Dhaka বুধবার, ১৩ অগাস্ট ২০২৫, ২৯ শ্রাবণ ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নির্বাচনকে সাজানো আখ্যা দিলেন তৃণমূল বিএনপির তৈমূর

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘সাজানো’ বলে আখ্যা দিলেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। জানালেন, তৃণমূল বিএনপি রাজনীতি করবে, তবে আর কখনো সাজানো নির্বাচনে যাবে না।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার প্রতিকার চাইতে দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান তিনি। সেখানে গিয়ে অভিযোগ জমা দেন তিনি।

অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, নির্বাচন হয়েছে সরকার বনাম সরকার। দেশ একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে। তৃণমূল বিএনপি রাজনীতি করবে। আমরা সাজানো নির্বাচনে আর যাব না। তৃণমূল বিএনপির সব প্রার্থী ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করবো। এই নির্বাচন হয়েছে গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট। নৌকাও গভর্নমেন্ট, স্বতন্ত্রও গভর্নমেন্ট। মনে হচ্ছে, দেশটা একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। তবে তৃণমূল বিএনপি রাজনীতি করবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপির মনোনয়নে অংশ নেওয়া সকল প্রার্থী ঢাকায় আসবেন জানিয়ে তৈমুর বলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট দেওয়া হবে।

তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের জন্য দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি সম্ভব নয়। আগামী প্রজন্মও পারবে না। তৃতীয় প্রজন্ম হয়তো পারবে। সরকার ভাবে ক্ষমতা ছাড়লে আমাকে জেলে যেতে হবে। সেকারণেই ওরা নির্বাচন কুক্ষিগত করে। নির্বাচন কমিশনের কোনো ক্ষমতা নাই। প্রশাসনও সরকারের আজ্ঞাবহ। সিইসির সচিবের বক্তব্য শুনেছেন, তিনি বলেছেন ডিসিদের কাছে মেসেজ চলে গেছে। সে অনুযায়ী রেজাল্ট হবে।

তৈমুর আলম বলেন, আমরা সবসময় রাজপথে ছিলাম। বাকি জীবনও আমাকে রাজপথেই থাকতে হবে। যখন চোখের সামনে দেখলাম এই ব্যারিস্টার সুমনও (হবিগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জয়ী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন) বলেছেন সরকার বনাম সরকার নির্বাচন। এটা তাঁদের মুখেরই কথা।

ভূমিদস্যুরা তার বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রূপগঞ্জে সকল ভূমিদস্যু আমার বিরুদ্ধে একাট্টা ছিল। ভূমিদস্যুরা মনে করেছে, তৈমুর আলম খন্দকার আসলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। কারণ ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে শুরু থেকে আমি বিরোধিতা করে এসেছি। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, যাদের জমিজমা ভূমিদস্যুরা নিয়ে গেছে তারাও ভয়ে এগিয়ে আসেনি।’

চনপাড়া এলাকায় বহু মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেও সুফল পাননি উল্লেখ করে তৈমুর আলম বলেন, ‘রূপগঞ্জের চনপাড়া একটা সেনসেটিভ এলাকা। ফারদিন হত্যার পরে ডিবি পুলিশের বিভিন্ন তদন্তে পাওয়া গেছে, মাদকের প্রধান আখড়া হলো চনপাড়া। সেখানে দুই শতাধিক স্পটে মাদক বিক্রি হয়। সেখানে একটা সন্ত্রাসী বাহিনীও গড়ে উঠেছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে ওই এলাকার শমসের। যিনি এলাকায় শমসের ডাকাত হিসেবে পরিচিত। আরেকজন রয়েছে রিতা মেম্বার। এসব বিষয়ে আমরা বারবার বলে আসছিলাম নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলকে। এসব লোক যারা হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বহু মামলার আসামি, তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হোক। কিন্তু আমরা এর কোনও সুফল পাইনি।’

তার পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করায় জাকিয়া বেগম নামে এক নারীর বাড়িতে লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের দিন বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হলে শমসের বাহিনী আমার লোকের বাড়িঘর লুট করে সব কিছু নিয়ে যায়। জাকিয়া বেগম আমার নির্বাচনি প্রচারণার কাজ করায় তাকে টার্গেট করে এই কাজগুলো করা হচ্ছে। পরিবারটা আজকে আমার নির্বাচন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার, তাই পুলিশ সুপারের কাছে এসেছি। মানবিক কারণে আমি এই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। আর পুলিশ সুপার আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, পরিবারটি নির্বিঘ্নে চনপাড়ায় বসবাস করতে পারবে। এই ঘটনায় এজাহার করা হয়েছে। ওই এজাহারে শমসের ও রিতাকে আসামি করা হয়েছে।’

এ দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি ইউনিয়নে প্রচারণা করতে গিয়ে দেখেছি নারীরা বলছে, টাকা দিয়ে যান, টাকা দিলে ভোট দেবো। এই দেশে এই সময়ে আমি মনে করি, সুষ্ঠু রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আগামী প্রজন্মও পারবে না। তৃতীয় প্রজন্ম যদি চেষ্টা করে তাহলে ঠিক করতে পারবে। যারা সরকারে আছে তারা মনে করে, হেরে গেলে জেলে যেতে হবে। এ দেশের সিস্টেম এরকমই হয়েছে।’

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

ঘোষণাপত্রে ছাড় দিয়েছি, জুলাই সনদে একটুও ছাড় নয় : নাহিদ ইসলাম

নির্বাচনকে সাজানো আখ্যা দিলেন তৃণমূল বিএনপির তৈমূর

প্রকাশের সময় : ০৭:৫৪:০২ অপরাহ্ন, বুধবার, ১০ জানুয়ারী ২০২৪

নারায়ণগঞ্জ জেলা প্রতিনিধি : 

দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনকে ‘সাজানো’ বলে আখ্যা দিলেন তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার। জানালেন, তৃণমূল বিএনপি রাজনীতি করবে, তবে আর কখনো সাজানো নির্বাচনে যাবে না।

বুধবার (১০ জানুয়ারি) দুপুরে নারায়ণগঞ্জে সাংবাদিকদের এ কথা জানান তিনি। নির্বাচন পরবর্তী সহিংসতার প্রতিকার চাইতে দুপুরে নারায়ণগঞ্জ জেলা পুলিশ সুপারের কার্যালয়ে যান তিনি। সেখানে গিয়ে অভিযোগ জমা দেন তিনি।

অ্যাডভোকেট তৈমূর আলম খন্দকার বলেন, নির্বাচন হয়েছে সরকার বনাম সরকার। দেশ একদলীয় শাসনের দিকে যাচ্ছে। তৃণমূল বিএনপি রাজনীতি করবে। আমরা সাজানো নির্বাচনে আর যাব না। তৃণমূল বিএনপির সব প্রার্থী ও চেয়ারম্যানের সঙ্গে কথা বলে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে রিপোর্ট করবো। এই নির্বাচন হয়েছে গভর্নমেন্ট টু গভর্নমেন্ট। নৌকাও গভর্নমেন্ট, স্বতন্ত্রও গভর্নমেন্ট। মনে হচ্ছে, দেশটা একদলীয় শাসনব্যবস্থার দিকে এগোচ্ছে। তবে তৃণমূল বিএনপি রাজনীতি করবে।

দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে তৃণমূল বিএনপির মনোনয়নে অংশ নেওয়া সকল প্রার্থী ঢাকায় আসবেন জানিয়ে তৈমুর বলেন, তাঁদের সঙ্গে কথা বলে প্রধানমন্ত্রীকে রিপোর্ট দেওয়া হবে।

তৃণমূল বিএনপির মহাসচিব বলেন, আমাদের জন্য দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি সম্ভব নয়। আগামী প্রজন্মও পারবে না। তৃতীয় প্রজন্ম হয়তো পারবে। সরকার ভাবে ক্ষমতা ছাড়লে আমাকে জেলে যেতে হবে। সেকারণেই ওরা নির্বাচন কুক্ষিগত করে। নির্বাচন কমিশনের কোনো ক্ষমতা নাই। প্রশাসনও সরকারের আজ্ঞাবহ। সিইসির সচিবের বক্তব্য শুনেছেন, তিনি বলেছেন ডিসিদের কাছে মেসেজ চলে গেছে। সে অনুযায়ী রেজাল্ট হবে।

তৈমুর আলম বলেন, আমরা সবসময় রাজপথে ছিলাম। বাকি জীবনও আমাকে রাজপথেই থাকতে হবে। যখন চোখের সামনে দেখলাম এই ব্যারিস্টার সুমনও (হবিগঞ্জ-৪ আসনে স্বতন্ত্র নির্বাচন করে জয়ী সৈয়দ সায়েদুল হক সুমন) বলেছেন সরকার বনাম সরকার নির্বাচন। এটা তাঁদের মুখেরই কথা।

ভূমিদস্যুরা তার বিরুদ্ধে একাট্টা হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘রূপগঞ্জে সকল ভূমিদস্যু আমার বিরুদ্ধে একাট্টা ছিল। ভূমিদস্যুরা মনে করেছে, তৈমুর আলম খন্দকার আসলে তাকে নিয়ন্ত্রণ করতে পারবো না। কারণ ভূমিদস্যুদের বিরুদ্ধে শুরু থেকে আমি বিরোধিতা করে এসেছি। তবে দুঃখজনক বিষয় হলো, যাদের জমিজমা ভূমিদস্যুরা নিয়ে গেছে তারাও ভয়ে এগিয়ে আসেনি।’

চনপাড়া এলাকায় বহু মামলার আসামিদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার কথা বলেও সুফল পাননি উল্লেখ করে তৈমুর আলম বলেন, ‘রূপগঞ্জের চনপাড়া একটা সেনসেটিভ এলাকা। ফারদিন হত্যার পরে ডিবি পুলিশের বিভিন্ন তদন্তে পাওয়া গেছে, মাদকের প্রধান আখড়া হলো চনপাড়া। সেখানে দুই শতাধিক স্পটে মাদক বিক্রি হয়। সেখানে একটা সন্ত্রাসী বাহিনীও গড়ে উঠেছে। যার নেতৃত্ব দিচ্ছে ওই এলাকার শমসের। যিনি এলাকায় শমসের ডাকাত হিসেবে পরিচিত। আরেকজন রয়েছে রিতা মেম্বার। এসব বিষয়ে আমরা বারবার বলে আসছিলাম নির্বাচন কমিশনসহ প্রশাসনের বিভিন্ন মহলকে। এসব লোক যারা হত্যা, ধর্ষণ, ডাকাতি, চাঁদাবাজিসহ বহু মামলার আসামি, তাদের আইনের আওতায় নেওয়া হোক। কিন্তু আমরা এর কোনও সুফল পাইনি।’

তার পক্ষে নির্বাচনি প্রচারণায় অংশগ্রহণ করায় জাকিয়া বেগম নামে এক নারীর বাড়িতে লুটপাট করা হয়েছে বলে অভিযোগ করেন তৈমুর আলম খন্দকার। তিনি বলেন, ‘নির্বাচনের দিন বেসরকারিভাবে ফলাফল ঘোষণা করা হলে শমসের বাহিনী আমার লোকের বাড়িঘর লুট করে সব কিছু নিয়ে যায়। জাকিয়া বেগম আমার নির্বাচনি প্রচারণার কাজ করায় তাকে টার্গেট করে এই কাজগুলো করা হচ্ছে। পরিবারটা আজকে আমার নির্বাচন করতে গিয়ে হয়রানির শিকার, তাই পুলিশ সুপারের কাছে এসেছি। মানবিক কারণে আমি এই পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছি। আর পুলিশ সুপার আমাকে আশ্বস্ত করেছেন, পরিবারটি নির্বিঘ্নে চনপাড়ায় বসবাস করতে পারবে। এই ঘটনায় এজাহার করা হয়েছে। ওই এজাহারে শমসের ও রিতাকে আসামি করা হয়েছে।’

এ দেশে সুষ্ঠু রাজনীতি করা সম্ভব নয় উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘একটি ইউনিয়নে প্রচারণা করতে গিয়ে দেখেছি নারীরা বলছে, টাকা দিয়ে যান, টাকা দিলে ভোট দেবো। এই দেশে এই সময়ে আমি মনে করি, সুষ্ঠু রাজনীতি করা সম্ভব নয়। আগামী প্রজন্মও পারবে না। তৃতীয় প্রজন্ম যদি চেষ্টা করে তাহলে ঠিক করতে পারবে। যারা সরকারে আছে তারা মনে করে, হেরে গেলে জেলে যেতে হবে। এ দেশের সিস্টেম এরকমই হয়েছে।’