নিজস্ব প্রতিবেদক :
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন সামনে রেখে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত প্রেস ব্রিফিংয়ে আবারও উঠে এসেছে বাংলাদেশ ইস্যু। আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে রাজনৈতিক বিরোধী দলসমূহের লাগাতার হরতাল-অবরোধের সময় সহিংসতা, বিশেষ করে যানবাহন ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগে বাংলাদেশের নির্বাচন বাধাগ্রস্ত হবে কিনা এমন বিষয় উঠে আসে প্রেস ব্রিফিংয়ে। বিষয়টি নিয়ে কথা বলেছেন যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্র দপ্তরের প্রধান মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার।
স্থানীয় সময় বৃহস্পতিবার (১৪ ডিসেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের নিয়মিত এক প্রেস ব্রিফিং অনুষ্ঠিত হয়।
ওই ব্রিফিংয়ে মিলারের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশে আগামী ৭ জানুয়ারির নির্বাচনকে ঘিরে যাত্রীবাহী বাস ও ট্রাকে অগ্নিসংযোগ, রেলের ট্র্যাক উপড়ে ফেলা, অবরোধের সময় ট্রেনে পেট্রোল বোমা নিক্ষেপ, বাস হেল্পারকে জীবন্ত পুড়িয়ে মারার ঘটনা ঘটছে। নির্বাচনের আগে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি এই ধরনের পদক্ষেপ বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের ভূমিকাকে দুর্বল বলে মনে করে?
জবাবে ম্যাথিউ মিলার জানান, যুক্তরাষ্ট্রের চাওয়া- অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম উপাদান হলো সহিংসতা ছাড়াই নির্বাচন পরিচালনা করা।
মিলার বলেন, আপনি আমাকে এই মঞ্চে (মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ব্রিফিংয়ে) ধারাবাহিকভাবে বলতে শুনেছেন যে, আমরা বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই। একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের অন্যতম উপাদান হলো সহিংসতা ছাড়াই নির্বাচন পরিচালনা করা।
এভাবে নির্বাচনকে বানচাল করতে জীবন্ত মানুষ পুড়িয়ে মারা হচ্ছে। এসব কর্মকাণ্ড বাংলাদেশে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনকে বাধাগ্রস্ত করে বলে যুক্তরাষ্ট্র মনে করে কিনা।
তিনি বলেন, আপনি শুনে থাকবেন এই মঞ্চে দাঁড়িয়ে আমি অব্যাহতভাবে বলে আসছি যে, বাংলাদেশে একটি অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন চাই আমরা। অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচনের একটি অন্যতম উপাদান হলো সহিংসতামুক্ত নির্বাচন।
এর আগে বুধবার মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলারকে জিজ্ঞেস করা হয়, ৭ জানুয়ারির নির্বাচনের আগে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপের কোনো খবর আছে কিনা। জবাবে তিনি বলেন, নতুন কোনো নিষেধাজ্ঞার খবর তার কাছে নেই। তা ছাড়া আরোপ করার আগে নিষেধাজ্ঞার বিষয় প্রকাশ না করা যুক্তরাষ্ট্রের দীর্ঘদিনের চর্চা।
ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস একটি অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে। সেখানে দাবি করা হয়, বাংলাদেশে আসন্ন ‘ডামি’ নির্বাচন সামনে রেখে শেখ হাসিনার সরকার যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশের বিরোধী দলগুলোর বিরুদ্ধে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (এআই) ব্যবহার করে ভুয়া খবর ও ভুয়া ভিডিওসহ সুপরিকল্পিত প্রোপাগান্ডা বা প্রচারণা চালাচ্ছে। এ বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানতে চাওয়া হয়।
জবাবে পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘বাংলাদেশের নির্বাচনি প্রচারণায় ডিপ ফেক প্রযুক্তি ব্যবহারের উদ্বেগজনক খবর আমাদের নজরে এসেছে। গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে নিয়ন্ত্রণ ও প্রভাবিত করতে বিশ্বজুড়ে এআই ব্যবহারের উদ্বেগজনক প্রবণতার অংশ এটি।’
অপর এক প্রশ্নে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্রের কাছে জানতে চাওয়া হয়, বাংলাদেশে মৌলিক অধিকার রক্ষায় একযোগে কাজ করতে বিশ্ব সম্প্রদায়কে আহ্বান জানিয়েছে ছয়টি আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংস্থা। অন্যদিকে বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও তার পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী দাবি করছেন, তারা যুক্তরাষ্ট্রকেও ‘ম্যানেজ’ করতে পারবেন। সরকার গঠনের পর যুক্তরাষ্ট্র সরকারকে সমর্থন করবে বলে উল্লেখ করেন তিনি (পররাষ্ট্রমন্ত্রী)। সে বিষয়ে আপনার প্রতিক্রিয়া কী?
জবাবে ম্যাথিউ মিলার বলেন, ‘হাজার হাজার বিরোধীদলীয় নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও কারাগারে নির্যাতনের প্রতিবেদনে আমরা গভীরভাবে উদ্বিগ্ন। আমরা সব পক্ষকে সংযম প্রদর্শন ও সহিংসতা এড়াতে আহ্বান জানাই। আমরা বাংলাদেশ সরকারকে এমন পরিস্থিতি তৈরি করতে সব অংশীদারের সঙ্গে কাজ করার আহ্বান জানাই, যাতে সবাই সহিংসতা বা প্রতিশোধের ভয় ছাড়াই প্রাক-নির্বাচন এবং নির্বাচনি পরিবেশে অবাধে অংশগ্রহণ করতে পারে।’