Dhaka শনিবার, ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২৫, ২৯ ভাদ্র ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নারী দলের দায়িত্ব ছাড়ছেন সাফজয়ী কোচ ছোটন

  • স্পোর্টস ডেস্ক
  • প্রকাশের সময় : ০৭:১৭:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ মে ২০২৩
  • ২২৪ জন দেখেছেন

স্পোর্টস ডেস্ক : 

হঠাৎ করেই বাংলাদেশ নারী ফুটবলারদের দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গোলাম রব্বানী ছোটন। ‘মানসিক অশান্তির’ জায়গা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশের নারী ফুটবল জাগরণের নায়ক। আগামী ৩১ মের পর থেকে আর বাফুফের মহিলা দলের দায়িত্বে না থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন ছোটন। গোলাম রব্বানী ছোটনের হাত ধরেই বাংলাদেশের নারী ফুটবলের জাগরণের শুরু।

শুক্রবার (২৬ মে) গণমাধ্যমকে ছোটন বলেন, আমি আর কোনো টুর্নামেন্ট করব না জাতীয় দলের হয়ে। বিষয়টি আমি অফিসিয়ালি চিঠি দিয়ে কয়েক দিনের মধ্যে জানিয় দেব বাফুফেকে। বলতে পারেন আমি আর এ মাসটা আছি। আগামী মাস থেকে নারী দলের দায়িত্বে আর থাকছি না।

হটাৎ দায়িত্ব ছাড়ার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, অনেক তো করলাম। অনেক চাপ। পারিবারিক জীবন আছে। বন্ধুবান্ধব আছে। কাউকেই সময় দেওয়া হয়নি। ওদিকে মহিলা দলের ওপর সবার প্রত্যাশা বাড়ছে। আমি মনে করি, অনেক হয়েছে। এবার সরে যাই। এ কারণে আমি আর মেয়েদের কোচ হিসেবে থাকছি না।

আপনি তৃপ্তি নিয়ে দায়িত্ব ছাড়ছেন? নাকি হতাশা নিয়ে? কৌশলে এই প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন ছোটন। বললেন, আমি ও আমার কোচিং স্টাফ সততার সাথে শতভাগ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছি। আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেছি। কোচিং স্টাফরা কাজ করেছেন ২৪ ঘণ্টা। আমরা ৭০ জন মেয়েকে ভালোভাবে রাখতে পেরেছি। তাদের বাবা-মায়ের অভাবটাও বুঝতে দেইনি। এসব কাজ খুবই ভালোভাবে করতে পেরেছি। তাদের আমরা সম্মানের সঙ্গে রাখতে পেরেছি। এটাই আমার তৃপ্তি।

২০০৬ সাল থেকে বাফুফেতে চাকরি করছেন গোলাম রব্বানী ছোটন। ২০০৯ সাল থেকে আছেন নারী ফুটবলের প্রধান কোচের দায়িত্বে। ২০১৭ সাল থেকে বয়সভিত্তিক সাফের বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টে ফাইনালে নিয়ে গেছেন দলকে। ২০১৭ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫, ২০১৮ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮, ২০২১ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। সবগুলো আসরেই ডাগআউটে ছিলেন তিনি। বয়সভিত্তিকে এমন সাফল্যের পর নতুন করে স্বপ্ন বুনতে থাকে জাতীয় দলকে নিয়ে। সেই প্রত্যাশাও পূরণ করেন ছোটন। গত বছর নেপালে অনুষ্ঠিত সাফে চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় তার দল। তাতে মেয়েদের ফুটবলের প্রতি সমর্থকদের আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। কিন্তু ঠিক তখনই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন ছোটন।

সেটাও এসেছে এই ছোটনের হাত ধরে। কিন্তু সেই ছোটনই কিনা এই মেয়েদের দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমন সাফল্যের পরও কেন এই সিদ্ধান্ত, এই প্রশ্নের জবাবে ছোটন বলেছেন,’মানসিক অশান্তি নিয়ে কাজ করা যায় না। সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেও নানান কথা শুনতে হয়।

এভাবে কাজ করা যায় না। আগামী ৩১ মের পর থেকে আমি আর দায়িত্বে থাকছি না। প্রতিদিনই কাজের চাপ বাড়ছে। এরপরেও শুনতে হয় এটা হয় না, ওটা হয় না। এই মানসিক যন্ত্রণা নিতে পারছি না।

‘তবে কে বা কারা এসব বলে এইটা তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। বাফুফের ভেতরে গুঞ্জন আছে মহিলা কমিটির প্রশ্রয়ে পল স্মলির অযাচিত হস্তক্ষেপেই চাকর ছাড়তে বাধ্য করছে তাকে। যদিও বাফুফেতে এখনো আনুষ্ঠানিক চিঠি দেননি ছোটন। তবে মেয়েদের দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তিনি।

বয়সভিত্তিক দল থেকে জাতীয় দল- সব পর্যায়েই এক হাতে সামলেছিলেন গোলাম রব্বানী ছোটন। এই ছোটনের কারণেই ফুটবলে স্বপ্ন দেখেছে মেয়েরা। কিন্তু সেই মেয়েরাও এখন ফুটবল ছাড়ছেন। ইতোমধ্যে তিন জন মেয়ে ফুটবল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সবশেষ সংযোজন সিরাত জাহান স্বপ্না। আজ দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে ফুটবল থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এর আগে আনুচিং মোগিনী এবং সাজেদা খাতুনও একই পথে হেঁটেছেন। তাহলে কি দেশের নারী ফুটবলে লেগেছে বিদ্রোহের আগুন!

ভবিষ্যৎ গন্তব্য এখনো ঠিক করেননি। তবে গত নভেম্বরে বসুন্ধরা কিংসের পক্ষ থেকে কোচ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাকে। এমনটাই জানিয়েছেন ছোটন, ‘সাফ জয়ের পর বাফুফে ৫০০ ডলার বেতন বাড়িয়েছিল আমার। পারিশ্রমিক নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। গত নভেম্বরে বসুন্ধরা আমাকে ভালো অফার দিয়েছিল। কিন্তু বাফুফে আমাকে ছাড়েনি। ভবিষ্যতে কোথায় যাব এনিয়ে এখনো কোনো চিন্তা-ভাবনা করিনি। আগে এখান থেকে বের হই, তারপর বিশ্রাম নেব। বিশ্রামটা জরুরি আমার জন্য।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

অন্তর্বর্তী সরকার সংস্কার করতে করতে এখন কুসংস্কারের পথে এগোচ্ছে : গয়েশ্বর চন্দ্র রায়

নারী দলের দায়িত্ব ছাড়ছেন সাফজয়ী কোচ ছোটন

প্রকাশের সময় : ০৭:১৭:১১ অপরাহ্ন, শুক্রবার, ২৬ মে ২০২৩

স্পোর্টস ডেস্ক : 

হঠাৎ করেই বাংলাদেশ নারী ফুটবলারদের দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন গোলাম রব্বানী ছোটন। ‘মানসিক অশান্তির’ জায়গা থেকেই এমন সিদ্ধান্ত নিয়েছেন বলে জানিয়েছেন দেশের নারী ফুটবল জাগরণের নায়ক। আগামী ৩১ মের পর থেকে আর বাফুফের মহিলা দলের দায়িত্বে না থাকার কথা নিশ্চিত করেছেন ছোটন। গোলাম রব্বানী ছোটনের হাত ধরেই বাংলাদেশের নারী ফুটবলের জাগরণের শুরু।

শুক্রবার (২৬ মে) গণমাধ্যমকে ছোটন বলেন, আমি আর কোনো টুর্নামেন্ট করব না জাতীয় দলের হয়ে। বিষয়টি আমি অফিসিয়ালি চিঠি দিয়ে কয়েক দিনের মধ্যে জানিয় দেব বাফুফেকে। বলতে পারেন আমি আর এ মাসটা আছি। আগামী মাস থেকে নারী দলের দায়িত্বে আর থাকছি না।

হটাৎ দায়িত্ব ছাড়ার বিষয়ে তিনি আরও বলেন, অনেক তো করলাম। অনেক চাপ। পারিবারিক জীবন আছে। বন্ধুবান্ধব আছে। কাউকেই সময় দেওয়া হয়নি। ওদিকে মহিলা দলের ওপর সবার প্রত্যাশা বাড়ছে। আমি মনে করি, অনেক হয়েছে। এবার সরে যাই। এ কারণে আমি আর মেয়েদের কোচ হিসেবে থাকছি না।

আপনি তৃপ্তি নিয়ে দায়িত্ব ছাড়ছেন? নাকি হতাশা নিয়ে? কৌশলে এই প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন ছোটন। বললেন, আমি ও আমার কোচিং স্টাফ সততার সাথে শতভাগ দায়িত্ব নিয়ে কাজ করেছি। আমি সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেছি। কোচিং স্টাফরা কাজ করেছেন ২৪ ঘণ্টা। আমরা ৭০ জন মেয়েকে ভালোভাবে রাখতে পেরেছি। তাদের বাবা-মায়ের অভাবটাও বুঝতে দেইনি। এসব কাজ খুবই ভালোভাবে করতে পেরেছি। তাদের আমরা সম্মানের সঙ্গে রাখতে পেরেছি। এটাই আমার তৃপ্তি।

২০০৬ সাল থেকে বাফুফেতে চাকরি করছেন গোলাম রব্বানী ছোটন। ২০০৯ সাল থেকে আছেন নারী ফুটবলের প্রধান কোচের দায়িত্বে। ২০১৭ সাল থেকে বয়সভিত্তিক সাফের বেশ কয়েকটি টুর্নামেন্টে ফাইনালে নিয়ে গেছেন দলকে। ২০১৭ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৫, ২০১৮ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৮, ২০২১ সালে সাফ অনূর্ধ্ব-১৯ টুর্নামেন্টে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বাংলাদেশ। সবগুলো আসরেই ডাগআউটে ছিলেন তিনি। বয়সভিত্তিকে এমন সাফল্যের পর নতুন করে স্বপ্ন বুনতে থাকে জাতীয় দলকে নিয়ে। সেই প্রত্যাশাও পূরণ করেন ছোটন। গত বছর নেপালে অনুষ্ঠিত সাফে চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন হয় তার দল। তাতে মেয়েদের ফুটবলের প্রতি সমর্থকদের আগ্রহ আরও বেড়ে যায়। কিন্তু ঠিক তখনই চাকরি ছেড়ে দিচ্ছেন ছোটন।

সেটাও এসেছে এই ছোটনের হাত ধরে। কিন্তু সেই ছোটনই কিনা এই মেয়েদের দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। এমন সাফল্যের পরও কেন এই সিদ্ধান্ত, এই প্রশ্নের জবাবে ছোটন বলেছেন,’মানসিক অশান্তি নিয়ে কাজ করা যায় না। সেই সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত কাজ করেও নানান কথা শুনতে হয়।

এভাবে কাজ করা যায় না। আগামী ৩১ মের পর থেকে আমি আর দায়িত্বে থাকছি না। প্রতিদিনই কাজের চাপ বাড়ছে। এরপরেও শুনতে হয় এটা হয় না, ওটা হয় না। এই মানসিক যন্ত্রণা নিতে পারছি না।

‘তবে কে বা কারা এসব বলে এইটা তিনি স্পষ্ট করে কিছু বলেননি। বাফুফের ভেতরে গুঞ্জন আছে মহিলা কমিটির প্রশ্রয়ে পল স্মলির অযাচিত হস্তক্ষেপেই চাকর ছাড়তে বাধ্য করছে তাকে। যদিও বাফুফেতে এখনো আনুষ্ঠানিক চিঠি দেননি ছোটন। তবে মেয়েদের দায়িত্ব ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেলেছেন তিনি।

বয়সভিত্তিক দল থেকে জাতীয় দল- সব পর্যায়েই এক হাতে সামলেছিলেন গোলাম রব্বানী ছোটন। এই ছোটনের কারণেই ফুটবলে স্বপ্ন দেখেছে মেয়েরা। কিন্তু সেই মেয়েরাও এখন ফুটবল ছাড়ছেন। ইতোমধ্যে তিন জন মেয়ে ফুটবল ছাড়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। সবশেষ সংযোজন সিরাত জাহান স্বপ্না। আজ দুপুরে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করে ফুটবল থেকে অবসরের সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তিনি। এর আগে আনুচিং মোগিনী এবং সাজেদা খাতুনও একই পথে হেঁটেছেন। তাহলে কি দেশের নারী ফুটবলে লেগেছে বিদ্রোহের আগুন!

ভবিষ্যৎ গন্তব্য এখনো ঠিক করেননি। তবে গত নভেম্বরে বসুন্ধরা কিংসের পক্ষ থেকে কোচ হওয়ার প্রস্তাব দেওয়া হয়েছিল তাকে। এমনটাই জানিয়েছেন ছোটন, ‘সাফ জয়ের পর বাফুফে ৫০০ ডলার বেতন বাড়িয়েছিল আমার। পারিশ্রমিক নিয়ে আমার কোনো অভিযোগ নেই। গত নভেম্বরে বসুন্ধরা আমাকে ভালো অফার দিয়েছিল। কিন্তু বাফুফে আমাকে ছাড়েনি। ভবিষ্যতে কোথায় যাব এনিয়ে এখনো কোনো চিন্তা-ভাবনা করিনি। আগে এখান থেকে বের হই, তারপর বিশ্রাম নেব। বিশ্রামটা জরুরি আমার জন্য।