নিজস্ব প্রতিবেদক :
নির্বাচনকালীন সরকার ছোট করার সাংবিধানিক কোনো বাধ্যবাধকতা নেই বলে জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক এবং তথ্য ও সম্প্রচারমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ। তিনি বলেছেন, নির্বাচনকালীন মন্ত্রিসভা ছোট হবে কি না, সেটির এখতিয়ার প্রধানমন্ত্রীর।
রোববার (৮ অক্টোবর) দুপুরে তথ্য মন্ত্রণালয়রে সভাকক্ষে ১৯৭১ সালে তৎকালীন পাকিস্তান সরকার প্রকাশিত ‘পূর্ব পাকিস্তান সংকট শ্বেতপত্র’ পুনর্মুদ্রণের মোড়ক উন্মোচন শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে তিনি এ কথা বলেন।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, নির্বাচনকালীন সরকার ছোট করার কোনো বাধ্যবাধকতা সংবিধান অনুযায়ী নেই। কিন্তু প্রধানমন্ত্রী যে কোনো সিদ্ধান্তই নিতে পারেন। ২০১৮ সালের নির্বাচনের আগে কোনো নির্বাচনকালীন সরকার ছোট করা হয়নি। যে সরকার ছিল সে সরকারই দায়িত্ব পালন করেছে।
বিএনপিকে ছাড়া নির্বাচন করলে সেটি গ্রহণযোগ্য হবে কি না- জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা তো কাউকে ছাড়া নির্বাচন করতে চাই না। আমরা সবাইকে নিয়েই নির্বাচন করতে চাই। আমরা চাই বিএনপি নির্বাচনে আসুক এবং অংশগ্রহণ করুক, প্রতিদ্বন্দ্বিতা করুক। বিএনপি যে বলছে তাদের প্রচণ্ড জনপ্রিয়তা, তারা নির্বাচনে এসে সেটি একটু যাচাই-বাছাই করে দেখুক।
এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমরা চাই সবাইকে নিয়ে নির্বাচন করতে। নির্বাচনে কোন দল অংশগ্রহণ করলো বা করলো না সেটির চেয়েও বেশি গুরুত্বপূর্ণ হচ্ছে জনগণ অংশগ্রহণ করলো কি না। সবশেষ সিটি করপোরেশন নির্বাচনগুলোতে বিএনপি অংশ নেয়নি। কিন্তু সেসব সিটি নির্বাচনে ৫০ শতাংশের বেশি মানুষ ভোট দিয়েছে এবং নির্বাচন জনগণের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়েছে।
ড. হাছান বলেন, আগামী নির্বাচনেও বিএনপি এলে আমরা স্বাগত জানাই, আমরা চাই তারা অংশগ্রহণ করুক। কিন্তু না এলেও জনগণের ব্যাপক অংশগ্রহণ থাকবে। নির্বাচন অবশ্যই গ্রহণযোগ্য হবে।
আমেরিকা যখন ভিসানীতি ঘোষণা করল তখন বিএনপি খুব উৎফুল্ল ছিল, তকরা এটিকে বলছে বাংলাদেশ সরকারের জন্য লজ্জা কর। কিন্তু গতকাল মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, এখন আর ভিসানীতি নিয়ে আমকদের ভাববার কিছু নেই আমরা আন্দোলন করে এসরকারের পতন ঘটাবো এক দফা দাবি আদায় করবো এ বিষয়ে মতামত জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর পাশাপাশি আরও একটি কথা বলেছেন, আমাদের কোলে করে কেউ ক্ষমতায় বসাবে না। এতদিন পর তার সেই উপলব্ধি হয়েছে। তারা বুঝতে পেরেছে কেউ তাদের মুখে ফিডার দিয়ে ক্ষমতায় বসাবে না। যারা নির্বাচনে বাধা দেবে, তাদের সবার ওপর ভিসানীতি প্রয়োগ করা হবে। সেটিও অনুধাবন করতে পেরেছে বিএনপি। এ জন্য কর্মীদের আন্দোলন করেছে বলেছে তারা। তাদের অনুরোধ করবো, নির্বাচন বাধাগ্রস্ত করার পথ পরিহার করে নির্বাচনে আসার জন্য।
তিনি বলেন, বিএনপি ভেবেছিল, তাদের কেউ ক্ষমতায় বসিয়ে দেবে। ফখরুলের সেই উপলব্ধি ছিল হয়ত। এ জন্য তার খুব উৎফুল্ল ভাব ছিল। কিন্তু ধীরে ধীরে তার চেহারা ফ্যাকাশে হয়ে যাচ্ছে। তারা বুঝতে পেরেছে, যথা সময়ে নির্বাচন হবে এবং অনেক রাজনৈতিক দল নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। বিএনপিরও অনেকে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবে। ইতোমধ্যে তৃণমূল বিএনপির কয়েকজন বিএনপি নেতা জয়েন করেছে। তাদেরকে অনুরোধ জানাবো বাস্তবতা বিবর্জিত না হওয়ার জন্য। বাস্তবতা মেনে নিয়ে নির্বাচনের পথে আসতে তাদের প্রতি অনুরোধ জানাবো।
দেশে অর্থনৈতিক মন্দা প্রসঙ্গে অন্য এক প্রশ্নে তিনি বলেন, বাংলাদেশের অর্থনীতি যথেষ্ট দৃঢ় ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে আছে। গোটা পৃথিবীতে অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। সেটির ঢেউ কিছুটা যে বাংলাদেশের ওপর লাগেনি তা নয়। পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, পাকিস্তান, শ্রীলংকা এবং অন্য দেশগুলো এমনকি যুক্তরাষ্ট্র এবং ইউরোপের বিভিন্ন দেশেও অর্থনৈতিক মন্দা চলছে। সেটির ছোঁয়া বাংলাদেশেও লেগেছে, এটি খুব স্বাভাবিক।
নির্বাচনের পরিবেশ মূল্যায়নে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রাক-নির্বাচন প্রতিনিধিদল বাংলাদেশে এসেছে। এ ব্যাপারে জানতে চাইলে ড. হাছান বলেন, এটি তো ভালো, কারণ বিদেশিদের আগ্রহ আছে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সম্পর্কে বহুমাত্রিকতা আছে। এবং সম্পর্ক উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পাচ্ছে। নানান ক্ষেত্রে আমাদের সম্পর্ক আছে। জঙ্গি দমনে, সন্ত্রাসবাদ দমনে এবং আমাদের উন্নয়নে সব জায়গায় মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে আমাদের সহযোগিতার সম্পর্ক আছে। তাদের যে প্রতিনিধি দল এসেছে আমি মনে করি সেটি ভালো দিক।
বাইডেনের নিরাপত্তা উপদেষ্টার সঙ্গে প্রধানমন্ত্রীর বৈঠক মাঝপথেই থেমে গেছে, এটা নিয়ে নানা গুঞ্জন চলছ। এ বিষয়ে জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, এগুলো গুজব। তিনি (নিরাপত্তা উপদেষ্টা) বাংলাদেশ দূতাবাসে গিয়ে প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন। এক ঘণ্টার বেশি সময় বৈঠক হয়েছে। এটি নিয়ে যারা লিখেছে তারা কি সেখানে ছিল? বিদেশি একজন শীর্ষ কূটনীতিক বা শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে সম্পর্ক কোন পর্যায়ে হলে আমাদের দূতাবাসে গিয়ে বৈঠক করে, সেটি যারা বুঝতে ব্যর্থ হয় তারা কিছুই বোঝে না।