স্পোর্টস ডেস্ক :
নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট সিরিজে হারের পর ওয়ানডের শুরুটাও বেশ শোচনীয় হয়েছিল শ্রীলঙ্কার। প্রথম ওয়ানডেতে তারা মাত্র ৭৬ রানেই গুটিয়ে যায়। এর পরের ম্যাচে তাদের দুর্ভাগ্য হয়ে আসে বৃষ্টি। তৃতীয় ম্যাচেও তাদের ঘুরে দাঁড়ানোর পথে বাঁধ সাধে কিউই বোলাররা। তিন পেসারের তোপে শুরুতে ব্যাট করা লঙ্কানরা মাত্র ১৫৭ রানে গুটিয়ে যায়। সিরিজে এগিয়ে থাকা স্বাগতিকরা সেই লক্ষ্য পেরিয়ে যায় ১০৩ বল বাকি থাকতেই।
কিন্তু তারচেয়েও বড় বিপদ এসেছে লঙ্কানদের কপালে। এই সিরিজের মধ্য দিয়ে ওয়ানডে সুপার লিগ শেষ করেছে শ্রীলঙ্কা। ফলে সাবেক এই বিশ্বচ্যাম্পিয়নরা বিশ্বকাপ বাছাইপর্বে নেমে গেছে। কারণ, এই হারে লঙ্কানদের অবনমন হয়েছে পয়েন্ট তালিকার নয় নম্বরে। শেষ ম্যাচটি জিততে পারলে তারা আট নম্বরে থাকা ওয়েস্ট ইন্ডিজকে টপকে সরাসরি বিশ্বকাপে অংশ নেওয়ার সুযোগ ছিল। যদিও এরপর তাদের তাকিয়ে থাকতে হত নেদারল্যান্ডসের দিকে। অবিশ্বাস্য কিছু করে যদি ডাচরা দক্ষিণ আফ্রিকাকে হারাতে পারতো, তবেই সরাসরি বিশ্বকাপ খেলতে পারতো দাসুন শানাকারা।
শুক্রবার (৩১ মার্চ) হ্যামিলটনের স্যাডন পার্কে সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডে ম্যাচে মুখোমুখি হয় দু’দল। ১০৩ বল হাতে রেখে ৬ উইকেটে তাদের হারালো কিউইরা। সিরিজটি স্বাগতিকরা জিতেছে ২-০ ব্যবধানে। বৃষ্টির কারণে দ্বিতীয় ম্যাচ পরিত্যক্ত হয়েছিল। নিউজিল্যান্ডে তৃতীয় ও শেষ ম্যাচ হেরে ওয়ানডে বিশ্বকাপে শ্রীলঙ্কার সরাসরি খেলার সুযোগে বড় ধাক্কা লাগলো।
হ্যামিল্টনে এই হারে বিশ্বকাপ সুপার লিগে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে (৮৮) টপকে আটে ওঠার সুযোগ হারালো নবম স্থানে থাকা শ্রীলঙ্কা (৮২)। আগামী জুনে জিম্বাবুয়েতে কোয়ালিফায়ার খেলে বিশ্বকাপে খেলার যোগ্যতা আদায় করতে হবে লঙ্কানদের। উইন্ডিজের বাদ পড়ার শঙ্কা এখনও রয়েছে, আর শীর্ষ আট দলের একটি হয়ে দক্ষিণ আফ্রিকা (৭৮) ও আয়ারল্যান্ডের (৬৮) সরাসরি বিশ্বকাপে খেলার সম্ভাবনা বেড়ে গেলো। প্রোটিয়ারা ঘরের মাঠে নেদারল্যান্ডসের বিপক্ষে দুটি ম্যাচ খেলবে এবং মে মাসে আয়ারল্যান্ড তিনটি ওয়ানডের সিরিজ খেলবে বাংলাদেশের বিপক্ষে।
টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েই পুরোনো দশা শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং লাইনের। প্রথম ওয়ানডেতে ৭৬ রানে অলআউট হয়েছিল তারা। দ্বিতীয় ম্যাচে টপ অর্ডারের পাঁচ ব্যাটারের মধ্যে চারজনই ফিরে যান এক অঙ্কের ঘরে থেকে।
মিডল অর্ডারে কিছু প্রতিরোধের কারণে শেষ পর্যন্ত দেড়শ ছাড়ায় স্কোর। তৃতীয় ওয়ানডেতে ৪২তম ওভারে লঙ্কানরা ১৫৭ রানে গুটিয়ে যায়।
নুয়ানিন্দু ফার্নান্দোকে ফিরিয়ে ধসের শুরুটা করেন ম্যাট হেনরি। এরপর কুশল মেন্ডিসও তার শিকার টানা দ্বিতীয় ডাক মেরে। স্বাগতিক বোলারদের মধ্যে সেরা ছিলেন হেনরি, ১০ ওভারে মাত্র ১৪ রান দিয়ে ৩ উইকেট নেন। হেনরি শিপলিও তিন উইকেট পেয়েছেন, তার বাউন্ডে ভুগেছে শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা। টাইমিংয়ে গড়বড় হয়ে ড্যারিল মিচেলের শিকার তিন ব্যাটার।
ইনিংস সর্বোচ্চ ৫৭ রান করেন পাথুম নিসাঙ্কা। আর মাত্র তিন ব্যাটার দুই অঙ্কের ঘরে পৌঁছান। দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৩১ রান করেন অধিনায়ক দাসুন শানাকা। চামিকা করুণারত্নে ২৪ ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভা করেন ১৩ রান।
জবাব দিতে নেমে দ্বিতীয় ওভারে লাহিরু কুমারা জোড়া আঘাত করেন। প্রথম বলে চ্যাড বোয়েসকে (১) ও শেষ বলে টম ব্লান্ডেলকে (৪) পেছনে কুশলের ক্যাচ বানান। দলীয় ২১ রানে মিচেল (৬) কাসুন রাজিথের শিকার। ১৫তম ওভারে টম ল্যাথামকে (৮) মাঠছাড়া করে ম্যাচে উত্তেজনা ছড়ান শানাকা। তখনও ৯৯ রান দরকার নিউ জিল্যান্ডের।
নিউ জিল্যান্ডের অস্থির ব্যাটিং লাইন স্থির হয় উইল ইয়াং ও হেনরি নিকলসের জুটিতে। পঞ্চম উইকেটে শতরান তুলে তারা ৩৩তম ওভারে জয় এনে দেন। তাদের ১০০ রানের জুটিতে ৪ উইকেটে ১৫৯ রান করে স্বাগতিকরা।
চাপ কাটিয়ে ১১৩ বলে ১১টি চাওে ৮৬ রানে অপরাজিত ছিলেন ইয়াং। ৫২ বলে ৫টি চারের সাহায্যে হার না মানা ৪৪ রানের ইনিংস খেলেন নিকোলস।