নিজস্ব প্রতিবেদক :
বাজারে এমন কোনো সবজি নেই যারা দাম বাড়তি না। বলতে গেলে বাজারে ৬০ টাকার নিচে কোনো সবজি নেই। তুলনামূলক কম দাম বলতে শুধু মাত্র পেঁপে আর মিষ্টি কুমড়ার কেজি ৪০ টাকা। আর বরবটি, টমেটো তো প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০ টাকায়। এছাড়া সেঞ্চুরি ক্রস করে ১২০-এ গাজর, বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়। সব মিলিয়ে অন্যান্য নিত্যপণ্যের সঙ্গে সব সবজির দামও বলতে গেলে আকাশ ছোঁয়া।
শুক্রবার (২২ সেপ্টেম্বর) রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুওে এমন চিত্র দেখা গেছে।
শবসি বাজারে প্রতি কেজি বেগুন বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, যার মধ্যে লম্বাকৃতির বেগুন প্রতি পিস ৬০ টাকা, বরবটি প্রতি কেজি ১০০ টাকা। করলা বিক্রি হচ্ছে ৮০ টাকায়, পটল প্রতি কেজি ৬০ টাকায়, ঢেঁড়স প্রতি কেজি ৬০ টাকায় এবং ঝিঙ্গা প্রতি কেজি ৬০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া প্রতি পিস জালি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকায়, লাউ প্রতি পিস ৭০ থেকে ৮০ টাকায়। বাজারে সবজির মধ্যে সবচেয়ে কম দাম বলতে পেঁপে প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকায়। কাঁচা কলা প্রতি হালি (৪ টি) ৪০ থেকে ৫০ টাকায়, মূলা প্রতি কেজি ৬০ টাকা, ধুন্দল প্রতি কেজি ৬০ টাকা, কচুর মুখি প্রতি কেজি ৮০ টাকা, কচুর লতি প্রতি কেজি ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। পাশাপাশি মিষ্টি কুমড়া প্রতি কেজি ৪০ টাকা, গাজর প্রতি কেজি ১২০ টাকা, টমেটো প্রতি কেজি ১০০ টাকা, শসা প্রতি কেজি ৬০ টাকা আর কাঁচা মরিচ প্রতি কেজি ১৬০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে নতুন আলু বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ৬০ টাকা আর আগের আলু প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ টাকায়। অন্যদিকে, দেশি পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৮০ থেকে ৮৫ টাকায় আর আমদানি করা পেঁয়াজ প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ৭০ টাকায়। এছাড়া ডিম প্রতি হালি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৫৫ টাকায়।
হঠাৎ দাম বাড়লো কেন, এমন প্রশ্নের জবাবে সাগর নামে এক বিক্রেতা জানিয়েছেন, বৃহস্পতিবার রাতে বৃষ্টির কারণে পাইকারি বাজারে সবজির সরবরাহ কমেছে। তাই সবজি কম এসেছে। এ কারণে দাম বেড়ে গেছে। তিনি আরও বলেন, কয়েকদিন বিভিন্ন জায়গায় টানা বৃষ্টি হচ্ছে। বৃষ্টির কারণে ফসল রক্ষায় কৃষক ব্যস্ত। এ কারণে জোগান কম।
ঢাকার বিভিন্ন এলাকার ব্যবসায়ীরা কারওয়ান বাজার থেকে সবজি কিনে খুচরা বিক্রি করেন। তবে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে ঢাকায় হঠাৎ বৃষ্টি শুরু হয়, যা চলে মাঝরাত পর্যন্ত। বৃষ্টিতে বাজার এবং রাস্তায় পানি জমে থাকায় রাতেও কারওয়ান বাজারে বেচাকেনা কম হয় বলে জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। যার প্রভাব পড়েছে সবজির দামে।
শনির আখড়া বাজারে বিক্রেতা কামরুল ইসলাম জানান, কাল রাত ১২টার দিকে কাঁচাবাজারের আড়তগুলোতে পানি জমেছে। সে কারণে বেচাকেনা শুরু হতে দেরি হয়। সকাল ১০টা পর্যন্ত এখনো সব মাল এসে পৌঁছায়নি। ভাঙা ভাঙা মাল নিয়ে আসতে হচ্ছে। এতে ভাড়াও বাড়ছে।
মিরপুর কাঁচা বাজারের ব্যবসায়ী কামাল হোসেন বলেন, রাতে পাইকারি আড়ৎ থেকে সবজি নিয়ে আসি। আবার কোনো কোনো দিন ভোরে। কিন্তু আজ সবজি আনার মতো অবস্থাই ছিল না। রাত থেকেই রাস্তায় পানি। সকালেও পানি নামেনি। তারপরও বেলা করে (দেরি করে) যারা কারওয়ান বাজারে গেছে খুব একটা মাল পায়নি।
সিয়ম নামে এক ক্রেতা বলেন, বৃষ্টি হোক বা যাই হোক, কোনো অজুহাত থাকলে বাজারে পণ্যের দাম বাড়বে এটা স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে গেছে। বিক্রেতারা দাম বাড়ানোর জন্য শুধু অজুহাত খোঁজে।
নবাবগঞ্জ বাজার ঘুরে দেখা যায়, এক কেজি শিং মাছ (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৬০০ টাকায়, প্রতি কেজি রুই মাছের দাম বেড়ে (আকারভেদে) ৩৫০ থেকে ৫০০ টাকায়, মাগুর মাছ ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা , মৃগেল ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকায়, পাঙাস ১৯০ থেকে ২২০ টাকায়, ইলিশ প্রতি কেজি (আকারভেদে) বিক্রি হচ্ছে ১৪০০ থেকে ১৬০০ টাকা, চিংড়ি প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১০০০ টাকায়, বোয়ালমাছ প্রতি কেজি ৮০০ থেকে ১২০০ টাকায়, কাতল ৩৫০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পোয়া মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, পাবদা মাছ ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায়, তেলাপিয়া ২২০ টাকায়, কৈ মাছ ২৪০ থেকে ২৫০ টাকায়, মলা ৪৫০ টাকা, বাতাসি টেংরা ১২০০ টাকায় এবং পাঁচমেশালি চাষের মাছ ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
রাজধানীর বাজারে ফের ২০০ টাকা ছাড়িয়েছে ব্রয়লার মুরগীর দাম। গেল কয়েক সপ্তাহ ধরে ১৮০-১৯৫ টাকায় বিক্রি হওয়া মুরগী বিক্রি হচ্ছে ২১০-২২০ টাকা। এছাড়াও বেড়েছে লেয়ার ও পাকিস্তানি মুরগীর দাম। তবে অপরিবর্তিত রয়েছে গরুর মাংসের দাম। প্রতি কেজি ৮০০ টাকা। যা নিম্নবিত্ত ও মধ্যবিত্তদের নাগালের বাইরে চলে গেছে।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা যায় ব্রয়লার মুরগী প্রতি কেজি ২১০-২২০ টাকা, লেয়ার ৩৪০-৩৫০ টাকা, পাকিস্তানি মুরগী ৩৪০-৩৫০ টাকা। গরুর মাংস ৮০০ টাকা, খাসির মাংস ১১০০ টাকা। যা গত সপ্তাহে ১৮৫-১৯৫ টাকায় বিক্রি হয়েছে ব্রয়লার মুরগী।
হাতিরপুল বাজারের এক মুরগী বিক্রেতা বলেন, গত সপ্তাহের থেকে এই সপ্তাহে কেনা বেশি পড়েছে। তাই দামও বাড়তি। কম দামে পেলে তো আমাদের দিতে সমস্যা নাই।
আরেক বিক্রেতা বলেন, দাম বাড়লে কাস্টমার কইমা যায়। তাই আমরা দাম বাড়ায়া কি করুম। আমাদের তো কেনাই বেশি পড়তাছে।
বাজারগুলোতে এক ডজন লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়, হাঁসের ডিম ২২০ টাকায়, দেশি মুরগির ডিমের হালি ৮০ টাকায়।