথা চিন্তা করছে বলেও উল্লেখ করেছেন তিনি।
বুধবার (৩১ ডিসেম্বর) আন্তর্জাতিক বার্তাসংস্থাকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ভারত ও পাকিস্তানের সঙ্গে সম্পর্কের বিষয়ে জামায়াতে ইসলামীর অবস্থান তুলে ধরেন শফিকুর রহমান। শেখ হাসিনার পতনের পর ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের সম্পর্কের টানাপোড়েন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে তিনি বলেন, শেখ হাসিনার ভারতে অবস্থান করাটা সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি বড় বাধা।
তিনি নিশ্চিত করেন যে, চলতি বছরের শুরুতে একজন ভারতীয় কূটনীতিকের সঙ্গে তার বৈঠক হয়েছে। তবে অন্য দেশের কূটনীতিকরা প্রকাশ্যে দেখা করলেও ভারতীয় প্রতিনিধি বৈঠকটি গোপনীয় রাখার অনুরোধ করেছিলেন বলে তিনি উল্লেখ করেন।
ডা. শফিকুর রহমান বলেন, আমাদের সবার জন্য উন্মুক্ত হতে হবে। পারস্পরিক সম্পর্কের উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই।
ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তাৎক্ষণিক কোনও মন্তব্য না করলেও ভারতীয় সরকারের একটি সূত্র রয়টার্সকে নিশ্চিত করেছে যে, তারা বাংলাদেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করছে।
পাকিস্তানের সঙ্গে ঘনিষ্ঠতার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি জানান, জামায়াত কোনও নির্দিষ্ট দেশের দিকে ঝুঁকে থাকতে আগ্রহী নয় বরং সব দেশের সঙ্গে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক চায়।
ঢাকার একটি আবাসিক এলাকায় নিজ কার্যালয়ে বসে দেওয়া সাক্ষাৎকারে শফিকুর রহমান বলেছেন,আগামী ফেব্রুয়ারিতে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া জাতীয় নির্বাচনে জয়ী হলে এককভাবে নয়, বরং বিভিন্ন দলের সমন্বয়ে একটি ‘জাতীয় ঐকমত্যের সরকার’ গঠনের ব্যাপারে আগ্রহী জামায়াতে ইসলামী। দীর্ঘ ১৭ বছর পর মূলধারার রাজনীতিতে ফেরা দলটি এরই মধ্যে বেশ কিছু রাজনৈতিক দলের সঙ্গে এ বিষয়ে আলোচনাও শুরু করেছে।
তিনি বলেন, ‘আমরা অন্তত পাঁচ বছরের জন্য একটি স্থিতিশীল রাষ্ট্র দেখতে চাই। দলগুলো যদি একমত হয়, তবে আমরা সবাই মিলে সরকার পরিচালনা করব।’
সাক্ষাৎকারে ডা. শফিকুর রহমান দুর্নীতিমুক্ত শাসনব্যবস্থার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেন। তিনি জানান, যেকোনও জাতীয় ঐকমত্যের সরকারের অভিন্ন লক্ষ্য হতে হবে দুর্নীতি প্রতিরোধ। নির্বাচনে নেতৃত্বের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘যে দল সবচেয়ে বেশি আসনে জয়ী হবে, প্রধানমন্ত্রী সেই দল থেকেই হওয়া উচিত।’ তবে জামায়াত এককভাবে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেলে তিনি নিজে দলের প্রার্থী হবেন কি না, সে সিদ্ধান্ত দলই নেবে বলে জানান তিনি।
সাম্প্রতিক সময়ে জেন-জি অর্থাৎ তরুণ প্রজন্মের একটি দলের (জাতীয় নাগরিক পার্টি-এনসিপি) সঙ্গে জামায়াতের জোট গঠন নিয়ে রাজনৈতিক মহলে বেশ আলোচনা তৈরি হয়েছে। জনমত জরিপগুলোর তথ্য উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ১৭ বছর পর নির্বাচনে ফিরে জামায়াত এবার দ্বিতীয় অবস্থানে থাকতে পারে এবং বড় জয় পেতে যাওয়া বিএনপির সঙ্গে তাদের ব্যবধান খুব বেশি হবে না। এর আগে ২০০১ থেকে ২০০৬ সাল পর্যন্ত বিএনপির নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকারের অংশীদার ছিল জামায়াত।
২০১৩ সালে আদালতের রায়ে নিবন্ধন হারানো ও ২০২৪ সালের আগস্টে ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের সিদ্ধান্তে পুনরায় বৈধতা পাওয়া দলটি বর্তমান রাষ্ট্রপতি মো. সাহাবুদ্দিনের বিষয়ে নিজেদের অস্বস্তির কথা জানিয়েছে। শফিকুর রহমান বলেন, আওয়ামী লীগের সমর্থনে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত এই রাষ্ট্রপতির সঙ্গে জামায়াত অন্তর্ভুক্ত কোনও সরকার স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করবে না।
উল্লেখ্য, রাষ্ট্রপতি সাহাবুদ্দিন এর আগেই রয়টার্সকে বলেছিলেন যে তিনি মেয়াদের মাঝপথেই পদত্যাগে রাজি আছেন। তবে বুধবার রয়টার্সকে তিনি জানান, বিষয়টি আর জটিল করতে চান না বলে কোনও মন্তব্য করবেন না।
নিজস্ব প্রতিবেদক 



















