নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, নির্বাচনের আগেই বিএনপি নেতাকর্মীদের সাজা দিতে চাইছে সরকার। এজন্য তারা তালিকা করছে।
বুধবার (৯ আগস্ট) দুপুরে নয়াপল্টনস্থ বিএনপি কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন তিনি। এ সময় সরকারের পদত্যাগের দাবিতে নতুন কর্মসূচি ঘোষণা করা হয়।
তিনি বলেন, সরকার বিএনপির চলমান আন্দোলন দমন করতে মিথ্যা মামলা, গ্রেফতার ও নেতাদের বিরুদ্ধে করা মামলার দ্রুত রায় দেওয়ার চিন্তা করছে। তবে সরকার বিএনপির আন্দোলন দমন করতে পারবে না। আন্দোলনকে দমন করার সুযোগ নেই। কারণ ইতোমধ্যে এটা জনগণের দাবিতে পরিণত হয়েছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার গত ১৫ বছর ধরে এমন দমন পীড়ন চালাচ্ছে। আমাদের ৬ শতাধিক নেতাকর্মীকে গুম করেছে। সহস্রাধিক নেতাকর্মীকে হত্যা করেছে। অনেকের বিরুদ্ধে মামলা দিয়েছে, হাজার হাজার নেতাকর্মীকে গ্রেফতার করেছে। বিচার বিভাগকে ভয়াবহভাবে রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করে অনেককে সাজাও দিয়েছে। এখন তালিকা করে দ্রুত নেতাদের মামলার রায় দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে শোনা যাচ্ছে। কারণ তারা জানে দেশের জনগণ যদি সত্যিকার অর্থে ভোট দিতে পারে তাহলে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, গত ২৮ জুলাইয়ের মহাসমাবেশ থেকে দেশের জনগণ এ সরকারের পদত্যাগের দাবি জানিয়েছে। তারা গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার চান। তাদের ভোটের অধিকার ফিরে পেতে চান। আমাদের নিয়মতান্ত্রিক কর্মসূচি হিসেবে পরের দিন ঢাকায় অবস্থান কর্মসূচি ঘোষণা করি। সেদিন আওয়ামী সন্ত্রাসী ও পুলিশ দিয়ে আমাদের ওপর হামলা করেছে। অনেক নেতাকর্মীকে গ্রেফতার ও আহত করেছে এই সন্ত্রাসীরা। এমনি আমাদের সিনিয়র নেতা বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়কে মাটিতে ফেলে পিটিয়েছে পুলিশ, তা পুরো দেশবাসী দেখেছেন।
তিনি অভিযোগ করেন, আওয়ামী লীগ দ্রুত বিচার করে আমাদের সাজা দিয়ে তারা এককভাবে নির্বাচন করতে চায়। কেন আওয়ামী লীগ এটা করছে? আওয়ামী লীগ জানে যদি তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে নির্বাচন হয়। তাদের কোনো অস্তিত্ব থাকবে না। নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে। তাই আওয়ামী লীগ অস্থিরতা তৈরি করছে। জনগণ যেন ভোট দিতে না পারে। যেমন- তারা দু’টি নির্বাচন করেছে ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে জোর করে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, আওয়ামী লীগ উদ্দেশ্যপূর্ণভাবে শান্তি সমাবেশের নামে আমাদের প্রত্যেকটি কর্মসূচিতে বাধা দিয়েছে। গণতন্ত্রের ন্যূনতম নর্মস বা রীতি আছে। তাও তারা রাখেনি। আমরা যদি তারিখ পরিবর্তন করি তারাও তারিখ পরিবর্তন করেছে। কতটা ভয় পেলে এ ধরনের কাজ করে। আওয়ামী লীগ অত্যন্ত ভীত-সন্ত্রস্ত্র একটি দল। সত্যিকার অর্থে মানুষের গণতান্ত্রিক অধিকার যদি প্রতিষ্ঠিত হয়ে যায়, তাহলে এরা নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
তিনি বলেন, নির্বাচনের আগেই বিএনপি নেতাকর্মীদের সাজা দিয়ে একতরফা নির্বাচন করতে চাইছে সরকার। ফাঁকা মাঠে গোল দিয়ে তারা নির্বাচন ব্যবস্থাকে নিজের আয়ত্তে নিতে চাইছে অতীতের মতো। কারণ তারা জানে বিএনপি নির্বাচনে অংশ নিলে নিশ্চিত পরাজয় হবে তাদের।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার পতনের এক দফা দাবিতে নতুন কর্মসূচির অংশ হিসেবে আগামী শুক্রবার বাদ জুমা ঢাকা দক্ষিণ ও উত্তর বিএনপির পক্ষ থেকে গণমিছিল করা হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ যেভাবে নির্বাচন পার করার জন্য পায়তারা করে যাচ্ছে। সামনে নির্বাচনে যদি এই ফ্যাসিস্ট আওয়ামী লীগ সরকার ক্ষমতায় থাকে, এদেশের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে যাবে। গণতন্ত্র তো বিপন্ন হয়েছেই, দেশের অস্তিত্বও বিপন্ন হয়ে যাবে।
ফখরুল যোগ করেন, আওয়ামী লীগ ভালো করেই জানে, যদি দেশে একটা অবাধ সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয় এবং বিরোধী দলগুলো অংশ নিতে পারে, জনগণ যদি ভোট দিতে পারে, তবে আওয়ামী লীগ নিশ্চিহ্ন হয়ে যাবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, আওয়ামী লীগ আজ দেশে অস্থিরতা তৈরি করছে যেন জনগণ ভোট দিতে না পারে। দুটো নির্বাচন তারা করেছে, সেখানে ফাঁকা মাঠে গোল করে তারা ক্ষমতা দখল করে নিয়েছে। একটা বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায়, আরেকটি ভোটের দিনের আগের রাতেই ভোট নিয়ে তারা নির্বাচন করেছে।
তিনি আরও বলেন, সরকার যদি এভাবেই ক্ষমতায় থাকে এবং আবার ক্ষমতায় আসে তবে দেশের অস্তিত্বও বিপন্ন হবে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বেগম জিয়াকে অন্যায়ভাবে গৃহবন্দি করে রাখা হয়েছে। তিনি চরম অসুস্থ, বিকেলে তাকে হাসপাতালে নেয়া হবে চিকিৎসার জন্য। যেখানে দেশে হাজার হাজার কোটি টাকা লুট হচ্ছে, সেখানে মাত্র ২ কোটি টাকার বানোয়াট মামলায় তাকে গৃহে অন্তরীণ করে রাখা হয়েছে।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার জালিয়াতির মধ্য দিয়ে ক্ষমতায় এসে তা চিরস্থায়ী করতে পরিকল্পিতভাবে সংবিধান কাটছাঁট করে নিজেদের মতো করে নিয়েছে। সরকার গণতন্ত্রের সব প্রতিষ্ঠান ধ্বংস করে দিয়েছে। দুর্নীতির মাধ্যমে দেশের অর্থনীতিকে শেষ করে দিয়েছে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানকে দলীয় প্রতিষ্ঠান বানিয়ে ফেলেছে, বিচারব্যবস্থাকে ধ্বংস করে দিয়েছে।
ফখরুল অভিযোগ করে বলেন, সরকার অর্থনীতি, স্বাস্থ্য, চিকিৎসাসহ সব খাত ধ্বংস করেছে। গণতন্ত্রকে ধ্বংস করেছে। ফলে যে স্বপ্ন নিয়ে ১৯৭১ সালে আমরা যুদ্ধ করেছি সেই স্বপ্ন ধুলিস্যাত করেছে বর্তমান সরকার। সরকারের একটাই লক্ষ্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থা কায়েম করা।
সরকার একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের আকাঙক্ষা নষ্ট করেছে দাবি করে বিএনপি মহাসচিব বলেন, আমরা এই সরকারের হাত থেকে দেশকে রক্ষার জন্য দেশপ্রেমিক মানুষ, রাজনৈতিক দলকে সঙ্গে নিয়ে যুগপৎ আন্দোলন করছি। আমাদের শান্তিপূর্ণ কর্মসূচিতে সরকারের বাহিনী, সরকারি দলের লোকজন হামলা করছে। অনেককে আহত করেছে, গ্রেফতার করেছে। কিন্তু এসব করে আন্দোলনকে দমন করার সুযোগ নেই।
গত দুই সংসদ নির্বাচনের কথা তুলে ধরে ফখরুল বলেন, একবার ভোট ছাড়া ক্ষমতায় এসেছে। আরেকবার আগেররাতে ভোট করে ক্ষমতায় এসেছে। এখন ভোটকেন্দ্রে ৫ ভাগ মানুষও যায় না। আবারও একইরকম নির্বাচন করতে চায় তারা। যদি আবার আওয়ামী লীগ আগের মতো নির্বাচন করে ক্ষমতায় আসে তাহলে গণতন্ত্র তো শেষ, তখন দেশ বিপন্ন হয়ে যাবে।
সংবাদ সম্মেলনে আরও উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস, গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, আমির খসরু মাহমুদ চৌধুরী, ভাইস চেয়ারম্যান বরকত উল্লাহ বুলু, বিএনপি চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম, দলের প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, স্বেচ্ছাসেবক বিষয়ক সম্পাদক মীর সরাফত আলী সপু প্রমুখ।