Dhaka বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫, ১ কার্তিক ১৪৩২ বঙ্গাব্দ

নামের সঙ্গে ইসলাম থাকলেই ইসলামী দল হয় না : সালাহউদ্দিন আহমদ

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

দলের নামের সঙ্গে ইসলাম থাকলেই সেটা ইসলামী দল হয় না মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ইসলাম কোনো দলের সম্পত্তি নয়। ইসলাম মানবকল্যাণের ধর্ম, যা বিভাজন নয়; ঐক্যের আহ্বান জানায়।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রামের পটিয়ার আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি মাদরাসা পরিদর্শন শেষে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, কোন রাজনৈতিক দলের নামের সাথে যদি ‘ইসলাম’ শব্দটা থাকে তাহলে তারা ইসলামের মালিক হয়ে যায়? আমরা যেন রাজনৈতিক কারণে ইসলামের ব্যবহারকে বন্ধ করি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য, দুনিয়াবী উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য, শুধুমাত্র ক্ষমতায় আরোহণের জন্য ধর্মের ক্ষতি না করি। কোনো রাজনৈতিক কারণ বা ক্ষমতা লাভের জন্য আমরা যেন কেউ দ্বীনকে ব্যবহার না করি, যেন বিভাজনের রাজনীতি না হয়। কেউ কেউ আজকাল বলতে শোনা যায়, অমুক দল পরাজিত হলে ইসলাম পরাজিত হবে- নাউজুবিল্লাহ! কোনো দলের নামে যদি ‘ইসলাম’ শব্দ থাকে, সেটি রাজনৈতিক দলের নাম হতে পারে, কিন্তু সেটিই ইসলাম নয়।

শুধু রাজনৈতিক কারণে ক্ষমতা লাভের জন্য দীনকে ব্যবহার করা উচিত নয় উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করতে চাই। যেখানে জাতি, ধর্ম, ভাষা বা সম্প্রদায়ের নামে কোনো বিভক্তি থাকবে না।

তিনি বলেন, বিএনপি ইসলামবিদ্বেষী এটা একটি অপপ্রচার। আসলে আলেম ও ইসলাম বিদ্বেষী আওয়ামী লীগেরই পতন হয়েছে। বিএনপি সবসময় আলেম-ওলামা ও ইসলামপ্রেমী মানুষের পাশে আছে।

সবাইকে আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থে কেউ যেন সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে। আমাদের ঐক্যই হতে পারে জাতীয় মুক্তির পথ।

আজকাল বলতে শুনি, অমুক দল পরাজিত হলে ইসলাম পরাজিত হবে উল্লেখ করে বিএনপির এই সদস্য বলেন, আমরা ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল। কোনো দলের পিছনে যদি ইসলাম শব্দটা থাকে, সেটা রাজনৈতিক দলের নাম হতে পারে, সেটা তো ইসলাম না।

তিনি বলেন, যে দলের ইতিহাস হচ্ছে আল্লাহর প্রতি আস্থা, বিশ্বাস, রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে সংযোহন করা। কেউ যদি বলে বিএনপি ইসলাম বিদ্বেষী, এটা অপপ্রচার। ফ্যাসিবাদী শক্তি আওয়ামীলীগের তো পতন হয়েছে। আলেম বিদ্বেষী সরকারের পতন হয়েছে।

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, কেউ যদি বলে বিএনপি একটা ইসলামবিদ্বেষী দল, সেটা নিছক অপপ্রচার। যেহেতু আমি অনেক রাজনৈতিক দলের কর্মীর সঙ্গে মেলামেশা করি, সেহেতু বিভিন্ন প্রশ্ন প্রায়ই আমার কাছে আসে। বাংলাদেশে আমরা ৯০ থেকে ৯২ ভাগ মুসলমান, যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। বাকি ৮ থেকে ১০ শতাংশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী আছেন। আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশের নাগরিকরা সাংবিধানিকভাবে সমান অধিকার ভোগ করবে। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে-সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এবং সকল নাগরিকের ধর্মীয় অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার রক্ষা করা। সম্প্রীতির সঙ্গে আমাদের সবাইকে একসাথে বসবাস করতে হবে। এই বন্ধন অটুট রাখতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, আমরা ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল। বিএনপির ইতিহাসে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করা হয়েছে, আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেউ যদি বলে বিএনপি ইসলামবিদ্বেষী, সেটা নিঃসন্দেহে অপপ্রচার। ইসলামবিদ্বেষী শক্তির পতন ঘটেছে, আওয়ামী লীগের পতন ঘটেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যার যার কর্ম অনুযায়ী পতন ঘটাবেন। আমরা আগে থেকেই অনুমান করেছিলাম-ইসলামবিদ্বেষী ও আলেমবিদ্বেষী এই আওয়ামী লীগ কখনো বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না, ক্ষমতাও ধরে রাখতে পারবে না। সে সময় আমাদের বহু আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছেন, বিশেষ করে শাপলা চত্বরে অসংখ্য আলেম-ওলামা শাহাদাত বরণ করেছেন।

‘এই রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র আমাদের রক্ষা করতে হবে। যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আর গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিতে না হয়, যেন রাজপথে শাপলা চত্বরের মতো হত্যাকাণ্ড আর না ঘটে-এজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রাজনৈতিক কারণে যেন কেউ আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।,

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সকল নাগরিকের ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দিন। এই বার্তাগুলো পৌঁছে দিতে আমরা দেশের সর্বস্তরের আলেম-ওলামাদের সঙ্গে দেখা করছি। কেউ কেউ বলে, ‘নির্বাচন আসছে, তাই টুপি পরে আলেমদের কাছে যাচ্ছেন’- কিন্তু বিষয়টি তা নয়। আমরা আলেম-ওলামাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করতে চাই, যেখানে সকল মানুষ একত্রে আলোচনা করে নীতি ও আইন নির্ধারণ করবে। এতে করে আইন সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, এবং তা বাস্তবায়ন করাও সহজ হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা জাতির মধ্যে কোনো বিভক্তি চাই না-ধর্মের নামে, ভাষার নামে বা জাতিগত কারণে নয়। আমরা একটি গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা কায়েম করতে চাই এবং জরুরি সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে চাই।

রক্ত দিয়ে অর্জন করা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এটাকে সংরক্ষণ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের রক্তের সিড়ি বেয়ে আজকে মুক্ত বাংলাদেশে বর্তমানে বসবাস করছি। এ অবস্থা বজায় রাখতে হবে। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে যেন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে না হয়। যেন জীবন দিতে না হয়। রাজপথে যাতে শাপলা চত্বরের মত আর কোনো নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা না ঘটে।সেই জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রাজনৈতিক কারণে যেন সম্প্রীতি বিনষ্ট না হয়। আমরা বাংলাদেশের সকল মানুষের নাগরিক অধিকার, ভোটাধিকার আমরা সংরক্ষণের জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি।

ধর্ম সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, সমস্ত শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে অস্তভূক্তিমূলক সমাজ, রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করতে চাই। সেইজন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির আহবান জানাচ্ছি। আমরা কোনো বিভক্তি চাই না। ধর্মের নামে, জাতির নামে, ভাষার নামে। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়তে চাই। রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত করব। নির্বাচনে সামনে রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে বিভিন্ন কলাকৌশল থাকে। সেই হিসাবে কিছু দল একত্রিত হয়ে জোট গঠন করতে পারে। ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত অনেকেই আমাদের সাথে আছে। এটা নির্বাচনী কৌশল।

ছাত্রসংসদে নির্বাচিতদের অভিনন্দন জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, চাকসু, ডাকসু যাই হোক ছাত্র রাজনীতি বা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে যে নেতৃত্ব উঠে আসছে সকলকে অভিনন্দন। ছাত্র রাজনীতি আর জাতীয় রাজনীতি আলাদা।

এ সময় মাদ্রাসার প্রয়াত পরিচালক মরহুম আহমেদ হাসান, মুফতি নুরুল হক ও আল্লামা শাহ তৈয়ব সাহেবের কবর জিয়ারত করেন এবং মাদরাসার বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন তিনি।

বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদীও উপস্থিত ছিলেন।

জনপ্রিয় খবর

আবহাওয়া

প্রাথমিকভাবে ১০৮ আসনে প্রার্থী ঘোষণা করেছে এবি পার্টি

নামের সঙ্গে ইসলাম থাকলেই ইসলামী দল হয় না : সালাহউদ্দিন আহমদ

প্রকাশের সময় : ০৪:০৯:২৩ অপরাহ্ন, বৃহস্পতিবার, ১৬ অক্টোবর ২০২৫

চট্টগ্রাম জেলা প্রতিনিধি : 

দলের নামের সঙ্গে ইসলাম থাকলেই সেটা ইসলামী দল হয় না মন্তব্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাহউদ্দিন আহমদ বলেছেন, ইসলাম কোনো দলের সম্পত্তি নয়। ইসলাম মানবকল্যাণের ধর্ম, যা বিভাজন নয়; ঐক্যের আহ্বান জানায়।

বৃহস্পতিবার (১৬ অক্টোবর) সকালে চট্টগ্রামের পটিয়ার আল জামিয়াতুল আরবিয়াতুল ইসলামিয়া জিরি মাদরাসা পরিদর্শন শেষে আলেম-ওলামাদের সঙ্গে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি।

তিনি বলেন, কোন রাজনৈতিক দলের নামের সাথে যদি ‘ইসলাম’ শব্দটা থাকে তাহলে তারা ইসলামের মালিক হয়ে যায়? আমরা যেন রাজনৈতিক কারণে ইসলামের ব্যবহারকে বন্ধ করি। রাজনৈতিক উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য, দুনিয়াবী উদ্দেশ্য হাসিলের জন্য, শুধুমাত্র ক্ষমতায় আরোহণের জন্য ধর্মের ক্ষতি না করি। কোনো রাজনৈতিক কারণ বা ক্ষমতা লাভের জন্য আমরা যেন কেউ দ্বীনকে ব্যবহার না করি, যেন বিভাজনের রাজনীতি না হয়। কেউ কেউ আজকাল বলতে শোনা যায়, অমুক দল পরাজিত হলে ইসলাম পরাজিত হবে- নাউজুবিল্লাহ! কোনো দলের নামে যদি ‘ইসলাম’ শব্দ থাকে, সেটি রাজনৈতিক দলের নাম হতে পারে, কিন্তু সেটিই ইসলাম নয়।

শুধু রাজনৈতিক কারণে ক্ষমতা লাভের জন্য দীনকে ব্যবহার করা উচিত নয় উল্লেখ করে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, আমরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করতে চাই। যেখানে জাতি, ধর্ম, ভাষা বা সম্প্রদায়ের নামে কোনো বিভক্তি থাকবে না।

তিনি বলেন, বিএনপি ইসলামবিদ্বেষী এটা একটি অপপ্রচার। আসলে আলেম ও ইসলাম বিদ্বেষী আওয়ামী লীগেরই পতন হয়েছে। বিএনপি সবসময় আলেম-ওলামা ও ইসলামপ্রেমী মানুষের পাশে আছে।

সবাইকে আহ্বান জানিয়ে সালাহউদ্দিন আহমদ বলেন, রাজনৈতিক স্বার্থে কেউ যেন সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে। আমাদের ঐক্যই হতে পারে জাতীয় মুক্তির পথ।

আজকাল বলতে শুনি, অমুক দল পরাজিত হলে ইসলাম পরাজিত হবে উল্লেখ করে বিএনপির এই সদস্য বলেন, আমরা ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল। কোনো দলের পিছনে যদি ইসলাম শব্দটা থাকে, সেটা রাজনৈতিক দলের নাম হতে পারে, সেটা তো ইসলাম না।

তিনি বলেন, যে দলের ইতিহাস হচ্ছে আল্লাহর প্রতি আস্থা, বিশ্বাস, রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে সংযোহন করা। কেউ যদি বলে বিএনপি ইসলাম বিদ্বেষী, এটা অপপ্রচার। ফ্যাসিবাদী শক্তি আওয়ামীলীগের তো পতন হয়েছে। আলেম বিদ্বেষী সরকারের পতন হয়েছে।

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, কেউ যদি বলে বিএনপি একটা ইসলামবিদ্বেষী দল, সেটা নিছক অপপ্রচার। যেহেতু আমি অনেক রাজনৈতিক দলের কর্মীর সঙ্গে মেলামেশা করি, সেহেতু বিভিন্ন প্রশ্ন প্রায়ই আমার কাছে আসে। বাংলাদেশে আমরা ৯০ থেকে ৯২ ভাগ মুসলমান, যারা ইসলাম ধর্মে বিশ্বাসী। বাকি ৮ থেকে ১০ শতাংশ হিন্দু, বৌদ্ধ, খ্রিষ্টান ও অন্যান্য ধর্মাবলম্বী আছেন। আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশের নাগরিক। বাংলাদেশের নাগরিকরা সাংবিধানিকভাবে সমান অধিকার ভোগ করবে। ইসলামের শিক্ষা হচ্ছে-সবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, এবং সকল নাগরিকের ধর্মীয় অধিকারসহ সব ধরনের অধিকার রক্ষা করা। সম্প্রীতির সঙ্গে আমাদের সবাইকে একসাথে বসবাস করতে হবে। এই বন্ধন অটুট রাখতে আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধভাবে প্রচেষ্টা চালিয়ে যেতে হবে।

বিএনপির জ্যেষ্ঠ এই নেতা বলেন, আমরা ধর্মীয় মূল্যবোধে বিশ্বাসী একটি রাজনৈতিক দল। বিএনপির ইতিহাসে সংবিধানে ‘বিসমিল্লাহির রাহমানির রাহিম’ সংযোজন করা হয়েছে, আল্লাহর প্রতি আস্থা ও বিশ্বাসকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। কেউ যদি বলে বিএনপি ইসলামবিদ্বেষী, সেটা নিঃসন্দেহে অপপ্রচার। ইসলামবিদ্বেষী শক্তির পতন ঘটেছে, আওয়ামী লীগের পতন ঘটেছে। আল্লাহ রাব্বুল আলামিন যার যার কর্ম অনুযায়ী পতন ঘটাবেন। আমরা আগে থেকেই অনুমান করেছিলাম-ইসলামবিদ্বেষী ও আলেমবিদ্বেষী এই আওয়ামী লীগ কখনো বাংলাদেশে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে পারবে না, ক্ষমতাও ধরে রাখতে পারবে না। সে সময় আমাদের বহু আলেম-ওলামা, মাদ্রাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থী শহীদ হয়েছেন, বিশেষ করে শাপলা চত্বরে অসংখ্য আলেম-ওলামা শাহাদাত বরণ করেছেন।

‘এই রক্ত ও ত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত স্বাধীনতা ও গণতন্ত্র আমাদের রক্ষা করতে হবে। যেন ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে আর গণতন্ত্রের জন্য জীবন দিতে না হয়, যেন রাজপথে শাপলা চত্বরের মতো হত্যাকাণ্ড আর না ঘটে-এজন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রাজনৈতিক কারণে যেন কেউ আমাদের সামাজিক ও ধর্মীয় সম্প্রীতি নষ্ট করতে না পারে, সে বিষয়ে সচেতন থাকতে হবে।,

সালাউদ্দিন আহমেদ বলেন, বাংলাদেশের সকল নাগরিকের ভোটাধিকারসহ মৌলিক অধিকার সংরক্ষণের জন্য সবাইকে সচেতন থাকতে হবে। আল্লাহ আমাদের সবাইকে তাওফিক দিন। এই বার্তাগুলো পৌঁছে দিতে আমরা দেশের সর্বস্তরের আলেম-ওলামাদের সঙ্গে দেখা করছি। কেউ কেউ বলে, ‘নির্বাচন আসছে, তাই টুপি পরে আলেমদের কাছে যাচ্ছেন’- কিন্তু বিষয়টি তা নয়। আমরা আলেম-ওলামাসহ সব শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাজ ও রাষ্ট্র গঠন করতে চাই, যেখানে সকল মানুষ একত্রে আলোচনা করে নীতি ও আইন নির্ধারণ করবে। এতে করে আইন সবার জন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক হবে, এবং তা বাস্তবায়ন করাও সহজ হবে।

তিনি আরও বলেন, আমরা জাতির মধ্যে কোনো বিভক্তি চাই না-ধর্মের নামে, ভাষার নামে বা জাতিগত কারণে নয়। আমরা একটি গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থা কায়েম করতে চাই এবং জরুরি সংস্কার কার্যক্রম বাস্তবায়নের মাধ্যমে একটি সমতাভিত্তিক রাষ্ট্র গড়তে চাই।

রক্ত দিয়ে অর্জন করা স্বাধীনতা, গণতন্ত্র এটাকে সংরক্ষণ করতে হবে জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের রক্তের সিড়ি বেয়ে আজকে মুক্ত বাংলাদেশে বর্তমানে বসবাস করছি। এ অবস্থা বজায় রাখতে হবে। আমাদের ভবিষ্যত প্রজন্মকে যেন গণতন্ত্রের জন্য সংগ্রাম করতে না হয়। যেন জীবন দিতে না হয়। রাজপথে যাতে শাপলা চত্বরের মত আর কোনো নৃশংস হত্যাকাণ্ডের ঘটনা না ঘটে।সেই জন্য আমাদের সবাইকে ঐক্যবদ্ধ থাকতে হবে। রাজনৈতিক কারণে যেন সম্প্রীতি বিনষ্ট না হয়। আমরা বাংলাদেশের সকল মানুষের নাগরিক অধিকার, ভোটাধিকার আমরা সংরক্ষণের জন্য সবাই ঐক্যবদ্ধ থাকি।

ধর্ম সম্পর্কে বিএনপির অবস্থান সম্পর্কে তিনি বলেন, সমস্ত শ্রেণি-পেশার মানুষকে নিয়ে অস্তভূক্তিমূলক সমাজ, রাষ্ট্র ব্যবস্থা কায়েম করতে চাই। সেইজন্য অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনীতির আহবান জানাচ্ছি। আমরা কোনো বিভক্তি চাই না। ধর্মের নামে, জাতির নামে, ভাষার নামে। শক্তিশালী গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র কাঠামো গড়তে চাই। রাষ্ট্র কাঠামো মেরামত করব। নির্বাচনে সামনে রাজনৈতিক দল গুলোর মধ্যে বিভিন্ন কলাকৌশল থাকে। সেই হিসাবে কিছু দল একত্রিত হয়ে জোট গঠন করতে পারে। ইসলামী রাজনৈতিক দল হিসেবে পরিচিত অনেকেই আমাদের সাথে আছে। এটা নির্বাচনী কৌশল।

ছাত্রসংসদে নির্বাচিতদের অভিনন্দন জানিয়ে সালাহউদ্দিন বলেন, চাকসু, ডাকসু যাই হোক ছাত্র রাজনীতি বা ছাত্র সংসদ নির্বাচনের মাধ্যমে যে নেতৃত্ব উঠে আসছে সকলকে অভিনন্দন। ছাত্র রাজনীতি আর জাতীয় রাজনীতি আলাদা।

এ সময় মাদ্রাসার প্রয়াত পরিচালক মরহুম আহমেদ হাসান, মুফতি নুরুল হক ও আল্লামা শাহ তৈয়ব সাহেবের কবর জিয়ারত করেন এবং মাদরাসার বিভিন্ন বিভাগ পরিদর্শন করেন তিনি।

বিএনপির স্থানীয় নেতাকর্মীদের পাশাপাশি হেফাজতে ইসলাম বাংলাদেশের যুগ্ম মহাসচিব আজিজুল হক ইসলামাবাদীও উপস্থিত ছিলেন।