স্পোর্টস ডেস্ক :
নির্ধারিত সময়ের ৮৪ মিনিট পর্যন্ত দুই গোলের ব্যবধানে পিছিয়ে রইল পিএসজি। বিবর্ণতা কাটিয়ে শেষদিকে গা ঝাড়া দিয়ে সমতায় ফেরার পর টাইব্রেকারের শুরুতেও একই চ্যালেঞ্জের মুখে পড়ল তারা। সেটায় উতরে গিয়ে ঘুরে দাঁড়ানোর স্মরণীয় গল্প লিখল লুইস এনরিকের শিষ্যরা। রোমাঞ্চকর দ্বৈরথে টটেনহ্যাম হটস্পারের হৃদয় ভেঙে উয়েফা সুপার কাপ জিতল দলটি।
বুধবার (১৩ আগস্ট) রাতে ইতালির উদিনেতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে পেনাল্টি শুটআউটে ৪-৩ গোলে জিতেছে প্যরিসিয়ানরা। ফলে শিরোপা দিয়েই নতুন মৌসুম (২০২৫-২৬) শুরু করল গত মৌসুমের ট্রেবলজয়ীরা। এর আগে নির্ধারিত ৯০ মিনিটের খেলা শেষ হয় ২-২ সমতায়।
দুই ডিফেন্ডার মিকি ফন দে ফেন ও ক্রিস্তিয়ান রোমেরোর গোলে ৪৮ মিনিটের মধ্যে দুই গোলে এগিয়ে যায় টটেনহ্যাম। পিএসজির দুই গোল করেন দ্বিতীয়ার্ধে বদলি নামা দুই খেলোয়াড়- লি কাং-ইন ব্যবধান কমানোর পর সমতা ফেরান গন্সালো রামোস।
পেনাল্টি শুটআউটে পিএসজির প্রথম শট ভিতিনিয়া পোস্টে মারলেও, জালের দেখা পান তাদের পরের চার জন। টটেনহ্যামের মিকি ফন দে ফেনের শট ঠেকান পিএসজির নতুন গোলরক্ষক লুকাহ শুভালিয়ে, বাইরে মারেন মাথিয়াস তেল। প্রথম ফরাসি ক্লাব হিসেবে উয়েফা সুপার কাপ জিতল পিএসজি। মৌসুমের শুরুতে আগেরবারের চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ও ইউরোপা লিগ জয়ীর মধ্যে হয়ে থাকে এক ম্যাচের এই শিরোপা লড়াই।
গত মে মাসে ফাইনালে ইন্টার মিলানকে গুঁড়িয়ে প্রথমবারের মতো চ্যাম্পিয়ন্স লিগ জয়ের স্বাদ পায় পিএসজি। একই মাসে ইউরোপা লিগের ফাইনালে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে হারিয়ে ১৭ বছরের শিরোপা খরা কাটায় টটেনহ্যাম। তিন মাসের কম সময়ের মধ্যে আরেকটি ট্রফি জয়ের খুব কাছে গিয়েও পারল না তারা।
সন হিউং-মিনের বিদায়ের পর টটেনহ্যামের অধিনায়কত্ব পাওয়ার দিনের উপলক্ষটা ট্রফির ছোঁয়ায় রাঙানো হলো না রোমেরোর। দলটির কোচ হিসেবে টমাস ফ্র্যাঙ্কের প্রথম প্রতিযোগিতামূলক ম্যাচ ছিল এটি।
অল্পের জন্য এক মাসের মধ্যে দুটি শিরোপা লড়াইয়ের মঞ্চে ইংলিশ দলের বিপক্ষে হারের হাত থেকে রক্ষা পেল পিএসজি। গত মাসে নতুন আঙ্গিকের ফিফা ক্লাব বিশ্বকাপের ফাইনালে তাদের ৩-০ গোলে হারিয়ে ট্রফি জিতেছিল চেলসি।
সুপার কাপে পিএসজি বল নিজেদের কাছে রাখে গোটা ম্যাচে ৭৪ শতাংশ। কিন্তু প্রথমার্ধে গোলের জন্য চারটি শট নিয়ে একটিও লক্ষ্যে রাখতে পারেনি তারা। দ্বিতীয়ার্ধে তাদের আট শটের তিনটি ছিল লক্ষ্যে। প্রথমার্ধে আট শটের তিনটি লক্ষ্যে রাখতে পারে টটেনহ্যাম। বিরতির পর তাদের পাঁচ শটের দুটি লক্ষ্যে ছিল।
ম্যাচের শুরু থেকে পিএসজিকে চেপে ধরে টটেনহ্যাম। একের পর এক আক্রমণ করতে থাকে তারা। অনেকটা সময় তাদের আটকে রাখতে পারলেও ৩৯তম মিনিটে আর পারেনি ফরাসি দলটি।
কদিন আগে বায়ার্ন মিউনিখ থেকে ধারে টটেনহ্যামে আসা জোয়াও পালিনিয়ার কাছ থেকে নেওয়া ভলি পিএসজি গোলরক্ষকের হাত ছুঁয়ে ক্রসবারে লাগে। ফিরতি বল জালে পাঠিয়ে টটেনহ্যামকে উল্লাসে ভাসান ডাচ ডিফেন্ডার ফন দে ফেন।
দ্বিতীয়ার্ধের তৃতীয় মিনিটে ফের উল্লাস করে ব্যবধান বাড়ায় টটেনহ্যাম। ক্লাবের নতুন অধিনায়ক হিসেবে প্রথম ম্যাচ খেলতে নেমে জাল খুঁজে নেন ক্রিস্তিয়ান রোমেরো। পোরোর ফ্রি-কিকে দূরের পোস্টে ফাঁকায় থেকে হেড করে গোল করেন তিনি। তবে এতে দায় আছে পিএসজির গোলরক্ষক শেভালিয়েরের। দুই হাত দিয়েও বল রুখতে পারেননি তিনি।
পাঁচ মিনিট পর তৃতীয় গোল পাওয়ার আশা জাগায় টটেনহ্যাম। সতীর্থের ক্রসে কেভিন ডানসোর হেড অল্পের জন্য লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়। এরপর শুরু হয় প্যারিসিয়ানদের রূপকথার মতো প্রত্যাবর্তনের।
আক্রমণে ধার বাড়িয়ে ম্যাচের ৬৬তম মিনিটে প্রথমবারের মতো বল লক্ষ্যে রাখতে পারে এনরিকের দল। দিজিরে দুয়ের শট কোনোমতে ফিরিয়ে দেন প্রতিপক্ষের গোলরক্ষক গুলিয়েলমো ভিকারিও। এরপর জটলার মধ্য থেকে ব্র্যাডলি বারকোলা বল জালে পাঠালেও তা বাতিল হয় অফসাইডের কারণে। দুই মিনিট পর বারকোলার বদলি হিসেবে মাঠে ঢোকেন দক্ষিণ কোরিয়ান উইঙ্গার লি। তারপর ৭৭তম মিনিটে দুয়েকে উঠিয়ে নামানো হয় পর্তুগিজ স্ট্রাইকার রামোসকে। তারা দুজনই পাল্টে দেন খেলা।
৮৫তম মিনিটে ব্যবধান কমান লি। ভিতিনিয়ার পাস নিয়ন্ত্রণে নিয়ে ২০ গজ দূর থেকে জোরাল নিচু শটে জাল কাঁপান। আর যোগ করা ছয় মিনিটের চতুর্থ মিনিটে ডানদিক থেকে দেম্বেলের ক্রসে চমৎকার হেডে স্কোরলাইন ২-২ করেন রামোস। এরপর টাইব্রেকারে জিতে আনন্দের জোয়ারে ভাসে পিএসজি।