নিজস্ব প্রতিবেদক :
বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেন, সামনের নির্বাচনকে লক্ষ্য করে বিদেশী ও দেশের মানুষের কাছে ভালো সাজার চেষ্টা করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ।
মঙ্গলবার (৮ আগস্ট) দুপুরে গুলশান বিএনপি চেয়ারপারসনের গুলশান রাজনৈতিক কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।
সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে মির্জা ফখরুল বলেন, ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন একবারে কালো আইন, আমরা এই আইনটা বাতিলের জন্য সেমিনার সভা করেছি। আমরা এই আইনটাই সম্পূর্ণ বাতিল চাই। এটি দেশের মানুষের বিরুদ্ধে আইন, গণতন্ত্রের বিরুদ্ধে আইন, সাংবাদিকদের মুখ আটকে রাখার আইন।
তিনি বলেন, আওয়ামী লীগ মানুষকে বোকা ভাবে, সেজন্য তারা আইন বাতিল না করে শুধু নাম পরিবর্তন করে উপস্থাপন করেছে। নাম দিয়েছে সাইবার আইন। এটা বিদেশী ও মানুষের সাথে প্রতারণা করার জন্য।
তিনি আরো বলেন, আওয়ামী লীগের মূল উদ্দেশ্য একদলীয় শাসন ব্যবস্থা করা, শুধু মোড়ক ব্যবহার করে ভিতরে সব ঠিক বাকশালের কায়েম করে যাচ্ছে।
বিএনপি মহাসচিব বলেন, সামনের নির্বাচনকে লক্ষ্য করে বিদেশী ও দেশের মানুষের কাছে ভালো সাজার চেষ্টা করে যাচ্ছে আওয়ামী লীগ। তাদের চরিত্রই এমন। এদের বিরুদ্ধে আন্তর্জাতিক চাপ আছে। কিন্তু বর্তমান সরকারের অধীনে কোনো সুষ্ঠু নির্বাচন সম্ভব নয়। তাই সরকারকে পদত্যাগ করে নির্দলীয় সরকারের অধীনে নির্বাচন দিতে হবে। নির্বাচনে আমাদের যারা প্রার্থী হবেন তাদের জেল দিয়ে যাচ্ছে। দ্রুত বিচার করে রায় দেয়া হচ্ছে।
তিনি বলেন, আমান উল্লাহ আমান ও ইকবাল হাসান মাহমুদ টুকুসহ বিএনপির অনেক নেতাদের বিরুদ্ধে সাজাই প্রমাণ করে সরকার বেআইনি ও ফরমায়েশি রায়ের মাধ্যমে তাদের নীলনকশা বাস্তবায়ন করছে।
দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠকের সিদ্ধান্ত তুলে ধরে মির্জা ফখরুল বলেন, ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও তার স্ত্রী ডা. জুবাইদা রহমানের বিরুদ্ধে রায়ের নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করা হয়েছে বৈঠকে। অবৈধ শাসন ব্যবস্থা চিরস্থায়ী করতে সরকার বিচার বিভাগকে ব্যবহার করছে। একইসঙ্গে প্রশাসন, পুলিশ, দুদকসহ রাষ্ট্রযন্ত্রকে ব্যবহার করছে।
পুরোপুরি এই আইন বাতিলের দাবি জানিয়ে বিএনপি মহাসচিব বলেন, সরকার দেশের গণতান্ত্রিক আন্দোলন দমাতে সবচেয়ে বড় হাতিয়ার হিসাবে ব্যবহার করছে আদালতকে। আওয়ামী লীগ একতরফা নির্বাচন করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। শিগগিরই এক দফা দাবি আদায়ে যুগপৎ আন্দোলনের ঘোষণা আসবে।
ডিজিটাল সিকিউরিটি আইনের বদলে সাইবার নিরাপত্তা আইন প্রণয়নে অংশীদারদের সঙ্গে আলোচনা বিষয়ে জানতে চাইলে বিএনপির মহাসচিব বলেন, আলোচনা করে আইন প্রণয়ন করবে এটা আওয়ামী লীগের কাছ থেকে আশা করি না। আওয়ামী লীগের চরিত্র আমরা জানি। অনেকে মনে করেন আওয়ামী লীগ ভালো কাজ করবে, কিন্তু গণতন্ত্র ও মতপ্রকাশের ক্ষেত্রে সব সময় নিয়ন্ত্রণ করেছে। এটা নতুন নয়, ১৯৭৫ সাল থেকে এই কাজ করে আসছে তারা।
সাবেক এই মন্ত্রী বলেন, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চাপের কারণে এখন তারা বাকশাল কিংবা একদলীয় শাসন বলতে পারছে না। তাই ওপরে মোড়কটা পরিবর্তন করলেও ভেতরে ঘটনা তাই ঘটছে।
গণভবনে আওয়ামী লীগের তৃণমূলের নেতাকর্মীদের সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠকে প্রসঙ্গে মির্জা ফখরুল বলেন, বিএনপি যেন নির্বাচন করতে না পারে তার সব রকমের ব্যবস্থা সরকার করছে। লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড না থাকায় বিএনপির শীর্ষ নেতাদের গ্রেপ্তার করে আটকে রাখা, রাজনৈতিক দল হিসেবে বিএনপির যেসব অধিকার রয়েছে তা থেকে বিরত রাখা। সবচেয়ে বড় বিষয় হচ্ছে আগামী নির্বাচনকে তাদের আবার ক্ষমতায় যাওয়ার পথকে প্রশস্ত করতে রাষ্ট্রকে ব্যবহার করছে।
নেতাকর্মীদের হাইকোর্ট থেকে জামিন এবং আবার জেলগেট থেকে গ্রেফতার প্রসঙ্গ টেনে তিনি বলেন, হাইকোর্টের দুই বিচারক বলেছেন তারা কতটা অসহায়। তাদের কথা কেউ শোনে না। তারা আদেশ দেন গ্রেফতার করা যাবে না। কিন্তু গ্রেপ্তার তো করেই, সঙ্গে রিমান্ডেও পাঠায়।
মির্জা ফখরুল বলেন, বর্তমান অবৈধ সরকার অনৈতিক, অসাংবিধানিক, বেআইনি ফরমায়েশি রায় দিয়ে বিরোধী রাজনীতিকে নির্মূল করার নীল নকশা বাস্তবায়ন করছে।