নরসিংদী জেলা প্রতিনিধি :
নরসিংদীর মাধবদীতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে গিয়ে গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত সুমন রহমান অনিক (২০) মারা গেছেন।
শুক্রবার (২৩ আগস্ট) সকাল সোয়া ৭ টায় রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ে (পিজি হাসপাতাল) চিকিৎসাধীন অবস্থায় তাঁর মৃত্যু হয়।
নিহতের বড় ভাই জুলহাস মিয়া এ বিষয়টি জানিয়েছেন। নিহত সুমন মাধবদী পৌর শহরের সিদ্দিকনগর মহল্লার মৃত হাসেন আলীর ছেলে। সে স্থানীয় জালপট্টি জামেয়া-ই-এমদাদিয়া দাখিল মাদ্রাসার ছাত্র ছিল।
নিহতের পরিবারের লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত ২০ জুলাই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র–জনতার আন্দোলনকে ঘিরে সরকারের জারিকৃত কারফিউয়ের প্রথম দিনে সে বাড়ি থেকে বের হয়ে বন্ধুদের সঙ্গে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কে মাধবদী পুরাতন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বিক্ষোভ মিছিলে অংশ নেয়। একপর্যায়ে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের ছত্রভঙ্গ করতে নির্বিচারে গুলিবর্ষণ করলে তার পেটে গুলিবিদ্ধ হয়ে মাটিতে লুটিয়ে পড়ে সে। গুলিটি তার পেটে ঢুকে পাকস্থলী ছিদ্র হয়ে পিছন দিক দিয়ে বের হয়ে যায়। গুরুতর আহত অবস্থায় তাকে উদ্ধার করে প্রথমে স্থানীয় একটি হাসপাতালে এবং পরে কুর্মিটোলা হাসপাতালে ভর্তি করা হয়।
এ ঘটনায় তার তিনবার অস্ত্রোপচার করা হয়। সম্প্রতি তার পেটে ইনফেকশন হয়ে যাওয়ার কারণে আবারও অস্ত্রোপচার করতে হবে বলে জানিয়েছিল চিকিৎসকরা। পাশাপাশি উন্নত চিকিৎসার জন্য দেশের বাইরে নিয়ে যাওয়ারও পরামর্শ দিয়েছেন তারা। গত বুধবার বিকেলে তাকে কুর্মিটোলা থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানেই আজ শুক্রবার সকালে সে মারা যায়।
সুমনের ভাই জুলহাস মিয়া বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের শুরুর দিক থেকেই আমার ভাই অংশগ্রহণ করে। বারবার ওকে আটকানোর চেষ্টা করলেও ঘরে রাখতে পারিনি। আন্দোলন চলাকালীন মাধবদী থানার সামনে গত ২২ জুলাই আমার ভাই পিঠে গুলিবিদ্ধ হয়। এরপরই তাকে ঢাকা কুর্মিটোলা হাসপাতালে নিয়ে যাই। পরবর্তীতে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করি। হাসপাতালে মৃত্যুর সঙ্গে পাঞ্জা লড়ছিল সুমন। সকালে আমার ভাইটা মারা যায়। তার লাশ নিয়ে কিছুক্ষণ পরে নরসিংদীতে ফিরবো।
তিনি বলেন, আমাদের বাবা নেই। তাই পড়াশোনার পাশাপাশি সবজি বিক্রি করে সংসারে সাহায্য করতো সুমন। মাকে নিয়ে মাধবদীর সিদ্দিক নগরে ৩ হাজার টাকার ভাড়া বাসায় থাকতো। এই পরিশ্রমী ছোট্ট ভাইটাকে নিয়ে অনেক স্বপ্ন ছিল আমার পরিবারের। ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না ভাই হারিয়ে কতটুকু কষ্ট পাচ্ছি। আমার ভাই হত্যার সুষ্ঠু বিচার চাই।